মাহফুজ উল্লাহ

মাহফুজ ১৯৫০ সালের ১০ মার্চ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের গোপালপুরে জন্মগ্রহণ করেন।[2] তার পিতার নাম হাবিবুল্লাহ এবং মাতার নাম ফয়জুননিসা বেগম। মাহফুজ ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত মুজফ্‌ফর আহ্‌মেদের দৌহিত্র।[3] তার বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ও ১৯৭৪ সালে সাংবাদিকতায় পুনরায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[4] ছাত্র রাজনীতির কারণে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে তাকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।[5]

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশায় কাজ শুরু করেন। ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকেই এ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।[3] মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে কাজ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন।[6] বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন। রেডিও ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনাসহ একাধিক টক শো অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে সংবাদ ও রাজনীতি নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ করতেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[7]

তিনি সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[3] তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ ছিলেন এবং বাংলাদেশে তিনিই পরিবেশ সাংবাদিকতার সূচনা করেন। এছাড়ও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার-এর আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বাংলাদেশী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।[3]

বিভিন্ন বিষয়ে মাহফুজ উল্লাহ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৫০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার মধ্যে বেশ কিছু পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সংগ্রহিত আছে। তার গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

• বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়া: রাজনৈতিক জীবনী
• যাদুর লাউ
• যে কথা বলতে চাই
• অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন : গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১)
• উলফা ও অ্যাসোসিয়েশন ইন আসাম
• বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি[8]

২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় ১০টা ৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে গত ২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ও পরে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।[9][10] এরপূর্বে ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পরে। যদিও একই দিন সন্ধ্যায় তিনি জীবিত হিসেবে সংবাদ প্রকাশ করে।[11]