দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকা, যার সরকারি নাম রিপাবলিক অফ সাউথ আফ্রিকা, আফ্রিকার দক্ষিণে অবস্থিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এটি নয়টি প্রদেশে বিভক্ত, যার উপকূলের দৈর্ঘ্য ২,৭৯৮ কিলোমিটার (১,৭৩৯ মা)[7][8]


চিত্র:Coat of arms of South Africa.svg
পতাকা Coat of arms
নীতিবাক্য: !ke e: ǀxarra ǁke  (ইজ্যাম)
"Unity In Diversity"
"বহুমুখিতাতে একতা"
জাতীয় সঙ্গীত: National anthem of South Africa
"আফ্রিকাকে ঈশ্বর আশীর্বাদ দিক"
দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান
রাজধানীপ্রিটোরিয়া (কার্যকরী)
ব্লমফাটিন (বিচারালয় সংক্রান্ত)
কেপ টাউন (আইন প্রণয়ন সম্বন্ধীয়)
বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গ (২০০৬) [1]
সরকারি ভাষা
জাতিগোষ্ঠী ৭৯.৩% কালো
৯.১% সাদা
৯.০% রঙিন
২.৬% এশিয়ান[3]
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ দক্ষিণ আফ্রিকান
সরকার সাংবিধানিক গণতন্ত্র
   রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা
   সহকারী রাষ্ট্রপতি Kgalema Motlanthe
   এনসিওপি সভাপতি M. J. Mahlangu
   জাতীয় বিধানসভা স্পিকার ম্যাক্স সিসুলু
   প্রধান বিচারপতি Sandile Ngcobo
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে
   ইউনিয়ন ৩১শে মে ১৯১০ 
   ওয়েস্টমিনিস্টারের সংবিধি ১১ই ডিসেম্বর ১৯৩১ 
   প্রজাতন্ত্র ৩১শে মে ১৯৬১ 
   জল/পানি (%) Negligible
জনসংখ্যা
   ২০০৯ আনুমানিক ৪৯,৩২০,০০০[3] (২৫তম)
   ২০০১ আদমশুমারি ৪৪,৮১৯,৭৭৮[4]
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
২০০৯ আনুমানিক
   মোট $৪৯০.৩০৭ বিলিয়ন[5] (২৫তম)
   মাথা পিছু $৯,৯৬১.০২[5] (৭৯তম)
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) ২০০৯ আনুমানিক
   মোট $২৭৭.৩৭৯ বিলিয়ন[5] (৩২তম)
   মাথা পিছু $৫,৬৩৫.২০[5] (৭৬তম)
জিনি সহগ (২০০৫)৬৫[6] (২য়)
ত্রুটি: জিনি সহগের মান অকার্যকর
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৭) ০.৬৭৪
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ১২১তম
মুদ্রা রেন্ড (ZAR)
সময় অঞ্চল SAST (ইউটিসি+২)
গাড়ী চালনার দিক left
কলিং কোড ২৭
ইন্টারনেট টিএলডি .za

দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণের একটি রাষ্ট্র। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। ঐতিহাসিকভাবে বিংশ শতাব্দীর মধ্য হতে শেষ দশক পর্যন্ত এই দেশটি বর্ণবাদের জন্য সারা বিশ্বে নিন্দিত ছিল।

প্রাগৈতিহাসিক পর্যায়

দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের কিছু খুবই প্রাচীন জীবাশ্ম ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা যায়। Gauteng Province এর অনেক গুহায় বাদবাকি বিস্তৃত জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ আফ্রিকায় যারা প্রথমে বসতি স্থাপন করে তারা স্যান নামে পরিচিত। এরপর আসে খৈ খৈ ও বান্টু ভাষার লোকজন। আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চল থেকে এরা যাযাবর হিসেবে এখানে আসে। ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে কেপ সাগরপথ আবিষ্কারের দেড় শ’ বছর পর ১৬৫২ খ্রিষ্টাব্দে হল্যান্ডের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এখানে একটি বিশ্রামকেন্দ্র স্থাপন করে। পরে সেটাকেই কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে কেপটাউন শহর। তখন সেখানে বাস করত স্থায়ী জোনা ও জুলু সম্প্রদায়। কেপটাউনে ইউরোপীয়দের আগমন ও বসতি স্থাপন বাড়তে থাকে। তবে অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগ পর্যন্ত তা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। স্থানীয় অধিবাসী ও বসতি স্থাপনকারীরা ১৭৯৫ সালে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালায়। হল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত লোকজন একসাথে এ প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু ব্রিটিশরা প্রবল হয়ে ওঠে এবং ১৮০৬ সালে কেপটাউনকে ব্রিটিশ উপনিবেশ করে নেয়। ১৮১৫ সালে নেপোলিয়ানের যুদ্ধের শেষে ব্রিটিশরা পুরো এলাকায় দখল প্রতিষ্ঠা করে এবং আরো পাঁচ হাজার বসতি স্থাপন করে। ইউরোপের অন্য বাসিন্দাদের তারা আফ্রিকার উত্তর ও পূর্ব দিকে বিতাড়িত করে। এদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ হাজার। সেখানে গিয়ে তারা ট্রান্সভাল ও অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৬৭ সালে সেখানে হীরক ও নয় বছর পরে স্বর্ণ খনি আবিষ্কৃত হয়। তখন যেমন বাইরের লোকদের আগমন বেড়ে যায়, তেমনি কেপ কলোনির প্রধানমন্ত্রী সেসিল রোডস চক্রান্ত আঁটতে থাকেন উত্তর ও পূর্বাঞ্চলকে একীভূত করে নেয়ার জন্য। আসলে এটা ছিল খনিজসম্পদ দখলে নেয়ার জন্য স্থানীয়দের সাথে ব্রিটিশ শক্তির সঙ্ঘাত। ১৯০২ সালে স্থানীয়রা পরাজিত হয়। তবুও ব্রিটিশরা এখানে সীমিত স্বায়ত্তশাসন দান করে এবং ১৯১০ সালে গঠিত হয় ইউনিয়ন অব সাউথ আফ্রিকা। আগের দুই প্রজাতন্ত্র এবং পুরনো কেপ ও নাটাল উপনিবেশ এ চারটি প্রদেশ নিয়ে এটা গঠিত হয়। অব্রিটিশ লুইস বোথা হন প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তবে ১৯১২ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পর আফ্রিকানদের মধ্যে সংগঠিত রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু হয়।

রাজনীতি

দক্ষিণ আফ্রিকার রয়েছে তিনটি রাজধানী শহর। তিনটির মধ্যে সবচেয়ে বড় কেপটাউন আইনসভার রাজধানী। প্রিটোরিয়া প্রশাসনিক ও ব্লোয়েমফন্টেইন বিচারিক রাজধানী। দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। উচ্চকক্ষের নাম ন্যাশনাল কাউন্সিল অব প্রভিন্সেস যা ৯০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য ৪০০। নিম্নকক্ষের সদস্যরা জনসংখ্যার ভিত্তিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। অর্ধেক সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় তালিকা থেকে, আর অর্ধেক প্রাদেশিক তালিকা থেকে। উচ্চকক্ষ গঠিত হয় প্রত্যেক প্রদেশ থেকে দশজন সদস্য নিয়ে। এ ক্ষেত্রে জনসংখ্যার তারতম্য বিবেচ্য নয়। প্রতি পাঁচ বছর পর নির্বাচন হয়। নিম্নকক্ষে সরকার গঠিত হয় এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হন প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদ বিলুপ্তির পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রাধান্য বজায় রেখেছে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসি। তবে বর্ণবাদ চালু করেছিল যে ন্যাশনাল পার্টি, সেটার পুনর্গঠিত সংগঠন নিউ ন্যাশনাল পার্টি ২০০৫ সালের এপ্রিলে এএনসি’র সাথে একীভূত হয়ে যায়। ২০০৯ সালের নির্বাচনে এএনসি থেকে বেরিয়ে যাওয়া কংগ্রেস অব পিপল শতকরা ৭ দশমিক ৪ ভাগ এবং জুলু ভোটারদের প্রতিনিধিত্বকারী ইনকাথা ফ্রিডম পার্টি শতকরা ৪ দশমিক ৬ ভাগ ভোট পেয়েছে। এএনসি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স পেয়েছে শতকরা ১৬ দশমিক ৭ ভাগ ভোট। ফলে এএনসি’র ভোটের পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগেই রয়ে গেছে, যা প্রথম থেকে ছিল।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

নামজনসংখ্যাআয়তন (বর্গ কিমি)বৃহত্তম শহর
নর্থ ওয়েস্ট৩,৫৯৭,৬০০১০৪,৮৮২রুস্তেনবুর্গ
গুটেং১২,২৭২,২৬৩১৮,১৭৮জোহানেসবার্গ
কয়াজুলু-নাটাল১০,২৬৭,৩০০৯৪,৩৬১ডারবান
ইস্টার্ন কেপ৬,৫৬২,০৫৩১৬৮,৯৬৬পোর্ট এলিজাবেথ
ওয়েস্টার্ন কেপ৫,৮২২,৭৩৪১২৯,৪৬২কেপ টাউন

ভূগোল

অর্থনীতি

কেপটাউন এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। জাতিসঙ্ঘের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকা একটি মধ্য আয়ের দেশ। এখানে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। তেমনি এখানকার অর্থ আইন, যোগাযোগ, জ্বালানি ও যাতায়াতব্যবস্থা বেশ উন্নত। এখানকার স্টক এক্সচেঞ্জটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশটির একটি। ২০০৭ সালে জিডিপি’র দিক দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান ছিল ২৫তম। তবে বেকারত্বের হার অনেক বেশি এবং আয়ের বৈষম্য ব্রাজিলের প্রায় সমান। দক্ষিণ আফ্রিকা এ মহাদেশের সবচেয়ে বড় জ্বালানি উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারী দেশ। পর্যটনের জন্য দেশটি খুব প্রসিদ্ধ এবং রাজস্বের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। আফ্রিকার দেশগুলো ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য ও স্পেনের সাথে। প্রধান রফতানি দ্রব্য খাদ্যশস্য, হীরক, ফল, স্বর্ণ, ধাতব ও খনিজ দ্রব্য, চিনি ও উল। আমদানির এক-তৃতীয়াংশজুড়ে থাকে যন্ত্রপাতি ও যানবাহন। অন্যান্য আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল সামগ্রী, উৎপাদিত পণ্য ও পেট্রোলিয়াম।

সংস্কৃতি

সমাজ ও সংস্কৃতি দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দাদের নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যের কারণে এখানে কোনো একক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। খাদ্যের বৈচিত্র্যই পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণের বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কালো বাসিন্দারা এখনো বেশির ভাগই বাস করে গ্রামে। এরা প্রায়ই দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটায়। অবশ্য বর্তমানে প্রচুরসংখ্যক কালো মানুষ শহুরে হয়ে উঠছে। ফলে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি থেকে তারা পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছে। শহুরে লোকরা ইংরেজিতে কথা বলে। তবে তাদের নিজস্ব ভাষাও রয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রায় পুরোটা শ্বেতাঙ্গ। ইদানীং কালোরা তাতে যুক্ত হচ্ছে দ্রুতগতিতে। তেমনি অশ্বেতাঙ্গ ও ভারতীয় বা এশীয়রাও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Principal Agglomerations of the World at www.citypopulation.de
  2. The খোই, Nama and San languages; sign language; German, Greek, Gujarati, Hindi, Portuguese, Tamil, Telegu and Urdu; and Arabic, Hebrew, Sanskrit and "other languages used for religious purposes in South Africa" have a special status. See Chapter 1, Article 6, of the Constitution.
  3. Statistics South Africa (2009). "Mid-year population estimates" (.html). 2009. Stats SA. Retrieved on 2009-01-09.
  4. "Census 2001 at a glance"। Statistics South Africa। ২০০৭-০৮-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-০৭
  5. "South Africa"। International Monetary Fund। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০১
  6. সিআইএ পৃথিবীর ফেক্টবুক: দক্ষিণ আফ্রিকা
  7. "South African Maritime Safety Authority"। South African Maritime Safety Authority। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০০৮
  8. "Coastline"The World Factbook। CIA। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০০৮

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.