রফিকউদ্দিন আহমদ

রফিকউদ্দিন আহমদ (৩০ অক্টোবর ১৯২৬ – ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ভাষা আন্দোলনকর্মী যিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট বাংলা ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালে নিহত হন।[1] বাংলাদেশে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়।[2]

রফিকউদ্দিন আহমদ
জন্ম
রফিকউদ্দিন আহমদ

৩০ অক্টোবর ১৯২৬
পারিল বলধারা, সিংগাইর, মানিকগঞ্জ, বৃটিশ ভারত।
মৃত্যু২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা,পূর্ব পাকিস্তান।
পেশাছাত্র
পরিচিতির কারণভাষা শহীদ

প্রারম্ভিক জীবন

রফিকউদ্দিন ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল বলধারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল লতিফ ও মাতার নাম রাফিজা খাতুন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রফিক ছিলেন বড় সন্তান। রফিকের দাদার নাম মো: মকিম।[3]

১৯৪৯ সালে রফিক স্থানীয় বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। তবে পড়ালেখে শেষ না করে তিনি ঢাকায় এসে পিতার মুদ্রণশিল্প ব্যবসায় যুক্ত হন। ঢাকায় তিনি পুনরায় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ

রফিক ভাষা আন্দোলনের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন এবং সক্রিয় একজন আন্দোলনকারী হিসেবে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে আসলে পুলিশ গুলি চালায়, এতে রফিকউদ্দিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয় সাত জন আন্দোলনকর্মী তার লাশ এনাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন।[4] তাদের মাঝে ডাঃ মশাররফুর রহমান খান রফিকের গুলিতে ছিটকে পড়া মগজ হাতে করে নিয়ে যান।[5] পরে পুলিশ তার মৃতদেহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায় এবং রাত ৩টায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

মৃত্যু পরবর্তী

ভাষা আন্দোলনে তার আত্মত্যাগের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকারে তাকে মরনোত্তর একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়া তার গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রফিকনগর করা হয় এবং ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে তার নামে ‘ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভবন নামকরণ করা হয়। [6] তার স্মৃতির স্বরণে ‘চাঁদের মত চন্দ্রবিন্দু’ নামে একটি নাটক মন্তস্থ হয়।[7]

তথ্যসূত্র

  1. "Include language martyrs' biographies in school curriculum"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-০২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৫
  2. "Cultural programmes to observe Ekushey"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৫
  3. "ভাষা শহীদ রফিক গ্রন্থগার ও জাদুঘর" (ইংরেজি ভাষায়)। সিংগাইর উপজেলা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  4. "রফিকউদ্দিন আহমদ" (ইংরেজি ভাষায়)। বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  5. একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস - আহমদ রফিক; পৃষ্ঠা: ৪১
  6. "Library honouring Language Martyr Rafiq, observes 7th anniversary"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৬-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৫
  7. "Memoirs of a Martyr"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৩-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.