ফেরদৌসী মজুমদার
ফেরদৌসী মজুমদার প্রতাপশালী বাংলাদেশী অভিনেত্রী। স্বাধীনতা উত্তরকালে টিভি ও মঞ্চে সমান সফলতার সাথে অভিনয় করে আসছেন। ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে 'হুরমতি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিপুল প্রশংসা লাভ করেন।
ফেরদৌসী মজুমদার | |
---|---|
জন্ম | ফেরদৌসী মজুমদার ১৮ই জুন, ১৯৪৩ সাল |
পেশা | শিক্ষিকা |
পরিচিতির কারণ | অভিনেত্রী |
প্রাথমিক জীবন
ফেরদৌসী মজুমদারের জন্ম বরিশালে হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকাতে।তার বাবা খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী ছিলেন ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট। তার ভাইবোন ছিল মোট ১৪ জন যাদের মধ্যে ৮ জন ভাই এবং ৬ জন বোন।সবচেয়ে বড় ভাই কবীর চৌধুরী এবং মেজ ভাই শহীদ মুনীর চৌধুরী।‘দারুল আফিয়া’ নামের বাড়িতে তার শৈশব কেটেছে।তাদের পৈতিক নিবাস ছিল নোয়াখালীতে। ফেরদৌসী মজুমদারের পরিবার ছিল খুব রক্ষণশীল।বাড়িতে সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল নিষিদ্ধ।তার লেখাপড়া শুরু হয় নারী শিক্ষা মন্দির স্কুল থেকে।এই স্কুলে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর তিনি ভর্তি হন মুসলিম গার্লস স্কুলে যেখান থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর ইডেন কলেজে ভর্তি হন।তিনি ছোটবেলায় খেলাধুলা করতে পছন্দ করতেন এবং একবার ৯৬৬ বার স্কিপিং করে ক্রিস্টালের বাটি পেয়েছিলেন যদিও ফিট হয়ে গিয়েছিলেন তখন। তিনি ছোটবেলা থেকেই মানুষকে ভেঙ্গাতে পারতেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাড়িতে ফিরতে সন্ধ্যা হওয়াতে তার বাবা তাকে চটি দিয়ে পিটিয়েছিলেন।[1]
অভিনয়ের শুরু
ইডেন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় তিনি তার বড় ভাই মুনীর চৌধুরী থেকে প্রস্তাব পান একটা নাটকে রোবটের চরিত্রে অভিনয় করার যার নাম ছিল ‘ডাক্তার আবদুল্লাহর কারখানা’।এটি লিখেছিলেন শওকত ওসমান এবং মঞ্চস্থ হয়েছিল ইকবাল হলে যা এখন জহুরুল হক হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘দন্ড ও দন্ডধর’ নাটকে অভিনয় করেন তার শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিপরীতে।তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নাটকের ফোরামে তিনি জড়িয়ে পড়েন এবং সন্মানী হিসেবে ৭৫ টাকা পান।এই টাকা দিয়ে তিনি দামী নেটের মশারি কিনলেন । বাসায় তার হারামের পয়সায় কেনা মশারি দেখে তাকে অনেক বকাঝকা করেন ।পরে অবশ্য কন্যার কান্না দেখে পরের দিন আবার নিজেই সেই মশারি কন্যাকে খাটিয়ে দেন।[1] তিনি ১৯৭০ সালে মারা যান।তারপর ফেরদৌসী মজুমদার নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা ‘তামসি’ নামক নাটকে অভিনয় করেন।বাবা মার অমতে তিনি ১৯৭০ সালের ১৩ই জুন রামেন্দু মজুমদারকে বিয়ে করেন।[2] ১৯৭১ সালের শুরুতে তিনি পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান একটা অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মে কাজ করতে।পরে ১১ই মার্চ ঢাকায় ফিরে আসেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মে মাসে তার পরিবারের সবাই মুনীর চৌধুরী ছাড়া দাউদকান্দি, চান্দিনা হয়ে কলকাতা চলে যান ।
স্বাধীনতার পর
১৯৭২ সালে ‘থিয়েটার’ গঠন করা হয়, যেখানে ছিল আবদুল্লাহ আল মামুন, রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ। ফেরদৌসী মজুমদার সেই দলে যোগ দেন। তিনি মোট ২টি সিনেমায় অভিনয় করেন 'মায়ের অধিকার’ এবং ‘দমকা’।বাংলাদেশ টেলিভিশনের তিনি প্রায় তিনশ’র মতো নাটক করেন।তার অভিনয় জীবন প্রায় তিন দশকের মতো দীর্ঘ।[1] আবদুল্লাহ আল মামুন ফেরদৌসী মজুমদারকে নিয়ে একটি ৮৬ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন যার নাম ‘জীবন ও অভিনয়’ ।[3] তিনি ঢাকার উইল্স্ লিট্ল্ ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। খ্যাতিমান অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার তার স্বামী।
উল্লেখযোগ্য নাটক
- কোকিলারা
- এখনো ক্রীতদাস
- বরফ গলা নদী
- জীবিত ও মৃত
- বাঁচা
- অকুল দরিয়া
- যোগাযোগ
- সংশপ্তক
- চোখের বালি
- নিভৃত যতনে
- শংখনীল কারাগার
- এখনও দুঃসময়
- পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়
চলচ্চিত্র
—প্রথম আলোকে দেয়া ফেরদৌসী মজুমদারের সাক্ষাৎকার[4]
ফেরদৈসী মজুমদার অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা
বছর | চলচ্চিত্রের নাম | পরিচালকের নাম | তথ্যসুত্র |
---|---|---|---|
১৯৯৬ | মায়ের অধিকার | শিবলি সাদিক | [5] |
২০০১ | মেঘলা আকাশ | নারগিস আক্তার | |
নির্মানাধীন | ফ্রম বাংলাদেশ | শাহনেওয়াজ কাকলী |
পুরস্কার ও সম্মাননা
- শহিদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পদক[6]
- আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড
বছর | মনোনীত কর্ম | বিভাগ | ফলাফল | সূত্র |
---|---|---|---|---|
২০১৯ | ১ ঘণ্টার নাটক ও টেলিফিল্মে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - পার্শ্ব চরিত্র | মেঘ বালিকার রঙ | বিজয়ী | [7] |
তথ্যসূত্র
- শাহাবুদ্দীন, আহমেদ। "আপন আলয়ে ফেরদৌসী মজুমদার"। অন্যদিন ঈদ সংখ্যা ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ১৩৭।
- রেজা, জামাল (১৯৯৭)। "সুখে আছি সখা আপন মনে"। অন্যদিন ঈদ সংখ্যা ১৯৯৭, পৃষ্ঠা ৩৬৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য); - "অনন্যা এক ফেরদৌসী"। বিডি নিউজ ২৪। ১২ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি,২০১১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "মুক্তিযুদ্ধ, কাননবালা ও 'ফ্রম বাংলাদেশ'"। প্রথম আলো। ২০১৯-১০-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৭।
- "আবারও চলচ্চিত্রে ফেরদৌসী মজুমদার"। সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৭।
- "আলতাফ মাহমুদ পদক পাচ্ছেন হাসান ইমাম-ফেরদৌসী"। bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৮।
- "'আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০১৯' পেলেন যারা"। আরটিভি অনলাইন। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯।