পলাশবাড়ী উপজেলা

পলাশবাড়ী বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

পলাশবাড়ী
উপজেলা
পলাশবাড়ী
বাংলাদেশে পলাশবাড়ী উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৫°১৭′৩″ উত্তর ৮৯°২১′১৪″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাগাইবান্ধা জেলা
আয়তন
  মোট১৮৫.৩৩ কিমি (৭১.৫৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট২,৩১,৭৫৫
  জনঘনত্ব১৩০০/কিমি (৩২০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৩৩.৬৯% (২০০১)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫৭৩০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৩২ ৬৭
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

নামকরণ

ইংরেজ শাসনামলের স্মৃতি বিজড়িত পলাশবাড়ী; তাদের শাসনামলে নানা সংগ্রাম ও বিদ্রোহ এ অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে। পলাশবাড়ী আদিতে কেমন ছিল সে বিষয়টি প্রথমে আলোচনা করা দরকার। বিভিন্ন সূত্র থেকে এ ব্যাপারে বেশ কিছু ধারণা পাওয়া যায়। পলাশবাড়ী উপজেলার মুল ভূ-খন্ড নদীর তলদেশে ছিল কালক্রমে নদীবাহিত পলিতে ভরাট হয়। ১৭৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং ১৮৯৮ সালের শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে বৃহত্তর রংপুর ও বগুড়া অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে।

মোঘল সম্রাট আকবরের সভা পণ্ডিত আবুল ফজল প্রণীত আইন-ই-আকবরী নামক গ্রন্থে আকবরের শাসন পদ্ধতি ছাড়াও তার শাসনামলে রাজ্যের সীমানা এবং মহাল সমূহের বিবরণ পাওয়া যায়। ‘আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে ঘোড়াঘাট সরকারের আওতাধীন যে ৮৪টি মহালের বিবরণ রয়েছে তাতে গাইবান্ধা নামে কোন মহালের নাম নেই। সেখানে নামান্তরে বালকা (বেলকা), বালাশবাড়ী (পলাশবাড়ী), তুলশীঘাট, সা-ঘাট (সাঘাটা), বেরী ঘোড়াঘাট, কাটাবাড়ী আলগাঁ ইত্যাদি নাম দেখা যায়। এ থেকে বলা যায় ষোড়শ শতাব্দীতেও গাইবান্ধা কোন উল্লেখযোগ্য ভূখন্ড হিসাবে পরিগণিত হয়নি। ষোড়শ শতাব্দীরও আগে থেকে ঘোড়াঘাট ছিল একটি উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক  কেন্দ্র। সমগ্র ভারতবর্ষে ইংরেজ বিরোধী তথা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তীব্র আকার ধারণ করে সেই সময় ১৯২১ সালে ২০শে আগষ্ট স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এক বিরাট জনসভা থেকে স্বাধীন পলাশবাড়ী স্টেটের ঘোষণা দেন। তাছাড়া ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পলাশবাড়ীর গৌরবময় অবদান উল্লেখযোগ্য। শুধু তাই নয় নিপীড়িত মানুষের অধিকার অর্জন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ গণমানুষের যে কোন দাবীর বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯২১ সালে সেই স্বাধীনতা ঘোষণার পর এক মাস যাবত পলাশবাড়ী প্রকৃত প্রস্তাবে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ষ্টেটে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীকালে অবশ্য ইংরেজ সরকার স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার এবং সার্বভৌম ব্যবস্থাপনাকে ভণ্ডুল করে দেয়। তা সত্ত্বেও পলাশবাড়ীর জনগণকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা থেকে পিছু হটানো সম্ভব হয় নি। পলাশবাড়ী থানার নামকরণ সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে এই থানা সৃষ্টির পিছনে স্বাধীন পলাশবাড়ী আন্দোলন কাজ করেছে। স্বাধীন পলাশবাড়ী আন্দোলন নস্যাৎ করার পরেই গোবিন্দগঞ্জ থানার উত্তরাংশে পলাশবাড়ী উপজেলা স্থাপিত হয়। এই উপজেলায় দুর্গাপুরের জমিদার কর্তৃক খননকৃত ১০১ টি দীঘি জমিদারদের জনহিতৈষী কর্মকান্ডের স্বাক্ষর বহন করে। এই দীঘিগুলো সংস্কার অভাবে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবে এখনও দীঘিগুলো জমিদারদের কীর্তির স্বাক্ষর বহন করে। রানীর দীঘি, ধোপার দীঘি, খিরকিদুয়ার, নাপিতের দীঘি প্রভৃতি নাম লোক মুখে শোনা যায়। বর্তমানে এই উপজেলাটি সরকারী নীতিমালায় উপজেলা নামকরণ হয়েছে। যা পলাশবাড়ী উপজেলা নামে পরিচিত।

অবস্থান

পলাশবাড়ীর অবস্থানঃ ২৫°১৬'৫২.২৬" উত্তর, ৮৯°২১'১১.৫৬" পূর্ব। এর দক্ষিণে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাবগুড়া জেলা, উত্তরে পীরগঞ্জ উপজেলারংপুর জেলা, পূর্বে গাইবান্ধা জেলা সদর ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে ঘোড়াঘাট উপজেলাদিনাজপুর জেলা। এই উপজেলা শহরটি ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। তাছাড়া পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট রাস্তা জুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে শহরটি গড়ে উঠেছে। উপজেলা শহর হিসাবে মোটামুটি অনেক বড় এলাকা জুড়েই এটি বিস্তৃত।

প্রশাসনিক এলাকা

পলাশবাড়ীর আয়তন ১৯০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে রংপুরের পীরগঞ্জ, দক্ষিণে গোবিন্দগঞ্জ, পূর্বে সাদুল্লাপুর ও গাইবান্ধা সদর, পশ্চিমে ঘোড়াঘাট। ৮ টি মৌজা নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। এই উপজেলার প্রধান নদী করতোয়া, নালুয়া, মরিচী ও কাটাখালি । বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম জনাব এ কে এম মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুুৎ৷

ইতিহাস

ইতিহাস খ্যাত রাণী ভবাণীর গো-চারণ ভূ’মি হিসেবে বহুল পরিচিত এই গাইবান্ধা জেলা। উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা পীড়িত এ জেলাটি সারা দেশেই বেশ পরিচিত। ১৯১৮ সালে জেলার থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পলাশবাড়ী। ১৯৮৩ সালে পলাশবাড়ী উপজেলা হয়। কবি জসীমউদ্দিন এ উপজেলা থেকে ঘুরে আসার পর নিজের বাড়ির নাম দিয়েছিলেন পলাশবাড়ী। এ উপজেলার রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার পলাশবাড়ীতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি যুদ্ধ হয় মুক্তিযুদ্ধের সময়। স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পাক বাহিনীর গতি রোধ করে তাদের উত্তরবঙ্গে প্রবেশ দুই দিন পিছিয়ে দিয়েছিল পলাশবাড়ীর আপামর জনতা। পরে তাদেরকে গণহারে হত্যা করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। ‘স্বাধীন পলাশবাড়ী ’ গঠনের আহ্বায়ক ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী এবং সদস্য সচিব ছিলেন ফারুক চৌধুরী।

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পলাশবাড়ীর জনসংখ্যা ২৬০৮০৬ মোট । পুরুষ মহিলার অনুপাত মোটামুটি সমান। যার মধ্যে ৫০.৫৪% পুরুষ ও ৪৯.৪৬% মহিলা। মুসলমান ৯২.৪৮ % , হিন্দু ৭.০২% ও অন্যান্য ০.৫%। শিক্ষার হার বেশ কম। মাত্র ১৯.৫%।

শিক্ষা

এ উপজেলায় অনার্স পাঠ্যসূচি সম্বলিত একটি সরকারি কলেজ আছে। এখানে ২০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তার মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৪টি, বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২১টি কমিউনিটি-১। এছাড়া অনিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ০৪টি,  কিন্ডারগার্টেন ২৪টি, এনজিও প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র ১৯৯টি ও স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা আছে ০৭ টি উচ্চ মাদ্রাসা সংযুক্ত ইবতেদায়ী-১৮। যা প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিদ্যালয় গমনোপযোগি শিশুর সংখ্যা ৪৯০৪৪ জন, বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ৪৯০৪৪ জন, নীট ভর্তির হার প্রায় ১০০%, ঝরে পড়ার হার প্রায় ৭.১৪% , উপস্থিতির  হার প্রায় ৮৬.৪%, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ৬০৪৪ জন, প্রাথমিক শিক্ষা চক্র সমাপ্তির হার প্রায় ৯৩% ।  

অর্থনীতি

অত্র উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। এখানকার ৮৭ শতাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি নির্ভরশীল। শহরগ্রাম এর বেলে দো-আঁশ মাটিতে প্রচুর পরিমানে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। এখানকার প্রধান শস্যের মধ্যে রয়েছে ধান, গম, ভুট্টাশাকসবজি । এই এলাকায় ভুট্টার চাষ নতুন হলেও এর বাম্পার ফলনের কারণে ভুট্টা অত্র এলাকার এক অন্যতম অর্থকরী ফসল।

কৃষি কাজ ছাড়া অন্যান্য পেশার মধ্যে রয়েছে চাকুরি ও ব্যবসা। দারিদ্র সীমারেখার নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা অন্যান্য এলাকার তুলনায় পলাশবাড়ী উপজেলায় কম।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.