ভারতীয় রেল
ভারতীয় রেল (হিন্দি: भारतीय रेल, Bhāratīya Rail) ভারতের সরকারি রেলওয়ে কোম্পানি এবং ভারত সরকারের রেল মন্ত্রকের একটি বিভাগীয় সংস্থা। দেশের রেল পরিবহণের সিংহভাগ এই সংস্থার মালিকানাধীন।
![]() | |
ভারত সরকারের রেল মন্ত্রকের বিভাগীয় সংস্থা | |
শিল্প | রেলপথ ও লোকোমোটিভ |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৬ এপ্রিল, ১৮৫৩ |
সদরদপ্তর | নতুন দিল্লি, ভারত |
বাণিজ্য অঞ্চল | ভারত |
প্রধান ব্যক্তি | কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী: পিযুস গোয়েল রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী : মনোজ সিনহা ও রাজেন গোহেন চেয়ারম্যান, রেলওয়ে বোর্ড: অশ্বানী লোহানি.[1] |
পরিষেবাসমূহ | রেল পরিবহণ |
আয় | ![]() |
কর্মীসংখ্যা | ১২,৪৭,০০০ (২০১৯)[3] |
মূল প্রতিষ্ঠান | রেল মন্ত্রক, ভারত সরকার |
বিভাগসমূহ | ১৭টি রেলওয়ে অঞ্চল (কোঙ্কন রেলওয়ে বাদে) |
স্লোগান | জাতির জীবনরেখা |
ওয়েবসাইট | ভারতীয় রেলের সরকারি ওয়েবসাইট |
ভারতীয় রেল বিশ্বের বৃহত্তম ও ব্যস্ততম রেল পরিবহন ব্যবস্থাগুলির অন্যতম। প্রতিদিন ১ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী এবং ২০ লক্ষ টনেরও বেশি পণ্য ভারতীয় রেলপথে চলাচল করে।[4][5] এই সংস্থা বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক তথা সরকারি পরিষেবাকর্মী নিয়োগকর্তা। সংস্থার কর্মচারী সংখ্যা ১৪ লক্ষ।[4][6] দেশের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর রেলওয়ে ব্যবস্থা প্রসারিত। ৬,৯০৯টি স্টেশন বিশিষ্ট ভারতের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৬৩,৩২৭ কিলোমিটারেরও বেশি। রোলিং স্টকের হিসেবে, ভারতীয় রেল ২০০,০০০টিরও বেশি (পণ্য) ওয়াগন, ৫০,০০০টিরও বেশি কোচ ও ৮,০০০টিরও বেশি লোকোমোটিভের মালিক।[4]
ভারতে রেল ব্যবস্থা চালু হয় ১৮৫৩ সালে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময়, দেশে বিয়াল্লিশটি রেল ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। ১৯৫১ সালে এই সংস্থাগুলির রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণের পর একটি মাত্র সংস্থা স্থাপিত হয় এবং উক্ত সংস্থাটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রেল ব্যবস্থায় পরিণত হয়। ভারতীয় রেল দূরপাল্লা ও শহরতলি স্তরে মাল্টি-গেজ ব্যবস্থায় ব্রড, মিটার ও ন্যারো গেজে রেল পরিবহন পরিচালনা করে। এই সংস্থা একাধিক লোকোমোটিভ ও কোচ উৎপাদন কারখানারও মালিক।
ইতিহাস
.jpg)
.jpg)


ভারতের প্রথম রেলওয়ের প্রস্তাবে 1832 সালে মাদ্রাজ তৈরি করা হয়েছিল। দেশের প্রথম ট্রেন, 'রেড হিল রেলওয়ে' (রাস্তার বিল্ডিংয়ের জন্য গ্রানাইট পরিবহনের জন্য আর্থার তুলা নির্মিত হয়েছিল, [ [রেড হিলস, চেন্নাই | রেড হিলস]] 1837 সালে মাদ্রাজে চিন্তিত্রিপেট সেতুতে চিনতাদ্রিপ সেতুতে। 1845 সালে, "গোদ্বরী বাঁধ নির্মাণ রেলওয়ে" রাজমুমারী দৌলেশ্বরম [ ], গোদ্বরী নদী উপর একটি বাঁধ নির্মাণের জন্য পাথর সরবরাহ। 1851 সালে, "সোলানি অ্যাকুইডাক্ট রেলওয়ে" রুবি কটিলি [সৌদি নদী] থেকে অ্যাককডাক্ট নির্মাণ সামগ্রী নির্মাণের জন্য রুর্কি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।[7]
১৮৪৪ সালে ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড হেনরি হার্ডিঞ্জ বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ভারতে রেলপথ স্থাপন করার অনুমতি দান করেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (এবং পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকার) নতুন নতুন রেলওয়ে কোম্পানিকে ভারতে রেলপথ স্থাপনের ব্যাপারে উৎসাহ দিতে থাকেন। একটি স্কিমের আওতায় জমি ও শুরুর বছরগুলিতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক দাখিলা নিশ্চিত করা হয়। কোম্পানিগুলি ৯৯ বছরের লিজে রেলপথ নির্মাণ ও পরিচালনা করতে থাকে। অবশ্য সরকারেরও সুযোগ রাখা হয় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই সেগুলি কিনে নেবার।[8]
১৮৫৩-৫৪ সালে বোম্বাই (অধুনা মুম্বাই) ও কলকাতার নিকটে 'পরীক্ষামূলক' দুটি লাইন স্থাপন ও পরিচালনার উদ্দেশ্যে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে (জিআইপিআর) ও ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে (ইআইআর) নামে দুটি কোম্পানি স্থাপন করা হয়।[8] ১৮৫১ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতে প্রথম রেল চালু হয়। রুরকিতে স্থানীয় একটি খাল নির্মাণকার্যে মালপত্র আনানেওয়া করার জন্য এই ট্রেনটি চালু করা হয়েছিল।[9] দেড় বছর বাদে, ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল বোম্বাইয়ের বোরি বান্দর থেকে থানের মধ্যে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবার সূচনা ঘটে। সাহিব, সিন্ধ ও সুলতান নামের তিনটি লোকোমোটিভ কর্তৃক চালিত এই রেল পরিষেবা ৩৪ কিলোমিটার পথে চালু হয়েছিল।[10]
১৮৫৪ সালে ভারতের তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ভারতের প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলিকে জুড়ে একটি ভারবাহী রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। সরকারি সুরক্ষা ব্যবস্থায় উৎসাহিত হয়ে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ চলে এবং একাধিক নতুন রেল কোম্পানি স্থাপিত হয়। ফলত ভারতে রেল ব্যবস্থার দ্রুত বিস্তার ঘটতে শুরু করে।[11] অনতিবিলম্বে দেশীয় রাজ্যগুলিও তাদের নিজস্ব রেল ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটায়। এইভাবে অধুনা অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম ও রাজস্থান নামে পরিচিত রাজ্যগুলিতে রেলপথের বিস্তার ঘটে। ১৮৬০ সালে ভারতে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ১৩৪৯ কিলোমিটার। ১৮৮০ সালে এই দৈর্ঘ্য হয় ২৫,৪৯৫ কিলোমিটার। এই বৃদ্ধি মুখ্যত দেশের তিন প্রধান বন্দর বোম্বাই, কলকাতা ও মাদ্রাজকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল।[12] অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রেলপথ স্থাপন করেছিল ভারতীয় কোম্পানিগুলিই। যমুনা ব্রিজ নির্মাণ সহ দিল্লি-লাহোর রেলপথটি নির্মাণ করেছিল বাবা শিবদয়াল বেদি অ্যান্ড সনস নামে এক সংস্থা। ১৮৯৫ সালের মধ্যে ভারতে দেশীয় লোকোমোটিভ উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। ১৮৯৬ সালে উগান্ডা রেলওয়ের নির্মাণকাজে ভারত থেকে ইঞ্জিনিয়ার ও লোকোমোটিভ পাঠানো হয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ভারতে ব্রড, ন্যারো ও মিটার গেজ নেটওয়ার্কে একাধিক মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন রেল পরিষেবা চালু হয়ে যায়।[13] ১৯০০ সালে সরকার জিআইপিআর নেটওয়ার্কটি অধিগ্রহণ করে নেয়। তবে ব্যবস্থাপনা কোম্পানির পরিচালনাতেই চলতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হলে যুক্তরাজ্য, মেসোপটেমিয়া, পূর্ব আফ্রিকা প্রভৃতি অঞ্চলে প্রেরণের জন্য রেলপথে সেনা ও খাদ্যশস্য প্রেরিত হয় বোম্বাই ও করাচি বন্দর নগরের উদ্দেশ্যে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ভারতে রেল ব্যবস্থা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।[14] ১৯২৩ সালে জিআইপিআর ও ইআইআর কোম্পানিদুটির রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ করা হয়। সরকার এই দুই কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের ভার সম্পূর্ণ নিজের হাতে গ্রহণ করে।[13]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ভারতের রেলব্যবস্থাকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করে। রেলের রোলিং স্টক সম্পূর্ণটাই চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যে। রেলওয়ে ওয়ার্কশপগুলি অস্ত্রাগারে পরিণত হয়।[15] ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতের রেলপথের ৪০ শতাংশ চলে যায় নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে। বত্রিশটি পূর্বতন দেশীয় রাজ্যগুলির মালিকানাধীন লাইন সহ মোট বিয়াল্লিশটি পৃথক রেল ব্যবস্থা একীভূত করে চালু হয় ভারতীয় রেল। ১৯৫১ সালে বিদ্যমান রেল ব্যবস্থাটি পরিত্যক্ত হয় এবং জোন বা অঞ্চল ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৫২ সালে ভারতে ছয়টি রেল অঞ্চল স্থাপিত হয়।[13]

ভারতের অর্থনীতি সমৃদ্ধির মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের রেলওয়ে উৎপাদনের পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হতে থাকে। ১৯৮৫ সালে স্টিম ইঞ্জিনের বদলে ডিজেল ও ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ চালু করা হয়। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে রেলওয়ের সংরক্ষণ ব্যবস্থার পুরোটাই সুনিয়ত ও কম্পিউটারায়িত করা হয়।
২০০৩ সালে ভারতীয় রেল, দেশে রেল ব্যবস্থা প্রবর্তনার সার্ধশতবর্ষ উদযাপন করে। রেল অঞ্চলে চালু হওয়া প্রথম ট্রেনের স্মৃতিতে বিভিন্ন রেলওয়ে জোন একই পথে হেরিটেজ ট্রেন চালায়। পরিষেবার ১৫০ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারতীয় রেল একটি স্মারক লোগোও চালু করে।[16][17] সেই সঙ্গে সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের নতুন ম্যাসকট "ভোলু দি এলিফ্যান্ড গার্ড"কেও সর্বসমক্ষে আনা হয়।[18]
সাংগাঠনিক কাঠামো
ভারতীয় রেল কোনো প্রাইভেট কোম্পানি নয়। এটি ভারত সরকারের রেল মন্ত্রক কর্তৃক অধিগৃহীত ও পরিচালিত একটি বিভাগীয় সংস্থা। এক জন রেল মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রীরূপে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দুই জন রাষ্ট্রমন্ত্রী রেলমন্ত্রীকে সহায়তা করে থাকেন। ভারতীয় রেলের প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে এক অর্থ কমিশনার, পাঁচ সদস্য ও এক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট রেলওয়ে বোর্ড।
রেলওয়ে অঞ্চল


ভারতীয় রেল একাধিক অঞ্চল বা জোনে বিভক্ত। এই অঞ্চলগুলি আবার বিভাগ বা ডিভিশনে বিভক্ত। ভারতীয় রেলে অঞ্চলের সংখ্যা ১৯৫১ সালে ছিল ছয় থেকে আটটি, ১৯৫২ সালে নয়টি এবং সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ২০০৩ সালে ষোলোটি। প্রত্যেকটি আঞ্চলিক রেলওয়ে একাধিক বিভাগে বিভক্ত। প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব সদর দফতর রয়েছে। ভারতে সর্বমোট সাতষট্টিটি রেলওয়ে ডিভিশন আছে।[13][19]
কলকাতা মেট্রো ভারতীয় রেলের মালিকানাধীন সংস্থা হলেও, এটি কোনো রেলওয়ে অঞ্চলের অংশ নয়। ২০১০ সাল থেকে এটি একটি স্বতন্ত্র রেলওয়ে অঞ্চলের মর্যাদা লাভ করে।[19]
কলকাতা মেট্রো সহ সতেরোটি রেলওয়ে অঞ্চলের শীর্ষে থাকেন একজন জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), যিনি সরাসরি রেলওয়ে বোর্ডকে রিপোর্ট করেন। বিভাগগুলির দায়িত্বে থাকেন ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম)। ইঞ্জিনিয়ারিং, যন্ত্র প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিন, সিগনাল ও দূরসংযোগ, হিসাব, কর্মচারী, অপারেটিং, বাণিজ্যিক ও সুরক্ষা শাখার বিভাগীয় আধিকারিকবৃন্দ সংশ্লিষ্ট ডিভিশনাল ম্যানেজারের কাছে রিপোর্ট করেন। তারা রেলওয়ে সম্পত্তির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত থাকেন। এই পদমর্যাদাক্রমের নিচে থাকেন স্টেশন ম্যানেজার। তাঁরা নির্দিষ্ট স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ দায়িত্বে থাকেন এবং তাঁদের স্টেশন প্রশাসনের অধীনস্থ ট্র্যাকে ট্রেনের গতিবিধি পরিচালনা করেন।
ক্রম | নাম | নামসংক্ষেপ | প্রতিষ্ঠাকাল | সদর | বিভাগ |
---|---|---|---|---|---|
১. | মধ্য রেল | CR | ৫ নভেম্বর, ১৯৫১ | মুম্বাই | মুম্বাই, ভুসাওয়াল, পুনে, সোলাপুর, নাগপুর |
২. | পূর্ব মধ্য রেল | ECR | ১ অক্টোবর, ২০০২ | হাজিপুর | দানাপুর, ধানবাদ, মুঘলসরাই, সমস্তিপুর, সোনপুর |
৩. | পূর্ব উপকূল রেল | ECoR | ১ এপ্রিল, ২০০৩ | ভুবনেশ্বর | খুরদা রোড, সম্বলপুর, বিশাখাপত্তনম |
৪. | পূর্ব রেল | ER | এপ্রিল, ১৯৫২ | কলকাতা | হাওড়া, শিয়ালদহ, আসানসোল, মালদা |
৫. | উত্তর মধ্য রেল | NCR | ১ এপ্রিল, ২০০৩ | এলাহাবাদ | এলাহাবাদ, আগ্রা, ঝাঁসি |
৬. | উত্তর পূর্ব রেল | NER | ১৯৫২ | গোরখপুর | ইজ্জতনগর, লখনউ, বারাণসী |
৭. | উত্তর পশ্চিম রেল | NWR | ১ অক্টোবর, ২০০২ | জয়পুর | জয়পুর, আজমের, বিকানের, যোধপুর |
৮. | উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল | NFR | ১৯৫৮ | গুয়াহাটি | আলিপুরদুয়ার, কাটিহার, লামডিং, রঙ্গিয়া, তিনসুকিয়া |
৯. | উত্তর রেল | NR | ১৪ এপ্রিল, ১৯৫২ | দিল্লি | দিল্লি, আম্বালা, ফিরোজপুর, লখনউ, মোরাদাবাদ |
১০. | দক্ষিণ মধ্য রেল | SCR | ২ অক্টোবর, ১৯৬৬ | সেকেন্দ্রাবাদ | সেকেন্দ্রাবাদ, হায়দ্রাবাদ, গুন্টাকল, গুন্টুর, নন্দেদ, বিজয়ওয়াড়া |
১১. | দক্ষিণ পূর্ব মধ্য রেল | SECR | ১ এপ্রিল, ২০০৩ | বিলাসপুর | বিলাসপুর, রায়পুর, নাগপুর |
১২. | দক্ষিণ পূর্ব রেল | SER | ১৯৫৫ | কলকাতা | আর্দ্রা, চক্রধরপুর, খড়গপুর, রাঁচি |
১৩. | দক্ষিণ পশ্চিম রেল | SWR | ১ এপ্রিল, ২০০৩ | হুবলি | হুবলি, বেঙ্গালুরু, মাইসুরু |
১৪. | দক্ষিণ রেল | SR | ১৪ এপ্রিল, ১৯৫১ | চেন্নাই | চেন্নাই, মাদুরাই, পলক্কড, সালেম, তিরুচিরাপল্লি, তিরুবনন্তপুরম |
১৫. | পশ্চিম মধ্য রেল | WCR | ১ এপ্রিল, ২০০৩ | জব্বলপুর | জব্বলপুর, ভোপাল, কোটা |
১৬. | পশ্চিম রেল | WR | ৫ নভেম্বর, ১৯৫১ | মুম্বাই | মুম্বাই সেন্ট্রাল, বরোদা, রাতলাম, আমেদাবাদ, রাজকোট, ভাবনগর |
১৭. | কলকাতা মেট্রো রেল | MR | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১০ | কলকাতা | কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
রেলওয়ে উৎপাদন কেন্দ্র

ভারতীয় রেলওয়ে এর রোলিং স্টক ও ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং উপাদানের অনেকগুলিই উৎপাদন করে। প্রোডাকশন ইউনিট নামক ছয়টি উৎপাদন কারখানা রেল মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ছয়টি প্রোডাকশন ইউনিট বা পিইউএস-এর (PUs) প্রত্যেকটির শীর্ষে থাকেন একজন জেনারেল ম্যানেজার বা জিএম। তিনি সরাসরি রেলওয়ে বোর্ডকে রিপোর্ট করেন। এই ছয়টি ইউনিট হল:
- চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা, চিত্তরঞ্জন, পশ্চিমবঙ্গ
- ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস, বারাণসী, উত্তরপ্রদেশ
- ডিজেল-লোকো মর্ডানাইজিং ওয়ার্কস, পাতিয়ালা, পাঞ্জাব
- ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি, চেন্নাই, তামিলনাড়ু
- রেল কোচ ফ্যাক্টরি, কাপুরথালা, পাঞ্জাব
- রেল হুইল ফ্যাক্টরি, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক
- রেল স্প্রিং কারখানা, গোয়ালিয়র, মধ্যপ্রদেশ
ভারতীয় রেলের অন্যান্য স্বাধীন ইউনিটগুলি হল:
- সেন্ট্রাল অর্গ্যানাইজেশন ফর রেলওয়ে ইলেকট্রিফিকেশন, এলাহাবাদ, উত্তরপ্রদেশ
- সেন্ট্রাল অর্গ্যানাইজেশন ফর মর্ডানাইজেশন অফ ওয়ার্কশপস, নতুন দিল্লি
রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গ্যানাইজেশন (আরডিএসও), লখনউ ভারতীয় রেলের আর অ্যান্ড ডি বিভাগ। এটি রেলওয়ে বোর্ড, আঞ্চলিক রেলওয়ে ও প্রোডাকশন ইউনিটগুলির কারিগরি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে।
ভারত আর্থ মুভারস লিমিটেড, বেঙ্গালুরু ভারতীয় রেলের সংস্থা না হলেও এটি ভারতীয় রেল ও দিল্লি মেট্রো রেলের জন্য কোচ নির্মাণ করে।
সেন্ট্রাল অর্গ্যানাইজেশন ফর রেলওয়ে ইলেকট্রিফিকেশন (সিওআরই), মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা ও এনএফআর-এর নির্মাণ সংস্থাগুলিও জেনারেল ম্যানেজার কর্তৃক পরিচালিত হয়।
রেলওয়ে ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন
রেলওয়ে অধিগৃহীত সংস্থা
এই সকল জোন ও প্রোডাকশন ইউনিটগুলি ছাড়াও একাধিক সরকার অধিগৃহীত সংস্থা রেল মন্ত্রকের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এগুলি হল:
- ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া – পণ্য বিভাগ
- ভারতীয় রেল ক্যাটারিং ও পর্যটন নিগম (ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি) – ক্যাটারিং, পর্যটন ও অনলাইন টিকিট পরিষেবা
- কোঙ্কণ রেলওয়ে কর্পোরেশন
- ভারতীয় রেল অর্থ নিগম
- মুম্বাই রেল বিকাশ নিগম
- রেলটেল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া – দূরসংযোগ কার্যক্রম
- আরআইটিইএস লিমিটেড – ভারতীয় রেলের পরামর্শদাতা বিভাগ
- রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড
- কন্টেইনার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া
- রেল জমি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ – রেলের খালি জমির বাণিজ্যিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রেলওয়ে আইন, ১৯৮৯-এর সংশোধনী বলে স্থাপিত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা
- রেল তথ্যব্যবস্থা কেন্দ্র/কৃস – ভারতীয় রেলের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলবোর্ডের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা
রেল ইঞ্জিন প্রযুক্তি
ব্রড গেজ
AC ইলেক্ট্রিক
যাত্রীবাহী
নাম | প্রস্তুতকারক | সাল | শক্তি ক্ষমতা | গতিবেগ |
---|---|---|---|---|
WAP - ১ | চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা | ১৯৮০ | ২,৯০০ কিলোওয়াট | ১৩০ কিমি/ঘন্টা |
WAP - ২ | - | ১৯৮০ সালে অপসারিত | ২,১৭০ কিলোওয়াট | |
WAP - ৩ | চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা | ১৯৮৭ | ২,৯০০ কিলোওয়াট | ১৪০ কিমি/ঘন্টা |
WAP - ৪ | চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা | ১৯৯৪ | ৩,৭৭০ কিলোওয়াট | ১৪০ কিমি/ঘন্টা |
WAP - ৫ | চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা | ২০০০ | ৪,৫০০ কিলোওয়াট | ১৬০ কিমি/ঘন্টা |
পণ্যবাহী
নাম | প্রস্তুতকারক | সাল | শক্তি ক্ষমতা | গতিবেগ |
---|---|---|---|---|
WAG - ৭ | চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস | - | ৪,১০০ কিলোওয়াট | ১১০ কিমি/ঘন্টা |
যাত্রী পরিষেবা

পঁচিশটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে (পূর্বনাম পন্ডিচেরি) প্রায় ৯০০০টি যাত্রীবাহী ট্রেন এক কোটি আশি লক্ষ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ ও মেঘালয় রাজ্যে কেবল কোনো রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই।
যাত্রী কোচ
ভারতীয় রেলে ২ রকম যাত্রী কোচ ব্যবহৃত হয় : একটি হচ্ছে ICF কোচ ও অপরটি লিংক হফম্যান বুশ কোচ। লিংক-হফম্যান-বুশ কোচ উৎপত্তিস্থল জার্মানি হলেও বর্তমানে ভারতে প্রস্তূত করা হয়। দেশে একমাত্র স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এই চাকা তৈরি করে থাকে। দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে যাত্রীবাহী বিভাগটি দূরপাল্লার যাতায়াতের জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয়।
ভারতে স্টেনলেস স্টিলের এলএইচবি (লিঙ্ক হফম্যান বুশ) কোচই ছিল আধুনিকতম। পুরনো লোহার কোচের তুলনায় এলএইচবি কোচ অনেক হাল্কা। আরও হাল্কা হবে অ্যালুমিনিয়ামের কোচ। তাপ ও মরচে নিরোধক বলে সেই সব কোচের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হবে তুলনায় অনেকটাই কম। সেই সঙ্গে ওজনে হাল্কা হওয়ায় সহজে গতি বাড়ানো যাবে অ্যালুমিনিয়াম ট্রেনের। সর্বোপরি সাশ্রয় হবে জ্বালানিতেও। এ বার এক ধাপ এগিয়ে পুরোদস্তুর অ্যালুমিনিয়ামের কোচ তৈরি হবে এ দেশেই। রায়বরেলীর মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরি (এমসিএফ)-কে খুব তাড়াতাড়ি ওই কোচ তৈরির অনুমতি দিতে পারে রেল বোর্ড।[20]
একটি সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রেনে আঠারোটি কোচ থাকে। তবে কোনো কোনো জনপ্রিয় ট্রেনে ২৪টি পর্যন্ত কোচও দেওয়া হয়। একটি কোচ এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যাতে সেই কোচে ১৮ থেকে ৮১ জন যাত্রী অবস্থান করতে পারেন। তবে ছুটির মরসুমে বা অন্য ব্যস্ত সময়ে আরও অনেক যাত্রী একটি কোচে ভ্রমণ করতে পারেন। অধিকাংশ নিয়মিত ট্রেনেই ভেস্টিবিউল দিয়ে কোচ সংযুক্ত করা হয়। তবে ‘অসংরক্ষিত কোচ’গুলি কোনো ভেস্টিবিউল দিয়ে মূল গাড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকে না। যাত্রী সুবিধার্থে প্রতিটি কোচ-এ ১.৮ ঘন মিটার (বা ১৮০০ লিটার) জল ধারকও থাকে।
বাতিলের বদলে সংরক্ষণ (Reservation against cancellation) ব্যবস্থায়ে ভ্রমণ টিকিট না পাওয়া গেলেও শেয়ারড বাথ পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থায় অপেক্ষারত যাত্রীদের টিকিট বাতিল করার বদলে ট্রেনে জায়গা পাইয়ে দেওয়া হয়।[21]
শহরতলি রেলওয়ে
কোনো কোনো শহরে নিত্যযাত্রীদের সুবিধার্থে শহরের নিজস্ব শহরতলি রেলওয়ে পরিষেবা গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা, দিল্লি, হায়দ্রাবাদ, পুনে ও লখনউ শহরে এই পরিষেবা পাওয়া যায়। হায়দ্রাবাদ, পুনে ও লখনউ শহরে নিজস্ব শহরতলি ট্র্যাক নেই; এখানে অন্যান্য দূরপাল্লার ট্র্যাকেই ট্রেন চলে। নতুন দিল্লি, কলকাতা ও চেন্নাই শহরে মেট্রো ও দ্রুত পরিবহন পরিষেবা চালু। এগুলি হল: নতুন দিল্লি মেট্রো, কলকাতা মেট্রো ও চেন্নাই এমআরটিএস। এগুলি নিজস্ব ট্র্যাকে চলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্র্যাকগুলি উত্তোলিত উড়ালপথে স্থাপিত।
নিত্যযাত্রী পরিবহনে নিযুক্ত শহরতলি ট্রেনগুলি মূলত ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ইএমইউ। এগুলিতে নয়টি অথবা ব্যস্ত সময়ের চাহিদা অনুসারে বারোটি কোচ থাকে। একটি ইএমইউ ট্রেনের একটি ইউনিটে একটি পাওয়ার কার ও দুটি জেনারেল কোচ থাকে। এইভাবে একটি নয়-কোচ যুক্ত ইএমইউ তিনটি ইউনিট নিয়ে গঠিত। এই ইউনিটগুলির প্রত্যেকটিতে একটি করে ও মধ্যে একটি পাওয়ার কার থাকে। মুম্বাইতে রেকগুলি ডিসি বিদ্যুতে চলে; অন্যত্র চলে এসি বিদ্যুতে।[23] একটি সাধারণ কোচ ৯৬ জন যাত্রী পরিবহনের উপযোগী করে নির্মিত হয়। তবে ব্যস্ত সময়ে এই সংখ্যা দ্বিগুণ অথবা তিন গুণও হয়ে যায়।
উল্লেখযোগ্য ট্রেন ও কৃতিত্ব

ভারতীয় রেলের দুটি ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। এগুলি হল: ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস [24] ও ভারতের পার্বত্য রেলওয়ে। দ্বিতীয়টি একক রেল ব্যবস্থা নয়; ভারতের তিন প্রান্তে অবস্থিত তিনটি পৃথক পৃথক রেলপথ নিয়ে গঠিত:[25]
- দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে – পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত একটি ন্যারো গেজ রেলওয়ে।
- নীলগিরি পার্বত্য রেলওয়ে – তামিলনাড়ুর নীলগিরি পর্বতে অবস্থিত একটি মিটার গেজ রেলওয়ে।
- কালকা-শিমলা রেলওয়ে – হিমাচল প্রদেশের শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত একটি ন্যারো গেজ রেলওয়ে।
রাজস্থানের পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে প্যালেস অন হুইলস নামে একটি বিশেষভাবে সজ্জিত ট্রেন চালানো হয়। এই ট্রেনটি সাধারণত বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালিত। মহারাষ্ট্র সরকারও মহারাষ্ট্র ও গোয়ার পর্যটনশিল্পের উন্নতিকল্পে ডেকান ওডিসি চালু করে। আবার কর্ণাটক সরকার কর্ণাটক ও গোয়ার জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলির সঙ্গে পর্যটকদের পরিচিত করে তোলার জন্য চালু করে গোল্ডেন চ্যারিয়ট ট্রেন। অবশ্য এগুলির মধ্যে কোনোটিই প্যালেস অন হুইলস-এর মতো জনপ্রিয়তা পায়নি।
ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে চালু ট্রেনটির নাম সমঝোতা এক্সপ্রেস। ২০০১ সালে দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কে জটিলতা দেখা দিলে এই ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ২০০৪ সালে আবার তা চালু হয়। পাকিস্তানের খোখরাপার থেকে ভারতের মুনাবাও-এর মধ্যে চালু আরেকটি ট্রেন থর এক্সপ্রেস। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া এই ট্রেনটি ফের চালু হয় ২০০৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। কালকা-শিমলা রেলওয়ে অদ্যাবধি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে ৯৬ কিলোমিটার স্থানে সর্বাপেক্ষা খাড়া উত্থানের জন্য প্রসিদ্ধ।[26][27]

লাইফলাইন এক্সপ্রেস একটি বিশেষ ট্রেন। এটি "হসপিটাল-অন-হুইলস" নামে জনপ্রিয়। এই ট্রেনটি চালু হয় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা পরিষেবা দানের উদ্দেশ্যে। এই ট্রেনে একটি কামরায় অপারেটিং কক্ষ, একটিতে স্টোররুম ও দুটিতে একটি পেশেন্ট ওয়ার্ড রয়েছে। এই ট্রেনটি সারা দেশ পরিভ্রমণ করে ও কোনো স্থানে দুই মাসের জন্য অবস্থান করে।
বিখ্যাত রেলইঞ্জিনগুলির মধ্যে ফেয়ারি কুইন মেনলাইনে চালু বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন রেলইঞ্জিন। যদিও এখন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রেই এটি চালানো হয়। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো পুরোমাত্রায় চালু রেলইঞ্জিনের কৃতিত্বটি জন বুলের প্রাপ্য। গোরক্ষপুর রেলওয়ে প্লাটফর্মটি বিশ্বের দীর্ঘতম রেলওয়ে প্লাটফর্ম। এর দৈর্ঘ্য ১৩৬৬.৩৩ মিটার। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে রুটের ঘুম স্টেশনটি বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম রেলস্টেশন যেখানে বাষ্পীয় ইঞ্জিন পৌঁছতে পারে।[28] মুম্বাই-পুনে ডেকান কুইন ট্রেনে ভারতীয় রেলের সবচেয়ে পুরনো চলমান ডাইনিং কারটি রয়েছে।
কন্যাকুমারী ও জম্মু তাওয়াই-এর মধ্যে চালু হিমসাগর এক্সপ্রেস ভারতীয় রেলের দীর্ঘতম দূরত্ব ও দীর্ঘতম সময়ের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। ট্রেনটি ৭৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে ৩,৭৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। ভোপাল শতাব্দী এক্সপ্রেস দেশের দ্রুততম ট্রেন। এটি ১৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে ফরিদাবাদ-আগ্রা বিভাগে চলাচল করে। ২০০০ সালের টেস্ট রানে ১৮৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা হল দেশের কোনো ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগের রেকর্ড।
রাজধানী ও শতাব্দী
রাজধানী এক্সপ্রেস ও শতাব্দী এক্সপ্রেস দেশের দুটি সুপারফাস্ট ও পুরোমাত্রায় বাতানুকূল ট্রেন। এই দুটি ট্রেন ভারতীয় রেলের শ্রেষ্ঠ রেল পরিষেবা।
প্রযুক্তি, পরিকাঠামো এবং সম্ভাব্য যাত্রীদের নিয়ে সাত বছর ধরে বিস্তর মাথা ঘামানোর পরে ১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ দেশের প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেসের সূচনা হয়েছিল হাওড়া-নয়াদিল্লি পথে। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং গতির নিরিখে দেশের সেরা ট্রেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল রাজধানী। সবুজ পতাকা নেড়ে চালক জি এল টচার-কে ট্রেন ছাড়ার সঙ্কেত দিয়েছিলেন গার্ড এস ও লেভি। ১৭ ঘণ্টা ২০ মিনিটে ১৪৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল ট্রেনটি। তার আগে ভারতীয় রেলের ইতিহাসে অন্তত ১০০ বছর ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি আটকে ছিল ঘণ্টায় ৬০ মাইলে বা ৯৬ কিলোমিটারে। রাজধানীর হাত ধরেই প্রথম ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছুঁয়েছিল। [29]
দ্রুততম ট্রেন হল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস যেটি মুম্বাই থেকে বারাণসীর মধ্যে চলাচল করে। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার। ত্রিবান্দ্রম-নিজামউদ্দিন রাজধানী এক্সপ্রেস ৫২৮ কিমি দূরত্বে (ভাদদারা - কোটা পথে ) নন স্টপ ট্রেন। বিবেক এক্সপ্রেসে ৮২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মধ্য পৌঁছে যেতে পারেন ডিব্রুগড় থেকে কন্যাকুমারি। ৪২৮৬ কিমির এই পথ হল ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলপথ।
ভাড়া ও টিকিট
ভারতীয় রেলের ভাড়া বিশ্বে সর্বাপেক্ষা সস্তা। বিগত কয়েক বছরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও রেলের কোনো শ্রেণীতেই যাত্রীভাড়া বাড়ানো হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাড়া সামান্য কমানোও হয়েছে।
ভারতের সব প্রধান ও অপ্রধান স্টেশনে টিকিট পরিষেবা সুলভ। ২০০৩ সালে রেলওয়ে আইআরসিটিসি-র ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন টিকিট পরিষেবা চালু করেছে।[30] ই-টিকিট ছাড়াও যাত্রীরা আই-টিকিটও বুক করতে পারেন। অনলাইন বুক করা বা ডাক সরবরাহকৃত টিকিট ছাড়া আই-টিকিট মূলত নিয়মিত ছাপা টিকিট।
পর্যটন
আইআরসিটিসি ভারতীয় রেলের পর্যটন কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত। ভারতীয় রেল একাধিক বিলাসবহুল ট্রেন চালায়। যেমন – প্যালেস অন হুইলস, গোল্ডেন চ্যারিয়ট, রয়্যাল ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ও ডেকান ওডিসি। এগুলি মূলত বিদেশি পর্যটকদের জন্য চালানো হয়। স্থানীয় পর্যটকদেরও গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থল ও তীর্থস্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ রেলওয়ের তরফ থেকে দেওয়া হয়।
পণ্য পরিবহণ

ভারতীয় রেল আকরিক খনিজ পদার্থ, সার ও ফার্মাকিউটিক্যাল, কৃষিজ পণ্য, লৌহ ও ইস্পাত, মাল্টিমডেল ট্র্যাফিক ও অন্যান্য পণ্যদ্রব্য প্রচুর পরিমাণে বহন করে থাকে। বন্দর ও প্রধান প্রধান নগরাঞ্চলে নিজস্ব পণ্য লাইন ও ইয়ার্ড রয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্য স্টেশনে নিজস্ব প্লাটফর্ম ও স্বাধীন লাইনও রয়েছে।
ভারতীয় রেলওয়ে তার ৭০% রাজস্ব ও বেশিরভাগ লভ্যাংশ আয় করে পণ্যক্ষেত্র থেকে। এই লভ্যাংশ অলাভজনক যাত্রীক্ষেত্রের ঘাটতিপূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অধিকতর সস্তা ট্রাক পরিবহন ব্যবস্থা রেলের পণ্য ট্র্যাফিককে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দিয়েছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতীয় রেল কাজের গতি বাড়ানোর জন্য ছোটো ভারবাহী গাড়ির বদলে বড়ো গাড়ি ব্যবহার শুরু করে। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত আয়ের অধিকাংশই আসে কয়লা, সিমেন্ট, খাদ্যশস্য ও আকরিক লোহার মতো ভারী দ্রব্যবাহী রেক থেকে।
ভারতীয় রেল দূরপাল্লায় যানবাহন পরিবহনের কাজও করে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে দ্রব্য পরিবহনকারী ট্রাকগুলিকে অনেক সময় ট্রেনে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে ট্রাকিং কোম্পানির অপ্রয়োজনীয় জ্বালানি খরচ হয় না। কোনো কোনো অঞ্চলে রেফ্রিজারেটেড ভ্যানও পাওয়া যায়। "সবুজ ভ্যান" এক ধরনের বিশেষ ভ্যান যাতে করে তাজা খাদ্য ও সবজি পরিবহন করা হয়। সাম্প্রতিককালে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জন্য ভারতীয় রেল একটি বিশেষ কনটেইনার রাজধানী বা কনরাজ (CONRAJ) চালু করেছে। ৪,৭০০ মেট্রিক টন পণ্যবাহী একটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ১০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
সম্প্রতি পণ্য পরিবহন ক্ষেত্রের আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিবর্তন সাধন করা হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রেনের কার্যকরিতা বৃদ্ধির জন্য একটি বেসরকারিকরণের পরিকল্পনাও গৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানিকে নিজস্ব কনটেইনার ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ভারতের বৃহত্তম শহরগুলির মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী একটি ১১০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ্য পণ্য করিডোরও অনুমোদিত হয়েছে সম্প্রতি। রেল ২২৫,০০০ পণ্য ওয়াগনের ভারবহণক্ষমতা ১১% বৃদ্ধি করেছে। পরিবহন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধিরও দাবি জানানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় রেলপথে পণ্য পরিবহন বেশ লাভজনক হয়ে উঠছে। ফিরতি পথে গতিবৃদ্ধির মতো নানা ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে পণ্য রাজস্ব ২৪ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর
রেল মন্ত্রক দুটি করিডোরে বিভক্ত ২৭৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নতুন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পূর্ব করিডোরটি লুধিয়ানা থেকে কলকাতা ও পশ্চিম করিডোরটি মুম্বাইয়ের জওহরলাল নেহেরু বন্দর থেকে তুঘলকাবাদ/দাদরি পর্যন্ত প্রসারিত। খুরজাতে দুটি করিডোর পরস্পরকে ছেদ করছে। পরিবহন প্রযুক্তির উন্নতিসাধন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও একক পরিবহন ব্যয় হ্রাস এই প্রকল্পের মুখ্য বিবেচনার বিষয়।
ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোরে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, অর্থসম্পদ ও নির্মাণ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও কার্যসম্পাদনা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থাপিত হয় ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ডিএফসিসি)। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোম্পানি আইন, ১৯৫৬ অনুসারে ডিএফসিসি নথিভুক্ত হয়।
রেল বাজেট ও অর্থসংস্থান
রেল বাজেটের অন্তর্গত বিষয়গুলি হল পরিকল্পিত পরিকাঠামো ব্যয়, আগামী আর্থিক বছরের জন্য রাজস্ব ও ব্যয় নির্বাহ, জনস্বার্থে চালু ট্রেন ও রুটগুলির নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন, নতুন ও বিদ্যমান পরিকাঠামোয় পরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং পণ্য ও যাত্রীচলাচলে করারোপ ইত্যাদি। বাজেটে প্রস্তাবিত নীতি ও বণ্টনব্যবস্থা সংসদে আলোচিত হয়। সাধারণ সংখ্যাধিক্যের ভোটে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় রেল বাজেট পাস হয়। ঊর্ধ্বকক্ষ রাজ্যসভার মন্তব্যগুলির অবশ্যপালনীয় নয়। ভারতীয় রেল অন্যান্য সরকারি রাজস্ব ও ব্যয়ের সমান আয়-ব্যয় নিরীক্ষণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত। প্রত্যাশিত ও প্রকল্পিত ট্র্যাফিকের ভিত্তিতে রেলওয়ের মূলধনের জন্য সম্পদ আহরণ ও রাজস্ব ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। রাজস্ব ব্যয় রেলওয়ের দ্বারা পূরিত হলেও, মূলধন (পরিকল্পিত) ব্যয়ের ঘাটতি আংশিক পূরিত হয় ঋণের মাধ্যমে (ভারতীয় রেল অর্থ নিগম কৃত) এবং অবশিষ্টাংশ পূরিত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট সাহায্য থেকে। ভারতীয় রেল কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধন বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে লভ্যাংশ প্রদান করে।
১৯২৪ সালের অকওয়ার্থ কমিটির সুপারিশকৃত সেপারেশন কনভেনশন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার দুই দিন আগে সংসদে রেলবাজেট পেশ করেন। রেলবাজেট সংসদে পৃথকভাবে পেশ করা হলেও এই বাজেটের রাজস্ব-প্রাপ্তি ও ব্যয়ের তথ্যাদি সাধারণ বাজেটেও প্রদর্শিত হয়ে থাকে। কারণ এগুলি ভারত সরকারের সামগ্রিক রাজস্ব-প্রাপ্তি ও ব্যয়ের অপরিহার্য অংশ। এই নথিটি রেলওয়ের পূর্ববর্তী বছরের কাজকর্মের ও বর্তমান বছরের পরিকল্পনা তালিকার উদ্বর্ত-পত্রও বটে।
রেলওয়ের নীতিনির্ধারণ ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে রেলওয়ে বোর্ডের উপর। এই বোর্ড একজন চেয়ারম্যান, অর্থ কমিশনার এবং ট্র্যাফিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি, বিদ্যুত ও কর্মীবিভাগের অন্যান্য কার্যকরী সদস্যদের নিয়ে গঠিত।
পূর্বে কয়েকবছর লোকসানে চললেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইতিবাচক অর্থসংস্থান ও সরকারি লভ্যাংশ প্রদানে সমর্থ হয়েছে ভারতীয় রেল। রেলওয়ের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ ২০০৫ সালে ৯০০০ কোটি টাকা, ২০০৬ সালে ১৪,০০০ কোটি টাকা, ২০০৭ সালে ২০,০০০ কোটি টাকা, এবং ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে ২৫,০০০ কোটি টাকা। চালন অনুপাত বৃদ্ধি পায় ৭৬%। অন্যদিকে বিগত চার বছরে পরিকল্পনার আকার ১৩,০০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩০,০০০ কোটি টাকা হয়। ২০০৮-০৯ সালের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৭,৫০০ কোটি টাকা, যা বিগত আর্থিক বছরের তুলনায় ২১% বেশি।[2] ২০০৮ সালের বাজেট-প্রাককলন অনুযায়ী পণ্য, যাত্রী, মিশ্র, অন্যান্য আয় ও অন্যান্য কোচিং আয় দর্শানো হয়েছে যথাক্রমে ৫২,৭০০ কোটি টাকা, ২১,৬৮১ কোটি টাকা, ৫০০০ কোটি টাকা ও ২,৪২০ কোটি টাকা। সার্বিক দ্বিগুণ বৃদ্ধি বজায় রাখতে ২০০৯-১০ সালে মোট ট্রাফিক আয় ৯৩,১৫৯ কোটি টাকা প্রকল্পিত করা হয়েছে।[2] ২০% যাত্রী রাজস্ব আয় হয় প্রথম শ্রেণীর (বাতানুকূল শ্রেণী) যাত্রীবিভাগ থেকে।[31][32]
২০০৯ সালের ৩ জুলাই রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯-১০ সালের রেলবাজেট পেশ করেন। এই বাজেটে একাধিক সংস্কারের প্রস্তাব রাখা হয়।[33]
সমসাময়িক ইস্যু
সাম্প্রতিক কালে লাইনবিচ্যুতি বা মুখোমুখি সংঘর্ষের মতো দুর্ঘটনা কম ঘটলেও ট্রেনে চাপা পড়ার ঘটনা ঘটতেই থাকছে। বিশেষত জনবহুল অঞ্চলেই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। ভারতীয় রেল স্বীকার করেছে যে দুর্ঘটনা নির্মূলীকরণের লক্ষ্য একটি অবাস্তব লক্ষ্য। বরং তারা দুর্ঘটনার হার কমানো ছাড়া কিছুই করতে পারে না। ভারতে ৮৩ % রেল দুর্ঘটনার কারণ মানবীয় ভুল।[34] অতীতে বর্ষাকালে ভূমিধ্বসের ফলে কোঙ্কণ রেলওয়ে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হত। যার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটত। সেকেলে যোগাযোগ, সুরক্ষা ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা রেলব্যবস্থার ব্যর্থতার অন্যতম কারণ প্রতিভাত হয়। তাই সাম্প্রতিকতম প্রযুক্তির দ্বারা এগুলিকে প্রতিস্থাপিত করা হয়। দুই স্টেশনের মধ্যে ম্যানুয়েল সিগন্যাল ব্যবস্থাও ট্রেন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই রেল কর্তৃপক্ষ স্বয়ংচালিত সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষ নিয়েছেন। আবার এও মনে করা হচ্ছে যে এই ব্যবস্থায় ট্রেনের গতিবেগ বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে দুর্ঘটনা আরও মারাত্মক আকার নেবে। পরস্পর সংযুক্ত স্টেশনে সিগন্যালিং নিয়ন্ত্রণের সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল ব্যর্থতা-পরীক্ষণ সার্কিট। প্রতিটি ট্র্যাক সার্কিট ও সিগনাল সার্কিটকে এই সার্কিট সহায়তা করে থাকে। সমস্যার ক্ষেত্রে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রকে অবহিতও করা হয়।[35] সংঘর্ষ-রোধকারী যন্ত্রগুলি ভারতীয় রেলের খুব অল্প অংশেই সুলভ। এগুলিকে সমগ্র ব্যবস্থায় প্রসারিত করা প্রয়োজন।.[36] ঔপনিবেশিক যুগের সেতু ও শতাব্দীপ্রাচীন ট্র্যাকগুলিরও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
অনিরীক্ষিত চালনা লাভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ভারতীয় রেল আবার একটি লাভজনক সংস্থায় পরিণত হয়েছে।[37] তবে রাজধানী এক্সপ্রেস ও শতাব্দী এক্সপ্রেস ভারতের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী ট্রেন; মাত্র ১৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে চালিত এই ট্রেনদুটি কম-খরচের বিমানব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।}}.[38]
কর্মীনিয়োগ
অফিসারদের (গ্রুপ ‘এ’ কৃত্যক) ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস-এর মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। কেন্দ্রীয় জন কৃত্যক আয়োগ (ইউপিএসসি) এই পরীক্ষাটি নিয়ে থাকে। এছাড়াও ইউপিএসসি-এর স্পেশাল ক্লাস রেলওয়ে অ্যাপ্রেন্টিসেস (এসসিআরএ) পরীক্ষার মাধ্যমেও নিয়োগ করা হয়।
‘সি’ ও ‘ডি’ বিভাগের কর্মচারীদের রেলওয়ে রিক্রুইটমেন্ট বোর্ডের ১৯ রকম পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। এই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে রেলওয়ে রিক্রুইটমেন্ট কন্ট্রোল বোর্ড বা আরআরসিবি।
সহকারী সংস্থা
রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড
রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড ভারতীয় রেলেরএকটি সহকারী সংস্থা। এই সংস্থার কাজ ভারতীয় রেলের প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কাজগুলি সম্পাদন। গেজ পরিবর্তন ও সেতু পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব এই সংস্থার উপর ন্যস্ত। বর্তমানে ভিল্লুপুরম-তাঞ্জাভুর শাখার ১২২ কিলোমিটার রেলপথের গেজ পরিবর্তন করছে রেল বিকাশ নিগম।[39]
রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক সার্ভিসেস
আরও দেখুন
- রেল পরিবহন ব্যবস্থার আকার অনুযায়ী দেশের তালিকা
- ভারতে রেল পরিবহণ
- ভারতে রেল স্টেশনের তালিকা
- ভারতের রেল পরিবহন ব্যবস্থা
পাদটীকা
- "Railway Unit"। Official webpage of Indian Railways। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-০৬।
- "Railways fiscal 2009/10 budget"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪।
- "Railway Employee"।
- Indian Railways Year Book (2006-2007)। Ministry of Railways, Government of India। 2007। পৃষ্ঠা 2–3। সংগ্রহের তারিখ 23-12-2008। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - Indian Railways Year Book (2006-2007)। Ministry of Railways, Government of India। 2007। পৃষ্ঠা 53। সংগ্রহের তারিখ 23-12-2008। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - Guinness Book of World Records। Guinness World Records, Ltd। ২০০৫। পৃষ্ঠা 93। আইএসবিএন 1892051222।
- "[IRFCA] India's First Railways"। www.irfca.org।
- R.R. Bhandari (২০০৫)। Indian Railways: Glorious 150 years। Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 1–19। আইএসবিএন 81-230-1254-3।
- "First train ran between Roorkee and Piran Kaliyar"। National News। The Hindu। ২০০২-০৮-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-০৫।
- Babu, T. Stanley (২০০৪)। "A shining testimony of progress"। Indian Railway Board। পৃষ্ঠা 101। অজানা প্যারামিটার
|book=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য);|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - Thorner, Daniel (২০০৫)। "The pattern of railway development in India"। Kerr, Ian J.। Railways in Modern India। New Delhi: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 80–96। আইএসবিএন 0195672925।
- Hurd, John (২০০৫)। "Railways"। Kerr, Ian J.। Railways in Modern India। New Delhi: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 147–172–96। আইএসবিএন 0195672925।
- R.R. Bhandari (২০০৫)। Indian Railways: Glorious 150 years। Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 44–52। আইএসবিএন 81-230-1254-3।
- Awasthi, Aruna (১৯৯৪)। History and development of railways in India। New Delhi: Deep & Deep Publications। পৃষ্ঠা 181–246।
- Wainwright, A. Marin (১৯৯৪)। Inheritance of Empire। Westport, CT: Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 48। আইএসবিএন 9780275947330।
- "Celebrating 150 years"। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৮।
- "In full steam"। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৮।
- "Bholu the Railways mascot unveiled"। Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৮।
- "Geography: Railway zones"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ 23-12-2008। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Aluminium Coach"। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- "Reservation Rules"। Indian Railways। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-০৫।
- "Overview Of the existing Mumbai Suburban Railway"। Official webpage of Mumbai Railway Vikas Corporation। ২০০৮-০৬-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১১।
- "[IRFCA] Indian Railways FAQ: Electric Traction — I"। Irfca.org। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১১।
- "Chhatrapati Shivaji Terminus (formerly Victoria Terminus)"। World Heritage List। World Heritage Committee। ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-০৫।
- "Mountain Railways of India"। World Heritage List। World Heritage Committee। ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-০৫।
- "100 years of pine-scented travel"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪। Authors list-এ
|প্রথমাংশ1=
এর|শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য) - "সরকারী PNR এবং ট্রেন তদন্ত"। GPS। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-২৮।
- "Hill trains"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪।
- "Rajdhani"।
- "On the right track"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪।
- Arun Kumar Das। "Indian Railway takes the E-route"। Online edition of the Times of India, dated 2005-06-19। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১০।
- "কিভাবে PNR কাজ করে?"। OPS। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৩।
- http://www.indianrailways.gov.in/Budget_2009-10/budget_idx_2009-10.htm Railway Budget 2009-2010
- Amulya Gopalakrishnan। "A poor track record"। Online edition of Frontline magazine, dated 2003-07-19। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১০।
- "Indian Railways Signalling Systems"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪।
- "HIGHLIGHTS OF RAILWAY BUDGET 2008-09" (PDF)। Official webpage of Indian Railways। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৩।
- "Statistical Summary-Indian Railways"। ২০০৬-০২-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-০৮।
- "Business Travel Still On Track - Cover Story - FE Business Traveller"। Businesstravellerindia.com। ২০০৮-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১১।
- India - Minister on gauge conversions - Railpage Australia Forums (South Asia and Middle East)
তথ্যসূত্র
- "Indian Railways FAQ"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ June 18 2006। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "IR History: Early Days"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Railway Zones"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Famous Trains"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Freight Trains"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Miscellaneous material on Indian Railways"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ June 18 2006। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Trivia"। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Salient Features of Indian Railways"। Indian Railways। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Indian Railway takes the E-route"। Times of India। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "The Rediff Interview"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "A poor track record"। Frontline magazine online। সংগ্রহের তারিখ June 19 2005। অজানা প্যারামিটার
|dateformat=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - Various authors (২০০৪)। Guinness Book of World Records-2005। Guinness World Records Ltd। আইএসবিএন 0-85112-192-6।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে ভারতীয় রেল সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
![]() |
উইকিউক্তিতে নিচের বিষয় সম্পর্কে সংগৃহীত উক্তি আছে:: Indian Railways |
- Survey of India, (2004) Railway Map of India
- Indian Railways Official Website
- Indian Railways Catering and Tourism Corporation (IRCTC) Official Website
- Rail Tourism India website
- রেল বিকাশ নিগম