মোহাম্মদ তোয়াহা

মোহাম্মদ তোয়াহা (২ জানুয়ারি ১৯২২ - ২৯ নভেম্বর ১৯৮৭) ছিলেন ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী এবং রাজনীতিবিদ। এই আন্দোলনের সময় তাকে অন্যমত একজন ছাত্র নেতা হিসাবে বিবেচনা করা হতো।[1]

মোহাম্মদ তোয়াহা
জন্ম(১৯২২-০১-০২)২ জানুয়ারি ১৯২২
মৃত্যু২৯ নভেম্বর ১৯৮৭(1987-11-29) (বয়স ৬৫)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
যেখানের শিক্ষার্থীকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

জন্ম, পরিবার ও শিক্ষাজীবন

মোহাম্মদ তোয়াহা ১৯২২ সালের ২রা জানুয়ারি তত্কালীন নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার) রামগতি উপজেলার হাজিরহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং মাতা হাসনা বানু। তিনি ফরাশগঞ্জ স্কুল থেকে ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪১ সালে আইএ পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৫০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ফজলুল হক হলের উপ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন।[2]

রাজনৈতিক জীবন

তোয়াহা ১৯৪৬ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অধীনে সিলেট গণভোটে কর্মী হিসাবে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বামপন্থী ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ দলের সাথে যুক্ত ছিলেন।

ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ

তোয়াহা আন্দোলনের প্রারম্ভিক সময়ে সত্যিকার অর্থেই সক্রিয় ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে অধিকাংশ পোষ্টার, নিবন্ধ, লিফলেট তৈরী করেছিলেন। ১১ মার্চ, ১৯৪৮ তারিখে যখন তোয়াহার নেতৃত্বে একটি দল সচিবালয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিতে যায় তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তিনি তাদের দ্বারা নির্যাতিত হন এবং অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে তাকে হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকতে হয়েছিল।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির একজন নেতা হিসেবে, তোয়াহা সরকারের সাথে সকল ধরনের বৈঠকে অংশ নিতেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিপি ছিলেন। যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সেখানে এসেছিলেন, তোয়াহা তাকে তাদের ভাষা চাহিদা সম্পর্কে একটি স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। সরকার যখন আরবি লিপি ব্যবহার করে বাংলা লেখার জন্য প্রচারনা চালাচ্ছিল তখন তিনি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদে তিনি যুব লীগের সংবাদদাতা ছিলেন। ১৯৫২ সালের শেষের দিকে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

১৯৫৪-১৯৭০

তিনি দুই বছর পরে মুক্তি পান এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রণ করেছিলেন যেখানে যুক্তফ্রন্ট জয়ী হয়েছিল। প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন।[3] ১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মজদুর ফেডারেশন নামে একটি শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলেন এবং এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে তিনি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জাতীয় আওয়ামী পার্টির সাথে যুক্ত হন এবং পরে এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করার পরে তিনি গোপন রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ

কমিউনিস্ট সুখেন্দু দস্তিদার এবং পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির আবদুল হক (মার্কসবাদী - লেনিনবাদী) সহ তোয়াহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন।[4]

স্বাধীনতা পরবর্তী

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হয়, ফলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ১৯৭৬ সালে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি আট দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন।

মৃত্যু

তোয়াহা ১৯৮৭ সালের ২৯শে নভেম্বর লক্ষ্মীপুরের রামগতির হাজিরহাটে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র

  1. আল হেলাল, বশির, "ভাষা আন্দেলনের ইতিহাস, আগামী প্রকাশনী, পিপি 623 আইএসবিএন ৯৮৪-৪০১-৫২৩-৫
  2. হোসেন, আবু মো. দেলোয়ার। তোয়াহা, মোহাম্মদ। ঢাকা: বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  3. আহমেদ, মনোয়ার, "ভাষা আন্দোলনের সচিত্র দলিল", পৃ ২৯. আইএসবিএন ৯৮৪-৪০১-১৪৭-৭
  4. আলিম, সৈয়দ ফাত্তাহুল (১ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Has Left Politics any Future?"6 (2)। Forum। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.