মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইংরেজি: United States of America ইউনাইটেড্ স্টেইট্স্ অফ্ আমেরিকা; সংক্ষেপে ইউনাইটেড স্টেটস বা ইউ. এস.) উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত একান্ন রাজ্য ও একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা নিয়ে গঠিত এক যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্র নামেও পরিচিত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত আটচল্লিশটি রাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি অঞ্চলসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডটি পশ্চিমে প্রশান্ত ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত; এই অঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত যথাক্রমে কানাডা ও মেক্সিকো রাষ্ট্রদ্বয়। আলাস্কা রাজ্যটি অবস্থিত মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে; এই রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে রয়েছে কানাডা ও পশ্চিমে বেরিং প্রণালী পেরিয়ে রয়েছে রাশিয়া। হাওয়াই রাজ্যটি মধ্য-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারভুক্ত।
United States of America ইউনাইটেড স্টেইটস অব আমেরিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
||||||
---|---|---|---|---|---|---|
|
||||||
নীতিবাক্য: ইন গড উই ট্রাস্ট (সরকারি) এ প্লুরিবুস উনুম (প্রথাগত) (লাতিন: বহুর মধ্যে এক) |
||||||
জাতীয় সঙ্গীত: "দ্য স্টার-স্প্যাংগলড ব্যানার" | ||||||
![]() অবস্থান |
||||||
রাজধানী | ওয়াশিংটন, ডি.সি. ৩৮°৫৩′ উত্তর ৭৭°০১′ পশ্চিম | |||||
বৃহত্তম শহর | নিউ ইয়র্ক | |||||
সরকারি ভাষা | যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে কোনোটিই নয়[a] | |||||
জাতীয় ভাষা | ইংরেজি | |||||
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা (সমূহ) | ||||||
জাতীয় ভাষা | ইংরেজি (কার্যত)[b] | |||||
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | মার্কিন (বিশেষণ), মার্কিনী (বিশেষ্য) | |||||
সরকার | যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র | |||||
• | রাষ্ট্রপতি | ডোনাল্ড ট্রাম্প | ||||
• | উপরাষ্ট্রপতি | মাইক পেন্স | ||||
• | হাউসের স্পিকার | ন্যান্সি পলসি (ডি) | ||||
• | প্রধান বিচারপতি | জন রবার্টস | ||||
স্বাধীনতা গ্রেট ব্রিটেন রাজ্য থেকে | ||||||
• | ঘোষিত | ৪ জুলাই, ১৭৭৬ | ||||
• | স্বীকৃতি | ৩ সেপ্টেম্বর, ১৭৮৩ | ||||
• | বর্তমান সংবিধান | ২১ জুন, ১৭৮৮ | ||||
আয়তন | ||||||
• | মোট | ৯৮,২৬,৬৭৫ কিমি২[1][c] (৩য়/৪র্থ) ৩৭,৯৪,১০১ বর্গ মাইল |
||||
• | জল/পানি (%) | ৬.৭৬ | ||||
জনসংখ্যা | ||||||
• | ২০১৭ আনুমানিক | ৩২৫,০১২,০০০[2] (৩য়) | ||||
• | ২০১০ আদমশুমারি | ৩০৯,৩৪৯,৬৮৯[3] (৩য়) | ||||
• | ঘনত্ব | ৩৫.০/কিমি২ (১৮০তম) ./বর্গ মাইল |
||||
মোট দেশজ উৎপাদন (ক্রয়ক্ষমতা সমতা) |
২০১৬ আনুমানিক | |||||
• | মোট | $১৮.৫৫৮ ট্রিলিয়ন[4] (২য়) | ||||
• | মাথা পিছু | $৫৭,২২০[4] (১৪তম) | ||||
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) | ২০১৬ আনুমানিক | |||||
• | মোট | $১৮.৫৫৮ ট্রিলিয়ন[4] (১ম) | ||||
• | মাথা পিছু | $৫৭,২২০[4] (৬ষ্ঠ) | ||||
জিনি সহগ (২০১৩) | ৪০.৮[5][6][7] মাধ্যম |
|||||
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৫) | ![]() অতি উচ্চ · ১০ম |
|||||
মুদ্রা | মার্কিন ডলার ($) (USD) | |||||
সময় অঞ্চল | (ইউটিসি-৫ হইতে -১০) | |||||
• | গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | (ইউটিসি-৪ হইতে -১০) | ||||
তারিখ বিন্যাস | মাস/তারিখ/বছর (খ্রিঃ) | |||||
গাড়ী চালনার দিক | ডান | |||||
কলিং কোড | +১ | |||||
ইন্টারনেট টিএলডি | .us .gov .mil .edu | |||||
^ ক. ইংরেজি অন্তত ২৮টি রাজ্যের সরকারি ভাষা। "সরকারি" কথাটির অর্থভেদের ভিত্তিতে কোনো কোনো সূত্র অনুযায়ী এই সংখ্যাটি আরও বেশি।[9] ইংরেজি ও হাওয়াইয়ান উভয় ভাষাই হাওয়াই রাজ্যের সরকারি ভাষা।
^ খ. ইংরেজি ভাষা মার্কিন সরকারের কার্যত (De facto ডি ফ্যাক্টো) সরকারি ভাষা। পাঁচ বছর এবং তার অধিক বয়স্ক আমেরিকানদের ৮০ শতাংশের একমাত্র কথ্য ভাষাও হল ইংরেজি। স্পেনীয় ভাষা দ্বিতীয় সাধারণ কথ্য ভাষা। ^ গ. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না গণপ্রজাতন্ত্রী চীন – কোন দেশটি আয়তনে বড়ো তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। প্রদত্ত সংখ্যাটি মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক থেকে গৃহীত। অন্যান্য সূত্র থেকে নানান ক্ষুদ্রতর সংখ্যা পাওয়া যায়। দেশের আয়তন সংক্রান্ত সকল সরকারি গণনায় কেবল পঞ্চাশটি রাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়ার আয়তন ধরা হয়ে থাকে, শাসিত অঞ্চলগুলি ধরা হয় না। ^ ঘ. জনসংখ্যা প্রাককলনটিতে অনাগরিক সহ যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটি রাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়ার সাধারণ বাসিন্দাদের ধরা হয়েছে। শাসিত অঞ্চলগুলির জনসংখ্যা এর মধ্যে ধরা হয়নি। উল্লেখ্য, শাসিত অঞ্চলগুলির জনসংখ্যা চল্লিশ লক্ষেরও বেশি (অধিকাংশ পুয়ের্তো রিকোর বাসিন্দা)। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রেরর বাইরে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিকদেরও ধরা হয়নি। |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় ৯৮.৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার (৩৭.৯ লক্ষ বর্গমাইল)। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৯০ লক্ষ। সামগ্রিক আয়তনের হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। আবার স্থলভূমির আয়তন ও জনসংখ্যার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৈচিত্র্যমণ্ডিত বহুজাতিক সমাজব্যবস্থা। বহু দেশ থেকে বিভিন্ন জাতির মানুষের অভিবাসনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ একটি বহুসংস্কৃতিবাদী দেশ।[10] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতি। ২০০৮ সালে দেশের আনুমানিক জিডিপি হার ছিল ১৪.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (নামমাত্র বিশ্ব জিডিপির এক চতুর্থাংশ এবং ক্রয় ক্ষমতা সমতায় বিশ্ব জিডিপির এক পঞ্চমাংশ)।[11][12]
আমেরিকার আদিম অধিবাসীরা সম্ভবত এশীয় বংশোদ্ভুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে এরা কয়েক হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। তবে নেটিভ আমেরিকানদের জনসংখ্যা ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পর থেকে মহামারী ও যুদ্ধবিগ্রহের প্রকোপে ব্যাপক হ্রাস পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আটলান্টিক মহাসাগর তীরস্থ উত্তর আমেরিকার তেরোটি ব্রিটিশ উপনিবেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই এই উপনিবেশগুলি একটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে উপনিবেশগুলি তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ঘোষণা করে এবং একটি সমবায় সংঘের প্রতিষ্ঠা করে। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিদ্রোহী রাজ্যগুলি গ্রেট ব্রিটেনকে পরাস্ত করে। এই যুদ্ধ ছিল ঔপনিবেশিকতার ইতিহাসে প্রথম সফল ঔপনিবেশিক স্বাধীনতা যুদ্ধ।[13] ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়া কনভেনশন বর্তমান মার্কিন সংবিধানটি গ্রহণ করে। পরের বছর এই সংবিধান সাক্ষরিত হলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার সহ একক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৭৯১ সালে সাক্ষরিত এবং দশটি সংবিধান সংশোধনী সম্বলিত বিল অফ রাইটস একাধিক মৌলিক নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো ও রাশিয়ার থেকে জমি অধিগ্রহণ করে এবং টেক্সাস প্রজাতন্ত্র ও হাওয়াই প্রজাতন্ত্র অধিকার করে নেয়। ১৮৬০-এর দশকে রাজ্যসমূহের অধিকার ও দাসপ্রথার বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ দক্ষিণাঞ্চল ও শিল্পোন্নত উত্তরাঞ্চলের বিবাদ এক গৃহযুদ্ধের জন্ম দেয়। উত্তরাঞ্চলের বিজয়ের ফলে দেশের চিরস্থায়ী বিভাজন রোধ করা সম্ভব হয়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা আইনত রদ করা হয়। ১৮৭০-এর দশকেই মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা পায়।[14] স্পেন-মার্কিন যুদ্ধ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সামরিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা দান করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দেশ প্রথম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে। ঠান্ডা যুদ্ধের শেষভাগে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের দুই-পঞ্চমাংশ খরচ করে এই দেশ। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিধর রাষ্ট্র।[15] ১৯৩০ এর দশকে ও একবিংশ শতকের প্রথম দশকের শেষে আমেরিকার অর্থনীতি 'অর্থনেতিক মহামন্দা' বা 'গ্রেট ডিপ্রেশন'র স্বীকার হয়।
নামকরণ
১৫০৭ সালে জার্মান মানচিত্রকর মার্টিন ওয়াল্ডসিম্যুলার বিশ্বের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন। এই মানচিত্রে তিনি ইতালীয় আবিষ্কারক ও মানচিত্রকর আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে পশ্চিম গোলার্ধের নামকরণ করেন "আমেরিকা"।[16] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে পূর্বতন ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি প্রথম দেশের আধুনিক নামটি ব্যবহার করে। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই "unanimous Declaration of the thirteen united States of America" নামে এই ঘোষণাপত্রটি "Representatives of the united States of America" কর্তৃক গৃহীত হয়।[17] ১৭৭৭ সালের ১৫ নভেম্বর দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসে আর্টিকলস অফ কনফেডারেশন বিধিবদ্ধকরণের মাধ্যমে বর্তমান নামটি চূড়ান্ত হয়। এই আর্টিকেলে বলা হয়েছিল: "The Stile of this Confederacy shall be 'The United States of America.'" সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে the United States নামটি প্রামাণ্য। অন্যান্য প্রচলিত নামগুলি হল the U.S., the USA, ও America। কথ্য নামগুলি হল the U.S. of A. ও the States। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নামানুসারে কলম্বিয়া নামটি এককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হত। "ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া" নামের মধ্যে এই নামটির আজও অস্তিত্ব রয়েছে।
মার্কিন নাগরিকেরা বাংলা ভাষায় "মার্কিনী" নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সংক্রান্ত বিশেষণ হিসেবে "মার্কিন" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।[18]
ইতিহাস
আদি আমেরিকান ও ইউরোপীয় উপনিবেশ
যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূমি এবং আলাস্কাতে বর্তমানে যে আদিবাসীরা বাস করে তারা এশিয়া থেকে অভিবাসী হয়ে এ অঞ্চলে এসেছিল। তারা আজ থেকে প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে থেকে আসা শুরু করেছিল বলে ধারণা করা হয়। কমপক্ষে ১২,০০০ বছর আগে তাদের আসার ব্যাপারটি তো প্রায় নিশ্চিত। প্রাক-কলাম্বীয় যুগের অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ই অগ্রসর কৃষি, স্থাপত্য এবং রাজ্য-সদৃশ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। ইউরোপীয় অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৩ সালের নভেম্বর ১৯ তারিখে আমেরিকা অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোতে এসেছিলেন। এর মাধ্যমে আদিবাসী আমেরিকানদের সাথে ইউরোপীয়দের প্রথম পরিচয় হয়। এর পর অধিকাংশ আমেরিকান আদিবাসীরাই ইউরেশিয়া অঞ্চলের মহামারী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
সে সময় আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনকারীদের বাসস্থান ছিল মূলত ফ্লোরিডায়। সেই ঔপরিবেশিক উপনিবেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে কেবল ১৫৬৫ সালে স্থাপিত সেন্ট অগাস্টিন উপনিবেশটিই টিকে আছে। এছাড়া ফরাসি পশুর লোম ব্যবসায়ীরা গ্রেট লেক্সের নিকটে নিউ ফ্রান্স নামক একটি বাসস্থল গড়ে তুলেছিল। এর পরে স্পেনীয়রা বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বিস্তৃত উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। এই অঞ্চল বর্তমান মেক্সিকোর অন্তর্গত। প্রথম সফল ইংরেজ উপনিবেশ ছিল ১৬০৭ সালে জেম্সটাউনে প্রতিষ্ঠিত ভার্জিনিয়া উপনিবেশ এবং ১৬২০ সালে প্রতিষ্ঠিত প্লিমাথ (ইংরেজি: Plymouth) উপনিবেশ। ১৬২৮ সালে ম্যাসাচুসেট্স বে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি অর্থায়নের পর ইংরেজদের মধ্যে অভিবাসনের জোয়ার বয়ে যায়। ১৬৩৪ সালের মধ্যে নিউ ইংল্যান্ডে প্রায় ১০,০০০ পিউরিটান বাসস্থান গড়ে তোলে। ১৬১০-এর দশকের শেষ দিকে ব্রিটিশ সেদেশের বিপ্লবীদের মধ্যে ৫০,০০০ জনকে আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহে স্থানান্তর করে। ১৬১৪ সাল থেকে নেদারল্যান্ডের উপনিবেশিকরা হাডসন নদীর নিম্নভূমি জুড়ে এবং ম্যানহাটন দ্বীপ ও নিউ আমস্টারডামে বসতি গড়ে তুলেছিল। ১৬৩৮ সালে সুয়েডীয়রা ডেলওয়্যার নদীর পাশ জুড়ে ছোট একটি উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল যার নাম ছিল নিউ সুইডেন। কিন্তু ১৬৫৫ সালে ডাচরা তা অধিকার করে নেয়।
ফরাসি এবং ভারতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে প্রায় ৭ বছর ধরে ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণ চলতে থাকে। ব্রিটেন ফ্রান্সের কাছ থেকে কানাডা দখল করে নেয়। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলীয় উপনিবেশসমূহ থেকে ফ্রাঙ্কোফোনের জনগণরা রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৬৭৪ সালে ইঙ্গ-ডেনীয় যুদ্ধে ডাচদেরকে পরাজিত করে ব্রিটেন প্রাক্তন ডাচ উপনিবেশসমূহ দখল করে নেয়। এর পর প্রাক্তন নিউ নেদারল্যান্ডের নাম রাখা হয় নিউ ইয়র্ক। ১৭২৯ সালে ক্যারোলিনাসমূহের বিভাজন এবং ১৭৩২ সালে জর্জিয়ার উপনিবেশিকীকরণের পর ১৩টি পৃথক পৃথক ব্রিটিশ উপনিবেশ সৃষ্টি হয়। এই ১৩টি উপনিবেশ মিলেই পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। যাহোক, এই রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটিতে সক্রিয় স্থানীয় এবং উপনিবেশিক সরকার ছিল যা স্বাধীন মানুষদের নির্বাচনের মাধ্যমে জন্ম লাভ করতো। রাজ্যগুলোর চেতনার মূলে ছিল ইংরেজদের প্রাচীন অধিকারের প্রতি আত্ম নিবেদন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত সরকার পদ্ধতির অনুপ্রেরণা যা পরবর্তীকালে প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্ম দেয়। সবগুলো রাজ্যেই আফ্রিকান দাসদের নিয়ে বাণিজ্য করা বৈধতা পেয়েছিল। উচ্চ জন্ম হার, নিম্ন মৃত্যু হার এবং চিরস্থায়ী অভিভাবসনের কারণে উপনিবেশগুলোর জনসংখ্যা প্রতি ২৫ বছরে দ্বিগুণ হয়ে যেতে থাকে।
সরকার ব্যবস্থা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান। আইনসভা দ্বিকাক্ষিক। নিম্নকক্ষের নাম হাউজ অভ রেপ্রেজেন্টেটিভ্স এবং এর সদস্যসংখ্যা ৪৩৫। উচ্চকক্ষের নাম সেনেট এবং এর সদস্যসংখ্যা ১০০। ভোট প্রদানের যোগ্যতা অর্জনের বয়স ১৮। ১৭৮৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় এবং ১৭৮৯ সালের ৪ঠা মার্চ থেকে এটি কার্যকর করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়।
প্রায় চার শতাব্দী আগে প্রণীত মার্কিন সরকার ব্যবস্থা সারা বিশ্বের প্রশংসা লাভ করেছে। মার্কিন জীবনের সাথে এটি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। মার্কিন সরকারব্যবস্থা শুরু থেকেই গণতন্ত্রকে শাসনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
মার্কিন সরকার ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় আইন, এবং এগুলিকে নির্বাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। ফেডারেল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্র ওয়াশিংটন ডিসি-তে অবস্থিত।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের একটি মূলনীতি হল প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। এই ব্যবস্থায় লোকেরা তাদের নিজেদের নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের শাসন করে। মার্কিন গণতন্ত্র বেশ কিছু আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। জনগণকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মেনে নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। নাগরিকদেরকে আইনী শাসন ব্যবস্থায় বাস করার জন্য সম্মত হতে হবে। মতামত ও ধারণার উন্মুক্ত আদানপ্রদানে কোন বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। আইনের চোখে সবাই সমান। সরকার জনগণের সেবায় নিয়োজিত হবে এবং এর ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকেই আসবে।
এই আদর্শগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা চারটি উপাদান দিয়ে গঠন করা হয়েছে। ১) জনগণের সার্বভৌমত্ব ২) প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ৩) ক্ষমতার পরীক্ষা ও ভারসাম্য (checks and balances) এবং ৪) ফেডেরালবাদ, যেখানে সরকারের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা অংশীদারী করা হয়।
আরও দেখুন
ভূগোল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত। এর উত্তরে কানাডা এবং দক্ষিণে সংযুক্ত মেক্সিকান রাষ্ট্রসমূহ অবস্থিত। পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত এই দেশ। এছাড়া হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলাস্কা অঙ্গরাজ্য এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন ভূমি এই রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত।
মহাদেশীয় যুক্তরাষ্ট্রের টপোগ্রাফিক মানচিত্র
আয়তনের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবী তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহৎ জাতি। এর আগে বা পরে চীনের অবস্থান। কিন্তু একটি অঞ্চল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় এই বিষয়ের সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। কেবল স্থলভাগের দিক দিয়ে চিন্তা করলে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ যার আগে কেবল রাশিয়া ও চীন আর পরে রয়েছে কানাডা। মহাদেশীয় যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা অতি বিস্তৃত, আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত, উত্তরে কানাডা থেকে দক্ষিণে মেক্সিকো ও মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত এর সীমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আয়তনের ভিত্তিতে এর বৃহত্তম অঙ্গরাজ্য হচ্ছে আলাস্কা। কানাডার মাধ্যমে পৃথকীকৃত এই রাজ্যটি প্রশান্ত ও আর্কটিক মহাসাগরকে স্পর্শ করেছে। উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের বুক অবস্থিত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এই দেশেরই অন্তর্ভুক্ত। দেশটির বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল পুয়ের্তো রিকো ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যায় সবুজ ভূমি ও কৃষি ফসল আবাদের উর্বর অঞ্চল, পাথুরে পাহাড়, তৃণাচ্ছাদিত সামান্য ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ ভূমি, উত্তর বায়ুর সাথে সামঞ্জস্যশীল বনভূমি দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল, আর দক্ষিণ-পশ্চিমে কেবল বিরান মরুভূমি। উত্তর-পশ্চিমে আটলান্টিকের কোল ঘেঁষে অবস্থিত বৃহৎ হ্রদ এলাকায়ই দেশটির অধিকাংশ মানুষের বসতি। গুয়াম অঞ্চল এবং আলাস্কার সবচেয়ে পশ্চিম প্রান্তের কিছু অঞ্চল ছাড়া পুরো দেশটাই উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত।
পরিমাপ পদ্ধতি
যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ একক ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। তারা ব্রিটিশদের ব্যবহৃত একক হিসেবে মাইল, গজ এবং ফারেনহাইট ইত্যাদি এককগুলো ব্যবহার করে না।[19] এর পরিবর্তে ইউ.এস গ্যালন এবং ইউ.এস পিন্ট পরিমাণের একক হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর তিনটি দেশের মধ্যে একটি, যারা আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি ব্যবহার করে না। মেট্রিক পদ্ধতিকে একক হিসেবে ধরে বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং অনেক শিল্পখাতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে।[20]
তথ্যসূত্র
- "United States"। The World Factbook। CIA। 2009-09-30। সংগ্রহের তারিখ 2010-01-05 (area given in square kilometers)। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "U.S. and World Population Clock"। United States Census Bureau। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৪, ২০১৭।
- "U.S. census department data" (pdf)। United States Census Bureau। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৪, ২০১৭।
- "Report for Selected Countries and Subjects"। IMF। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৯, ২০১৬।
- "OECD Income Distribution Database: Gini, poverty, income, Methods and Concepts"। Organisation for Economic Co-operation and Development।
- "Global inequality: How the U.S. compares"। Pew Research।
- "Income Distribution and Poverty : by country – INEQUALITY"। OECD। এপ্রিল ২, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- "2016 Human Development Report" (PDF)। United Nations Development Programme। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৩, ২০১৭।
- Feder, Jody (২০০৭-০১-২৫)। "English as the Official Language of the United States—Legal Background and Analysis of Legislation in the 110th Congress" (PDF)। Ilw.com (Congressional Research Service)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১৯।
- Adams, J.Q., and Pearlie Strother-Adams (2001). Dealing with Diversity. Chicago: Kendall/Hunt. আইএসবিএন ০-৭৮৭২-৮১৪৫-X.
- "World Economic Outlook Database"। International Monetary Fund। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৭। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - The European Union has a larger collective economy, but is not a single nation.
- Dull, Jonathan R. (2003). "Diplomacy of the Revolution, to 1783," p. 352, chap. in A Companion to the American Revolution, ed. Jack P. Greene and J. R. Pole. Maiden, Mass.: Blackwell, pp. 352–361. আইএসবিএন ১-৪০৫১-১৬৭৪-৯.
- Maddison, Angus (২০০৬)। "Historical Statistics for the World Economy"। The Groningen Growth and Development Centre, Economics Department of the University of Groningen। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৬।
- Cohen, Eliot A. (July/August 2004)। "History and the Hyperpower"। Foreign Affairs। ২০০৬-০৮-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2006-07-14। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) "Country Profile: United States of America"। BBC News। ২০০৮-০৪-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১৮। - "Cartographer Put 'America' on the Map 500 years Ago"। USA Today। ২০০৭-০৪-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-৩০।
- "The Charters of Freedom"। National Archives। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-২০।
- "Meaning of মার্কিন"।
- "English units of measurement". The Columbia Encyclopedia 6th ed. 2001–2007. archived copy.
- "Appendix G: Weights and Measures"। The World Factbook। CIA। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-০১।
বহিঃসংযোগ
- Government
- Official U.S. Government Web Portal Gateway to government sites
- House Official site of the United States House of Representatives
- Senate Official site of the United States Senate
- White House Official site of the President of the United States
- Supreme Court Official site of the Supreme Court of the United States
- Overviews and Data
- সিআইএ প্রণীত দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এ United States-এর ভুক্তি
- InfoUSA Portal to U.S. Information Agency resources
- Library of Congress Official site of the U.S. Library of Congress
- Demographic Highlights Statistics from the Population Reference Bureau
- The 50 States of the U.S.A. Collected informational links for each state
![]() |
উইকিভ্রমণে United States of America সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |
- United States Encyclopaedia Britannica entry
- কার্লি-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইংরেজি)
- U.S. Census Housing and Economic Statistics Wide-ranging data from the U.S. Census Bureau
- U.S. Citizenship and Immigration Services Official government site
- State Fact Sheets Population, employment, income, and farm data from the U.S. Economic Research Service
- State Energy Profiles Economic, environmental, and energy data for each state from the U.S. Energy Information Administration
- History
- Historical Documents Collected by the National Center for Public Policy Research
- U.S. National Mottos: History and Constitutionality Analysis by the Ontario Consultants on Religious Tolerance
- USA Collected links to historical data
- Maps
- National Atlas of the United States Official maps from the U.S. Department of the Interior
- United States Satellite view at WikiMapia (not affiliated with Wikipedia/Wikimedia Foundation)
উইকিমিডিয়া অ্যাটলাসে the United States