আলজেরিয়ার ভাষা

আলজেরিয়াতে বর্তমানে একটি বহুভাষিক অবস্থা বিরাজমান, যেখানে আরবি, ফরাসিবার্বার ভাষা তিনটি প্রধান ভাষা।

ফ্রান্সের থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ফরাসি ঔপনেবিশক আমলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আলজেরিয়াতে "আরবিকরণ" শুরু হয়। আলজেরীয় সরকার আরবি ভাষাকে কেবল একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবেই ঘোষণা দেয়নি, বরং শিক্ষা, ব্যবসা, গণমাধ্যম --- সব ক্ষেত্রে ফরাসির বদলে আরবিকে একমাত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। তারা একই সাথে একটি আদর্শ আলজেরীয় আরবি ভাষা প্রবর্তনের মাধ্যমে আলজেরিয়ায় প্রচলিত নানা আরবি উপভাষাগুলির মধ্যে একটি সমতা আনার চেষ্টা করেন। আলজেরিয়াতে তাই তিন ধরনের আরবি প্রচলিত --- ধ্রুপদী আরবি বা কুরআন শরীফের আরবি ভাষা, যা ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত উচ্চমানের আরবি হিসেবে পরিগণিত; আধুনিক আলজেরীয় আরবি যা সরকারী কাজকর্ম, শিক্ষা, গণমাধ্যম, ব্যবসা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত; এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক আরবি উপভাষাসমূহ, যেগুলোর সামাজিক মর্যাদা নিম্ন এবং লিখিত মাধ্যমে যেগুলির প্রচলন নেই।

কিন্তু ফরাসির প্রভাব অপসারণের উদ্দেশ্যে ভাষা বিষয়ক অনেক পরিকল্পনা করা হলেও আলজেরিয়ার স্কুল কলেজে প্রধান বিদেশী ভাষা হিসেবে এখনও ফরাসি ভাষাই শেখানো হয়। এর অন্যতম কারণ ফ্রান্সে বিপুল সংখ্যক ফরাসি-ভাষী আলজেরীয় অভিবাসী আছেন, যারা এখনও মাতৃভূমির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। এছাড়া স্যাটেলাইট চ্যানেলের আবির্ভাবের পর আলজেরীয়রা ঘরে বসেই ফরাসি টেলিভিশনের সমস্ত চ্যানেল উপভোগ করতে পারেন। তবে ফরাসি ভাষার এই মর্যাদা বর্তমানে ইংরেজির কাছে খানিকটা হুমকির সম্মুখীন।

আলজেরিয়ার জনগণের প্রায় ২৫ থেকে ৩০% লোক উত্তর আফ্রিকার আদিবাসী বার্বার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং এদের মাতৃভাষা আরবি নয়, বরং বার্বার ভাষা। কিন্তু এদের ভাষাকে আলজেরিয়ার সংবিধানে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছিল। বার্বারেরা এই উপেক্ষা সুনজরে দেখেনি। ২০০১ সালে এক বিদ্রোহের পর বার্বার ভাষাকে আলজেরিয়ার দ্বিতীয় জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়। তবে সরকারী কাজে ও শিক্ষাক্ষেত্রে এখনো এর প্রচলন হয়নি।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.