হরিনারায়ণ ঘোষাল
হরিনারায়ণ ঘোষাল বা থাকিন বা তিন (১৯১৫ - ১৮ জুন, ১৯৬৭)[1] বর্মার কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠাতা, বিপ্লবী আন্দোলনের প্রবীন সাম্যবাদী নেতা।[2] পিতা হর্ষনাথ ঘোষাল। আদি বাড়ি বাংলাদেশের বিক্রমপুর, ঢাকা[3]।
হরিনারায়ণ ঘোষাল | |
---|---|
জন্ম | ১৯১৫ |
মৃত্যু | ১৮ জুন ১৯৬৭ পেগু য়োমা, বর্মা |
আন্দোলন | সাম্যবাদ |
ছাত্র জীবন
ঘোষালের পিতা বর্মার কারাবিভাগের কর্মী ছিলেন। কার্যসূত্রে তিনি বর্মাতেই শিক্ষা সম্পুর্ন করেন। বদলীর চাকরি হওয়ার কারনে দেশের নানা জায়গার স্কুলে পড়তে হয়েছে। ছাত্রাবস্থায় বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবীদের প্রভাবে রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। রেঙ্গুনে কলেজে পড়ার সময় বেংগলী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সাথে যোগাযোগ হয় তার। ঘোষাল ছিলেন ছাত্র - যুব দের ভেতর ভীষন জনপ্রিয়। দীর্ঘদেহী, কৃষ্ণবর্ন এবং ক্ষুরধার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন[4]।
বিপ্লবী আন্দোলন
বেঙ্গলী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের অন্য সমস্ত সদস্যরা মূলত তারই প্রেরণায় কমিউনিস্ট মতবাদে আগ্রহী হন। বেঙ্গলী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন বর্মার মুক্তিসংগ্রামে ও চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। সদস্যদের মধ্যে ডাক্তার অমর নাগ, সুবোধ মুখার্জী, গোপাল মুন্সী, অমর দে, মাধব মুন্সী অন্যতম।[5] বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠকদের মধ্যে প্রবীন এই ব্যক্তিত্ব আত্মগোপন করা অবস্থায় 'থাকিন ঠে' কিংবা 'থাকিন বা তিন' নামে পরিচিত ছিলেন। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন, ছাত্র সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রনী সেনানী। ১৯৪১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় সমস্ত বাঙালি কমিউনিস্ট কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে যান। ঘোষাল বন্দী হন ইনসিন জেলে। তারপর সুবোধ মুখার্জী, অমর দে'র সাথে তাকে হেনজাদা জেলে পাঠানো হয়। এর কিছুকাল পরই জাপানি আক্রমনে ইংরেজরা বর্মা ছেড়ে পালাতে শুরু করে। জাপ বোমাবর্ষণে জেলখানা ভেংগে গেলেও আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে যান হরিনারায়ন ঘোষাল সহ বাকি কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা। বহু বিপদ পেরিয়ে প্রায় পুরো রাস্তা পদব্রজে অতিক্রম করে ভারতে আসেন তারা। এই যাত্রায় হরিনারায়ণ ঘোষালের সাথে ছিলেন সাধন ব্যানার্জী, অমর দে প্রমুখ। অন্যান্য কমিউনিস্ট বাঙালী বিপ্লবীরাও বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বর্মা পরিত্যাগ করেন[4][6]।
ভারতবর্ষে
দেশে ফিরে তিনি পার্টির স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত হন[6]। এরপরেও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও বর্মার কমিউনিস্ট সংগঠনের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষার কাজে ব্রিটিশ পুলিশের নজর এড়িয়ে কলকাতায় এসেছেন একাধিকবার। তার দিদি চারু বসু কলকাতায় নকশাল আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।[7]
বর্মা প্রত্যাবর্তন ও সশস্ত্র বিপ্লব
১৯৪৫ পরই ঘোষাল ও অন্যান্য বিপ্লবীরা প্রায় সকলেই বর্মা ফিরে আসেন অসমাপ্ত বিপ্লব পূর্ন করার আশায়। '১৯৪৮ এর বিপ্লবী সম্ভাবনা' নামে রনকৌশলের দলিল পেশ করেন ঘোষাল যাতে লেখা ছিল "বর্মার স্বাধীনতা একটা ধাপ্পা"। ১৯৪৮ সালে ১৪ মার্চ বার্মাতে এক বিশাল জনসভায় তিনি দেশজুড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেন গন মিলিশিয়া গঠনের মাধ্যমে। গোটা দেশ জুড়ে তীব্র গন আন্দোলন দমনে সরকার চরম দমনপীড়ন চালায়। পার্টির পলিটব্যুরো নেতা ঘোষাল ছিলেন মূলত প্রধান তাত্বিক যার রনকৌশলকে 'ঘোষাল থিসিস' বলা হতো। জনপ্রিয়তায় ও পার্টি নেতৃত্বের ভেতর অং সান এর পরেই ছিল এই বাঙালি বিপ্লবীর স্থান। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন[4]।
মৃত্য
বিপ্লবী হরিনারায়ণ ঘোষালের মৃত্যু আজো রহস্যাবৃত। দীর্ঘকাল আত্মগোপন থাকা অবস্থাতেই পার্টির অন্তর্বিরোধের ফলে কোনঠাসা হন। পরে তাকে হত্যা করা হয় এরকম ধারনা প্রচলিত আছে।[3]
তথ্যসূত্র
- Lintner, Bertil (১৯৯০-০১-০১)। The Rise and Fall of the Communist Party of Burma (CPB) (ইংরেজি ভাষায়)। SEAP Publications। আইএসবিএন 9780877271239।
- এম সাখাওয়াত হোসেন। "কমিউনিস্ট পার্টি অব বর্মার উত্থান ও পতন"। dainikamadershomoy.com। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৬১৭। আইএসবিএন 81-85626-65-0।
- গৌতম চট্টোপাধ্যায় (১৯৯২)। সমাজতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা ও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন। কলকাতা: পুস্তক বিপণি। পৃষ্ঠা ৬৮, ৭০। আইএসবিএন 81-85471-11-8।
- "মায়ানমারের ইতিহাস"। প্রথম সকাল। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- সাধন ব্যানার্জী (২০০২, সেপ্টেম্বর)। দাঙ্গা প্রতিরোধে ট্রাম শ্রমিকদের অসামান্য বীরগাথা। কলকাতা: উজানে, ত্রৈমাসিক। পৃষ্ঠা ১১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - Chabi Bosu। "Phire Dekha"। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭।