মুসলিম সাহিত্য সমাজ

মুসলিম সাহিত্য সমাজ ছিল বাংলাদেশের একটি বুদ্ধিমুক্তির আন্দোলনের দল যা ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শিখা পত্রিকার সাথে সাথে গঠিত হয়। মুসলিম সাহিত্য সমাজের কর্ণধার ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদ এবং আবুল হুসেন। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত মাত্র এক দশক চলেছিল এই ঢাকা কেন্দ্রিক গোষ্ঠীটির কার্যক্রম।[1]

লক্ষ্য

সে সময় অবিভক্ত বাংলার সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশ ছিল পূর্ব বাংলা এবং যার প্রধান শহর ছিল ঢাকা। এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন ছিলেন মুসলমান যাদের সামগ্রিক সামাজিক পরিমণ্ডল ছিল শাস্ত্র ও সংস্কারের অচলায়তনে আবদ্ধ। কাজী মোতাহার হোসেনের দ্বিতীয় বর্ষের কার্য বিবরণীতে পাওয়া যায় : “আমরা চাই সমাজের চিন্তাধারাকে কুটিল ও পঙ্কিল পথ হইতে ফিরাইয়া প্রেম ও সৌন্দর্য্যের সহজ সত্য পথে চালিত করিয়া আমাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে। এক কথা আমরা বুদ্ধিকে মুক্ত রাখিয়া প্রশান্ত জ্ঞানদৃষ্টি দ্বারা বস্তু জগত ও ভাবজগতের ব্যাপারাদি প্রত্যক্ষ করিতে ও করাইতে চাই।” [1] মুসলিম সাহিত্য সমাজের লক্ষ্য ছিল ধর্ম ও ধর্ম প্রভাবিত মুসলমান সমাজকে বৈজ্ঞানিক যুক্তির পাটাতনের উপর দাঁড় করিয়ে দিতে। মুসলিম সাহিত্য সমাজ করণীয় সম্পর্কে পাওয়া যায় : “মুসলিম সমাজে অনেক গলদ ঢুকিয়াছে। মিথ্যা হাদিস দ্বারা ঐ সবের সমর্থন চলিতেছে; অনেক সময় লোকেরা নিজেদের মতলব হাসিল করার জন্য হাদিস সৃষ্টি করিয়াছে; যে সমস্ত হাদিস বুদ্ধির দ্বারা সমর্থিত নহে তাহা মানিতে হইবে না; কুরআনের ব্যাখা যাহা হইয়া গিয়াছে তাহা ব্যতীত আর হইতে পারিবে না,ইহা ঠিক নহে; কাল ও অবস্থা ভেদে ইহার নতুন ব্যাখ্যা। দিতে হইবে।”[2]

পাঁচ দফা

১৯২৯ সালে মুসলিম সাহিত্য সমাজের তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশন শেষে গ্রহণ করা হয়েছিল সমাজ সংস্কারের পাঁচ দফা প্রস্তাব :

  1. এই সভা বাংলার মুসলমান নর-নারীকে বিশেষভাবে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত বাংগালীকে কোরানের সহিত পরিচিত হইবার অনুরোধ জানাইতেছে।
  2. এই সভা বাংলার পল্লীর বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠাগার ও গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে উদ্যোগী হইবার জন্য দেশের কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানাইতেছে।
  3. এই সভা বাংলার বিভিন্ন মক্তব ও মাদ্রাসায় যাহাতে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যায়াম শিক্ষার ব্যবস্থা হয় তজ্জন্য গভর্নমেন্টকে অনুরোধ জানাইতেছে।
  4. এই সভা বাংগালী মুসলমান সমাজের নেতৃবৃন্দকে পর্দাপ্রথা দূরীকরণার্থে আদর্শ স্থাপন করিতে অনুরোধ জানাইতেছে।
  5. এই সভা সাহিত্য সমাজের কর্মীবৃন্দকে মুসলিম ইতিহাস , দর্শন ও ধর্মবিষয়ক আরবী ও ফার্সি গ্রন্থ সমূহ অনুবাদ করিবার জন্য একটি অনুবাদ কমিটি গঠন করিতে অনুরোধ জানাইতেছে।[2]

তথ্যসূত্র

  1. হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার; হোসেন, নবীন (২০০৩)। "'শিখা' গোষ্ঠীঃ ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনা"। যুগান্তর, ঈদ সংখ্যা। মাজহারুল ইসলাম: ৭৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  2. হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার; হোসেন, নবীন (২০০৩)। "'শিখা' গোষ্ঠীঃ ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনা"। যুগান্তর, ঈদ সংখ্যা। মাজহারুল ইসলাম: ৭৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.