হরিপুর উপজেলা

হরিপুর উপজেলা বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।

হরিপুর
উপজেলা
উপজেলা পরিষদ ভবনের প্রধান দরজা
হরিপুর
বাংলাদেশে হরিপুর উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৫°৪৮′১৫″ উত্তর ৮৮°৮′২৩″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাঠাকুরগাঁও জেলা
আয়তন
  মোট২০১.০৬ কিমি (৭৭.৬৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট১,৪৬,৭২৬
  জনঘনত্ব৭৩০/কিমি (১৯০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫১৩০ ওয়েবসাইট &#৬১; haripur.thakurgaon.gov.bd/
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৯৪ ৫১
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান ও আয়তন

এর পূর্বে রানীশংকাইল উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে রানীশংকাইল উপজেলা এবং দক্ষিণে ভারত। এই উপজেলার মোট আয়তন ২০১.০৬ বর্গ কিলোমিটার।

প্রশাসনিক এলাকা

এই উপজেলা ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হল-

ইতিহাস

১৮৭২ থেকে ১৮৮৬ সালের মধ্যে হরিপুর অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার থানা হিসেবে গঠিত হয়।[2] রাণীশংকৈল থানা থেকে বিছিন্ন হয়ে জন্ম নেয়া হরিপুর উপজেলা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। মাত্র ৭৬ বর্গ মাইল আয়তন বিশিষ্ট উপজেলাটি পূর্বে ও পশ্চিমে দুই উপনদী কুলিক ও নাগরের মেখলা বেষ্টিত এবং উঁচু বেলে দোঁ-আশ মাটি বন্যরেখা বর্হিভূত জেলা মৃত্তিকা স্তরে বিভক্ত। পৌরণিক হরিপুর ছিল অরণ্যক আর অপেক্ষাকৃত অনুর্বর, এর জনগোষ্ঠী ছিল আয়েশী, শ্রমবিমুখ ও উদ্বেগহীন।

ভূতাত্তিক উৎপত্তি ও গুণাগুণের নিরীখে তিস্তার পল্লী অঞ্চল হিসেবে পরিগণিত হলেও বিহারের শুষ্ক মরু অঞ্চলের সঙ্গে এর ভূ-প্রাকৃতিক সাদৃশ্য চমকপ্রদ। হরিপুরের মাটি অধিকাংশ স্থানেই বেলে এবং দো-আশ। আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। বনাঞ্চল নেই বলে বৃষ্টিপাত স্বল্প। এ অঞ্চলটি খোলড়া পরগনার অন্তর্গত ছিল। এ অঞ্চলের নামকরণ হিসেবে যে লোকশ্রুতি আছে তা নিম্নরুপ- শালবাড়ি পরগণার জামুন গ্রামে নাশকি জমিদার ছিলেন কামরুন নাহার নামের এক মহিলা। তিনি ছিলেন বিধবা ও অপুত্রক। তার জমিদারি দেখাশুনার জন্য পার্শ্ববর্তী ভৈষা গ্রামের হরিমোহন ছিলেন তার নায়েব। এই হরিমোহন পরে উক্ত নাশকি জমিদারির মালিক হন এবং নতুন জমিদারি স্টেটের নামকরণ করেন হরিমহন স্টেট। পরবর্তীতে হরিমোহনপুর থেকে হরিপুর নাম পরিচিতি লাভ করে। ১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ সরকার হরিপুরকে থানা এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।[3]

মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হরিপুর অঞ্চল ছিল ৭ নং সেক্টরের অধীন। এ সময় হরিপুরের কামার পুকুরে, ভাতুরিয়ায়, ডাঙ্গীপাড়ায় ও গেদুড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের লড়াই সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলার মোঃ ইসমাইল, ডাঃ ইসমাইল, ডাঃ আজিজসহ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২৩ জন আহত হন। ১ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।[4]

জনসংখ্যার উপাত্ত

১,৪৬,৭২৬জন (২০১১আদমশুমারী অনুযায়ী)। পুরুষ- ৭৩,৫২০ জন; মহিলা-৭৩,২০৬ জন।১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ১০১,৬৫৮ জন।[5]

শিক্ষা

গড় হার ৩৪.১%; পুরুষ ৪০.৩%, মহিলা ২৭.৫%। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৮টি; নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ০৮টি; মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২টি; কলেজ ১০টি; মাদ্রাসা ১৫টি।

অর্থনীতি

কৃষিই অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। কৃষকদের মধ্যে ভূমিমালিক ৫৮.১২%, ভূমিহীন ৪১.৮৮%। প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, শাকসবজি। প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, তরমুজ, সুপারি, কলা, পেঁপে। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, খেসারি, ছোলা, আউশ ধান, অড়হর, মাষকলাই। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার -গবাদিপশু ৮, হাঁস-মুরগি ৪৮, হ্যাচারি ১। ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে হস্তচালিত-৩৩টি, ধানমারাই কল-৩৮৭টি, এবং কুমর-২২টি। বৃহৎ শিল্প নেই। ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনায় হরিপুরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় ক্ষুদ্র শিল্প। এসব ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা প্রায় ১২৪টি (চাতালসহ ধানের মিল)। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে হরিপুর উপজেলায় ইজারাকৃত ছোট-বড় হাট-বাজার সর্বমোট ১৮(আঠার)টি রয়েছে।[6]

নদীসমূহ

হরিপুর উপজেলায় বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তে নাগর নদী

হরিপুর উপজেলায় চারটি নদী রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে নাগর নদী, কুলিক নদী, নোনা নদী[7][8] এবং গন্দর নদী[9]

চিত্তাকর্ষক স্থান

হরিপুর উপজেলায় অবস্থিত ভগ্নপ্রায় হরিপুর রাজবাড়ির পেছনভাগ।

কৃতি ব্যক্তিত্ব

বিবিধ

এই উপজেলায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভেতর আছে মসজিদ ৩৩১টি, মন্দির ২৩টি, গির্জা ২টি, পুরাতন মাযার ৫টি। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ভেতর আছে লাইব্রেরি ১টি, সিনেমা হল ১টি, ক্লাব ৩০টি, মহিলা সংগঠন ৯৬টি এবং খেলার মাঠ ১০টি।

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে হরিপুর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৫
  2. ধনঞ্জয় রায়, দিনাজপুর জেলার ইতিহাস, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ২০০৬, পৃষ্ঠা ২১৩
  3. সেনুয়া, নবম সংখ্যা, ডিসেম্বর, ২০০৭।
  4. http://bn.banglapedia.org
  5. "বাংলাদেশর ১৯৯১ মারির মানুলেহা (লোক গননা)"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-১৭
  6. http://haripur.thakurgaon.gov.bd
  7. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
  8. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ৬১৭, ISBN 984-70120-0436-4.
  9. হানিফ শেখ, ড. মো. আবু (ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় নদ-নদী"। বাংলাদেশের নদ-নদী ও নদী তীরবর্তী জনপদ (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: অবসর প্রকাশনা সংস্থা। পৃষ্ঠা ৭০। আইএসবিএন 978-9848797518।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.