পীরগঞ্জ উপজেলা, রংপুর
পীরগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের রংপুর জেলার একটি উপজেলা (তৃতীয় স্তরের প্রশাসনিক ইউনিট)। প্রশাসনিকভাবে এটি রংপুর বিভাগের রংপুর জেলার অন্তর্গত। এ উপজেলার প্রশাসনিক সদরদপ্তর বা রাজধানীর নাম পীরগঞ্জ। পলাশবাড়ী, ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ উপজেলা, সাদুল্লাপুর ও মিঠাপুকুর উপজেলার সাথে এ উপজেলার সীমানা রয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলার আয়তন ৪০৯.৩৭ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৩,৮৫,৪৯৯ জন। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে এটি রংপুর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা (রংপুর সদর উপজেলার পরে)।
পীরগঞ্জ | |
---|---|
উপজেলা | |
![]() ![]() পীরগঞ্জ | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°২৪′৪০″ উত্তর ৮৯°১৮′৪৪″ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | রংপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৪০৯.৩৭ কিমি২ (১৫৮.০৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৩,৮৫,৪৯৯ |
• জনঘনত্ব | ৯৪০/কিমি২ (২৪০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৮৫ ৭৬ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
ইতিহাস
প্রাচীনকালে পীরগঞ্জ উপজেলা কামরুপ রাজ্যের অংশ ছিল। কামরুপের নরক রাজার রাজত্বকালে পীরগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীর তীর পর্যন্ত তার রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। মিঠাপুকুর উপজেলার পাটকাপাড়া ও উদয়পুর পূর্বে পীরগঞ্জের বাগদুয়ার পরগণার অধীন ছিল। মধ্যযুগে পীরগঞ্জ কামতা রাজাদের অধীনে ছিল। রাজা নীলাম্বর পীরগঞ্জের চতরাহাটের পশ্চিম পার্শ্বে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, যা নীল দরিয়ার দুর্গ নামে পরিচিত ছিল এবং এখনও এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পীরগঞ্জ ৬নং সেক্টরের অধীনে ছিল। পীরগঞ্জ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে মিত্রবাহিনী লালদিঘী নামক স্থানে রংপুর- বগুড়া মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনী থানায় গোলাবর্ষণ করে এবং থানার অবকাঠামো বিধ্বস্ত করে। ১৭ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মাদারগঞ্জ, মীরপুর এবং আংরার ব্রীজে প্রতিরোধ যুদ্ধ হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে। আগুনে পুড়ে দেয় মাদারগঞ্জ, আংরার ব্রীজ সংলগ্ন উজিরপুরের জেলেপাড়া এবং টুকুরিয়ার সুজারকুটি গ্রাম।
ভূগোল
পীরগঞ্জ উপজেলা রংপুর জেলা সদর হতে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, বগুড়া থেকে উত্তর দিকে, কর্কটক্রান্তি রেখার সামান্য উত্তরে অবস্থিত। উপজেলাটি ২৫°১৮’ উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৫°৩১’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৮’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ হতে ৮৯°২৫’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ উপজেলা উত্তরে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা, পূর্বে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। পীরগঞ্জ উপজেলার মোট আয়তন ৪০৯.৩৭ বর্গকিলোমিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ০০ মিটার বা ০০ ফুট। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি অনুসারে পীরগঞ্জ উপজেলা তিস্তা প্লাবন ভূমিতে অবস্থিত এবং এর ভূসংস্থান বালু মিশ্রিত বেলে দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি দ্বারা গঠিত সমভূমি, যা উত্তর থেকে দক্ষিণে কিছুটা হলেও ঢালু। পীরগঞ্জ উপজেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২১০৬ মিলিমিটার। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ উপজেলাতেও এপ্রিল থেকে জুন হল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস, যার তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি হল সবচেয়ে শীতলতম মাস, তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রশাসনিক এলাকা
পীরগঞ্জ উপজেলা ১টি পৌরশহর (পীরগঞ্জ পৌরসভা) ও ১৫টি ইউনিয়নে বিভক্ত। ইউনিয়নসমূহ আবার ৩০৮টি মৌজা ও ৩৩১টি গ্রামে বিভক্ত।
ইউনিয়নসমূহ:
- ১ নং চৈত্রকোল ইউনিয়ন
- ২ নং ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন
- ৩ নং বড়দরগাহ্ ইউনিয়ন
- ৪ নং কুমেদপুর ইউনিয়ন
- ৫ নং মদনখালী ইউনিয়ন
- ৬ নং টুকুরিয়া ইউনিয়ন
- ৭ নং বড়আলমপুর ইউনিয়ন
- ৮ নং রায়পুর ইউনিয়ন
- ৯ নং পীরগঞ্জ ইউনিয়ন
- ১০ নং শানেরহাট ইউনিয়ন
- ১১ নং পাঁচগাছী ইউনিয়ন
- ১২ নং মিঠিপুর ইউনিয়ন
- ১৩ নং রামনাথপুর ইউনিয়ন
- ১৪ নং চতরা ইউনিয়ন
- ১৫ নং কাবিলপুর ইউনিয়ন
আইনশৃঙখলা দিক থেকে এটি বাংলাদেশ পুলিশের পীরগঞ্জ থানার অধীন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২৪ নং রংপুর-৬ আসনটি এ উপজেলা নিয়ে গঠিত।[2]
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ৩৮৫,৪৯৯ জন,[1] যা স্বাধীন রাষ্ট্র বেলিজের জনসংখ্যার সমান।[3] এর মধ্যে ১৯২,০২৫ জন পুরুষ এবং ১৯৩,৪৭৪ জন মহিলা। নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০১:১০০, যা জাতীয় অনুপাতের উল্টো (জাতীয় অনুপাত ১০০.৩)। ৫ বছরের নিচের শিশুদের সংখ্যা প্রায় ৫৪,৪৫১ জন, উপজেলার মোট জনসংখ্যার ১৪%। ১৮ বছরের উর্ধ্বে এমন জনসংখ্যা ২৩৯,৫১১ জন, যার মধ্যে নারী ১২৪,২৮৭ জন এবং বিবাহিত নারীর সংখ্যা হল ৯৭৪৪৮ জন। ২০১১ গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় ১০১,৬৪০টি খানা বা পরিবার রয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলায় আদিকাল থেকেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আদিবাসী বসবাস করে আসছে এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই আদিবাসীরা সবসময় একটি স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে এসেছে। ঢাঁক, ঢোল, কাসর, তোরংগ, বাঁশী এ এলাকার বেশ জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র।
শিক্ষা
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৪৫.৪%,[1] যা ২০০১ সালে ৩৯.০৭% ছিল। নারী স্বাক্ষরতার হার ৪৩.১% এবং পুরুষের স্বাক্ষরতার হার ৪৭.৭%। উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে; সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজ, কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়, মদনখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চক করিম প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যতম।
বিবিধ
- হাট-বাজার
এখানে ৩০টি হাট ও বাজার রয়েছে; এগুলোর মধ্যে আব্দুল্যাপুর হাট, কলোনি বাজার, কাউয়াপুকুর বাজার, কাদিরাবাদ হাট, কুমেদপুর বাজার, খালাশপীর হাট-বাজার, খেজমতপুর গণিরহাট, গুর্জিপাড়া হাট-বাজার, বড় দরগাহ হাট-বাজার, চতরা হাট-বাজার, ছোট উমরপুর বাজার, জামতলা হাট, জাহাঙ্গীরাবাদ হাট, পীরগঞ্জ বাজার, পীরেরহাট, বটেরহাট, বালুয়াহাট, ভেন্ডাবাড়ী হাট-বাজার, মন্ডলের বাজার, শানের হাট-বাজার, মাদারগঞ্জ হাট-বাজার, মাদারহাট, রসুলপুর বাজার, রায়পুর বাজার, কদমতলা বাজার উল্লেখযোগ্য।
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- শাহ্ ইসমাঈল গাজী (রহঃ) - ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব;
- কাজি হেয়াত মামুদ- মধ্যযুগীয় লোককবি;
- এম এ ওয়াজেদ মিয়া - পরমাণু বিজ্ঞানী;
- মতিউর রহমান - রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী;
- সজীব ওয়াজেদ জয় - রাজনীতিবিদ।
দর্শনীয় স্থান
- হাতীবান্ধা মাজার শরীফ
- বামনীর বিল
- আনন্দ নগর
- নীল দরিয়া
- হাতিবান্ধা মসজিদ
- কাটাদুয়ার দরগাহ
- দরিয়ার দরগা
- সাধক কবি হেয়াত মামুদ মাজার
- রায়পুর জমিদার বাড়ী
- কবিলপুর জমিদারের কাচা
- জেলা পরিষদ ডাক বাংলা
- খালাশপীর মসজিদ
- ড. ওয়াজেদ মিয়া সেতু
- প্রচীন জামে মসজিদ মকিমপুর
- মাগুড়া কয়লা খনি[4]
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ
সংবাদপত্র
- কাগুজে পত্রিকার মধ্যে ‘বজ্রকথা’ পীরগঞ্জ উপজেলার প্রথম পত্রিকা। যা সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে এখনো প্রকাশিত হয়ে আসছে।
- পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোর (Pirganj24) পীরগঞ্জের সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক পঠিত অনলাইন পত্রিকা। যা ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে।
- সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে ‘সমকালীন বার্তা’ পীরগঞ্জবাসীকে খবরের যোগান দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র
- Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ২: ইউনিয়ন পরিসংখ্যান। Dhaka: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- "জাতীয় সংসদীয় আসনবিন্যাস (২০১৩) গেজেট" (PDF)। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ। ১৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৫।
- THE FEEDBACK WORLD। "Country Comparison:Population"। www.cia.gov (ইংরেজি ভাষায়)। Central Intelligence Agency। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৭।
- "দর্শনীয় স্থান"। rangpur.gov.bd।