মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (৩ ডিসেম্বর ১৯২৮ - ১১ জানুয়ারি ২০১৪ ) বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধারে গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, ভাষা সৈনিক, অভিধানপ্রণেতা। ১৯৪৯ হতে ৫২ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবর্তনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা করেছেন।[1][2] বাংলা ভাষার ওপর তার রচিত গ্রন্থাদির মধ্যে উল্লেখযোগ্য যথা-শব্দ (১৯৭৪), মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩), আমরা কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায় কথা বলে (১৯৯৬), প্রথমে মাতৃভাষা পরভাষা পরে (২০০৪) ইত্যাদি।

বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১৯৯৬
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯২৮-১২-০৩)৩ ডিসেম্বর ১৯২৮
মুর্শিদাবাদ জেলা, ভারত
মৃত্যুজানুয়ারি ১১, ২০১৪(2014-01-11) (বয়স ৮৫)
ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাঙালি
ধর্মইসলাম
পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক

জন্ম ও পরিবার

১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জংগীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে মুহম্মদ হাবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন আইনজীবী ৷ জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। তিনি প্রথমে আঞ্জুমান এবং পরে মুসলিম লীগ আন্দোলনের সাংগঠনিক পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন৷ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হাবিবুর রহমানের পিতা জাতীয় যুক্তফ্রন্টের বিভাগীয় নেতা ছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তাকে গ্রেফতার করে বহরমপুর কারাগারে পাঠায়, অবশ্য কয়েকদিন পরই জহিরউদ্দিন বিশ্বাস মুক্তি লাভ করেন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে মুশির্দাবাদ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পরবর্তীতে রাজশাহীতেস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন৷ হাবিবুর রহমানের পিতা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস বিয়ে করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরের মিসেস গুল হাবিবাকে। শুধু নানার বাড়ি নয়, বিচারপতি হাবিবুর রহমান নিজেও বিয়ে করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিববঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। হাবিবুর রহমানের শৈশবের অনেকখানি কেটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের এই শ্যামপুরে (নানার বাড়ি)। পরবর্তীতে শ্যামপুর শ্বশুর বাড়ি হওয়ায় এখানে তিনি মাঝে মাঝে বেড়াতে আসতেন।৷[3]

শিক্ষা

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. সম্মান ও ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে এম.এ. পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. সম্মান ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

লেখক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

হাবিবুর রহমান তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে তিনি ইতিহাসের রিডার[4] (১৯৬২-৬৪) ও আইন বিভাগের ডিন (১৯৬১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইন ব্যবসায়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ঢাকা হাই কোর্ট বারে যোগ দেন। তিনি সহকারী এডভোকেট জেনারেল (১৯৬৯), হাই কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (১৯৭২) ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও (১৯৭২) সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ১৯৯৫ পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।। ১৯৯০-৯১ মেয়াদে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

দেশে-বিদেশে বিচারপতি হাবিবুর রহমান অনেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এগুলোর মধ্যে প্রধান হল - অস্ট্রলিয়ার পার্থে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক দেশসমূহের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন (১৯৯১), নাইজেরিয়ার আবুজাতে চতুর্থ কমনওয়েলথ প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন (১৯৯২), নেপালের কাঠমুন্ডুতে প্রথম সার্ক প্রধান বিচাপতিদের সম্মেলন (১৯৯৫)।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা

১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসেবে তিনি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

মৃত্যু

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[5][6][7]

সাহিত্যে অবদান

একজন গবেষক ও লেখক বিচারপতি হাবিবুর রহমান সাহিত্য ও অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হল:

প্রবন্ধ

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের প্রবন্ধ বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০টি৷

পুরস্কার

তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির একজন ফেলো ও লিঙ্ক'স ইন এর বেঞ্চার।

তথ্যসূত্র

  1. আনিসুজ্জামান (২০১৪-০৩-২৪)। "মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান"কালি ও কলম। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৭
  2. খান, সলিমুল্লাহ (২০১৪-০১-১২)। "বিচারপতি হাবিবুর রহমান: মহাপ্রয়াণের পর"বিডিনিউজ২৪ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৭
  3. http://alokito-chapainawabganj.com/specialperson/%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF/
  4. বর্তমানের সহযোগী অধ্যাপক
  5. বিডিনিউজ ২৪ ডট কম
  6. "বাংলানিউজ ২৪ ডট কম"। ১৪ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৪
  7. দৈনিক প্রথম আলো

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.