বনানী চৌধুরী
বনানী চৌধুরী (ইংরেজি: Bonani Chowdhury, জন্ম: ১৯২৪, মৃত্যু: জানুয়ারি ৫,১৯৯৫) বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মুসলিম অভিনেত্রী। তৎকালীন সমাজে মুসলিম নারীদের বাড়ির বাইরে প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু শত বাধা পেরিয়ে তিনি গড়েছেন এক দৃষ্টান্ত এবং সহজ করে দিয়েছেন তার পরবর্তী মুসলিম অভিনেত্রীদের চলচ্চিত্রে অংশেগ্রহণের পথ।
বনানী চৌধুরী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১৯২৪ সাল |
মৃত্যু | জানুয়ারি ৫, ১৯৯৫ |
পরিচিতির কারণ | অভিনেত্রী |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
বাংলা চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী বনানী চৌধুরী ১৯২৪ সালের মে মাসে জন্মগ্রহণ করেন বনগাঁ তে। বনানী চৌধুরীর পিতার নাম আফসার উদ্দিন। বনগাঁ ছিল তার বাবার কর্মস্থল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের পৈতিক নিবাস ছিল বৃহত্তর যশোর জেলার শ্রীপুর থানার সোনাতনদি গ্রাম। যা বর্তমানে মাগুরা জেলাতে অবস্থিত। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলাস্থ সাগরদিঘী গ্রামের একটি স্কুলে। অল্প বয়সে তার বিয়ে হয় এবং পরে তিনি স্বামীর উৎসাহেই পড়ালেখা চালিয়ে যান। ১৯৪১ সালে তিনি ম্যাট্টিক পাস করেন। এবং পরে আই. এ. ও তারপর বি. এ. পাস করেন।[1]
বৈবাহিক জীবন
১৯৩৬ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে বনানী চৌধুরীর বিয়ে হয়। তার স্বামীর নাম রাজ্জাক চৌধুরী। বনানী চৌধুরী তার দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তানের জননী। বনানী চৌধুরীর চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণের পিছনে তার স্বামীর অবদান অনেক। মূলত তার স্বামীর উৎসাহেই বনানী চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন।[2]
কর্মজীবন
ছোটবেলা থেকেই তার শিল্পী প্রতিভার পরিচয় মিলতে থাকে। গ্রামে বা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং পুরষ্কার পাওয়ার মাধ্যমে। এছাড়া কবিতা আবৃত্তিতেও তার সুনাম ছিল। ছোটবেলা থেকেই তার চলচ্চিত্রের প্রতিও একটা দুর্বলতা ছিল। এই আকর্ষণকে বাস্তবে রূপ দেন বনানী চৌধুরীর স্বামী ও তার দুই বন্ধু মানিক বন্দোপাধ্যায় এবং সুলতান আহমেদ। কিন্তু তখনকার দিনে মুসলিম পরিবারের মেয়েদের চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণের কথা চিন্তাও করা যেত না। তার পরেও চলচ্চিত্রে যোগ হয় এক নতুন প্রতিভা বনানী। আসলে এটা তার প্রতিকী নাম। তার আসল নাম বেগম আনোয়ারা নাহার চৌধুরী লিলি। তিনি এই বনানী নাম ব্যবহার করেন কারণ মানুষ বিশেষকরে মুসলিম সমাজের মানুষ যেন ভাবে তিনি হিন্দু ধর্মের এবং তার উপর সমাজের প্রতিবন্ধকতা কম আসে।[3]
১৯৪৬ সালে বিখ্যাত পরিচালক গুনময় বন্দোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মুক্তি পায় বনানী চৌধুরী অভিনীত প্রথম ছবি বিশ বছর পরে। এবং এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি জয় করে নেন লাখো মানুষের হৃদয়। একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন প্রচুর। বনানী চৌধুরী অভিনীত কিছু চলচ্চিত্রঃ-
বিশ বছর পরে
- চলার পথে,
- অভিযোগ
- মায়াজাল
- পরশ পাথর
- শেষের কবিতা
- মহাসম্পদ
- আম্রপালী
- তপসী
- নন্দরামের সংসারসহ ইত্যাদি।
এছাড়া আরো কিছু চলচ্চিত্রে সাবলীল অভিনয় তাকে সেরাদের তালিকায় স্থান দিয়েছে। যেমনঃ---
- পথহারা
- নিয়তি
- স্বাক্ষর
- শাপমোচন
- চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন।
আর ১৯৭০ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ছবি লেট দেয়ার বি লাইট চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ভূয়সি প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
বিখ্যাতদের সংস্পর্শ
চলচ্চিত্র জীবনের শুরু থেকে বনানী চৌধুরী কিছু বিখ্যাত মানুষের সাথে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ পাহাড়ী সান্যাল,প্রমথেশ বসু,হেমেন গুপ্ত,নীতিশ বসু,ছবি বিশ্বাস, জহির রায়হান ,জহর গাঙ্গুলীসহ অন্যান্যরা।
পরলোকগমন
বাংলার বিখ্যাত এই অভিনেত্রী বনানী চৌধুরী ১৯৯৫ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার বানানী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়।[3]