শিতালং শাহ

শিতালং শাহ (সিলেটি: ꠡꠤꠔꠣꠟꠋ ꠡꠣꠢ) (জন্মঃ মে, ১৮০৬-মৃত্যুঃ ১৮৯৯) দেশবিভাগ-পূর্ব সিলেটের একজন খ্যাতনামা মরমী সাধক কবি ও সাহিত্যিক। তাওহিদ, রিসালত, আখেরাত ও মানব জীবনের ভেদ রহস্য উদঘাটন হচ্ছে তার গানের মূল বিষয়বস্ত। ইসলামের শাশ্বত বাণী গানে ও লিখার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেয়া ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। দুনিয়ার লাভ লোভ মোহ মায়ার ঊর্ধে জীবনযাপন করাই ছিল তার জীবনাদর্শের অন্যতম।[1][2][3]

শিতালং শাহ
ꠡꠤꠔꠣꠟꠋ ꠡꠣꠢ
জন্মমে ১৮০৬
খিত্তাশিলচর, করিমগঞ্জ মহকুমায় বদরপুর থানা, সিলেট
মৃত্যু১৮৯৯
পেশাকবি ও সাহিত্যিক
পরিচিতির কারণমরমী সাধক কবি ও সাহিত্যিক

জন্ম ও বংশপরিচয়

শিতালং শাহ বা সুফি শিতালং শাহ । শিতালং ফারসী শব্দ ইহার অর্থ পায়ের গোঁড়ালির গোল হাড় । এর জন্ম ১৮০৬ সালের মে মাসে ।[১২০৭-১২৯৬বাংলা] দেশবিভাগ-পূর্ব সিলেটের অন্তর্গত করিমগঞ্জ মহকুমায় বদরপুর থানার খিত্তাশিলচর গ্রামে। শিতালং শাহ তার মুর্শিদ প্রদত্ত ফকিরী নাম। প্রকৃত নাম মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ। তার পিতার নাম মোহাম্মদ জাঁহাবখস, মাতার নাম সুরতজান বিবি। জনশ্রুতি মোতাবেক জাহাবখস ছিলেন ঢাকার নবাব বংশের লোক। বাণিজ্য উপলক্ষে তিনি এ অঞ্চলে আসেন। নৌকা ডুবিতে তার বাণিজ্য দ্রব্য বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে তিনি খিত্তাশিলচরের জমিদার মীর মাহমুদের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মীর মাহমুদ জাহাবখসের গুণে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে কন্যা সুরতজান বিবির বিয়ে দেন। কিছু দিন পরেই তাদের ঘরে শিতালং শাহের জন্ম হয়। পরবর্তি কালে জমিদার মীর মাহমুদ তার জামাতকে তারিণীপুরে বেশ কিছু ভুসম্পত্তি দান করেন। ফলে তিনি এখানেই বসতি স্থাপন করে পরিবারিক জীবন যাপন শুরু করেন। জাহাবখসের কনিষ্ঠ পুত্রের অধঃস্থন বংশধর আজও তারিণীপুরে বসবাস করছেন বলে জানা যায়[1]

শিক্ষাদীক্ষা

শিতালং শাহের লেখাপড়া শুরু হয় তারিণীপুর মক্তবে। পরে তিনি আরবীতে উচ্চ শিক্ষা লাভে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। সেখানে তিনি কোরান হাদিস শিক্ষা সহ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও মুর্শিদ শাহ সুফি আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী ও অন্য শিক্ষক আব্দুল কাহিরের কাছে আধ্যাত্মিক দীক্ষা গ্রহণ করে ধীরে ধীরে তিনি আধ্যাত্মিক ভাবে পাদর্শী হয়ে উঠেন। গুরু প্রদত্ত শিক্ষা-দীক্ষায় অল্প দিনেই তিনি মানসিক প্রস্তুতি তৈরি করে ইলমে তাসাউফের দারপ্রান্তে পৌছেন। এক পর্যায়ে মুর্শিদের নির্দেশ মোতাবেক শিতালং শাহ লাউড়ের ভুবন পাহাড়ে নির্জন সাধনায় আত্মবিভোর হয়ে কয়েক বছর গোপনে অবস্থান করেন। গোপন সাধনা থেকে ফিরে এসে মুর্শিদের আদেশে দীন দুঃখি মানুষের মাঝে বিচরণ করে মানব কল্যাণের বাণী প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। ইসলামি মতাদর্শের ভিত্তিতে তিনি আল্লাহর পথে জীবন যাপন করতে সঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষকে আহব্বান জানান।তার একটি গানে তিনি বলেনঃ-

মানব সৃষ্টির ভেদ রহস্য উদঘাটন করে শিতালং শাহ মানুষকে বুঝাতে থাকেন স্রষ্টাই চিরসত্য, তার পরে সত্য কিছুই নয়। তাই সৃষ্টির জন্য উচিত স্রষ্টার প্রতি নথ হয়ে থাকে। শিতালং শাহ স্রষ্টার সত্য হওয়ার তাত্পর্যময় বিষয়টি তার স্বরচিত ভাব সঙ্গীতে এভাবে বলেছেনঃ-

কেরামত

এক সময় শিতালং শাহ নিগূঢ় সাধনায় আত্মবোলা হয়ে কোন এক জঙ্গলে ধ্যান মগ্ন হয়ে বেশ কয়েক বছর অতিবাহিত করছেন। এদিকে তার মা জননী পুত্রের জন্য ব্যাকুল হয়ে লোক ডেকে পাঠান ফুলবাড়ি মাদ্রাসার শিক্ষক শাহ সুফি আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী (রঃ) এর কাছে। শাহ সুফি আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী (রঃ) লোক মুখে তার (শিতালং শাহের) মায়ের ব্যাকুলতার কথা শোনে মায়ের পাঠানো লোকদেরকে শিতালং শাহ দুই এক দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরছেন বলে দিয়ে ফেরত পাঠালেন। পুত্রের জন্য ব্যাকুল মা জননী তার ছেলের আগমন বার্তা শোনে দুধের সর চাউলের পিঠা প্রভৃতি আহার্য্য বস্তু জমিয়ে রাখতে লাগলেন। ঠিক দুই দিন অতিবাহিত হতে না হতে হঠাৎ এক রাত্রে শিতালং শাহ বাড়ির আঙ্গিনায় এসে 'মা' বলে ডাক দেন। পুত্রের ডাক অনুভব করে মা তৎকনার্ত ঘরের বাহির হয়ে ছেলেকে গলায় জড়িয়ে নেন। অল্প সময়ে পুত্র পেয়ে মায়ের মন সান্ত হলো। এবার শিতালং শাহ মা'কে বললেন মা'গো শিক্কায় রাখা দুধের সর ও জমিয়ে রাখা আহার্য্য বস্তু খাওয়িয়ে আল্লাহর রাস্তায় আমাকে বিদায় দাও। মা'য়ের গোপন রাখা বস্তু ছেলে কাছে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায়, মা বুঝে নিলেন তার ছেলে আর সাধারণ মানুষের মতো নয়। শিতালং শাহ এখন গুরুর দীক্ষায় আধ্যাত্মিক জ্ঞানী হয়ে গেছেন। মা জননী কিছু সময় ছেলে আদর সোহাগ করে আদেশ উপদেশ দিয়ে আল্লাহর হাওলা করে বিদায় দিলেন[1]

তথ্যসূত্র

  1. সিলেটের মরমী মানস সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশনায়- মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ, প্রকাশ কাল ২০০৯
  2. সিলেটের আঞ্চলিক গান 'শিতালং শাহ প্রবন্ধ', মোহাম্মদ খালেদ মিয়া, প্রকাশক - সাইদুর রহমান, প্রকাশ কাল- মে, ২০০৫ খ্রিঃ
  3. "সরকারি ওয়ের সাইট জেলা তথ্য বাতায়ন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"। ২৩ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১১

৪ মরমী কবি শিতালংশাহ -সংকলন ও সম্পাদনা নন্দলাল শর্মা । প্রথম প্রকাশ ডিসেম্বর ২০০৫ বাংলা একাডেমী

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.