মৌসুমি বায়ু

মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সর্বাপেক্ষা প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ। গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে সমুদ্র ও ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ এবং শীতলতার তারতম্যের ফলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। শীত মৌসুমে শুষ্প মৌসুমি বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক (ভূভাগ) থেকে সমুদ্র অভিমুখে প্রবাহিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম (সমুদ্রভাগ) থেকে ভূমি অভিমুখে প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ুর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মনসুন’ (Monsoon) মূলত আরবি শব্দ ‘মাওসিম’ (mawsim) থেকে এসেছে। আরবিতে ‘মাওসিম’ শব্দের অর্থ কাল বা ঋতু। ধারণা করা হয়, এই মৌসুমি বায়ুচক্রটির সূত্রপাত ঘটে ১ কোটি ২০ লক্ষ বৎসর পূর্বে (মধ্য মায়োসিন) হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির সময় থেকে।

মধ্যভারতের বিন্ধ্যাচলে মৌসুমী বায়ু

গ্রীষ্মকালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ভূখণ্ডে প্রচণ্ড তাপের কারণে নিম্নচাপ কেন্দ্রের উৎপত্তি হয়, কিন্তু একই সময়ে তুলনামূলকভাবে শীতলতর ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় উচ্চচাপ কেন্দ্রের। বায়ুচাপের প্রকৃতিগত ভিন্নতাই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ুকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে এবং মৌসুমি বায়ু সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে প্রবাহিত হয়। বায়ুপ্রবাহের এই ধরনটি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাস্প বহন করে আনে। তাই এ অঞ্চলে সে সময় ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহে এই বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে।

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত: আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর প্রবাহ। আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহটি ভারতের কেন্দ্রভূমি এবং ভারতীয় উপদ্বীপের আবহাওয়ার প্রকৃতির ওপর অধিক প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহটি মূলত বাংলাদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল এবং হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণাংশের পাহাড়ি ঢাল ও পাদদেশীয় অঞ্চলের আবহাওয়ার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। জুন মাসের প্রথম দিকে এই বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং ভারতের কেন্দ্র-অঞ্চল জুড়ে অবস্থানরত নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে।

শীত মৌসুমে ভারত মহাসাগরের পানির তুলনায় এর সংলগ্ন ভারতীয় ভূখণ্ড দ্রুত শীতল হয়ে আসে। পরিণতিতে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশ জুড়ে একটি উচ্চচাপ কেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণতর ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপ বিভাজনের ফলে ভারতের অভ্যন্তর ভাগ থেকে বায়ুপ্রবাহ ভারত মহাসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়, যা শীতকালীন মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। এই বায়ুপ্রবাহের একটি ধারা মোটামুটি গঙ্গার প্রবাহপথ ধরে গাঙ্গেয় সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বাংলাদেশ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে ধাবিত হয়। এই মৌসুমে বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য হলো ভূমি থেকে সমুদ্র অভিমুখী, স্বভাবতই পুরো মৌসুম জুড়ে শুষ্প আবহাওয়া বিরাজ করে। এ সময় বৃষ্টিপাতের ঘটনা খুব কম।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.