কর্কটক্রান্তি

কর্কটক্রান্তি বা কর্কটক্রান্তি রেখা (কর্কট মানে কাঁকড়া) বা উত্তর বিষুব পৃথিবীর মানচিত্রে অঙ্কিত প্রধান পাঁচটি অক্ষাংশের একটি। এটি বিষুবরেখা হতে উত্তরে অবস্থিত এবং ২৩ ডিগ্রী ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড অক্ষাংশ বরাবর কল্পিত একটি রেখা।

হেলে থাকা বিষুব রেখা
কর্কটক্রান্তি সহ পৃখিবীর মানচিত্র

পৃথিবী কক্ষতলের উপর লম্বভাবে থাকার বদলে একটু হেলে থাকে। (সারা বছর একই দিকে হেলে থাকে, সবসময় সূর্যের দিকে নয়- তাই জন্যে ঋতু পরিবর্তন হয় - বছরের অর্ধেক সময় উত্তর মেরু সূর্যের দিকে ফিরে থাকে)। কক্ষতলের উপর লম্বের থেকে আহ্নিক অক্ষের এই হেলে থাকা অর্থাৎ অবনতি কোণের পরিমাণ মোটামুটি ২৩ ডিগ্রী ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড (~২৩.৪৪ ডিগ্রী)। তাই কর্কট সংক্রান্তির (June Solstice) দিন অর্থাৎ সূর্যের উত্তরায়ণের সর্বোচ্চ দিন (যেদিন উত্তর গোলার্ধে দিবালোক সবচেয়ে বেশীক্ষণ থাকে) সূর্য যে অক্ষাংশ রেখায় লম্বভাবে আলোকপাত করে সেই ২৩ ডিগ্রী ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড অক্ষাংশ রেখাই হল কর্কটক্রান্তি রেখা।

২৩ ডিগ্রী ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড অক্ষাংশ রেখাটিকে কর্কটক্রান্তি রেখা বলা হলেও লম্ব আলোকপাতে আসল অবস্থান নির্ভর করে পৃথিবীর হেলে থাকার কৌণিক পরিমাণের উপর। আর সেই কোণটি প্রতি ৪১,০০০ বছরের একটি চক্রাকার পর্যায়ক্রমে ২১.৫ থেকে ২৪.৫ ডিগ্রীর মধ্যে বদলাতে থাকে। সেই হিসাবে বর্তমান পর্যায়ে কর্কটক্রান্তি রেখার অবস্থান প্রতি বছর আধ সেকেন্ড করে কমে আসছে। এছাড়া ধীর পরিবর্তন ছাড়াও আহ্নিক অক্ষটি ঘুর্ণণরত লাট্টুর মতই স্থায়ী না থেকে প্রিসেশন নামে একটি বলয়াকার গতি এবং ন্যুটেশন নামে একটি দোদুল্যমান গতি পরিদর্শন করে। ন্যুটেশনের পর্যায়কাল পৃথিবীর ক্ষেত্রে ১৮.৬ বছর এবং কৌণিক পরিমাণ প্রায় সাড়ে নয় সেকেন্ড। রেখাটি নির্দিষ্ট নয় এবং এটি প্রত্যেক বছর ১৫ মিটার(০.৪৮৬″) করে দক্ষিণদিকে সরে যাচ্ছে। রেখাটি ১৯১৭ সালে ছিল ২৩° ২৭′ এবং ২০৪৫ সালে ২৩° ২৬'অক্ষাংশে পৌঁছাবে।[1]

নামের ইতিহাস

এই নামকরণ হয় কারণ তখন কর্কট সংক্রান্তির দিন সূর্য কর্কট রাশিতে অবস্থান করছিল। কিন্তু প্রিসেশনের কারণে বর্তমানে কর্কট সংক্রান্তির দিন সূর্য আসলে মিথুন রাশিতে অবস্থান করে।

যেসব দেশের অবস্থান কর্কটক্রান্তির উপর

মূল মধ্যরেখা থেকে শুরু করে পূর্বদিকে গেলে কর্কটক্রান্তি রেখা যে সমস্ত দেশ ও সমুদ্রের উপর দিয়ে যায় সেগুলো হল:

অক্ষের হেলে থাকার কৌণিক পরিমাণ বদল
প্রিসেশনের উপর সন্নিবেশিত ন্যুটেশন
স্থানাঙ্ক দেশ, অঞ্চল বা সমুদ্র মন্তব্য
২৩°২৬′ উত্তর ০°০′ পূর্ব  আলজেরিয়া
২৩°২৬′ উত্তর ১১°৫১′ পূর্ব  নাইজার
২৩°২৬′ উত্তর ১২°১৭′ পূর্ব  লিবিয়া কর্কটক্রান্তি রেখা ২৩°২৬′ উত্তর ১৫°৫৯′ পূর্ব-এ চাদের উত্তর সীমা স্পর্শ করে।
২৩°২৬′ উত্তর ২৫°০′ পূর্ব  মিশর
২৩°২৬′ উত্তর ৩৫°৩০′ পূর্ব লোহিত সাগর
২৩°২৬′ উত্তর ৩৮°৩৮′ পূর্ব  সৌদি আরব
২৩°২৬′ উত্তর ৫২°৮′ পূর্ব  সংযুক্ত আরব আমিরাত কেবলমাত্র আবু ধাবি আমিরাত
২৩°২৬′ উত্তর ৫৫°২৪′ পূর্ব  ওমান
২৩°২৬′ উত্তর ৫৮°৪৬′ পূর্ব ভারত মহাসাগর আরব সাগর
২৩°২৬′ উত্তর ৬৮°২৩′ পূর্ব  ভারত গুজরাত, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডপশ্চিমবঙ্গ রাজ্য
২৩°২৬′ উত্তর ৮৮°৪৭′ পূর্ব  বাংলাদেশ খুলনা, ঢাকা, ও চট্টগ্রাম বিভাগ
২৩°২৬′ উত্তর ৯১°১৪′ পূর্ব  ভারত ত্রিপুরা রাজ্য
২৩°২৬′ উত্তর ৯১°৫৬′ পূর্ব  বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগ
২৩°২৬′ উত্তর ৯২°১৯′ পূর্ব  ভারত মিজোরাম রাজ্য
২৩°২৬′ উত্তর ৯৩°২৩′ পূর্ব  মায়ানমার (বর্মা) চিন রাজ্য, সাগাইং বিভাগ, মান্দালয় বিভাগ, শান রাজ্য
২৩°২৬′ উত্তর ৯৮°৫৪′ পূর্ব  গণচীন Provinces of Yunnan (passing about 7 km north of the border with  ভিয়েতনাম), Guangxi, and Guangdong
২৩°২৬′ উত্তর ১১৭°৮′ পূর্ব তাইওয়ান প্রণালী
২৩°২৬′ উত্তর ১২০°৮′ পূর্ব  প্রজাতন্ত্রী চীন (তাইওয়ান) চিয়ায়ি কাউন্টি, হুয়ালেইন কাউন্টি
২৩°২৬′ উত্তর ১২১°২৯′ পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর Passing just south of Necker Island, Hawaii,  যুক্তরাষ্ট্র
২৩°২৬′ উত্তর ১১০°১৫′ পশ্চিম  মেক্সিকো বাহা ক্যালিফোর্নিয়া সুর রাজ্য
২৩°২৬′ উত্তর ১০৯°২৪′ পশ্চিম ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগর
২৩°২৬′ উত্তর ১০৬°৩৫′ পশ্চিম  মেক্সিকো সিনালোয়া, দুরাঙ্গো, যাকাটেকাস, সান লুই পোওসি, নুয়েভো লিয়োঁ এবং টামাউলিপাস রাজ্য
২৩°২৬′ উত্তর ৯৭°৪৫′ পশ্চিম মেক্সিকো উপসাগর
২৩°২৬′ উত্তর ৮৩°০′ পশ্চিম অতলান্তিক মহাসাগর Passing through the Straits of Florida and the Nicholas Channel
Passing just south of the Anguilla Cays ( বাহামা দ্বীপপুঞ্জ)
Passing through the Santaren Channel and into the open ocean
২৩°২৬′ উত্তর ৭৬°০′ পশ্চিম  বাহামা দ্বীপপুঞ্জ Exuma Islands and Long Island
২৩°২৬′ উত্তর ৭৫°১০′ পশ্চিম অতলান্তিক মহাসাগর
২৩°২৬′ উত্তর ১৫°৫৭′ পশ্চিম পশ্চিম সাহারা  মরক্কো কর্তৃক দাবীকৃত
২৩°২৬′ উত্তর ১২°০′ পশ্চিম  মৌরিতানিয়া
২৩°২৬′ উত্তর ৬°২৩′ পশ্চিম  মালি
২৩°২৬′ উত্তর ২°২৩′ পশ্চিম  আলজেরিয়া

অন্যান্য তথ্য

রেখাটির দৈর্ঘ্য ৩৬,৭৮৭.৫৫৯ কিমি বলে ধরা হয় যদিও উপরোল্লিখিত কারণে এত সঠিক মাপ বলা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক বায়ুভ্রমণ ফেডারেশনের (Fédération Aéronautique Internationale) নিয়ম অনুসারে পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী বায়ু ভ্রমণ দাবী করতে হলে কমপক্ষে এই দৈর্ঘ্য অতিক্রম করতে হবে, সবকটি দ্রাঘিমারেখাকে পার হতে হবে এবং যে বিমান বন্দরে যাত্রা শুরু সেই একই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হবে।

চীনদেশের শীতল পার্বত্যাঞ্চল বাদ দিলে, এবং পূর্বাংশে অবস্থিত উপকূলীয় এলাকা যেখানে অরোগ্রাফিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে সেগুলি ব্যাতীত, কর্কটক্রান্তি রেখায় অবস্থিত অঞ্চলগুলি সাধারণত উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে থাকে। [2]

তথ্যসূত্র

  1. "Montana State University: Milankovitch Cycles & Glaciation"। ৬ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৮
  2. Balek, Jaroslav (১৯৮৩)। Developments in Water Science। Amsterdam, Neterlands: Elsevier B.V.। পৃষ্ঠা 22–69।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.