মিয়ানমার

মিয়ানমার বা মায়ানমার (বর্মী: မြန်မာ মিয়ামা, আ-ধ্ব-ব: [mjəmà]); প্রাক্তন নাম ও কথ্যরূপ বর্মা বা বার্মা (বর্মী: ဗမာ বামা, আ-ধ্ব-ব: [bəmà]); প্রাচীন নাম ব্রহ্মদেশ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। মায়ানমারের আনুষ্ঠানিক নাম হল মায়ানমার প্রজাতন্ত্র (বর্মী: ပြည်ထောင်စု သမ္မတ မြန်မာ နိုင်ငံတော် [pjìdàʊɴzṵ θàɴməda̰ mjəmà nàɪɴŋàɴdɔ̀] পিডাওঁযু থাঁমাডা মিয়ামা নাইঁঙাঁড)। মায়ানমারের রাজধানী নেপিডো (နေပြည်တော် [nèpjìdɔ̀] নেপিড)। তৎকালীন বার্মার গণতান্ত্রিক সরকারের উৎখাতের পর ১৯৮৯ সালে সেখানকার সামরিক সরকার বার্মার নতুন নামকরণ করে "মিয়ানমার" এবং প্রধান শহর ও তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নাম হয় "ইয়াঙ্গুন"। তবে গণতান্ত্রিক দলগুলোর অনেক অনুসারীই এই নামকরণের বিপক্ষে। ২১ অক্টোবর ২০১০ থেকে দেশটির জাতীয় সঙ্গীত ও নতুন জাতীয় পতাকা প্রবর্তন করা হয়।

মিয়ানমার প্রজাতন্ত্র
ပြည်ထောင်စု သမ္မတ မြန်မာနိုင်ငံတော်
পিডাওঁযু থাঁমাডা মিয়ামা নাইঁঙাঁড
পতাকা জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় সঙ্গীত: 
 মিয়ানমার-এর অবস্থান (green)

ASEAN-এ (dark grey)   [ব্যাখ্যা]

 মিয়ানমার-এর অবস্থান (green)

ASEAN-এ (dark grey)   [ব্যাখ্যা]

মিয়ানমার, মায়ানমারের অবস্থান
রাজধানীনেপিডো নে-প্যি-ড
১৯°৪৫′ উত্তর ৯৬°৬′ পূর্ব
বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন
সরকারি ভাষা বর্মী
সরকার গণতান্ত্রিক সরকার
   রাষ্ট্রপতি থেইন কিয়াও
   উপরাষ্ট্রপতি সাই মাউক খাম
প্রতিষ্ঠা
   পাগান সম্রাজ্য ৮৪৯ - ১২৮৭ 
   তৌঙ্গু রাজবংশ ১৪৮৬ - ১৭৫২ 
   কোনবাউং রাজবংশ ১৭৫৩ - ১৮৮৫ 
   যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা ১৯৪৮ জানুয়ারি ৪ 
   জল/পানি (%) ৩.০৬
জনসংখ্যা
   জুলাই 2015 আনুমানিক 60,077,689 (২৪তম)
   ১৯৮৩ আদমশুমারি ৩৩,২৩৪,০০০
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
২০০৫ আনুমানিক
   মোট $৯৩.৭৭ বিলিয়ন (৫৯তম)
   মাথা পিছু $১,৬৯১ (১৫০তম)
মানব উন্নয়ন সূচক (2014) 0.536[1]
নিম্ন · 148th
মুদ্রা ক্যত (MMK)
সময় অঞ্চল মিয়ানমারের মান সময় (ইউটিসি+৬:৩০)
কলিং কোড +৯৫
ইন্টারনেট টিএলডি .mm
১. বিশ্বে অনেক দেশ ইয়াঙ্গুনকে রাজধানী মনে করে।

ইতিহাস

প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে বর্তমান মিয়ানমারে জনবসতির অবস্থান সর্ম্পকে জানা যায়। পিউ নামের উপজাতিরা ১ম শতকে বার্মা এলাকাতে দক্ষিণ দিকের ইরাবতী উপত্যকা দিয়ে প্রবেশ করে। অপর দিকে উত্তর দিক দিয়ে মুন জাতি প্রবেশ করে। ৯ম শতকে মিরানমা জাতি ইরাবতী উপত্যকার উপরে বসবাস শুরু করে।

১৩ শতকের দিকে মায়ানমারে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন রাজ্য সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: আভা, আরাকান, হানথাবতী প্রভৃতি। টউনগু সাম্রাজ্য প্রথম ১৫শ শতকে বার্মাকে একত্রীকরণ করে। ১৮শ শতকে ব্রিটিশরা বার্মা দখল করে নেয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৬২ সালে দেশটিতে প্রথম সামরিক সরকার ক্ষমতায় অসীন হয়।

মন গোষ্ঠীকে ইরাওয়াদি (সংস্কৃত ইরাবতী) উপত্যকায় আবাস গড়া প্রথম জনগোষ্ঠী মনে করা হয়। খ্রীস্টপূর্ব নবম শতকের মাঝে তারা দক্ষিণ মায়ানমারে আধিপত্য বিস্তার করে। [2]

খ্রীস্টপূর্ব প্রথম শতকে পিউদের আগমন ঘটে। খ্রীস্টিয় অষ্টম শতকে তারা নানঝাও রাজ্যের আক্রমণের শিকার হয়। খ্রীস্টিয় নবম শতকের পূর্বে কোনসময়ে বর্মীরা বর্তমান তিব্বত থেকে ইরাওয়াদি উপত্যকায় আসা শুরু করে। ৮৪৯ সালের মধ্যে তারা পাগানকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলে যা একসময় বর্তমান মায়ানমারের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকাজুড়ে বিস্তার লাভ করে। ১১০০ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে।

দ্বাদশ শতাব্দীর শেষাংশে কুবলাই খান পাগান রাজ্য দখল করেন। ১৩৬৪ সালে বর্মীরা রাজত্ব পুনরুদ্ধার করে।

ব্রিটিশ বর্মা (১৮২৪ - ১৯৪৮)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিয়ানমারে জাপানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি। রেঙ্গুন তথা বার্মা ১৯৪২-৪৫ পর্যন্ত সময়ে জাপানিদের দখলে ছিল। জাপানিদের তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছিল বার্মা ইনডিপেনডেন্ট আর্মি। জাপানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন জেনারেল অং সান এবং বার্মা ইনডিপেনডেন্ট আর্মি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বার্মা থেকে ব্রিটিশ শাসনের উৎখাত। পরে জাপানিদেরও বিতাড়িত করে বার্মাকে স্বাধীন করা। ওই সময়ে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস কয়েকবার অং সানের সঙ্গে রেঙ্গুনে গোপন বৈঠকও করেছিলেন। দুজনের মধ্যে একধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল একযোগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্ব-স্ব দেশকে স্বাধীন করতে কাজ করার।

এ দুজনের মধ্যে মধ্যস্থতায় ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মি. দিনা নাথ, যাঁর বার্মিজ নাম ছিল দত্ত কাহন থেইন থেইয়েন। তিনি তার রেঙ্গুনের বাড়িটির একাংশ ছেড়ে দিয়েছিলেন অং সানকে তার অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে। এখানেই গোপন বৈঠক হয় সুভাষ বোস ও অং সানের। ‘হাউস অব মেমোরি’ নামে পরিচিত এবং বার্মার তথা ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মি. দিনা নাথ পরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত দিল্লির লাল কেল্লায় এক বছর কারাভোগে ছিলেন। পরে দিনা নাথকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ভারতের সর্বোচ্চ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন।

তৎকালীন বার্মা ভারতের স্বাধীনতার প্রায় এক বছর পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি স্বাধীনতা লাভ করে। জেনারেল অং সান স্বাধীনতার কয়েক মাস আগে জুলাই ১৯৪৭ সালে কথিত বিরোধী আততায়ীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন।

আততায়ীর হাতে মৃত্যুর আগে অং সান যে কয়টি কাজ করে গিয়েছিলেন তার মধ্যে প্রধান ছিল বার্মার পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং বিবদমান তিনটি গোষ্ঠীর—শান, কারেন ও চিনাদের সঙ্গে স্বায়ত্তশাসন নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো। এসব উপজাতীয় অঞ্চল এবং উপজাতীয়রা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে সহযোগিতায় ছিল, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, স্বাধীন সত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য। কিন্তু তেমনটা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি করেনি। কেন ওই সব অঞ্চলকে স্বাধীন করেনি তার প্রধান কারণ চীনের সঙ্গে বর্তমানে এই তিন রাজ্যের ভূকৌশলগত অবস্থান।

অং সান পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার যে সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন, তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা, যাঁরা নিজেরাও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন। এছাড়াও অং সানের বিপ্লবী কার্যকলাপের অন্যতম সাথীদের একটা বিরাট অংশই ছিল বাঙালী। কর্মসূত্রে প্রচুর বাঙালী বর্মার বিভিন্ন অঞ্চলে থাকতেন, তাদের মধ্যে কিছু সাম্যবাদী চিন্তাধারার তরুন বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ স্থান অলংকৃত করেছিলেন। হরিনারায়ণ ঘোষাল, ডাক্তার অমর নাগ, সুবোধ মুখার্জী, অমর দে প্রমুখ ছিলেন অং সানের সাথী বাঙালি বিপ্লবী নেতা। ১৯৪৭ সালে অং সান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এটলির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বার্মার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। এর ঠিক দুই সপ্তাহ পরে অং সান প্যানগ্লোনগ কনফারেন্সে তিন গ্রুপের সঙ্গে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার চুক্তি করেন। কারণ, তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসকদের বার্মা বিভাজনের কোনো অজুহাতই দিতে চাননি।

স্বাধীনতা (১৯৪৮-১৯৬২)

বার্মা স্বাধীন হয়েছিল অং সানের মৃত্যুর পর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত বার্মা চারটি বহুদলীয় নির্বাচন দেখেছে কিন্তু অং সানের সঙ্গে সম্পাদিত তিন প্রধান উপজাতীয়দের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য অঞ্চলে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা–অধ্যুষিত আরাকান, যার বর্তমান নাম রাখাইন অঞ্চলও যুক্ত হয়।

সামরিক শাসন (১৯৬২-২০১১)

১৯৬২ সালের ২ মার্চ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে। সামরিক জান্তার প্রধান ছিলেন নে উইন। তারা ২৭ মে ১৯৯০ সালে প্রথম নির্বাচন দেয়। এ নির্বাচনে অং সান সু চি এর দল "ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি" ৪৯২ টি অাসনের মধ্যে ৩৯২টি অাসন পায়। কিন্তু নির্বাচনী আইনের মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়। রেঙ্গুন নামটি ১৯৮৯ সালে সামরিক শাসকেরা পরিবর্তন করে রাখেন ইয়াঙ্গুন। নভেম্বর ২০০৫ সালে ইয়াঙ্গুন দেশের রাজধানীর মর্যাদা হারায়। বর্তমানে বার্মা বা মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে অত্যন্ত পরিকল্পিত নতুন শহর নেপিডোতে

রাজনীতি

সুদীর্ঘ সামরিক শাসনের ইতি ঘটিয়ে ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

মায়ানমার দেশটি মূল মিয়ানমার অঞ্চল এবং আরও সাতটি রাজ্য নিয়ে গঠিত। এগুলি হল চিন, কাচিন, কারেন, মন, রাখাইন, এবং শান। মূল মিয়ানমার সাতটি বিভাগে বিভক্ত - ইরাবতী, মাগোয়ে, ম্যান্ডালে, পেগু, রেংগুন, সাগাইং, এবং তেনাসসেরিম।

ভূগোল

মিয়ানমারের মোট আয়তন ৬৭৬,৫৫২ বর্গকিলোমিটার। উত্তর-দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,০৮৫ কিলোমিটার। পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ বিস্তার প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার। উপকূলীয় এলাকাটি নিম্ন মিয়ানমার এবং অভ্যন্তরীণ অংশটি ঊর্ধ্ব মিয়ানমার নামে পরিচিত। অশ্বখুরাকৃতি পর্বতব্যবস্থা ও ইরাবতী নদীর উপত্যকা দেশটির ভূ-সংস্থানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। উত্তরের পর্বতগুলির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হকাকাবো রাজি-র উচ্চতা ৫,৮৮১ মিটার। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আরও দুইটি পর্বতব্যবস্থা উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। আরাকান ইয়োমা পর্বতমালাটি মিয়ানমার ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে একটি প্রাচীরের সৃষ্টি করেছে। এর পর্বতগুলির উচ্চতা প্রধানত ৯১৫ মিটার থেকে ১,৫২৫ মিটার পর্যন্ত হয়। অন্যদিকে শান মালভূমি থেকে বিলাউকতাউং পর্বতশ্রেণীটি প্রসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব নিম্ন মিয়ানমার এবং দক্ষিণ-পশ্চিম থাইল্যান্ডের সীমান্ত বরাবর চলে গেছে। শান মালভূমিটি চীন থেকে প্রসারিত হয়েছে এবং এর গড় উচ্চতা প্রায় ১,২১৫ মিটার।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরভাগে কেন্দ্রীয় নিম্নভূমিগুলি মূলত সরু ও দীর্ঘ। এগুলি ইরাবতী-সিত্তাং নদীর ব-দ্বীপ এলাকায় প্রায় ৩২০ কিলোমিটার প্রশস্ত। এই ব-দ্বীপীয় সমভূমিগুলি অত্যন্ত উর্বর এবং দেশের সবচেয়ে অর্থনৈতিক গুরুত্ববিশিষ্ট অঞ্চল। এদের মোট আয়তন প্রায় ৪৭,০০০ বর্গকিলোমিটার। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমের আরাকান উপকূল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের তেনাসসেরিম উপকূল উভয়েই শিলাময় এবং এগুলির কাছে অনেক দ্বীপ অবস্থিত। মিয়ানমারে বেশ কিছু উৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় আছে।

মায়ানমার ৬৭৮,৫০০ বর্গকিলোমিটার (২৬১,৯৭০ বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। মায়ানমারের পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এবং ভারতের মিজোরাম, উত্তর-পশ্চিমে ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ডমণিপুর অবস্থিত। মায়ানমারের সীমানার উত্তর-পূর্বাংশের ২,১৮৫ কিলোমিটার জুড়ে আছে তিব্বত এবং চীনের ইউনান প্রদেশ। দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে লাওসথাইল্যান্ড। দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরআন্দামান সাগরের সাথে মায়ানমারের ১,৯৩০ কিলোমিটার উপকূল রেখা রয়েছে।

মায়ানমারের অধিকাংশই কর্কটক্রান্তি ও বিষুবরেখার মাঝে অবস্থিত। ব-দ্বীপ অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ২,৫০০ মিলিমিটার (৯৮ ইঞ্চি), তবে মধ্য মায়ানমারের শুষ্ক এলাকায় তা ১,০০০ মিলিমিটারের কম। উত্তরের অপেক্ষাকৃত শীতল এলাকায় গড় তাপমাত্রা ২১ °সেলসিয়াস। উপকূলীয় ও ব-দ্বীপ এলাকায় গড় তাপমাত্রা ৩২ °সেলসিয়াস।

মূল্যবান সেগুন ও বিষুবীয় গাছপালায় ভরা বন মায়ানমারের শতকরা ৪৯ ভাগের বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে। অন্যান্য গাছের মধ্যে রাবার, বাবলা, বাঁশ, ম্যানগ্রোভ, নারিকেল উল্লেখযোগ্য। উত্তরাঞ্চলে ওক, পাইন ইত্যাদি রয়েছে বিপুল পরিমাণে।

প্রাণীজগৎ

বন্য জীবজন্তুর মধ্যে বাঘ, বুনো মহিষ, মেঘলা চিতা, বুনো শূকর, শিয়াল, হরিণ, কৃষ্ণসার, হাতি, উল্লুক, বানর, চামচিকা, বনরুই এবং কলাবাদুড় পাওয়া যায়। আটশ'রও বেশি প্রজাতির পাখি পাওয়া যায় যার মাঝে আছে সবুজ টিয়া, পাতি ময়না, ময়ূর, লাল বনমোরগ, বাবুই, কাক, বক, মানিকজোড়, লক্ষ্মীপেঁচা প্রভৃতি। সরীসৃপের মাঝে রয়েছে কুমির, তক্ষক, গুই সাপ, অজগর, শঙ্খচূড়, কচ্ছপ প্রভৃতি। স্বাদু পানির মাছ পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণে, যা এখানকার খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

অর্থনীতি

মিয়ানমার অর্থনীতিক ভাবে তেমন শক্তিশালী নয়৷

জনসংখ্যা

বর্মী ভাষা মায়ানমারের সরকারী ভাষা। বর্মী ভাষাতে মায়ানমারের প্রায় ৮০% লোক কথা বলেন। এছাড়াও মায়ানমারে স্থানীয় আরও প্রায় ১০০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে কারেন ভাষারসহ বেশ কিছু উপভাষা (প্রায় ৩০ লক্ষ বক্তা) এবং শান ভাষার উপভাষাগুলি (প্রায় ৩০ লক্ষ বক্তা) উল্লেখযোগ্য। সংখ্যালঘু ভাষাগুলির মধ্যে আরাকান ভাষা, চিন ভাষার বিভিন্ন উপভাষা, জিংপো ভাষা, লু ভাষা এবং পারাউক ভাষা উল্লেখযোগ্য।

সংস্কৃতি

খেলাধুলা

মায়ানমারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

চীনের সাথে সম্পর্ক

১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চীনের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক ছিল মায়ানমারের[3]। মায়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী কমিউনিস্ট পার্টি অব বার্মা (সিপিবি)-এর মূল পৃষ্ঠপোষক ছিল চীন। ১৯৭৮ সালে চীনা নেতা দেং জিয়াও পেং মায়ানমার সফরে আসেন। ১৯৮৬ তে সিপিবির ওপর থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন তুলে নেয় চীন। বৈরী সম্পর্ক দারুণভাবে সহযোগিতার দিকে নতুন মোড় নেয়। তারা তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগসহ বাণিজ্যিক সুবিধা পায়। এ সময় চীন সামরিকভাবে মায়ানমারকে সহায়তা করতে থাকে। ১৯৮৯ সালে মায়ানমার চীন হতে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে।[4] ভারতের ওপর ভূরাজনৈতিক কৌশলগত সুবিধা বাড়াতে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় চীনের। মায়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিগত বিদ্রোহ, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে মায়ানমারকে বহুমুখী সাহায্যের হাত খুলে দেয় চীন। চীনের সমর্থন মায়ানমারের সামরিক জান্তাকে অধিকতর শক্তিশালী করে। তারা এই সুযোগকে ব্যবহার করে দেশের মধ্যে যেমন তাদের ক্ষমতা বাড়ায়, তেমনি একটি শক্তিশালী সমরশক্তির দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে চীনের সর্বোচ্চ সহায়তা পেতে থাকে।

তথ্যসূত্র

  1. "2015 Human Development Report Summary" (PDF)। United Nations Development Programme। ২০১৫। পৃষ্ঠা 21–25। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫
  2. George Aaron Broadwell; Dept. of Anthropology; University at Albany, Albany, NY; accessed July 11, 2006
  3. "The Political Economy of China-Myanmar Relations:Strategic and Economic Dimensions" (PDF)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  4. [Denny Roy, China’s Foreign Relations, (Lanham, Maryland: Rowman & Littlefield Publishers, Inc, 1998), p.174]

গ্রন্থপঞ্জি

  • Aung-Thwin, Michael A. (২০০৫)। The Mists of Rāmañña: The Legend that was Lower Burma (illustrated সংস্করণ)। Honolulu: University of Hawai'i Press। আইএসবিএন 978-0-8248-2886-8।
  • Charney, Michael W. (১৯৯৯)। History of Modern Burma। Cambridge University Press।
  • Cooler, Richard M. (২০০২)। "The Art and Culture of Burma"। DeKalb: Northern Illinois University।
  • Hall, D.G.E. (১৯৬০)। Burma (3rd সংস্করণ)। Hutchinson University Library। আইএসবিএন 978-1-4067-3503-1।
  • Htin Aung, Maung (১৯৬৭)। A History of Burma। New York and London: Cambridge University Press।
  • Hudson, Bob (মার্চ ২০০৫)। "A Pyu Homeland in the Samon Valley: a new theory of the origins of Myanmar's early urban system" (PDF)Myanmar Historical Commission Golden Jubilee International Conference
  • Kemp, Hans (২০১৩)। Burmese Light, Impressions of the Golden Land (illustrated with text by Tom Vater সংস্করণ)। Visionary World। |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  • Lieberman, Victor B. (২০০৩)। Strange Parallels: Southeast Asia in Global Context, c. 800–1830, volume 1, Integration on the Mainland। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-80496-7।
  • Moore, Elizabeth H. (২০০৭)। Early Landscapes of Myanmar। Bangkok: River Books। আইএসবিএন 974-9863-31-3।
  • Myint-U, Thant (২০০৬)। The River of Lost Footsteps—Histories of Burma। Farrar, Straus and Giroux। আইএসবিএন 978-0-374-16342-6।

বহিঃসংযোগ

সরকার
সাধারণ তথ্য
অর্থনীতি
কৃষি
বাণিজ্য

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.