ডোমার উপজেলা

ডোমার বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

ডোমার
উপজেলা
ডোমার
বাংলাদেশে ডোমার উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৬°৫′৫৪″ উত্তর ৮৮°৫০′১৮″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলানীলফামারী জেলা
আয়তন
  মোট২৫০.৮৬ কিমি (৯৬.৮৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট২,৪৫,২৫০
  জনঘনত্ব৯৮০/কিমি (২৫০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৭৩ ১৫
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান

ডোমার উপজেলার আয়তন ২৫০.৮৪ বর্গ কিঃমিঃ ৷ এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে নিলফামারী সদর উপজেলা, পূর্বে ডিমলাজলঢাকা উপজেলা এবং পশ্চিমে দেবীগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।

প্রশাসনিক এলাকা

উপজেলা চেয়ারম্যানঃ তোফায়েল আহমেদ। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানঃ মোঃ আব্দুল মালেক।

ইতিহাস

প্রাচীন ইতিহাস ও উদ্ভব

ডোমার এর পূর্ব নাম ছিল ডোমন নগর। ডোমন নগর পাল বংশীয় রাজা ভীম পাল-এর রাজধানী ছিল (১০৭৫)।

"আগাডুম বাগাডুম ঘোড়াডুম সাজে
ঢাক মৃদং ঝাঁজর বাজে"

এই ছড়াটি ডোমারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বলে ৷ জানা যায়, উল্লেখিত ছড়াটির রচনাস্থল নীলফামারী জেলার ডোমার থানা এলাকা ৷ ডোমার বা ডোমনগর ঐতিহাসিক রাজা ভীম পালের রাজধানী ছিল ৷ ইতিহাস বিখ্যাত কৈবত্যরাজ দিব্বোকের ভ্রাতুষ্পুত্র মহাপরাক্রমশালী ভীমের ডোম সৈন্যের যুদ্ধ যাত্রার ছবি এই ছড়াটিতে বিধৃত।

এ কে এম নাসিরউদ্দীন রচিত নীলফামারীর ইতিহাস প্রথম খন্ড (জুন, ১৯৭৫) গ্রন্থটি থেকে যতুদুর জানা যায় তাতে অনেকাংশে আশ্বাসত্ম হওয়া যায় যে, পাল নরপতি তৃতীয় মহীপাল একজন অত্যাচরি রাজা ছিলেন। তার অত্যাচারে রাজ্যের প্রজাসকল বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং তারা ওই সময় কৈবত্য জাতীয় দিব্বোক নামক জনৈক ব্যক্তিকে তাদের অধিনায়করম্নপে গ্রহণ করে৷ দিব্বোক অত্যাচারিত প্রজাদের নিয়ে তৃতীয় মহীপালকে হত্যা করেন এবং ভ্রাতুষ্পুত্র ভীমকে মহীপালকে স্থলাভিষিক্ত করেন। কৈবত্যরা জাতে জেলে ছিল এবং মত্‍স্যদেশে সে সময় কৈবত্যরাই নৌশক্তি বলে বলীয়ান ছিল ৷ ফলে অন্যান্য রাজশক্তি তাদের হাতে পরাভূত হয়েছিল ৷ পালবংশীয় দুশ্চরিত্র তৃতীয় মহীপাল যুদ্ধে নিহত হলে সামন্তগণ ও প্রজাপুঞ্জ সম্মিলিত সভায় দিব্বোককে আনুমানিক ১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দে গৌড় সিংহাসনে অভিষিক্ত করেন ৷ দিব্বোক ইতোপূর্বে তৃতীয় মহীপালের পিতার অর্থাত্‍ তৃতীয় বিগ্রপালের প্রধান সেরাপতি ছিলেন। সন্ধ্যকর নন্দী রচিত 'রামচরিতে' উলেস্নখিত কৈবত্য বিদ্রোহের বিষয় বিষদরম্নপে লিপিবদ্ধ রয়েছে ।

দিব্বোকের মৃত্যুর পর তারই অনুজ রম্নদ্রোকের পুত্র ভীম বরেন্দ্রীর অধিপতি হন ৷ তিনি রংপুর জেলার 'ডমননগরে' তার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। এই ডমননগরই ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ডোমার স্টেশন। তৃতীয় মহীপালের অনুজ শূরপাল ও রামপাল কৈবত্যরাজকে পরাজিত করে এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা রামপাল পিতৃসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।

ইতিহাস পাঠে জানা যায়, রামপালের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ভীমের সেনাপতি হরি, বর্তমান ডোমার থেকে ডোম সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধযাত্রার ছবি ছড়ার আকারে 'আগাডুম বাগডুম' ছডার জন্ম দিয়েছে । অবশ্য যুদ্ধে ভীম বন্দি হলে সেনাপতি হরি পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে যুদ্ধে গমন করেছিলেন। কিন্তু রাজা সেনাপতি উভয়ে বন্দি হয়ে রামপালের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। সে রামপালের নামানুসারে রামগঞ্জ, রামনগর, রামকলা, দিনাজপুরের রামসাগর প্রভিতি নামের উত্‍পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই এলাকার 'ধরমপাল' বা 'ধর্মপালের গড়' সেই ঐতিহাসিক পালবংশের ঐতিহ্য বহন করে। রামপাল বরেন্দ্রী উদ্ধার করে ভীমের রাজধানী রমণীয় ডমননগর বা ডোমননগর বা ডোমার লূন্ঠিত, বিধ্বংস ও অগ্নিসংযোগে ভূমিসাত্‍ করেছিলেন। অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, স্যার যদুনাথ সরকার প্রমূখ আলোচ্য ডমননগরকেই ভীমের রাজধানী বলেছেন। কোন কোন ঐতিহাসিক ভীমের রাজধানী ঘোড়াঘাটের সন্নিকটে বলে অবস্থিত বলে বর্ণনা করেছেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন, ডোমার বা ডমননগরই ভীমের রাজধানী ৷ ভীম হয়তো ডোমারে বসবাস করেরননি; কিন্তু উত্তর ও পূর্ব দিকের পার্বত্য উপজাতিদের মোকাবেলার্থে ডোমারে কোনো দুর্গ নিমাণ করেছিলেন এবং তা মৃত্‍প্রাচীর দ্বারা সুরৰিত করেছিলেন্ মৃত্‍প্রাচীরকে ডমর বলা হতো৷ ডমর থেকে ডোমার অথবা ডমননগর বা ডোমননগর (ডোম সৈন্যের শহর) থেকে ডোমার নামের উত্‍পত্তি হওয়া বিচিত্র নয়। তবে জনশ্রুতি আছে এখানে ডোমদের (যারা বাশ,কাঠ ইত্যাদির কাজ করতো ) বাস ছিল । তাই ডোম থেকে ডোমার নামের উতপত্তি হতে পারে বলে ধারনা করা হয়

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

ডোমার হানাদার মুক্ত দিবস

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ডোমার উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা বোড়াগাড়ী হাসপাতালের উত্তর দিকে হলদিয়াবন ও বুদলিপাড় গ্রামে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের প্রতিহত করতে শুরু করে। উভয় পক্ষের গুলিবর্ষণ চলতে থাকে দীর্ঘক্ষণ। এ যুদ্ধে তিন পাকসেনা মারা যায়। গুলি বিদ্ধ হয়ে আহত হয় দুই মুক্তিযোদ্ধা। সম্মুখ যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত হয়েই ৫ ডিসেম্বর রাতে ডোমারের পশ্চিম বোড়াগাড়ি গ্রামের উত্তর পাড়ায় পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে সাত জন নিরিহ মানুষকে হত্যা করে। ওই রাতে ডোমার- জলঢাকা সড়কের বোড়াগাড়ী ব্রীজটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। এরপর পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। সে সময়ের ছয় নম্বর সেক্টর কমান্ডার খাদিমুল বাশার ও বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিনিধি প্রয়াত আব্দুর রউফের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ডোমারে বিজয় পতাকা উত্তোলন করে।

জনসংখ্যার উপাত্ত

মোট জনসংখ্যাঃ ২,৪৯,৪২৯ জন
পুরুষঃ ১,২৫,৩৩৮ জন
মহিলাঃ ১,২৪,০৯১ জন

(২০১১আদম শুমারী )

শিক্ষা

  • প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ১৪৯ টি
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ২২ টি
  • মোট মহাবিদ্যালয়ঃ ০৫ টি

মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহ

1⃣গোমনাতী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে 🔰 2⃣আমবাড়ী বঙ্গবন্ধু দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে♥ 3⃣শুকনাপুকুর গার্লস নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় 4⃣ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় 5⃣ডোমার সরকারী বালিকা বিদ্যালয় 6⃣বড় রাউতা উচ্চ বিদ্যালয় 7⃣খাটুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় 8⃣ফার্মহাট উচ্চ বিদ্যালয় 9⃣পাঙ্গা মহেশ চন্দ্র লালা উচ্চ বিদ্যালয় 🔟হলহলিয়া আদর্শ বিদ্যা নিকেতন 11⃣চিলাহাটি মার্চেন্ট উচ্চ বিদ্যালয় 12⃣সরলা বিদ্যানিকেতন ডোমার 13⃣বামুনিয়া এস সি উচ্চ বিদ্যালয় 14⃣মটুকপুর উচ্চ বিদ্যালয় 15⃣মটুকপুর সপ্তর্ষী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় 16⃣সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়।

মাদ্রাসা সমূহ

  • ১. পাংগা চেীপথী আব্দুল মজীদ আলিম মাদ্রাসা

কিন্ডারগার্টেন সমূহ

♦আমবাড়ী আলহেরা কিন্ডারগার্টেন

  • ফুলকুঁড়ি একাডেমী
  • লিটল হার্টস স্কুল
  • ঢাকা প্রিপারেটরী স্কুল
  • প্রতিভা কিন্ডারগার্টেন
  • আবাবিল একাডেমী
  • ডোমার আইডিয়াল একাডেমী
  • বি এম পাইলট কে,জি স্কুল

অর্থনীতি

ডোমারের প্রধান অর্থনীতি কৃষি৷ এছাড়া মৎস্য চাষ, হাঁস মুরগ খামার, গবাদী খামার, ক্ষুদ্র কুঠির শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য এই এলাকার অর্থনীতিকে সচল রেখেছে ৷

কৃষি

ধান, পাট, গম, আলু, তামাক, আদা, পিঁয়াজ, টমেটো, সুপারি, হলুদ মরিচ ও ইক্ষু ।

নদীসমূহ

ডোমারের প্রধান নদী হল যমুনেশ্বরী তাছাড়া রয়েছে শালকি, বুড়িখরা এবং দেওনাই।

প্রধান প্রধান হাট বাজার

ডোমার বাজার, বসুনিয়ার হাট, সোনারায় হাট, ধরনিগঞ্জ হাট, বোড়াগাড়ি হাট, আমবাড়ী হাট, চিলাহাটি বাজার, মিরজাগঞ্জ হাট, ডুকডুকির হাট, ফার্মের হাট,পাংগা পীর সাহেবের হাট, বামুনিয়া কাচারী বাজার, ও চিকারহাট। বসুনিয়া হাট গরু কেনাবেচার জন্য বেশ সুপরিচিত । আমবাড়ি হাট বাই-সাইকেল এবং গরু বেচাকেনার জন্য বিখ্যাত।

শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

  • শহীদ ধীরাজ স্মৃতি পাঠাগার;
  • ডোমার নাট্য সমিতি মিলনায়তন
  • ভিলেজ কেয়ার গ্রন্থাগার (বড়গাছা)।
  • জ্ঞান বিকাশ সাহিত্য কেন্দ্র,মেলাপাংগা।

উৎসব ও মেলা

  • পাঙ্গার মেলাঃ এ অঞ্চলের অতি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ মেলা কিন্তু বর্তমানে এ মেলার অস্তিত্ব বিলীন প্রায়।
  • কলন্দরের মেলাঃ সোনারায়ে অবস্থিত হযরত শাহ কলন্দরের মাজারে প্রতি বছর ২৭ শে বৈশাখ ৩দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় .
  • নওদাবসের সাতহাতি কালীর মেলা।
  • নিমোজখানার বৌ মেলা।

কৃতী ব্যক্তিত্ব

উল্লেখযোগ্য স্থান

ডোমার রেলওয়ে স্টেশন; চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন; হযরত শাহ কলন্দর মাজার, ময়নামতির দূর্গ, ডোমার ফরেষ্টে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন গণকবর।

ডোমার উপজেলায় বাস স্ট্যান্ডের নিকট একটি সড়কের দৃশ্য

তথ্যসুত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে ডোমার"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.