শাহ ইসমাইল গাজী
শাহ ইসমাইল গাজী (রঃ) বাংলার একজন স্বনামধন্য ইসলাম প্রচারক, ও সেনাপতি। বারবক শাহের আমলে (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি) তিনি বাংলার উত্তরাঞ্চলে মুসলিম রাজ্যের বিস্তারে ও ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। একটি ফারসি পান্ডুলিপি ও বাংলার বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত লোককাহিনীগুলির মাধ্যমে শাহ ইসমাইল গাজীর আধ্যাত্মিক গৌরবময় কীর্তি জানা যায়।
ইতিহাস
শাহ ইসমাইল গাজী ছিলেন রসুল (সঃ)-এর বংশধর এবং তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি বড় হন এবং শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারক হন। এ উদ্দেশ্যে কয়েকজন শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রাচ্যের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং শেষ পর্যন্ত লখনৌতে পৌঁছান। তখন প্রতিবছর বাংলার রাজধানী বন্যায় প্লাবিত হতো। সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহ বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করার জন্য তার সব প্রকৌশলী ও কারিগরকে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শাহ ইসমাইল গাজী সুলতানকে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী চুটিয়া-পুটিয়া বিলের উপর একটি সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেন এবং শহরটিকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করেন। এভাবে তিনি সুলতানের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং সুলতান তাকে বিভিন্ন সীমান্তে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োগ করেন।
শাহ ইসমাইল গাজীকে প্রথমে বাংলার দক্ষিণ সীমান্তে উড়িষ্যার রাজা গজপতির আগ্রাসী পরিকল্পনার মোকাবিলা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়। তিনি গজপতিকে পরাজিত করে তার কাছ থেকে সীমান্ত-ফাঁড়ি মান্দারণ দখল করে নেন। সফল এই সেনানায়ককে এরপর কামরূপের রাজা কামেশ্বরের বিরুদ্ধে পাঠানো হয়। কামেশ্বর পরাজিত হয়ে সুলতানকে করদানে বাধ্য হন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই ঘোড়াঘাট সীমান্ত-ফাঁড়ির সেনাপতি ভান্দসী রায় ইসমাইলের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে, ইসমাইল গাজী কামরূপের রাজার সহযোগিতায় নিজের জন্য একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা করছেন এই মর্মে সুলতানের কাছে মিথ্যা অভিযোগ প্রেরণ করেন। রাগান্বিত হয়ে সুলতান দরবেশের শিরশ্ছেদের আদেশ দান করেন।
মৃত্যু
৮৭৮ হিজরি/১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে শাহ ইসমাইল গাজীকে হত্যা করা হয়। লোক কাহিনী মতে, তার খন্ডিত মস্তক রংপুরের পীরগঞ্জ থানার কাঁটাদুয়ার নামক স্থানে কবর দেয়া হয় এবং দেহ হুগলি জেলার মান্দারণে সমাধিস্থ করা হয়। তবে শাহ ইসমাইল গাজীর স্মৃতি বিজড়িত ছয়টি দরগাহ রয়েছে। এগুলির একটি মান্দারণে, একটি ঘোড়াঘাটে এবং চারটি রংপুর জেলার পীরগঞ্জে অবস্থিত, যার মধ্যে কাটাদুয়ার দরগাহ-টিই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
চিত্রশালা
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ পূর্ব থেকে
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ ভিতরে কবরস্থান
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ ভিতরের একটি ফটক
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ রাস্তার ওপার থেকে
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ পার্শ্ববর্তী মসজিদের উপর থেকে
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ ডিজাইন উপরের অংশ
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ ও পাশের মসজিদ উত্তর পূর্ব থেকে
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ এর সম্মুখদারের উপরের অংশ পার্শ্ববর্তী মসজিদের উপর থেকে
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ এর ইন্দিরা ( কুপ )
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ ( আসমানি রঙ ) পার্শ্ববর্তী মসজিদের উপর থেকে
- শাহ ইসমাইল গাজীর দরগাহ
- কাটাদুয়ার দরগাহ সামন থেকে
- কাটাদুয়ার দরগাহ এর ভিতরের রুপ (কবর)
- কাটাদুয়ার দরগাহ দক্ষিণ থেকে
- কাটাদুয়ার দরগাহ দক্ষিণ পূর্ব থেকে ( ঈদ গাহ ময়দান সহ)
- কাটাদুয়ার দরগাহ পিছন থেকে
- কাটাদুয়ার দরগাহ সিঁড়ি