পশ্চিমবঙ্গের খনিজ সম্পদ

পশ্চিমবঙ্গ খনিজ সম্পদে মাঝারি মানের সমৃদ্ধ রাজ্য।এই রাজ্যের প্রধান খনিজ দ্রব্য হল কয়লা ও ফায়ার ক্লে বা তপসহ মাটি।এই দুটি খনিজ দ্রব্য রাজ্যটিতে বেশি পরিমানে পাওয়া যায়।অন্যান্য খনিজ দ্রবের মধ্যে চিনামাটি, চুনাপাথর, অ্যাপেটাইট, আকরিক লোহা, আকরিক তামা, ম্যাঙ্গানিজ, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।[1]

কয়লা

কয়লা পশ্চিমবঙ্গের প্রধ্যান খনিজ সম্পদ।ভারতে প্রতিবছর উত্তলিত কয়লার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই রাজ্য থেকে পাওয়া যায়।কয়লা উত্তলনে রাজ্যটি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে এবং কয়লা সঞ্চয়ের হিসাবে দেশের মধ্যে চতুর্থ।এই রাজ্যে মোট সঞ্চিত কয়লার পরিমান হল ৩১.৪৩৫ বিলিয়ন টন যা দেশের মোট সঞ্চিত কয়লার ১০.২৫৩ শতাংশ।[2]

পশ্চিমবঙ্গে কয়লা প্রধানত দুটি এলাকাতে পাওয়া যায়।যথা-

দামদর উপত্যকা

দামদর উপত্যকায় ভারতবর্ষের প্রথম কয়লা খনি রানীগঞ্জে আবিষ্কিত হয়।এর পর ধীরে ধীরে দমাদর উপত্যকার বিভিন্ন অংশে কয়লা খনি আবিষ্কিত হতে থাকে।এই উপত্যকায় দুটি কয়লা ক্ষেত্র রয়েছে । যথা-

রানীগঞ্জ কয়লা ক্ষেত্র

রানীগঞ্জ কয়লা ক্ষেত্রটি দেশের সবচেয়ে প্রাচীন কয়লা ক্ষেত্র।এটি দামদর নদীর উত্তর তীর থেকে অজয় নদের পশ্চিম তীর পর্যন্ত বিস্তৃত।এই কয়লা ক্ষেত্রটি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলাঝাড়খন্ড-এর ধানবাদ জেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত।রানিগঞ্জ কয়ল ক্ষেত্র ৪৪৩.৫০ কিমি ২২ (১৭১.২৪ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং ৪৯.১৭ বিলিয়ন টন মোট কয়লা সম্পদ রয়েছে, যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খন্ড জুড়ে ছড়িয়েছে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি এলাকা (সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে)। মোট সংরক্ষিত কয়াল মধ্যে , ৩০.৬১ (৩,০৬১ কোটি টন) বিলিয়ন টন পশ্চিমবঙ্গে এবং ১৮.৫৬ বিলিয়ন টন ঝাড়খন্ডে রয়েছে।[3] এই কয়লা ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট মানের গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা পাওয়া যায়।এখান কার উল্লেখযোগ্য কয়লা খনি হল - রানিগঞ্জ, আসানসোল, জামুরিয়া, অন্ডাল, কালাপাহাড়ি, দিশেরগর, রামনগর, কুল্টি, সালানপুর প্রভৃতি।এছাড়ার দাদমর নদের প দক্ষিণ তীরে মেজিয়াতে এক বিশাল কয়লা ব্লক রয়েছে। পুরুলিয়া জেলা ও অজয় নদের উত্তরে বীরভূমে কয়লা উত্তোলন করা হয়।

বীরভূম কয়লা ক্ষেত্র

ভারতে অবস্থিত বৃহৎ কয়লা ক্ষেত্র গুলির মধ্যে একটি হল বীরভূম কয়লা ক্ষেত্র। এই কয়লা ক্ষেত্রে আনুমানিক ৬ বিলিয়ন টন কয়লার সংরক্ষণে রয়েছে।এই কয়লা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কয়লা ব্লক হল দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি।

দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি বা দেউচা পাঁচামি কোল ব্লক হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বীরভূম জেলারমহম্মদবাজার সমষ্ঠি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত দেউচা ও পাঁচামি এলাকায় অবস্থিত একটি কয়লা খনি।এই কয়লা খনি বা ব্লকটি রানিগঞ্জ কয়ালখনি এলাকার অন্তর্গত। দেউচায় প্রায় ২১০ কোটি ২০ লক্ষ টন কয়লা মজুত রয়েছে। [4] কয়লা মজুতের পরিমানের হিসাবে এই কয়লা খনিটি এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা খনি বা কোল ব্লক। [5] এটি পশ্চিমবঙ্গের নবীনতম কয়লা খনি।

দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি পার্বত্য অঞ্চল

কালিম্পং জেলার বাগরাকোট ও মালঞ্চ এবং জলপাইগুড়ি জেলার বক্সা-জয়ন্তী এলাকায় কয়লা পাওয়া যায়।

ফায়ার ক্লে

ফায়ার ক্লে হল পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় প্রধান খনিজ সম্পদ।পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলে অন্তর্গত রানিগঞ্জ, রামনগর, সালানপুর এবং বীরভূম জেলাপুরুলিয়া জেলাতে ফায়ার ক্লে পাওয়া যায়।রানিগঞ্জ অঞ্চলে উত্তোলিত ফায়ার ক্লেতে গুড় কয়লা মিশে থাডে তবে পুরুলিয়া ও বীরভূমের ফায়ার ক্লেতে এই সমস্যা নেই।২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে ₹৪৫ লক্ষ ৩ হাজার টাকা মূল্যের ৩৮ হাজার ১৬৫ টন ফায়ার ক্লে উত্তোলিত হয়েছিল।

চিনামাটি

চিনামাটি পশ্চিমবঙ্গোর একটি উল্লেখযোগ্য খনিজ দ্রব্য। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম ঝেলার মহম্মদবাজার খানি, কামারপুকুর বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া ও পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে চিনামাটি উত্তোলিত হয়।২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৯৬ হাজার টন চিনামাটি উত্তোলিত হয়েছিল যার বাজার মূল্য ছিল ₹২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা।

চুনাপাথর

বাঁকুড়া জেলার চম্পাবনী ও বারিরামপুর এবং পুরুলিয়া জেলার ঝালদা ও হাসাপাথর অঞ্চলে চুনাপাথরের খনি রয়েছে। এই সব খনি থেকে চুনাপাথর ইত্তোলিত হয়।তবে এই এলাকায় উত্তোলিত চুনাপাথর উৎকৃষ্ট মানের না।

প্রাকৃতিক গ্যাস

তথ্যসূত্র

  1. উচ্চমাধ্যমিক অর্থনৈতিক ভূগোল। ক্যালকাটা বুক হাউস (প্রা) লিমিটেড।প্রকাশক:শ্রী চঞ্চল ভাওয়াল। ১/১, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০৭৩
  2. "COAL RESERVES IN INDIA"। ৯ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৭
  3. "Coal Resources of india"। geologydata.info। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-৩১
  4. "India's largest coal mine coming up at Birbhum: Mamata"
  5. "deucha coal block"। ejatlas।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.