সুবোধ মুখার্জী

সুবোধ চন্দ্র মুখার্জী (১৯১৮-১৯৫৯) একজন বার্মার বিপ্লবী আন্দোলনের সাম্যবাদী নেতা।[1]

সুবোধ মুখার্জী
জন্ম১৯১৮
মৃত্যু১৯৫৯
আন্দোলনমায়ানমারের সাম্যবাদী আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবন

সুবোধ মুখার্জীর পিতা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ মুখার্জী এবং মা ছিলেন চারুবালা দেবী। তিনি বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার চাকরি অনুসারে তিনি বার্মারেঙ্গুনে আসেন এবং তার ছাত্রজীবন বার্মায় (অধুনা মায়ানমার) কাটে। তিনি ১৯৩০ সালে রেঙ্গুনের বেঙ্গল আকাদেমি স্কুল থেকে অ্যাংলো-ভার্নাকুলার মিডল স্কুল পরীক্ষায় পাশ করেন। তিনি সেদেশের বেঙ্গলী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের ছাত্র নেতা হরিনারায়ণ ঘোষালের প্রেরণায় কমিউনিস্ট মতবাদে আগ্রহী হন। এই বেঙ্গলী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন বর্মার মুক্তিসংগ্রামে ও চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার অমর নাগ, বারীন দে, সাধন ব্যানার্জী, গোপাল মুন্সী, অমর দে, মাধব মুন্সী প্রমুখ। তিনি বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠকদের মধ্যেও একজন ছিলেন।

বিপ্লবী কর্মকান্ড

১৯৪০ সালের গোড়ার দিকে রেঙ্গুনের শহরতলী কামায়ু তে একটি গোপন স্থানে বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নেতা অং সান, থাকিন সো, থান টুন, থাকিন বা হিয়েন প্রমুখদের সাথে পার্টি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুবোধ মুখার্জী। অন্যান্য বাঙালি বিপ্লবীদের সাথে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল তার ওপর।[2][3] ১৯৪১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় সমস্ত বাঙালি কমিউনিস্ট কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে যান। হরিনারায়ণ ঘোষাল, অমর দে'র সাথে তাকে হেনজাদা জেলে পাঠানো হয়। এর কিছুকাল পরই জাপানি আক্রমনে ইংরেজরা বর্মা ছেড়ে পালাতে শুরু করে। জাপানী বোমাবর্ষণে প্রচুর ভারতীয় পরিবারও বর্মা ত্যাগ করে। হরিনারায়ন ঘোষাল, অমর নাগ, অমর দে, অরবিন্দ দত্ত, সাধন ব্যানার্জী প্রমুখেরা বিপদসংকুল পথ পেরিয়ে পদব্রজে ভারতে আসেন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে। পথশ্রমে ও কলেরায় এই সময় বহু ভারতীয় পথেই মারা যান। কিন্তু থেকে যান সুবোধ মুখার্জী। বহু পরিবারকে নিরাপত্তার সংগে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিলেও তিনি জাপান অধিকৃত বর্মায় ঝুঁকি নিয়েও থেকে যান ও শ্রমিক সংগঠনের কাজ করতে থাকেন গোপনে। ফ্যাসিবিরোধী লিবারেশন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ছিলেন।[2][3]

১৯৫৬ সালে তিনি পেন্ডুইয়োনা পর্বতমালার অতিদুর্গম অঞ্চল থেকে বার্তাবাহী দ্বারা চিঠিতে চিন্ময় স্নেহানবিশএর থেকে চেয়ে পাঠান রবীন্দ্রনাথের কাব্য সংকলন সঞ্চয়িতা। রেঙ্গুনে কোথাও বইটা না পেয়ে তিনি লোক মারফত কলকাতা থেকে আনিয়ে বইটা পাঠিয়েছিলেন। পরে  চিন্ময় স্নেহানবিশের সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের সঙ্গে কবিতার যোগ বোঝিয়ে দেন।[4]  

মৃত্যু

তিনি সারা বর্মা ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন এবং সেই সূত্রে বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। জীবিত বা মৃত ধরার উদ্দেশ্যে সারা দেশে পুলিশ পুরষ্কার ঘোষণা করে। এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার ছিল তার মাথার ওপর। ১৯৫৯ সালের এর কোনো সময় চোরাগোপ্তা আক্রমনে প্রান হারান সুবোধ মুখার্জী। সরকারি দলপতি তার মাথাটি কেটে নিয়ে যায়। রেঙ্গুনের খবরের কাগজে সেইভাবেই ছবি প্রকাশিত হয়েছিল।[2][4][5]

তথ্যসূত্র

  1. রায়, উৎপল (২০১২)। আলাপচারিতার নেপথ্যে। কলকাতা: পারুল। পৃষ্ঠা ৬১, ৬২। আইএসবিএন 978-93-81140-80-2।
  2. গৌতম চট্টোপাধ্যায় (১৯৯২)। সমাজতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা ও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন। কলকাতা: পুস্তক বিপণি। পৃষ্ঠা ৬৮, ৭০, ৭২। আইএসবিএন 81-85471-11-8।
  3. সাধন ব্যানার্জী (২০০২, সেপ্টেম্বর)। দাঙ্গা প্রতিরোধে ট্রাম শ্রমিকদের অসামান্য বীরগাথা। কলকাতা: উজানে, ত্রৈমাসিক। পৃষ্ঠা ১১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  4. স্নেহানবিশ, চিন্ময় (১২ মার্চ ১৯৬৬)। "সুবোধ মুখার্জী" আনন্দবাজার পত্রিকা-এর মাধ্যমে।
  5. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫৮৬।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.