রুই
রুই (ইংরেজি: Rohu Carp; বৈজ্ঞানিক নাম: Labeo rohita) বাংলাদেশ ও ভারতে বহুল পরিচিত মাছগুলোর মধ্যে একটি। আন্তর্জাতিকভাবে রুই মাছের নাম বলা হয়ে থাকে রোহু। স্থানীয় নাম রুই, রোহিতা, রুহিত, রাউ, নলা, গরমা, নওসি।
রুই Labeo rohita | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | ভার্টিব্রাটা |
মহাশ্রেণী: | Gnathostomata |
শ্রেণী: | Actinopterygii |
বর্গ: | Cypriniformes |
পরিবার: | Cyprinidae |
গণ: | Labeo |
প্রজাতি: | L. rohita |
দ্বিপদী নাম | |
Labeo rohita হ্যামিল্টন, ১৮২২ | |
প্রাপ্তিস্থান
রুই মাছ ভারত (মূল ভূখণ্ড), পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের নদীতন্ত্রের প্রাকৃতিক প্রজাতি। মিষ্টি জলের পুকুর, হ্রদ, নদী ও মোহনায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন বড় নদীতে বিচরণ করে, ডিম ছাড়ার সময় প্লাবন ভূমিতে প্রবেশ করে। স্বাদ, সহজ চাষপদ্ধতি ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে ও পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে শ্রীলঙ্কা, চীন, রাশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে রুই মাছের চাষ হচ্ছে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মিষ্টি জলের নদীতেও অনুপ্রবেশিত রুইয়ের সফল চাষ হচ্ছে।[1]
খাদ্যাভাস
রুই মাছ শাকাশী। এরা সাধারণত জলের মধ্যস্তরে চলাচল করে৷ এদের মুখ কিছুটা নিচের দিকে নামানো এবং পুরু ঠোঁট থাকার কারণে জলজ উদ্ভিদ, আগাছা এবং মাঝে মাঝে জলের তলদেশ থেকে পঁচা জৈব পদার্থ খেয়ে জীবনধারণ করে৷ এছাড়াও ফিসমিল, খৈলের গুড়া, কুঁড়া ইত্যাদি পুকুরে চাষের সময় সম্পূরক খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তবে ছোট অবস্থায় এদের প্রধান খাদ্য থাকে প্রাণীকণা বা প্লাংকটন।
পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম রুই মাছে ১৬.৪ গ্রাম আমিষ, ১.৪ গ্রাম চর্বি, ৬৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২২৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে।
বাহ্যিক গঠন
রুই মাছের দেহ অনেকটা মাকু আকৃতির। মাথা ও লেজ ক্রমশ সরু। প্রস্থ থেকে উচ্চতা বেশি। চলনের সময় জলের ভেতর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় না বলে এ ধরনের আকৃতিকে "স্ট্রিমলাইনড" বলে।[2] শরীরের দুপাশ সমানভাবে চ্যাপ্টা এবং সারা শরীর রূপালী আঁশ দিয়ে আবৃত থাকে। আঁশগুলো মসৃণ ও সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো থাকে। ধুসর বর্ণের পাখনার এই মাছের পৃষ্ঠদেশের আঁশের কেন্দ্র লালাভ এবং প্রান্ত কালো বর্ণের হয়ে থাকে। আঁশের কেন্দ্রের এই লালাভ বর্ণ প্রজনন ঋতুতে আরও গাঢ় ও উজ্জ্বল হয়। এছাড়াও অধিক জলজ উদ্ভিদময় পরিবেশে বেড়ে ওঠা মাছের পৃষ্ঠদেশের বর্ণ লালাভ-সবুজ হতে পারে। এদের পিঠ ও পিঠের নিচের দিকটা বাদামি রঙের এবং পেট রুপালি সাদা রঙের হয়৷ মুখ নিচের দিকে নামানো থাকে এবং পুরু ঠোট ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে৷ মুখের উপরে ঠোঁটে এক জোড়া গোঁফ থাকে।
রুই মাছ সর্বোচ্চ ২০০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।এরা সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং ওজন ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
মাথা
দেহের অগ্রপ্রান্ত থেকে কানকোর পশ্চাৎ পর্যন্ত হল মাথা। মাথা ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেহের পৃষ্ঠীয় ভাগ উত্তল তবে উদর থেকে মস্তকের উপরিভাগ বেশি উত্তল। [2]
প্রজনন
রুই মাছ দুই থেকে তিন বছরেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে।বর্ষাকালে প্লাবিত নদীতে (বিশেষত জলজ উদ্ভিদময় স্থানে) রুই মাছ প্রজননে অংশ নেয়। এক প্রজনন ঋতুতে একটি মা মাছ প্রায় দুই থেকে ত্রিশ লাখ ডিম দিয়ে থাকে, যা মাছের বয়স, দৈর্ঘ্য ও ওজনের এবং অমরার দৈর্ঘ্য ও ওজনের উপর নির্ভর করে কমবেশি হতে পারে।
মাছের ডিম
অপেক্ষাকৃত কম গভীর পানিতে এবং স্রোতের টানে নদীর পাড়ে স্ত্রী রুই মাছ ডিম ছাড়ে৷ এছাড়াও বাঁধ বা পুকুরে কৃত্রিম উপায়ে স্রোতের সৃষ্টি করা হলে রুই মাছ সেখানে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে। ৪-১০ কেজি ওজনের রুই মাছে ৬ লক্ষ থেকে ৩৫ লক্ষ ডিম থাকে৷ তবে গড়ে প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মাছে প্রায় ১ঌ লক্ষ করে ডিম থাকে। রুই মাছ সাধারণত নদীতে ডিম পাড়ে। আবার বাঁকুড়া, মেদিনীপুর অঞ্চলের কিছু সংখ্যক বিশেষ ধরনের বাঁধেও ডিম পাড়ে। বাজারে যে পোনা পাওয়া যায় তা নদী থেকে ধরা মাছের ডিম পোনা।পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় লালগোলা, ধুলিয়ান অঞ্চলে এবং মালদহ মাণিকচক অঞ্চলে নদী থেকে মাছের ডিম পোনা ব্যাপক ভাবে ধরা হয়। রুই মাছ স্বাদে আকর্ষণীয় হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক।
বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ
আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে হুমকির সম্মুখীন নয়।[4]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- গাজী আজমল, গাজী আসমত। জীববিজ্ঞান ২য় পত্র, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি।
- জীববিজ্ঞান, দ্বিতীয় পত্র। অজানা প্যারামিটার
|1=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান, গাজী সালাহউদ্দিন সিদ্দিকী। জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র।
- পারভীন, সেলিনা (অক্টোবর ২০০৯)। "স্বাদুপানির মাছ"। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৮৬–৮৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)।