মোতাহের হোসেন চৌধুরী
মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-১৯৫৬) একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লেখক ছিলেন।[1][2]
মোতাহের হোসেন চৌধুরী | |
---|---|
![]() মোতাহের হোসেন চৌধুরী | |
জন্ম | ১৯০৩ কাঞ্চনপুর, নোয়াখালী জেলা |
মৃত্যু | সেপ্টেম্বর ১৮, ১৯৫৬ |
পেশা | শিক্ষাবিদ, লেখক |
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১৯০৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত (বর্তমানে বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আবদুল মজিদ ও মাতার নাম ফতেমা খাতুন। মাতামহ কুমিল্লার বিখ্যাত দারোগা বাড়ির মৌলভি আশরাফ উদ্দীন। তার পিতা পেশায় একজন সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন, ফলে চাকরিসূত্রে তিনি নানা জায়গায় বদলী হতেন। ফলে মোতাহের হোসেন মায়ের কাছে নানাবাড়ি কুমিল্লাতেই থাকতেন। তিনি অল্প বয়সেই পিতৃহারা হন।[2]
শিক্ষাজীবন
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ সময় কুমিল্লাতেই কাটে। কুমিল্লা ইউসুফ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমানে এস.এস.সি) পাশ করেন। আইএ ও বিএ তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে পাশ করেন এবং ১৯৪৩ সালে প্রাইভেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন।[1][2] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন সময়ে তার সহপাঠী ছিলেন মুহম্মদ আবদুল হাই ও আহমদ হোসেন; শিক্ষকদের মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহিতলাল মজুমদার, আশুতোষ ভট্টাচার্য, জসীমউদ্দীন প্রমুখ যশস্বী পণ্ডিতবর্গের সহাচর্য পেয়েছিলেন।
কর্মজীবন
মোতাহের হোসেন চৌধুরী কর্মজীবনের শুরুতে কুমিল্লা ইউসুফ হাইস্কুলে একজন সহকারী শিক্ষক যোগদান করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর চট্টগ্রাম কলেজে যোগদান করে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। সেসময় তিনি চট্টগ্রাম কলেজে সাহিত্যিক আবুল ফজলের সহাচর্য পেয়েছিলেন সহকর্মী হিসেবে।[1]
সাহিত্যজীবন
মোতাহের হোসেন চৌধুরী কিশোর বয়স থেকেই সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি প্রথমদিকে কবিতা বেশি লিখতেন।[2] বাঙালী মুসলমান সমাজের অগ্রগতির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত "বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন" সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি এই আন্দোলনে কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদির প্রমুখের সহযোগী ছিলেন। তিনি ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। এর নানা সভা ও সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন প্রবন্ধ পাঠ করেন। এর মধ্যে আমাদের দৈন্য সাহিত্য সমাজের পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলন (১৯৩১), আদেশপন্থী ও অনুপ্রেরণাপন্থী ষষ্ঠ বার্ষিক সম্মেলন (১৯৩২) ও মুসলমান সাহিত্যিকদের চিন্তাধারা অষ্টম বার্ষিক সম্মেলনে (১৯৩৪) পাঠ করা হয়। এছাড়াও মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র শিখার পঞ্চম বর্ষে ১৯৩১ সালে তার প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথ ও বৈরাগ্যবিলাস প্রকাশিত হয়। তিনি বিচিত্রা, মাসিক মোহাম্মদী, সওগাত, ছায়াবীথি, বুলবুল প্রভৃতি সাহিত্য পত্রিকাতেও প্রবন্ধ লিখেছিলেন।
তার রচিত উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থ "সংস্কৃতির কথা" (১৯৫৮)। এছাড়াও তার অনুবাদকৃত দুটি গ্রন্থ হচ্ছে ক্লাইভ বেলের Civilization গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত সভ্যতা (১৯৬৫) এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের Conquest of Happiness গ্রন্থের অনুবাদ সুখ (১৯৬৫)।[1] সৈয়দ আবুল মকসুদের সম্পাদনায় ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি তার প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত সমস্ত রচনা রচনাবলি আকারে প্রকাশ করে।[3]
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনীতে মুক্তবুদ্ধি, মননশীলতা, মানবতার ছাপ পাওয়া যায়। তিনি পরিশীলিত গদ্যের রচয়িতা হিসেবে বাংলা সাহিত্যে পরিচিত। তার লেখায় প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তার রচনায় সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণ, মানবতাবোধ ইত্যাদি বিষয়াবলী বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, সুন্দর, মহৎ ও ভালোভাবে জীবনযাপনের উপায় সন্ধান করা হয়েছে।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেনঃ-
“ | "রুচিবান লোক দশের একজন নয়, দশ পেরিয়ে একাদশ।[2]" | ” |
“ | "ধর্ম্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জ্জিত লোকের ধর্ম্ম।" | ” |
মৃত্যু
চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনাকালে ১৯৫৬ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[4]
তথ্যসূত্র
- আলম, শফিউল। "চৌধুরী, মোতাহের হোসেন"। বাংলাপিডিয়া। এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬।
- রানী চক্রবর্তী, ড. ফাল্গুনী (৫ আগস্ট ২০১৩)। "মোতাহের হোসেন চৌধুরী সাহিত্যকর্ম ও সংস্কৃতি চেতনা"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬।
- "মোতাহের হোসেন চৌধুরী রচনাবলী"। বাংলাদেশ স্ট্যাডি ফোরাম। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬।
- সাহিত্যপাঠ (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী), পৃষ্ঠাঃ ৮৩