শফিউর রহমান

শফিউর রহমান (২৪ জানুয়ারি ১৯১৮ - ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ভাষা আন্দোলনকর্মী যিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট বাংলা ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালে নিহত হন। বাংলাদেশে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

শফিউর রহমান
জন্ম২৪ জানুয়ারি ১৯১৮
মৃত্যু২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
পেশাসরকারি চাকুরি
পরিচিতির কারণভাষা শহীদ
আজিমপুর কবরস্থান, ঢাকায় শহীদ শফিউর রহমানের কবর

প্রারম্ভিক জীবন

শফিউর রহমান ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোন্নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ঢাকার পোস্ট এন্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। তার মাতার নাম কানেতাতুন নেসা। কলকাতা গভর্ণমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে শফিউর রহমান চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানীর চাকরি গ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর পিতার সঙ্গে ঢাকায় এসে ঢাকা হাইকোর্টে হিসাব রক্ষণ শাখায় কেরানী পদে যোগ দেন।

ভাষা আন্দোলন

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ সালে শহীদ শফিউর রহমানের কবর

১৯৫২‌ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন শফিউর। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। ১৯৫৪ সালের শহীদ সংখ্যা সাপ্তাহিক সৈনিকে তার সম্পর্কে প্রকাশিত বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐদিন সকাল ১০টায় তিনি সাইকেলে চড়ে নবাবপুর রোড হয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি রাইফেলের গুলি তার পৃষ্ঠভেদ করে বের হয়েছে এবং এতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সরকারি এ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ডা. এ্যালিনসন অপারেশন করেন। ঐদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় তিনি মারা যান। গুলিতে শহীদ শফিউরের কলিজা ছিঁড়ে গিয়েছিল। অপারেশনের সময় সফিউরের মাতা, পিতা, স্ত্রী, মেয়ে শাহনাজ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন।

মৃত্যু

মৃত্যুর পর পুলিশ আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করেনি। ১৪ মার্চ ১৯৫২ তারিখের দৈনিক আজাদে প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী অনুসারে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট তার জানাজা পড়ান। জানাজায় তার পিতা ও ভাই উপস্থিত ছিলেন। তারপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তার কবরের পাশেই রয়েছে পূর্বদিন মৃত্যুবরণ করা আবুল বরকতের কবর।[1]

ব্যক্তিগত জীবন

শফিউর রহমান ১৯৪৫ সালে কলকাতার তমিজউদ্দিনের কন্যা আকিলা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

একুশে পদক

২০০০ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শফিউর রহমানকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। এছাড়াও, ২০০৬ সালে ভাষা আন্দোলনে মৃত্যুবরণ করা অন্যান্য পরিবারের পাশাপাশি তার স্ত্রী বেগম আকিলা খাতুনকে আজীবন ভাতা প্রদানের ঘোষণা দেয়।

তথ্যসূত্র

  1. Al-Helal, Bashir. Bhasha Andoloner Itihash. pp.482-83

আরো দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.