চিলমারী উপজেলা

চিলমারী উপজেলা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।

চিলমারী
উপজেলা
চিলমারী
বাংলাদেশে চিলমারী উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৩′৪৬″ উত্তর ৮৯°৪১′৩৮″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাকুড়িগ্রাম জেলা
আয়তন
  মোট২২৪.৯৭ কিমি (৮৬.৮৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
  মোট১,১০,৯৬০[1]
সাক্ষরতার হার
  মোট৫০
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫৬৩০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৪৯ ০৯
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান ও আয়তন

এই উপজেলাটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত কুড়িগ্রাম জেলা ও উলিপুর উপজেলার দক্ষিণে অবস্থিত।[2] এর আয়তন ২২৪.৯৭ বর্গ কিলোমিটার। Thanapara এই উপজেলার একটি অন্যতম সুন্দর ও পরিচিত গ্রাম।

প্রশাসনিক এলাকা

  • ইউনিয়ন পরিষদ: ৬টি
  1. অষ্টমির চর
  2. নয়ার হাট
  3. চিলমারী
  4. রমনা
  5. থানাহাট
  6. রানীগঞ্জ
  • গ্রাম: ১৬০ টি
  • মৌজা: ৫৮ টি

ইতিহাস

নামকরণ

১৮৫০ সালে চিলমারী থানা নামে একটি ভূ-খন্ডের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। চিলমারী থানার নামকরণ নিয়ে বিশাল উপাখ্যান রয়েছে, রয়েছে নানা জনশ্রুতি আর নামকরণের কিংবদন্তি ছড়িয়ে থাকা নানান জনশ্রুতির মধ্যে কোনটি সঠিক তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।

জনশ্রুতি- ১ থেকে জানা গেছে, আজ থেকে কয়েক শত বছর পূর্বে চিলমারীর অধিকাংশ ভূ-খন্ডই ছিল বালূ দিয়ে ঢাকা। তখন নাকি এই চিলমারী নামক বালু রাজ্যে প্রচুর চিনা আবাদ হতো। এই কারণে নাকি এই জায়গাটির নামকরণ হয়েছিল চিনামারী। এখানে ‘মারী’ শব্দটি জায়গা বা স্থান। সেই চিনামারীই নাকি কালের বিবর্তনে আজকের চিলমারী শব্দে পরিণত হয়েছে।

জনশ্রুতি-২ থেকে জানা যায়, এককালে অত্র এলাকায় চিলা পাখির নাকি প্রচুর উপদ্রব দেখা দিয়েছিল। ধানী বা আবাদী জমিতে দল বেঁধে চিল পাখি উড়ে আসতো। নষ্ট করতো হাজার হাজার একর জমির ফসল। চিলের উপদ্রপে হাটে বাজারে স্বস্থিতে কেউ থাকতে পারতো না। সর্বত্রই চিল আতঙ্ক, জনজীবনকে বিপর্যস্থ করে তুলেছিল। এসকল চিল পাখি ব্রহ্মপুত্র উপকূলে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতো, বাস করতো বাঁশ ঝাড়ে, আম বাগান অথবা বটবৃক্ষের ডগায় চড়ে। জনশ্রুতি রয়েছে যদি কোন মানুষ ভুলেও একটি চিল পাখিকে হত্যা করেছে তো আর রক্ষা নেই। কোথা থেকে সঙ্গে সঙ্গে আসতো হাজার হাজার চিল পাখি। ছয় সাত দিন ধরে অত্যাচার চলতো ঐ মানুষটির বাড়ীর উপর। উপদ্রবের প্রতিকার চেয়ে তারা আবেদন করলো বৃটিশ সরকারের কাছে। বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত এলো চিল পাখিগুলোকে হত্যা করার। এই সিদ্ধান্তের বার্তাটি পৌঁছে গেল কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। তাই তারা সংবাদ পাওয়া মাত্র তীর ধনু নিয়ে দল বেঁধে বৃটিশ সরকার প্রেরীত বন্ধুকধারী সৈনিকের পিছু পিছু ছুটে এলো চিলমারী থানার মানুষগুলোকে চিল পাখির হাত থেকে নিস্তার দেওয়ার জন্য। দল বেঁধে মানুষের বাতান নামলো চিলমারী থানার হাটে মাঠে-ঘাটে, আনাচে-কানাচে। দল বেঁধে তীর ধনু হাতে নিয়ে লোকজন যখন চিলমারীর পানে ছুটে আসছিল পথিমধ্যে অনেক না জানা লোক যখন দল বেঁধে এতগুলো লোককে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো আপনারা এভাবে কোথায় চলছেন? তখন ঐ মানুষের মিছিল থেকে একটি উত্তর ভেসে আসতো চলো চলো চিল-মারী শ্লোগানের মতো। এই শ্লোগান থেকেই নাকি চিলমারী শব্দের উৎপত্তি হয়েছে এবং এলাকার নামককরণ হয়েছে আজকের চিলমারী।

জনশ্রুতি-৩ থেকে জানা যায়, এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদের উপকূল ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল এক নদী বন্দর। বড় নৌকা আর জল জাহাজ ভীড়তো এই নদী বন্দরটিতে। মালামাল খালাস করা হতো আবার জাহাজে নতুন করে মাল ভরে পাড়ি জমাতো অন্য বন্দরের পানে। ঐ সময় বৃটিশ প্রশাসন কর পরিশোধ করবার জন্য এই বন্দরটিতে একটি কাষ্টম অফিস স্থাপন করেছিল। কাষ্টম অফিসার যিনি ছিলেন তিনি কর পরিশোধ হওয়া মাত্রই মালের উপর সিল মেরে দিতেন। সেই সিল মারা দেখে অনেক অশিক্ষিত লোক তখন এই কাষ্টম অফিসটি সিল-মারী অফিস হিসেবে চিনতো। এই সিল-মারী কালের বিবর্তনে আজকের চিলমারী নামকরণ হয়ে গেছে। বৃটিশ শাসনের প্রারম্ভে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাহারবন্দ পরগনা এলাকায় নীল চাষের মাধ্যমে কৃষি শিল্পের শিল্পায়ন বিপ্লব ঘটিয়েছিল সেই নীলের কয়েকটি ফ্যাক্টরী ছিল তদানীন্তন রাণীগঞ্জে। নীল নামক পণ্য গোলাগুলোতে সিল মেরে রাখা হতো। অতপর জাহাজ বোঝাই করে বিদেশে চালান দেওয়া হতো। লেখক মোস্তফা তোফায়েল হোসেন বলতে চেয়েছেন এই সিল মারার জায়গা থেকে চিলমারীর নামকরণ করা হয়েছে।

জনসংখ্যার উপাত্ত

  • জনসংখ্যা: মোট ১১০৯৬০ জন, পুরুষ- ৫৪০৮৩ জন, মহিলা- ৫৬৮৭৭ জন
  • ভোটার সংখ্যা: মোট ৭৩২২৫ জন, পুরুষ-৩৬৯০৫ জন, মহিলা-৩৬৩২০ জন

শিক্ষা

এই উপজেলার শিক্ষার হার শতকরা ৫০ ভাগ। অন্যান্য পরিসংখ্যান হচ্ছে:

  • কলেজ: ৩টি (সরকারি ১টি)
চিলমারী সরকারি কলেজ
চিলমারী মহিলা ডিগ্রী কলেজ
গোলাম হাবীব মহিলা ডিগ্রী কলেজ
  • হাইস্কুল: ১১টি
  • মাদ্রাসা: ১২টি
  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৫৫টি
  • বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৩৫টি

অর্থনীতি

চিলমারীতে পরিবেশ বিপর্যয়
  • মোট আবাদী জমির পরিমাণ- ১৫০০৩ একর
  • অর্থকরী ফসল: ধান, গম, আলু, পাট,বাদাম প্রভৃতি
  • কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই

কৃতী ব্যক্তিত্ব

  • মেজর (অব:) আসাফুদৌলা (তাজ) (রাস্ট্রদূত)
  • মোঃ গোলাম হাবীব দুলাল, প্রাক্তন প্রধান বন সংরক্ষক ও সংসদ সদস্য
  • আঃ আজিজ (পুলিশের সাবেক আই জি)
  • শওকত আলী সরকার (বীরবিক্রম)
  • শফিকুল আলম রাজা(ভাওয়াইয়ার রাজা)

বিবিধ

  • মসজিদ: ২৩৪টি
  • মন্দির: ১৬টি
  • গীর্জা: ১টি
  • হাসপাতাল: ১টি
  • নদ: ১ টি (ব্রহ্মপুত্র নদ)
  • বন্দর: ১ টি (চিলমারী নদী বন্দর)

দর্শনীয় স্থান

  • উদুনা-পুদুনার বিল
  • চিলমারী বন্দর। এখানে উত্তরাঞ্চলরে একমাত্র ভাসমান তেল ডিপো অবস্থিত।
  • ব্রহ্মপুত্র নদ
  • উষারাণীর বাড়ি (রাণীগন্জ)
  • রাজারঘাট (রাণীগন্জ)
  • ভক্তিভিটের ঘাট (কাঁচকল)
  • চিলমারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "এক নজের চিলমারী"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪
  2. জেলা উন্নয়ন পরিক্রমা। ২০০১-২০০৫, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, তথ্য মন্ত্রণালয়, ডিসেম্বর ২০০৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.