হাকিমপুর উপজেলা

হাকিমপুর বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

হাকিমপুর
উপজেলা
হিলি
হাকিমপুর
বাংলাদেশে হাকিমপুর উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৫°১৭′৩″ উত্তর ৮৯°০′৫৮″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাদিনাজপুর জেলা
আয়তন
  মোট৯৯.৭৯ কিমি (৩৮.৫৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৯২,৫৯৯
  জনঘনত্ব৯৩০/কিমি (২৪০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৫৪.০৭%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫২৬৮
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ২৭ ৪৭
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান

এই উপজেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলাবিরামপুর উপজেলা, দক্ষিণে পাঁচবিবি উপজেলা, পূর্বে ঘোড়াঘাট উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বিরামপুর উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন ৩টি ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।

  • খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন
  • বোয়ালদার ইউনিয়ন
  • আলীহাট ইউনিয়ন
  • হাকিমপুর পৌরসভা

ইতিহাস

হাকিমপুর উপজেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

তখনো ভারত বর্ষ বিভক্ত হয় নাই । মুর্শিদাবাদের জমিদার মিনা কুমারী  তাহার জমিদার অন্তর্গত একটি  নাম তার বালুরঘাট । মিনা কুমারী ছিলেন ধনবতী –বিশাল সম্পদশালীনী । কিন্তু উহা রক্ষনা বেক্ষনের জন্য তাহার জনবল ছিল অপ্রতুল । তাই তিনি তাহার কিছু সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে মনস্থ করিলেন । গদাধর মন্ডল উঠতি ধনশালী । বহুদিনের বাসনা জমিদার হইবেন। সুযোগ ও আসিল দর পত্তনি হিসাবে মিনা কুমারীর নিকট হইতে তিনি ক্রয় করিলেন বালুঘাট  থানার ৬টি মৌজা হাকিমপুর, ধরন্দা, মাকুরমুড়া, খোর্দ্দা-মাহসুল ,বাসুদেবপুর ও আপ্তর । এসব কিছু তখন ছিল বগুড়া জেলার অধীন ।

গদাঘরমন্ডল নি:সন্তান হওয়ায় তাহার মৃত্যুর পর ভাতুস্পুত্র বেনী মাধব দাস একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পত্তির মালিক হন। বেণী মাধব দাসের কোন সন্তান  না থাকায় তাহার মৃত্যুর পর তদীয় স্ত্রী কুঞ্জবালা দাস্যা জমিদারী প্রাপ্ত হন এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহাদের একমাত্র কন্যা বিধুবালা সরকার উক্ত সম্পত্তির মালিক হন।

ভারতবর্ষ বিভক্ত  হইল । জমিদারী প্রথাও উচ্ছেদ হইল । আর বালুরঘাট থানাও দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া দুই দেশের অন্তর্ভুক্ত হইল। তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভুক্ত এই অঞ্চলটি পার্শ্ববর্তী থানা নবাবগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হইয়া বগুড়া হইতে দিনাজপুর জেলার অধীন চলিয়া আসিল । একে তো সীমান্ত এলাকা তার উপর থানা সদর হইতে দুর   ট্রেন ডাকাতি , গ্রামে গঞ্জে চুরি ডাকাতি  প্রভৃতি অরাজকতায় জন জীবন অতিষ্ঠ। প্রয়োজন দেখা দিল একটি পুলিশ ফাঁড়ীর তধানীন্তন পাক হিলি বাজারস্থ জনাব শফি মন্ডল সাহেবের চালকল গুদামে স্থাপিত হইল একটি পুলিশ   ফাঁড়ী ।

১৯৫০ সালের ২৫শে মার্চ হাকিমপুর ইতিহাসে এক স্মরনীয় ঘটনা । তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই দিনে বোয়ালদাড়, আলীহাট, খট্টামাধবপাড়া ও বিরামপুর সহ মোট ৪ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে হাকিমপুর মৌজার নামানুসারে হাকিমপুর  থানা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২ টি ইউনিয়ন যথা হিলি-হাকিমপুর ও কাটলা সুষ্টির মাধ্যমে এই থানায় মোট ৬টি ইউনিয়ন হয়।

১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদার বিধুবালা সরকারের নিকট হইতে তাহার বাসভবন সহ মোট ২৭৫একর ৫৮৬৯.২০ টাকায় ক্রয় করেন এবং সেখানে থানার অফিস স্থানান্তরিত  হয়। সৃষ্টির মুহুর্তে থানাটি মোটামুটি বড় থানা হিসাবে পরিচিতি ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালে এই থানার ২ টি ইউনিয়ন   কাটলা ও বিরামপুর  নবগঠিত থানা বিরামপুরের অন্তভুক্ত হয়। ফলে উপজেলাটি বর্তমানে  ৪ টি ইউনিয়ন লইয়া গঠিত । এই উপ জেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলা উত্তর পশ্চিমে নবগঠিত বিরামপুর উপজেলা দক্ষিণে পাচবিবি উপজেলা পূর্বে ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে পশ্চিম বংগের অন্তর ভুক্ত হিলি থানা ।.

বর্তমান হাকিমপুর উপজেলা  ৬৯ টি মৌজায় বিভক্ত । এই উপজেলায় বৈগ্রাম মৌজায় একটি বহু প্রাচীন  বৌদ্ধ্য মন্দিরের ধংসাবশেষ আছে। ছাতনী মৌজায় রইয়াছে  একটি প্রাচীন মসজিদের ধংসাবশেষ ।  একটি গীর্জার ধংসাবশেষ দেখা যায়  লক্ষিকোল মৌজায় । অবিভক্ত ভারতে অত্র হাকিমপুর উপজেলা  ধানের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত  ছিল । এই   এলাকায় ততকালে সবচেয়ে বড় আকারের ধান ভাংগানোর বয়লার মিল সহ বর্তমানে মোট ১৭ টি (সতের )  ধান ভাংগানের মিল আছে।

এই এলাকা বরেন্দ্র  অঞ্চলের অন্তর্গত। কোথাও কোথাও উচু অঞ্চল এখনো দেখা যায় । অধিকাংশ লোকই কৃষি জীবি। কৃষি ক্ষেত্রে ধান উতপাদনের উপযোগীতা সবচাইতে সব বেশী । । আদি অধিবাসী গণ কৃষিকেই প্রধান হিসাবে এখনও টিকাইয়া রাখিয়াছেন । এই উপজেলার মধ্য দিয়া তুলশী গঙ্গা ও যমুনা নদীর শাখা প্রশাখা বহমান ।

এই উপজেলাই মোট ৬ ছয় মাইল ভারত ও বাংলাদেশে মধ্যবর্তী সিমান্ত এলাকা ।

হাকিমপুর উপজেলায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর "পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড" অবস্থিত। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যাদি আমদানি ও রপ্তানিি হয়ে থাকে। এই সিমান্ত এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক চেক পোষ্ট অবস্থিত , যাহার নাম হিলি চেক পোষ্ট । বছরে প্রায় ৭-৮ হাজার লোক এই পথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়ত করে।

তথ্যসূত্র: জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও অন্যান্য।

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী হাকিমপুর উপজেলার জনসংখ্যা ৯২,৫৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৭,১৬২ জন এবং মহিলা ৪৫,৪৩৭ জন।

শিক্ষা

অত্র পৌরসভায় হাকিমপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজ, হাকিমপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ নামক ০২ টি ডিগ্রী কলেজ, বাংলাহিলি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে ০১ টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ নামে ০১ টি বে-সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ডলি মেমোরিয়াল স্কুল এবং হিলি পাবলিক স্কুল নামে ০২ টি প্রাইভেট উচ্চ বিদ্যালয়, ৪৬ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ০৮ টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে।

অর্থনীতি

হাকিমপুর উপজেলায় ২টি নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে ছোট যমুনা নদী এবং তুলসি গঙ্গা নদী।[2]

এখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর "পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড" অবস্থিত। এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

খনিজ সম্পদ

সাম্প্রতিককালে হাকিমপুরে লৌহ খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। হাকিমপুরের ইসবপুর গ্রামে প্রায় ছয় বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে ২০১৯ সালে এটি আবিষ্কার করা হয়। খনিতে লোহার পাশাপাশি ক্রোমিয়াম, নিকেল উপস্থিতি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এমনকি খনিটিতে স্বর্ণও পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কৃতী ব্যক্তিত্ব

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫।

বহিঃসংযোগ

হাকিমপুর থানা থেকে দক্ষিণ পাশে পাঁচবিবি হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা জয়পুরহাটে যোগাযোগ রয়েছে, হাকিমপুর উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শহর বগুড়া তে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে, হাকিমপুর উপজেলা শহর উত্তর পাশ দিয়ে বিরামপুর উপজেলা উপর দিয়ে দিনাজপুর জেলা শহর পর্যন্ত হাইওয়ে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে তাছাড়া হাকিমপুর থানায় একটি স্থলবন্দর থাকায় হাকিমপুর উপজেলার পশ্চিম দিক দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে, তাছাড়া এখানে একটি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট রয়েছে এবং হাকিমপুরের উপর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর সুদীর্ঘ রেলপথ রয়েছে, যে রেল পথ দিয়ে ঢাকার সাথে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এর রেল যোগাযোগ রয়েছে।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.