হামিদুর রহমান (চিত্রশিল্পী)

হামিদুর রহমান (জন্ম: ১৯২৮-মৃত্যু: নভেম্বর ১৯, ১৯৮৮) ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী[1] তিনিই ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিমাখা শহীদ মিনারের নকশা করেন।[2] ১৯৮০ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।[3]

হামিদুর রহমান
জন্ম
শিক্ষাচিত্রকলা
পরিচিতির কারণচিত্রশিল্প, প্রচ্ছদশিল্প
উল্লেখযোগ্য কর্ম
শহীদ মিনার
আন্দোলনভাষা আন্দোলন
পুরস্কারএকুশে পদক
১৯৮০
(আরও দেখুন)
হামিদুর রহমানের নকশা অনুসারে নির্মিত শহীদ মিনার

জন্ম

১৯২৮ সালে পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে হামিদুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মির্জা ফকির মোহাম্মদ এবং পিতামহ মির্জা আবদুল কাদের সরদার

শিক্ষা

তিনি ঢাকা আর্টস স্কুল (বর্তমান চারুকলা ইন্সটিটিউট) থেকে চিত্রকলার উপর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ও পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যান। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চিত্রকলার উপরে উচ্চশিক্ষার্থে ইউরোপ যান। প্যারিসের ইকোল দ্যা বোজ আর্টস শিক্ষাগ্রহণ করেন। এরপরে লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৫৯-১৯৬০ পর্যন্ত তিনি পেনসিলভিয়া অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস- চিত্রকলা বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন।

অবদান

হামিদুর রহমানকে শহীদ মিনারের নকশা করার কাজ দেয়ার পর থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্রীয়ভাবে ধারণ করে এমন কোন নকশা করতে চেয়েছিলেন। তিনি অনুভূমিক ও উল্লম্ব আকারের কাঠামোর মাধ্যমে পুরো বাঙালির পরিচয়কে বের করে আনতে চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় কাঠামোর উভয়দিকে চারটি স্তম্ভের মাধ্যমে একটি একত্রীত স্তম্ভের ভারসাম্য এবং সাদৃশ্য রক্ষা করার ব্যবস্থা করেন। প্রকৃত নকশাতে তিনি স্টেইনড কাচের মধ্যে হাজারো চোখের ন্যায় গঠনও এঁকেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে সূর্যালোক এসে সামনের মর্মরখচিত মেঝেকে ভোর থেকে গোধূলী পর্যন্ত আলোকিত করে রাখবে। এর বেসমেন্টে তিনি ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্রেস্কোর কাজও করতে চেয়েছিলেন।

হামিদুর রহমানের রূপকল্পনা অনুসারে ১৯৬২ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি কিছুটা পরিবর্তিত আকারেই শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়। ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়।

খ্যাতনামা শিল্পী নভেরা আহমেদ এই নকশায় হামিদুর রহমানকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করেন। কিন্তু সরকারিভাবে তার নাম না থাকায় শহীদ মিনারের নকশায় হামিদুর রহমানের সাথে তার অবদান বিতকির্ত রয়েছে।[4]

এছাড়াও হামিদুর রহমান বেশকিছু নান্দনিক চিত্রকর্ম অঙ্কন করেন।[5]

মৃত্যু

১৯৮৮ সালের ১৯শে নভেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে হামিদুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।[1]

পুরস্কার ও সম্মাননা

১৯৮০ সালে হামিদুর রহমান একুশে পদক লাভ করেন।[3]

শিল্পচর্চায় অবদানের ফলে হামিদুর রহমান দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৭২ সালে মাদার অ্যান্ড স্মোক চিত্রের জন্য তিনি 'ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব বাংলাদেশী পেইন্টার্স' থেকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তার ফ্লাওয়ার ইন মাই বডি চিত্র ইরানের '৫ম তেহরান দ্বিবার্ষিক'-এ প্রথম পুরস্কার লাভ করে। কমনওয়েলথ পেইন্টার্স এক্সিবিশনে শ্রেষ্ট পুরস্কার হিসেবে সম্মানিত হয় তার অঙ্কিত বোট। ১৯৬২ সালে তার সানফ্লাওয়ার চিত্রটি পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডিতে 'ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিংস অ্যান্ড স্কালপচার্স'-এ শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে 'প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অব প্রাইড অব পারফরমেন্স ফর পেইন্টিং' পদক প্রদান করলেও হামিদুর রহমান কর্তৃক প্রত্যাখাত হয়।[3]

চিত্রশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর হামিদুর রহমানের পরিবার থেকে তার নামাঙ্কিত হামিদুর রহমান পুরস্কার প্রদান করা হয়।[6] বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে থাকে।[7]

তথ্যসূত্র

  1. "স্মরণীয় বরণীয় হামিদুর রহমান"যায় যায় দিন। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১২
  2. "Picture BD. Retrieved 12 November 2010."। ২৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১২
  3. "হামিদুর রহমান (গুণীজন)"
  4. "নভেরা – নতুন পথের দিশারী"শিল্প ও শিল্পী। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর, ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  5. "Hamidur Rahman arts"
  6. "Hamidur Rahman Puroshkar-2013, goes to artist Rafiqun Nabi"দ্য ডেইলি সান। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৩
  7. "হামিদুর রহমান পুরস্কার পেলেন রফিকুন নবী"দৈনিক সমকাল। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৩

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.