মোহাম্মদ সুলতান

মোহাম্মদ সুলতান (ডিসেম্বর ২৪, ১৯২৬ - ডিসেম্বর ৩১, ১৯৮৩) বাংলাদেশের একজন রজনীতিবিদ। তিনি ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ও সংগঠক।[1]

প্রারম্ভিক জীবন

মোহাম্মদ সুলতান ১৯২৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলার (তৎকালীন দিনাজপুর জেলা) বোদা উপজেলার অন্তর্গত মাঝ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[2] তার বাবা মোহাম্মদ শমসের আলী ছিলেন ব্রিটিশ আমলের পুলিশ বিভাগের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ। সুলতান ছিলেন বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। মোহাম্মদ সুলতান যশোর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

সুলতান অল্প বয়সেই ভারত ছাড় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৪৮ সালে রাজশাহী ভাষা আন্দোলন ও ছাত্রআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫১ সালে যুবলীগে যোগ দিলে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। মোহাম্মদ সুলতান ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কালো পতাকা উত্তোলনকারী শিক্ষার্থী। ১৯৫২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হলে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সাথে তিনি যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

১৯৫৬ সালে যুবলীগ সম্পাদক ইমাদুল্লা মারা যান। এ সময় মোহাম্মদ সুলতান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে ন্যাপের জন্মলগ্নেই ন্যাপ প্রাদেশিক কমিটির যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপ বিভক্তির পর তিনি মাওলানা ভাসানীর অংশের প্রাদেশিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক কারণে মোহাম্মদ সুলতান দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালে ৯২(ক) ধারা প্রবর্তনের সাথে সাথে সুলতানকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিনাবিচারে প্রায় এক বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে মোহাম্মদ সুলতান আবারও গ্রেফতার হন এবং বিনাবিচারে চার বছর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী হিসেবে তাকে আটক রাখা হয়। এছাড়া পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন সময়ে তার নামে হুলিয়া জারি করলে আত্নগোপন করে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। ১৯৭০ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে প্রকাশনার কাজে যুক্ত হন।

প্রকাশনা শিল্পে ভূমিকা

মোহাম্মদ সুলতান প্রধানত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এম আর আখতার মুকুলের সাথে পুস্তক প্রকাশনা এবং বিক্রয়কেন্দ্র পুঁথিঘর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৩ সালে মার্চ মাসে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেন। প্রকাশনার কিছুদিনের মধ্যে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একুশে ফেব্রুয়ারি বইটি বাজেয়াপ্ত করে।

মোহাম্মদ সুলতান প্রগতিশীল পুস্তক প্রকাশনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তার শেষ সম্বলটুকু দিয়ে প্রগতিশীল পুস্তক প্রকাশনার চেষ্টা করেন। পুস্তক প্রকাশকদের সংগঠিত করে দেশে সৃজনশীল ও প্রগতিশীল সাহিত্য পুস্তক প্রকাশনার জন্য এক গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে তোলেন। মোহাম্মদ সুলতান বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক সমিতির সহ-সভাপতি এবং বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন।

মৃত্যু এবং পরবর্তী সম্মাননা

১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ২০০৭ সালে মোহাম্মদ সুলতানের স্মরণে কাকা শহরের কেন্দ্রে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কটি ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান সড়ক হিসেবে নামকরণ করা হয়।

তথ্যসূত্র

  1. http://archive.prothom-alo.com/detail/news/31111 দৈনিক প্রথম আলো, "তিনি কি ব্যর্থ মানুষ?", জাহীদ রেজা নূর | তারিখ: ৩১-১২-২০০৯
  2. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩২৯-৩৩০।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.