কোনবাউং রাজবংশ
আলাউংপায়া রাজবংশ (১৭৫২ - ১৮৮৫) মিয়ানমারের শেষ রাজবংশ। এটি কোনবাউং রাজবংশ নামেও পরিচিত। অনেকের মতে ১৭৮২ সালে রাজা বোদাওপায়া-র সময় থেকেই এই রাজবংশের শুরু। আলাউংপায়া রাজবংশের রাজারা মিয়ানমারের সীমানার বিস্তার ঘটান। ১৮২৪-২৬ সালে সংঘটিত প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধে ব্রিটিশ রাজশক্তির কাছে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এই রাজবংশের পতন ঘটে এবং একই সাথে বার্মার ৬০ বছরের স্বাধীনতার অবসান ঘটে।
১৮শ শতকে এসে তোউংগো রাজবংশের অধীনে মিয়ানমার খণ্ডীভূত হয়ে পড়েছিল। আভা-র উত্তর ও পূর্বে অবস্থিত শান রাজ্যগুলিতে বর্মীদের পাশাপাশি চীনাদেরও আধিপত্য ছিল। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্বে মন জাতির লোকেদের মধ্যে ১৭৪০ সাল নাগাদ বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ১৭৫২ সালে শোয়েবো এক গ্রাম্য নেতা আলাউংপায়া একটি সেনাবাহিনী সংগঠিত করেন এবং মিয়ানমারের দক্ষিণাংশে মন শাসকদের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান সম্পন্ন করেন। আলাউংপায়া আরও দক্ষিণে অগ্রসর হতে থাকেন এবং সমস্ত স্থানীয় প্রতিরোধ দমন করেন। তিনি শান রাজাদেরকে তার আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। এরপর তিনি পূর্বদিকে অগ্রসর হন এবং আয়ুথিয়া রাজ্য আক্রমণ করেন, কিন্তু সেখানে তিনি সফল হননি। ১৭৬০ সালে সেখান থেকে পশ্চাদপসরণের সময় তিনি আহত হয়ে মারা যান।
১৭৬৪ সালে এই রাজবংশের তৃতীয় রাজা হসিনবিয়ুশিন রাজ্যে শৃংখলা ফিরিয়ে আনেন এবং নতুন করে আয়ুথিয়া আক্রমণ করেন। ১৭৬৭ সালে তিনি সম্পূর্ণ আয়ুথিয়া রাজ্যকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেন। কিন্তু তিনি এলাকাটি বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। হসিনবিয়ুশিনের সেনাবাহিনী শান ও লাও রাজ্য এবং ভারতের মণিপুর রাজ্যের অনেক গভীরে চলে যেতে সক্ষম হয়। তারা চারবার মিয়ানমারের উপর চীনা আক্রমণ প্রতিহত করে। হসিনবিয়ুশিন এরপর দক্ষিণ দিকে শান্তিস্থাপনে মনোযোগ দেন, কিন্তু ১৭৭৬ সালে এসে বাধাপ্রাপ্ত হন। এই রাজবংশের ৬ষ্ঠ রাজা বোদাওপায়া ১৭৮২ থেকে ১৮১৯ পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং আয়ুথিয়া পুনরায় দখলের চেষ্টা করেন। তিনি থাইদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযান চালালেও সফল হননি। রাজা বোদাওপায়া মিয়ানমারের রাজধানী অমরপুর শহরে সরিয়ে নেন।
বোদাওপায়া-র পৌত্র বাগিদাও ১৮১৯ থেকে ১৮২৬ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার আমলেও প্রথন ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধে (১৮২৪-১৮২৬) মিয়ানমার ব্রিটিশদের হাতে পরাজয় বরণ করে। এরপর থেকে মিয়ানমারের রাজত্বের পরিধি কমতে থাকে এবং এর প্রশাসনের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। থারাওয়াদি এবং তার পুত্র পাগান দুজনেই দুর্বল রাজা ছিলেন এবং তারা স্বরাষ্ট্রীয় বা পররাষ্ট্রীয় উভয় ক্ষেত্রেই তেমন কোন অবদান রাখেননি। ফলে ১৮৫২ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধে ব্রিটিশেরা সমগ্র দক্ষিণ মিয়ানমার দখলে নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ১৮৫৩ থেকে ১৮৭৮ পর্যন্ত মিন্দন নামের রাজার অধীনে মিয়ানমার তার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালায়, কিন্তু ব্যর্থ হয়। মিন্দন এবং ব্রিটিশ বার্মার প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ১৮৭৮ সালে মিন্দনের ছোট ছেলে থিবাও সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৮৮৫ সালে তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের পর ব্রিটেন সম্পূর্ণ মিয়ানমার করায়ত্ত করতে সক্ষম হয়। এরই রেশ ধরে ১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি আলাউংপায়া রাজবংশের পতন ঘটে।
তথ্যসূত্র
- Buyers, Christopher। "The Royal Ark: Burma – Konbaung Dynasty"। সংগ্রহের তারিখ April 2011। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য);|অধ্যায়=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - Charney, Michael W. (২০০৬)। Powerful Learning: Buddhist Literati and the Throne in Burma's Last Dynasty, 1752–1885। Ann Arbor: University of Michigan।
- Dai, Yingcong (২০০৪)। "A Disguised Defeat: The Myanmar Campaign of the Qing Dynasty"। Modern Asian Studies। Cambridge University Press: 145–189।
- Findlay, Ronald and O'Rourke, Kevin H. (2007) Power and Plenty: Trade, War, and the World Economy in the Second Millennium
- Koenig, William J. "The Burmese Polity, 1752–1819: Politics, Administration, and Social Organization in the early Kon-baung Period", Michigan Papers on South and Southest Asia, Number 34, 1990.
- Lieberman, Victor B. “ Political Consolidation in Burma Under the Early Konbaung Dynasty, 1752-c. 1820.” Journal of Asia History 30.2 (1996): 152–168.
- Hall, D.G.E. (১৯৬০)। Burma (3rd edition সংস্করণ)। Hutchinson University Library। আইএসবিএন 978-1-4067-3503-1।
- Harvey, G. E. (১৯২৫)। History of Burma: From the Earliest Times to 10 March 1824। London: Frank Cass & Co. Ltd।
- Htin Aung, Maung (১৯৬৭)। A History of Burma। New York and London: Cambridge University Press।
- Letwe Nawrahta and Twinthin Taikwun (c. 1770)। Hla Thamein, সম্পাদক। Alaungpaya Ayedawbon (Burmese ভাষায়) (1961 সংস্করণ)। Ministry of Culture, Union of Burma। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - Maung Maung Tin, U (১৯০৫)। Konbaung Hset Maha Yazawin (Burmese ভাষায়)। 1–3 (2004 সংস্করণ)। Yangon: Department of Universities History Research, University of Yangon।
- Myint-U, Thant (২০০৬)। The River of Lost Footsteps—Histories of Burma। Farrar, Straus and Giroux। আইএসবিএন 978-0-374-16342-6, 0-374-16342-1
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)। - Phayre, Lt. Gen. Sir Arthur P. (১৮৮৩)। History of Burma (1967 সংস্করণ)। London: Susil Gupta।
- Pollak, Oliver B. "Dynasticism and Revolt: Crisis of Kingship in Burma, 1837–1851." Journal of Southeast Asian Studies 7 (1976): 187–196.
- Wyatt, David K. (২০০৩)। History of Thailand (2 সংস্করণ)। Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-08475-7, 9780300084757
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে কোনবাউং রাজবংশ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- Life at the Burmese Court under the Konbaung Kings Dr Yi Yi, Historical Research Department, Rangoon, 1982
- Forty Years in Burma John Ebenezer Marks, London: Hutchinson & Co., 1917
- The Konbaung Dynasty Christopher Buyers
- The Last Queen of Burma Kenneth Champeon, The Irrawaddy, July 2003
- Ayutthaya and the End of History:Thai Views of Burma Revisted Min Zin, The Irrawaddy, August 2000
- A rare meeting with the last of Burma's royals The Daily Telegraph, 26 February 2008
- Myanmar's last royal laments a crumbling nation Reuters, 10 March 2008