আলজেরিয়া

আলজেরিয়া উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত রাষ্ট্র। আলজেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র (সুদানের পরেই)। দেশটির নয়-দশমাংশ জুড়ে সাহারা মরুভূমি অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরের তীরে উপকূলীয় সমভূমি রয়েছে। আলজেরিয়ার প্রায় সব মানুষ দেশটির উত্তরাঞ্চলে উপকূলের কাছে বাস করে। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত আলজিয়ার্স দেশটির বৃহত্তম শহররাজধানী। আলজেরিয়ার আরবি নাম আলজাজাইর (অর্থাৎ দ্বীপসমূহ); নামটি রাজধানীর তীর সংলগ্ন দ্বীপগুলিকে নির্দেশ করছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী আলজেরিয়া
الجمهورية الجزائرية الديمقراطية الشعبية (আরবি)
ⵟⴰⴳⴷⵓⴷⴰ ⵜⴰⵎⴻⴳⴷⴰⵢⵜ ⵜⴰⵖⴻⵔⴼⴰⵏⵜ ⵜⴰⵣⵣⴰⵢⵔⵉⵜ (বার্বার)
পতাকা জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: "By the people and for the people"[1][2]
"রাষ্ট্রবিপ্লব জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য"
জাতীয় সঙ্গীত: Kassaman
("The Pledge")
"কেসামান"
 আলজেরিয়া-এর অবস্থান (dark green)
 আলজেরিয়া-এর অবস্থান (dark green)
রাজধানী
এবং বৃহত্তম নগরী
আলজিয়ার্স
৩৬°৪২′ উত্তর ৩°১৩′ পূর্ব
সরকারি ভাষা আরবি
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা (সমূহ) তামাযাইত (জাতীয় ভাষা)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ আলজেরিয়ান
সরকার অর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র
   রাষ্ট্রপতি আব্দুল আজিজ বৌতাফলিকা
   প্রধানমন্ত্রী আহমেদ ওইয়াহিয়া
প্রতিষ্ঠান
   হাম্মাদিদ রাজবংশ ১০১৪ থেকে 
   উস্‌মানীয় নীতি ১৫১৬ থেকে 
   ফরাসি নীতি ১৮৩০ থেকে 
   ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা ৫ই জুলাই ১৯৬২ 
আয়তন
   মোট ২৩,৮১,৭৪১ কিমি (10th)
৯,১৯,৫৯৫ বর্গ মাইল
   জল/পানি (%) negligible
জনসংখ্যা
   2016 আনুমানিক 40,400,000[3] (33rd)
   2013 আদমশুমারি 37,900,000[3]
   ঘনত্ব 15.9/কিমি (208th)
৩৭.৯/বর্গ মাইল
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
2017 আনুমানিক
   মোট $634.746 billion[4]
   মাথা পিছু $15,281[4]
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) 2017 আনুমানিক
   মোট $173.947 billion[4]
   মাথা পিছু $4,187[4]
জিনি সহগ (1995)35.3[5]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (2015) 0.736[6]
উচ্চ · 83rd
মুদ্রা আলজেরিয়ান দিনার (DZD)
সময় অঞ্চল সিইটি
   গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) পর্যবেক্ষণ করা হয়নি (ইউটিসি)
কলিং কোড ২১৩
ইন্টারনেট টিএলডি .dz

আলজেরিয়ার বেশির ভাগ লোক আরব, বার্বার কিংবা এই দুইয়ের মিশ্রণ। বার্বারেরা প্রথম উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করে। ৭ম শতকের শেষভাগে আরব মুসলিমেরা উত্তর আফ্রিকা জয় করে এবং ইসলামআরবি ভাষার প্রচলন করে। বর্তমানে আলজেরিয়ার প্রায় সবাই মুসলিম ও আরবিভাষী। সংখ্যালঘু বার্বারেরা ইসলাম গ্রহণ করলেও নিজ ভাষা ও রীতিনীতি বিসর্জন দেয় নি। আলজেরিয়াতে ফরাসি ভাষাও বহুল প্রচলিত।

আলজেরিয়া ১৯শ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৬২ সালে ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। আট বছর ধরে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশটির অশেষ ক্ষতিসাধন হয়, এবং এখান থেকে বহু ইউরোপীয় চলে যায়।

স্বাধীনতার সময়ে আলজেরিয়ার অর্থনীতি ছিল অণুন্নত ও কৃষিনির্ভর, তবে সরকার শীঘ্রই এটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেন। বর্তমানে আলজেরিয়া আফ্রিকার ধনী দেশগুলির একটি, এবং এর অন্যতম কারণ পেট্রোলিয়ামের রপ্তানি। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সামরিক বাহিনী ও ইসলামী মৌলবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ দেশটিকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেয়। তবে সরকারী উদ্যোগের ফলে ২১শ শতকের শুরুতে এই যুদ্ধ অনেকাংশেই দমন সম্ভব হয়েছে।

ইতিহাস

রাজনীতি

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

সামরিক বাহিনী

আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আলজেরিয়ার সামরিক বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক। ২০০৪ সালে আলজেরিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১,৩৭,৫০০। এদের মধ্যে স্থল সামরিক বাহিনীতে আছেন প্রায় ১,২০,০০০ জন সেনা। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়েই সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়। এই সামরিক বাহিনী উত্তর আফ্রিকার ২য় বৃহত্তম,যার আগে রয়ছে মিশর। আলজেরিয়ার বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার। এরা সোভিয়েত, চেক, মার্কিন ও ফরাসি-নির্মিত জেট বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। নৌবাহিনীতে প্রায় ৭,৫০০ জন কর্মরত আছেন।

ভূগোল

আলজেরিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে তিউনিসিয়ালিবিয়া, দক্ষিণে নাইজার, মালি এবং মোরিতানিয়া, পশ্চিমে মরক্কোপশ্চিম সাহারা। এটি একটি বিশাল দেশ। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটিকে দুইটি সুস্পষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত অঞ্চলটি তেল নামে পরিচিত। এটি মূলত তেল অ্যাটলাস পর্বতমালাটি নিয়ে গঠিত, যা উপকূলীয় সমভূমিগুলিকে দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি থেকে আলাদা করেছে। এখানকার জলবায়ু ভূমধ্যসাগর দ্বারা প্রভাবিত। দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি প্রায় সম্পূর্ণই মরুভূমি আবৃত। এই অঞ্চলটি আলজেরিয়ার আয়তনের সিংহভাগ গঠন করেছে। এটি মূলত গোটা উত্তর আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমির পশ্চিম অংশ।

ভূমিরূপ

আলজেরিয়ার ভূমিরূপের মূল গাঠনিক বৈশিষ্ট্যগুলি আফ্রিকান ও ইউরেশীয় ভূত্বকীয় পাতগুলির মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় সীমারেখা বরাবর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশটি দুইটি ভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চলে বিভক্ত। উত্তরের তেল নামক অঞ্চলটিতে দেশের বেশির ভাগ নাগরিক বাস করেন। এখানে দুইটি ভৌগলিকভাবে নবীন স্তুপপর্বতমালা রয়েছে: তেল অ্যাটলাস পর্বতমালা এবং সাহারান অ্যাটলাস পর্বতমালা। এগুলি সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে এবং উচ্চ মালভূমি দ্বারা এরা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন। দক্ষিণের সাহারা মরুভূমি অঞ্চলটি একটি কঠিন, প্রাচীন, আনুভূমিক ও সুষম শিলাস্তরের উপর অবস্থিত। বেশ কিছু মরূদ্যান ছাড়া এখানে তেমন কোন জনবসতি নেই। তবে এখানে প্রচুর লুক্কায়িত খনিজ সম্পদ আছে, যার মধ্যে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস অন্যতম।

মৃত্তিকা

ক্রমাগত বৃক্ষ ও উদ্ভিদ নিধন এবং ভূমিক্ষয়ের কারণে উর্বর বাদামী মাটিযুক্ত এলাকার আয়তন কমে গেছে। কেবল কিছু উচ্চভূমিতেই এরকম উর্বর মাটি দেখতে পাওয়া যায়; সেখানে এখনও চিরহরিৎ ওকে অরণ্যের দেখা মেলে। উত্তর তেল পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলগুলিতে মূলত ভূমধ্যসাগরীয় লাল মাটি পাওয়া যায়। দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হবার সাথে সাথে আর্দ্রতা ও মাটির পরিপক্কতা ক্রমাগত কমতে থাকে। এই অঞ্চলে আবহাওয়ার কারণে রাসায়নিক উপায়ে শিলাভাঙ্গন ও জৈবিক বস্তুর সঞ্চয় খুবই কম। মরু অঞ্চলগুলিতে প্রায় সার্বক্ষণিক শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া আরও ব্যহত হয়। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সাহারা মরুভূমির উত্তরমুখী দখল ঠেকানোর জন্য একটি সবুজ প্রতিবন্ধক বলয় তৈরির একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু হয়েছিল। প্রকল্পটিতে প্রায় ২০ কিমি প্রশস্ত এবং প্রায় ১৬০০ কিমি দীর্ঘ একটি ফিতাসদৃশ ভূমিকে বনে রূপান্তরিত করার কথা ছিল। প্রকল্পটি আংশিকভাবে সফল হয়। ১৯৮০-র দশকের মধ্যভাগে আরও প্রায় ৩৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বনায়ন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

অর্থনীতি

জনসংখ্যা

জাতিগোষ্ঠীসমূহ

ভাষা

১৯৯০ সালে আরবি ভাষাকে সরকারীভাবে আলজেরিয়ার জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সিংহভাগ আলজেরীয় মানুষ প্রচলিত কথ্য আরবি ভাষার একাধিক উপভাষাগুলির কোনও একটিতে কথা বলেন। মরক্কো ও তিউনিসিয়ার যে অঞ্চলগুলি আলজেরিয়ার সীমানার কাছে অবস্থিত সেখানকার উপভাষাগুলির সাথে এই উপভাষাগুলির মোটামুটি মিল আছে। বিদ্যালয়গুলিতে আধুনিক আদর্শ বা প্রমিত আরবি ভাষা শেখানো হয়। আলজেরিয়ার ইমাজিগেন নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা আমাজিগ ভাষার বিভিন্ন ভৌগলিক উপভাষাতে কথা বলে, তবে এদের বেশিরভাগই আরবি ভাষাতেও সমানভাবে কথা বলতে পারে।

স্বাধীনতার পর থেকেই আলজেরিয়ার সরকারের নীতি ছিল "আরবিকরণ", অর্থাৎ স্থানীয় আরবি ভাষাকে উৎসাহিত করা এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলি সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় ভাষামাধ্যম হিসেবে আরবি ভাষা ফরাসি ভাষাকে প্রতিস্থাপিত করেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাদানের মূল ভাষা হিসেবে এখন আরবি ব্যবহার করা হয়। কিছু আমাজিক জাতিদল এই নীতির জোর বিরোধিতা করেছে, কেননা তাদের আশঙ্কা হল এর ফলে দেশে সংখ্যাগুরু আরবিভাষী জনগণ তাদেরকে দমন করবে। ২০০২ সালে আমিজাগ ভাষাকে জাতীয় ভাষা এবং ২০১৬ সালে এটিকে সরকারী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

ধর্ম

জনবসতির বিন্যাস

জনসাংখ্যিক ভাবধারা

সংস্কৃতি

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. আলজেরিয়ার সংবিধান ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ জুলাই ২০১২ তারিখে (১৯৯৬), Art. ১১ [ar]
  2. আলজেরিয়ার সংবিধান ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ জুলাই ২০১৩ তারিখে (১৯৯৬), Art. ১১ [en]
  3. "Démographie (ONS)"। ONS। ১৯ জানুয়ারি ২০১৬। ৬ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৪
  4. Algeria. International Monetary Fund
  5. Staff। "Distribution of Family Income – Gini Index"The World Factbook। Central Intelligence Agency। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯
  6. "2015 Human Development Report" (PDF)। United Nations Development Programme। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫। পৃষ্ঠা 21–25। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

বহিঃসংযোগ

সরকার
সাধারণ তথ্য
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.