কুমেদপুর ইউনিয়ন
কুমেদপুর বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। ইউনিয়নটির পুরো নাম ৪নং কুমেদপুর ইউনিয়ন।
নামকরণের ইতিহাস
কুমেদপুর ইউনিয়নের ইতিহাস অনেক দিনের পুরানো। এক সময় এখানে অনেক রাজা জমিদার বাস করতেন। কথিত আছে মুঘল আমলে আখিরা নদীর সঙ্গে কয়েকটি বিল আছে যাহা কুমেদপুর গ্রামের আশেপাশে অবস্থিত। যেমনঃ ঘুঘার বিল, ধন তোলার বিল, মাল তো্লার বিল, পুয়াগাড়ীর বিল এবং জালনগাড়ী বিলে অসংখ্য পদ্মফুল ফুটত। এই পদ্ম ফুল 'কুমদ ফুল' হিসেবে পরিচিত। তারই সুত্রধরে এই গ্রামকে 'কুমদ' থেকে কুমেদপুর নাম রুপান্তরিত করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, এক কালে এই এলাকা হিন্দু রাজাদের দখলে ছিল। তেমন এক রাজার নাম ছিল রাজা গৌরি চন্দ্র পাল। তার একজন সুন্দরী মেয়ে ছিল নাম ছিল তার 'কুমোদিনী'। তারই নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম কুমেদপুর করন করা হয়েছে বলে অনেকের ধারনা।[1]।
অবস্থান
রংপুর জেলা হতে ৪০ কি.মি. দক্ষিণ দিকে এবং পীরগঞ্জ উপজেলা হতে ১৫ কি.মি. উত্তর-পশ্চিম দিকে আখিরা নদী-র কোল ঘেষে অবস্থিত। ৪নং কুমেদপুর ইউনিয়নের উত্তরে ৩নং বড়দরগাহ্ ইউনিয়ন ও ২নং ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন, দক্ষিণে ৮নং রায়পুর ইউনিয়ন, পূর্বে ৯নং পীরগঞ্জ ইউনিয়ন, পশ্চিম দিকে ২নং ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন ও ৫নং মদনখালী ইউনিয়ন অবস্থিত।
প্রশাসনিক এলাকা
৪নং কুমেদপুর ইউনিয়নের অধীনে মোট ১৮টি গ্রাম আছে।[2]। কুমেদপুর ইউনিয়নের গ্রামসমূহ—
- বড়রসুলপুর
- মাহমুদপুর
- হরিপুর
- বউলবাড়ী
- মিঠারপাড়া
- বাজেশীবপুর
- পলাশবাড়ী
- রত্নেশ্বরপুর
- বগেরবাড়ী
- বারুদহ
- মরারপাড়া
- শীতলপুর
- চন্ডিপুর
- শরিফেরপাড়া
- কুমেদপুর
- দিগদুয়ারী
- বেড়াখাই
- কাঞ্চনপুর।
জনসংখ্যার উপাত্ত
কুমেদপুর ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ২০,৭০৪ জন (প্রায়) (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)
শিক্ষা
২০০১ সালের শিক্ষা জরিপ অনুযায়ী কুমেদপুর ইউনিয়নের শিক্ষার হার ৫৩.২৩%।
বাজার
ইউনিয়নটিতে দুটি বাজার আছে [1]।।যথা—
- কুমেদপুর চৌধুরী বাজার, কুমেদপুর, বাগদুয়ার, পীরগঞ্জ, রংপুর
- রসুলপুর বাজার, রসুলপুর, বাগদুয়ার, পীরগঞ্জ, রংপুর
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
- মতিউর রহমান - রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী [3]।
পীরগঞ্জের বীর সন্তান সাবেক মন্ত্রি মতিউর রহমান কুমেদপুর ইউনিয়নের রছুলপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বি.এ. পাশ করার পর মতিউর রহমান ঢাকায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। আপন মেধা, সততার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সঙ্গে শেখ মুজিবর রহমানের একজন ঘনিষ্ট সহকারী হিসেবে মতিউর রহমান ছয়দফা দাবি নিয়ে উত্তর বঙ্গে প্রচারনা শুরু করেন। এসময় সরকারের বহু মামলা ও নির্যাতন চলতে থাকে। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে আগরতলা মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান কারারুদ্ধ হলে তার অনুরোধে উকিল বাবা হিসেবে মতিউর রহমান শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার শুভ বিবাহ নিস্পন্ন করেন। ১৯৭১ খ্রিঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় মতিউর রহমান ছয় নং সেক্টরের অধীনে নয় জনের চেয়ারম্যান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্ব পালন করেন। দেশ হানাদার মুক্তি হলে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রি হিসেবে পীরগঞ্জ সাধক কবি হেয়াত মামুদের পবিত্র মাজার শরিফ নির্মানের কাজ শুরু হয়।
- পীর হযরত আব্দুল কাদের (রহঃ)[3]।
সকলের স্বীকৃত ও শ্রদ্ধেয় পীর কেবলার জন্মস্থান ৪নং কুমেদপুর ইউনিয়নের বউলবাড়ি গ্রামে। তিনি একই সাথে বসবাস করতে থাকেন দিনাজপুর জেলার অর্ন্তগত ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া গ্রামে। মাঝে মাঝে জন্মস্থান পীরগঞ্জের বউলবাড়িতে অবস্থান করতেন তিনি। এই ক্ষণজন্মা মনীষি সিংড়া গ্রামে শাহাদত বরণ করেন। সেখানে তার মাজার শরিফ বিদ্যমান রয়েছে।