জৈন্তাপুর উপজেলা
জৈন্তাপুর উপজেলা বাংলাদেশের সিলেট জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
জৈন্তাপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
![]() ![]() জৈন্তাপুর ![]() ![]() জৈন্তাপুর | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৭′২০″ উত্তর ৯২°৬′৫৫″ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | সিলেট জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২৫৮.৬৯ কিমি২ (৯৯.৮৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ১,৬১,৭৪৪ |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪১.৫০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৬০ ৯১ ৫৩ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
অবস্থান
সিলেট শহর হতে ৪০ কিলোমিটার দূরে জৈন্তা-খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জৈন্তাপুর অবস্থিত। উত্তর এবং পূর্বে পাহাড়-পর্বত এবং উপত্যকার সমাবেশস্থল আর দক্ষিণে এবং পশ্চিমে বহু হাওরের সমাহার। এর উত্তরে ভারতীয় রাজ্য মেঘালয়, দক্ষিণে কানাইঘাট উপজেলা এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কানাইঘাট উপজেলা আর পশ্চিমে গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং সিলেট সদর উপজেলা।
প্রশাসনিক এলাকা
এই উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন হল -
- নিজপাট ইউনিয়ন
- জৈন্তাপুর ইউনিয়ন
- চারিকাটা ইউনিয়ন
- দরবস্ত ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর
- ফতেহপুর ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর
- চিকনাগুল ইউনিয়ন
ইতিহাস
অতি প্রাচীণকালে বর্তমান জৈন্তাপুর সমতলভূমির অবস্থান ছিলো পানির নিচে যা বিশাল জলজ অঞ্চলের অংশ ছিলো বলে ঐতিহাসিকগণের ধারণা। পানির এই মহাসমারোহের কারণেই হয়তো এই অঞ্চলটি সিলেটের মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন ছিলো আর অর্জন করেছিলো বিশাল এক সময় ধরে স্বাধীন থাকার গৌরব। এই রাজ্যেরই নাম ছিলো জৈন্তাপুর।
স্থানীয় ইতিহাস আর লোকগাঁথা হতে পাওয়া যায়, সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দির দিকে জৈন্তাপুর রাজ্য কামরূপ রাজ্যের শাসনাধীন হয়। ঐ একই বছর জৈন্তাপুর, চন্দ্র এবং বর্মণ বংশের অধীনে আসে। বর্মণদের পতনের পর জৈন্তাপুর পুণরায় কিছু সময়ের জন্য দেব বংশের আওতায় আসে।
জৈন্তা রাজ্যের প্রাচীন ইতিহাস
হেরী সাহেব মাহলরে সোনার জৈন্তাপুর ছাতক তনে আইল হেরী যাইত বদরপুর। সিলেট আইয়া জিকার করে জইন্তা কতদূর। সাবাল বয়সী রাজেন্দ্র সিং মুখে রেখদাড়ী মন্দি তইল নিয়া মুরারী চাদের বাড়ি হি দিন থাকি আন্দাইর অইল সোনার জৈইন্তাপুর বিনাদোষে মাইলোরে সোনার জাইন্তাপুর। (লোকগাঁথাঃ প্রাচীন গানটি)
একটি দেশের জন্ম হটাৎ করে হয়না। দীর্ঘ ইতিহাস, সংগ্রাম, শাসন, অত্যাচার প্রভৃতির সংযোজন-বিভাজন ঘটে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে একটি দেশের আর্বিভাব ঘটে বিশ্বের মানচিত্রে। বাংলাদেশ এক সময় ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। স্বতন্ত্র শাসক-ব্যবস্থা থাকলেও সবাইকে চেয়ে থাকতে হত দিল্লীর মদনদের দিকে। অনেকে আবার দিল্লীর শাসন মেনে নিতে না পারার জন্য যুদ্ধে হেরে গিয়ে পলায়র বা মৃত্যুবরণ করেছেন আবার অনেকে যুদ্ধ করে করেই টিকে থেকেছেন। অনেকগুলো রাজ্যের মত বর্তমানে সিলেট-৪ আসনের অন্তগর্ত (উত্তর-পূর্বাংশ) প্রান্তিক জনপদ জৈন্তাপুর। আত্মসচেতনতার অভাব আর বহিরাগত কূটকৌশলের কাছে পরাজিত এখানকার সহজ-সরল অধিবাসীরা যদিও আজ ‘জৈন্তাপুরী’ হিসেবে তাচ্ছিল্যের পাত্ররূপে পরিচিত অনেকের কাছে।
সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পদানত তখন সম্রাট নিজামের এলাহাবাদ বাদে একমাত্র জৈন্তিয়া রাজ্যেই ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত আজাদীর প্রতীকরূপে ‘সিংহ চিহ্ন সম্বলিত’ পতাকা উড়তো পত্ পত্ করে আর এ রাজ্যের অধিবাসীরাই বুক ফুলিয়ে সাহসের সাথে ঘোষণা করতে পারত যে, আমরা স্বাধীন। মালব দেশ হতে আগত কবিরাজ কর্তৃক ‘রাঘব পান্ডবীয় গ্রন্থ’ রচিত হয়েছিল এ জৈন্তারাজ্যেই-যা নিঃসন্দেহে সিলেট বাসীর গর্বের বিষয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতার ভিত্তি উপমহাদেশের ৫১টি পীঠস্থানের মধ্যে জৈন্তারাজ্যের ‘বাম জঙ্ঘা পীঠ’ অন্যতম। সিলেটের গৌড় ও লাউড়কে পাত্তা না দিলেও জৈন্তারাজ্য কৌরবদের সাম্রাজ্যভংক্ত হয় এবং পান্ডব অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ার গৌরব লাভ করে। হিন্দুদের প্রাচীন গ্রন্থাদিতে সিলেটের লাউড় ও গৌঢ় রাজ্যের উল্লেখ না থাকলেও প্রতিটি গ্রন্থে জৈন্তিয়া বা জয়ন্তার উল্লেখ আছে। জৈমিনি মহাভরত, মন্ত্রচুড়ামণি, তন্ত্রচুড়ামণি, কামাখ্যাতন্ত্র প্রভৃতি পৌরাণিক গ্রন্থে জৈন্তিয়া বা জয়ন্তার নাম উল্লেখিত হয়েছে সম্মানের সাথে।
প্রাচীনকালে জৈন্তারাজ্যকে নারীরাজ্য বলা হত। আর এ নারীরাজ্যের সঠিক বিস্তার জানা যায় না। তবে জৈন্তা পাহাড়কে কেন্দ্র করেই এ নারীরাজ্যের অবস্থান ছিল। খাসিয়া রাজবংশের সময় ষোড়শ শতক থেকে বারপুঞ্জি সম্বলিত জৈন্তা পাহাড়, সিলেটের উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমি অর্থাৎ জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের কিছু অংশ এবং আসামের গোভা ও ডিমারূয়া অঞ্চল নিয়ে জৈন্তা রাজ্যের অবস্থান ছিল। এ রাজ্যের উত্তরে অহম (কামরূপ), পূর্বে কাছাড়, দক্ষিণে ত্রিপুরা ও গৌড় রাজ্য এবং পশ্চিমে লাউড় ও কামতা রাজ্যের অবস্থান ছিল। চতুর্দিকে বিভিন্ন রাজ্যের অবস্থানের কারণে পাশ্ববর্তী রাজন্যবর্গের সাথে জৈন্তা রাজ্যের সারা বছর ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো।
প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে লিখিত জৈমিনি মহাভারতে জৈন্তিয়া রাজ্যের অধিশ্বরী বীর রমণীর প্রমিলার কথা উল্লেখ করা আছে। জৈন্তিয়াকে প্রমিলা রাজ্য বা নারী রাজ্য বলা হতো। প্রমিলার রূপ-লাবণ্যে মুগ্ধ হয়ে মহাবীর অর্জুন তাকে বিয়ে করেছিলেন। কহলীন রজত রঙ্গিনী গ্রন্থের বর্ণনা মতে, ‘কাশ্মীরের রাজা জয়পীড় এয়োদশ শতকের প্রথমার্ধে দ্বিগ্বিজয়ে বের হন।’ তিনি পূর্ব দেশীয় রাজা ভীমকে পরাজিত করে নেপাল রাজ্যে প্রবেশ করেন। তারপর তিনি জৈন্তিয়া রাজ্য জয় করেন। সে সময় জৈন্তিয়া পাহাড়কে কেন্দ্র করে জৈন্তা রাজ্যের সীমানা ছিল। ষোড়শ শতকে খাসিয়া রাজবংশের সময় থেকে জৈন্তা রাজ্যের অন্তর্গত অঞ্চল ছিল ১২ পুঞ্জি নিয়ে জৈন্তিয়া পাহাড় সিলেটের উত্তরাংশে সমতলভূমি নওগাঁ জেলার গোভা ও ভিমারণ্য অঞ্চল। রাজ্যের উত্তর-সীমায় অহম কামরুপ, পূর্বে-কাছার, দক্ষিণে-ত্রিপুরা ও গৌড় রাজ্য অবস্থান ছিল। ফলে সীমান্তবর্তী রাজন্যবর্গের সাথে সংঘর্ষ প্রায়ই লেগে থাকতো।
খাসিয়া রাজবংশের ২৩ জন রাজা ১৫০০ সাল থেকে ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেন। খাসিয়াদের পূর্ব পুরুষরা চীনে তিব্বত থেকে জৈন্তিয়া রাজ্যে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে তারা হিন্দুদের সংস্পর্শে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। পর্বত চূড়ায় খাসিয়া রাজাদের রাজ্য পরিচালনা কেন্দ্রস্থল ছিল। পরবর্তীতে ১৬৮০ সালে পর্বত চূড়া হতে জৈন্তিয়ার নিজ পাটে রাজধানী স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদেরকে ৩০টি হাটিতে ভাগ করা হয়। বন্দরহাটি, দর্জিহাটি, মুর্গাহাটি, নক্তিহাটি, মাহুতহাটি, মামতিহাটি, চৌরাহাটি, চুনাহাটি, তেলীহাটি, ধূনাহাটি, চন্দ্রাহািিট, আমতলীহাটি, তাংচুনীহাটি, দুয়াসিংহাটি, ওয়াশীহাটি, মজুমদারপাড়া, বামনপাড়া, গণকপাড়া, কুমারপাড়া, কামারপাড়া, বানিপাড়া, ফেরেঙ্গী টুলা, তাঁতীপাড়া, উজানীনগর, যশপুর ইত্যাদি নামরকণ করা হয়। ফতে খাঁ জৈন্তিয়াপুরের মোকাম বাড়ীতে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদ নির্মাণে সেনাপতি ফতে খাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ প্রথম পর্বত থেকে সমতলে রাজধানী স্থাপন করেন। লক্ষ্মী নারায়ণের আমলে জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজধানী রাজবাড়ী নির্মাণ, জৈন্তিয়াপুরী বাড়ী নির্মাণ, প্রকাশ্যে নরবলির স্থান, চন্ডির থাল এবং বিরাট বিরাট পাথরের তৈরী কেদার, ৮ ম তলা বড় দেউল, পান্তশালা, ঢুপীর মট এবং রাজ্য রক্ষার্থে বিরাট ক্ষমতাশালী ৪ টি কামানসহ বহু উন্নয়ন করেন।
হট্টনাথের পাঁচালীর বর্ণনা মতে, প্রাচীণকালে কামরূপে, কামসিন্ধু নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। তার মহিষী রাণী উর্মি। কামসিন্ধুর মৃত্যুর পর প্রাগজ্যোতিষপুরের অধিপতি কামরূপ আক্রমণ করলে নিরূপায় ও অসহায় রাণী রাজধানী ত্যাগ করে নিজ রাজ্যের পশ্চিমাংশে এবং নারী রাজ্যের কিছু অংশ দখল করে একটি নতুন রাজ্য স্থাপন করেন। তিব্বতের হাটক রাজ্যের যুবরাজ কৃষক ভারত ভ্রমণে বের হয়ে রাণী উর্মির স্থাপিত জৈন্তারাজ্যে উপস্থিত হয়। ঘটনাচক্রে রাণী উর্মির সুন্দরী কন্যা উর্বরা কৃষকের দৃষ্টিপাত পতিত হন। কৃষক উর্বরা’র রূপ লাবণ্যে মোহিত হয়ে তার প্রেমে পতিত হন। ভুলে যান পিতৃরাজ্য হাটকে প্রত্যাবর্তনের কথা। রাণী উর্মিও কৃষকের নানাগুণে মুগ্ধ হয়ে নিজ কন্যাকে কৃষকের সাথে বিয়ে দেন। কালক্রমে কৃষকের ঔরষে ঊর্বরা এক পুত্র সন্তান লাভ করেন। নবজাতকের নাম পিতামহের রাজধানীর নামানুসারে রাখা হয়-হাটক। যুবরাজ হাটক বয়ঃপ্রাপ্ত হলে মাতামহীর সিংহাসনে আরোহন করেন। তিব্বতের যুবরাজ ও রাজকুমারী উর্বরা’র স্বামী কৃষকের নামানুসারে এ বংশের নাম হয় কৃষক রাজবংশ এবং রাজবংশের কুলদেবতার নাম হয়-হাটকেশ্বর। রাজা হাটকের মৃত্যুর পর তার পুত্র গুহক সিংহাসনে আরোহন করেন এবং রাজ্যের সীমা বৃদ্ধি করেন। তার ছিল তিন পুত্র ও দুই কন্যা। পুত্রগণ হচ্ছেন লড্ডুক, গুড়ত, জয়ন্তক। গুহকের মৃত্যুর পর তার রাজ্য তিন পুত্রের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। লড্ডুকের অধিকৃত ভূমির নাম হয় ‘লাউড়’। গুড়কের অংশের নাম হয় ‘গৌঢ়’ এবং জয়ন্তকের অধিকৃত ভূমির নাম হয় ‘জয়ন্তিয়া’। গুহকপুত্র জয়ন্তকের নাম হতেই ‘জৈন্তিয়া’ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
জয়ন্তকের মৃত্যুর পর রাজা হন জয়মল্ল, জয়মল্লের পর রাজা মহাবল সিংহাসনে আরোহন করেন। মহাবলের পর যথাক্রমে রানচুড়দেব, বঙ্গবীর, কামদেব ও ভীমবলদেব জৈন্তার রাজা হন। ভীমবলই কৃষক বংশের শেষ রাজা। কামদেব ছাড়া এ বংশের অন্য রাজাদের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। কামদেবের শাসনামলে জৈন্তিয়া রাজ্যের স্বর্ণযুগ হিসেবে খ্যাত ছিল রাজা কামদেব অত্যন্ত বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। তার আমন্ত্রণে মালব দেশের রাজধানী ধারানগর হতে বিখ্যাত পন্ডিত ও কবি কবিরাজ জৈন্তার রাজসভায় আগমন করেন এবং ‘রাঘব পান্ডবীয় গ্রন্থ’ রচনা করেন। কামদেবের পর তার পুত্র রাজা ভীমবলদেব রাজা হন। ভীমবলদেব-এর কাছ থেকে রাজ পুরোহিতগণ সিংহাসন দখল করেন। এ ব্রাহ্মণ পুরোহিতগণের শেষ ৪ জন রাজা ছিলেন রাজা কেদারেশ্বর রায়, ধনেশ্বর রায়, কন্দর্প রায়, জয়ন্ত রায়। পুরোহিত রাজবংশের ইতিহাস অন্ধকার আচ্ছন্ন। কৃষক বংশের শেষ রাজা ভীমবলদেব দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে রাজত্ব করেন। অপরদিকে খাসিয়া রাজবংশ ১৫০০ সাল হতে ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করে। রাজা ভীমবলের হাতে খাসিয়া রাজবংশের প্রথম রাজা পর্বত রাজ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২৫০ বছর এ পুরোহিত রাজবংশ জৈন্তরাজ্য শাসন করে। পুরোহিত রাজবংশের শেষ রাজা জয়ন্ত রায় নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি দেবতার নিকট সন্তান কামনা করলে দেবতার বরে জয়ন্তী নামে তার এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এই কন্যা শৈষবে সুতুঙ্গা পুঞ্জিতে লালিত-পালিত হয়। কন্যা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে সুতুঙ্গা পুঞ্জির খাসিয়া সর্দারের পুত্র লন্ডবের সাথে তার বিয়ে হয়।
রাণী জয়ন্তী ও লন্ডবরের সন্তান পর্বত রায়ই খাসিয়া রাজবংশের আদি রাজা। তার রাজত্ব কাল ১৫০০ থেকে ১৫১৬ সাল পর্যন্ত ছিল বলে জানা যায়। পর্বত রায়ের পর রাজা হন মাঝ গোসাই। তিনি ১৫১৬ হতে ১৫৩২ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। এরপর বুড়া পর্বত রায় জৈন্তারাজ্য শাসন করেন। তার রাজত্বকাল ছিল ১৫৩২ সাল হতে ১৫৪৮ সাল পর্যন্ত। বুড়া পর্বত রায়ের পর প্রথম বড় গোসাই জৈন্তার রাজা হন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ। তার সময়েই ফালজুরের বাম-জঙ্ঘা পীঠ প্রকাশিত হয়। এর কিছুদিন পর নিজপাটের উত্তর দিকস্থ রূপনাথ গুহায় রূপনাথ শিবও আবিষ্কৃত হয়। ১৫৪৮ সাল হতে ১৫৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন।
প্রথম বড় গোসাই এর পর ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় মানিক সিংহাসনে আরোহন করেন। এ সময় ত্রিপুরার প্রভাবশালী শাসক বিজয় মানিক্যের জন্য মিত্রতার জন্য বিজয় মানিক্য মূল্যবান উপঢৌকন পাঠান। প্রতিদানে বিজয় মানিক্য জৈন্তাপতিকে একটি হাতী দান করেন। এ সময়ে কামরূপের কোচ বংশীয় রাজা নবনারায়ণের ভাই ও সেনাপতি চিলারায় কাছাড় ও মণিপুর জয় করে জৈন্তারাজ্যে আক্রমণ করেন। বিজয় মানিক্য স্বসৈন্যে চিলারায়ের গতিরোধ করলেও দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি মারা যান এবং চিরারায়ের জয় হয়। বিজয় মানিক্যের উত্তরাধিকারী প্রতাপ নারায়ণ কামরূপ রাজকে বার্ষিক দশ হাজার টাকা, ৭০টি ঘোড়া এবং ৩০০ খানা লসেই দাও দিতে সম্মত হয়ে হারানো রাজ্য ফিরে পান। সন্ধির শর্তানুসারে রাজা নিজ নামে মুদ্রা প্রচলনের অধিকার হতে বঞ্চিত হন। তিনি ১৫৮৫ হতে ১৫৯৬ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। প্রতাপ নারায়ণের পর ধনমানিক সিংহাসন লাভ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাবান রাজা। ১৬০২ সালে তিনি দিমারুয়ার রাজা প্রভাকরকে যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দী করেন। প্রভাকরের অনুরোধে কাছাড় রাজ শত্র“দমন জৈন্তারাজ্যে আক্রমণ করলে ধনমানিক পরাজিত হন। পরে কাছাড় রাজের কাছে আপন কন্যাদ্বয়কে নিয়ে দিয়ে সন্ধি স্থাপন করেন। অধিকন্তুু নিজ ভাগিনে ও উত্তরাধিকারী যশোমণিককে প্রতিভূম্ব রূপ কাছাড়ের রাজধানী ব্রহ্মপুরে প্রেরণ করেন। ১৫৯৬ হতে ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জৈন্তারাজ্য শাসন করেন। ধনমানিকের মৃত্যুর পর ১৬০৬ সালে কাছাড়রাজ শত্র“দমন যশোমানিককে মুক্তি দেন। যশোমানিক দেশে ফিরে আসেন এবং সিংহাসন লাভ করেন। তারই কূটকৌশলে অহমরাজ প্রতাপ সিংহ ও শত্র“দমনের মধ্যে ১৬১৮ সালে যুদ্ধ হয় যাতে প্রথমে কাছাড়রাজ পরাজিত হন। তার সময়েই যৌতুকরূপে প্রাপ্ত দেবী মূর্তিকে ‘জৈন্তশ্বরী কালী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। যশোমানিকের মৃত্যুর পর ১৬২৫ সালে সুন্দর রায় সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি ১৬৩৬ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। পরবর্তীতে ১৬৩৬ সালে ছোট পর্বত রায় সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ১৬৪৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ছোট পর্বত রায়ের মৃত্যুর পর ১৬৪৭ সালে যশোমন্ত রায় সিংহাসনে আরোহন করেন। মীর জুমলার শাসনকালে যশোমন্ত রায় সিলেট শহর আক্রমণ করলেও শায়েস্তা খানের আগমন সংবাদে ১৬৬৪ সালে তিনি মোগলদের আনুগত্য স্বীকার করেন। যশোমন্ত রায়ের মৃত্যুর পর ১৬৬৮ সালে তার দৌহিত্র বানসিংহ রাজা হন। ছয় মাসের ভিতরেই তিনি প্রতাপ সিংহ কর্তৃক নিহত হন। ১৬৬৯ সালে প্রতাপ সিংহ রাজা হন। ১৬৭০ সালে তিনি তার জামাতা লক্ষ্মীনারায়ণ কর্তৃক নিহত হন। লক্ষ্মী নারায়ণ ১৬৭০ সালে সিংহাসনে বসেন। তিনি প্রায় ৩০ বছর রাজত্ব করেন। তিনি ১৬৮২ সালে সিলেট শহর আক্রমণ করেন। তিনি জৈন্তাপুরে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন যা পরবর্তীতে ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুুপে পরিণত হয়। জৈন্তাপুর হাইস্কুলের সামনে যে ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় এটি তারই নির্মিত। রাম সিংহ ১৭০১ সালে ক্ষমতায় আরোহন করেন। তার সময়েই অহমরাজের সাথে জৈন্তারাজের দীর্ঘদিন যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে রাম সিংহ পরাজিত ও বন্দী হন। বন্দীদশায় ১৭০৮ সালে তিনি মারা যান। রাম সিংহের পর জয় নারায়ণ সিংহাসনে আরোহন করেন। অহমরাজ রুদ্র সিংহ জয় নারায়ণের দুই ভগ্নিকে বিয়ে করেন। এ সময়ে চুড়খাই পরগনার ব্রাহ্মণ আগম বাগীশা জৈন্তার বড় হাওরের রাজা গৌর গোবিন্দের দেবতা হাটকেশ্বর শিবকে প্রাপ্ত হন। তার সময়েই উত্তর প্রদেশ হতে বিখ্যাত মুসলিম সাধক পীর কাশিম শাহ জৈন্তাপুরে আসেন। জয় নারায়ণের সময়ে চুড়খাই জৈন্তার অন্তর্ভুক্ত হয়। জয় নারায়ণের সাথে কাছাড়পতি শূরদর্প নারায়ণের সংঘর্ষ বাঁধলে কাছাড়পতি পরাজিত হন এবং জৈন্তারাজ কর্তৃক মহিরং নগরী ধ্বংস হয়। জয় নারায়ণের সিংহাসনে আরোহন ও মৃত্যুর তারিখের কাঠরা টাকা পাওয়া গেছে। ১৭৩১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জয় নারায়ণের পর দ্বিতীয় বড় গোসাই রাজা হন। তিনি একাধারে ৪০ বছর রাজত্ব করেন। তার পত্নী ছিলেন রাণী কাশাজাতী। এ সময় সিলেট ছিল ঢাকার শাসনাধীন। জৈন্তা ও সিলেটের সীমানা নিয়ে গোলযোগ বাঁধলে নওয়াজিশ খাঁ সেনাপতি নওশের খানকে সিলেট প্রেরণ করেন। এতে শান্তিপ্রিয় দ্বিতীয় বড় গোসাই সন্ধির প্রস্তাব দেন এবং ঢাকার নবাবের মনোতুষ্টির জন্য প্রচুর উপঢৌকনের সাথে নিজের বোন ভৈরব কুরীকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। নওয়াজিশ মোহাম্মদ খাঁ ভৈরব কুরীকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তাদের এক পুত্র জন্ম নেয়। নাম রাখেন ফতেহ খাঁ। বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ফতেহ খাঁ জৈন্তাপুরে আসলে বড় গোসাই তাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং সেনাপতি নিযুক্ত করেন। ফতেহ খাঁ রাজধানী প্রচুর উন্নয়ন কাজ করেন। তিনি ছিলেন রাজার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন। পরবর্তীতে হিন্দু অমাত্যবর্গের কু-পরামর্শ আর ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি নিহত ন। ১৭৭০ সালে রাজা দ্বিতীয় বড় গোসাই সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। রাজা বড় গোসাই সন্ন্যাস গ্রহণ করলে ১৭৭০ সালে ছত্রসিংহ সিংহাসনে আরোহন করেন। এ সময় ব্যবসায়িক কারণে ইংরেজদের সাথে রাজার যুদ্ধ বাঁধলে রাজা পরাজিত হন। পরে রাজা ১৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ভবিষ্যত সদ্ব্যবহারের প্রতিশ্র“তি দিয়ে রাজ্য ফিরে পান। ছত্রসিংহ ১৭৭৪ সালে মৃত্যু বরণ করলে ক্ষমতায় বসে তার ভাগ্নে যাত্রা নারায়ণ। তিনি ৭ বছর রাজত্ব করেন। ১৭৮২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিজয় সিংহ ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতায় আরোহন করেন। এ সময় নথিয়াং পুঞ্জির উপাদলই পুত্র লক্ষ্মী সিংহ জৈন্তার রাজ দরবারে বেশ প্রতিভূ হয়ে উঠেন। লক্ষীর শত্র“পক্ষ অস্ত্রবাদ দেয় যে, রাজভগ্নি বড় কুড়ি ও লক্ষীর মধ্যে গোপন প্রণয় রয়েছে। বিচারে লক্ষীর প্রাণদন্ড হয়। চতুলের খাদন লস্কর লক্ষীকে পলায়নে সাহায্য করলে তার প্রাণদন্ড হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্বতের খাসিয়া সর্দারগণ নিজপাট বর্জন করে। এভাবে তিন বছর চলার পর স্থল ও পর্বতের খাসিয়া সর্দারগণ গোপন বৈঠকে লক্ষীকে রাজা করার সিদ্ধান্ত নেন। কেন্দ্রী বিলে স্থল-পর্বতের নৌকা দৌঁড় হয়। রাজা বিজয় সিংহকে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। কেন্দ্রী বিলে তার সমাধী এখনও বর্তমান। বিজয় সিংহের মৃত্যুর পর রাজা হন লক্ষী সিংহ। তিনি তার প্রাণদাতা খাধন লস্করের পুত্র চতুলের সোনাধনকে নিজপাটে নিয়ে আসেন এবং পুত্রবৎ লালন করেন। ১৭৯০ সাল পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন। লক্ষী সিংহের পর বিজয় সিংহের ভাগ্না রামসিংহ ক্ষমতায় আরোহন করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ রাজা। ১৭৭৮ সালে তিনি ঢুপীর মাঠে রামেশ্বর শিব প্রতিষ্ঠা করেন। ঢুপীর মাঠের পাদদেশে রামসিংহের খননকৃত পুকুর একটি পান্থশালা এখনও বর্তমান। তিনি সুদীর্ঘ ৪২ বছর রাজস্ব করেন। ১৮৩২ সালের নভেম্বর মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রামসিংহের মৃত্যুর পর রাজেন্দ্র সিংহ বা ইন্দ্র সিংহ জৈন্তার সিংহাসনে আরোহন করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ক্ষমতা লাভ করেন। তিনিই জৈন্তার শেষ স্বাধীন রাজা। তার রাজত্বকাল ছিল মাত্র তিন বছর। কৌশলে বৃটিশ সরকার রাজাকে গ্রেফতার করে সিলেট দেওয়ান মুরারী চাঁদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। বৃটিশ সরকারের হেরী কৌশলে যখন রাজাকে বন্দী করে সিলেট নিয়ে যাবার পথে লক্ষ লক্ষ জৈন্তিয়াবাসী রাজাকে বলেছিলেন, ‘হে রাজন, হুকুম করুন আমরা শেষ রক্ত দিয়েও আপনাকে মুক্ত করব।’ রাজা জৈন্তিয়াবাসীকে প্রচন্ড ভালবাসতেন যার কারণে রক্তক্ষয় না হওয়ার জন্য নিজে পরাজয় বরণ করেন। ১৮৩৫ সালে রাজা ঐ বাড়ীতেই বন্দিশালা মৃতুবরণ করেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জৈন্তিয়া রাজবাড়ী সামনে রাখা বিশাল পাথরের উপর দাঁড়িয়ে নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন। আজও প্রায়ই রাজনৈতিক দল এখানে দাঁড়িয়ে জনসভা করে থাকে। এছাড়াও এখানে রয়েছে বেশ কয়েক বছর আগের জৈন্তিয়া রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন নরবলির স্থান, চন্ডির থাল, বিরাট বিরাট পাথরের তৈরী কেদার, ঢুপীর মট, সারীঘাট পান্তশাল-প্রত্নতত্ত্ব।
জনসংখ্যার উপাত্ত
জনসংখ্যা ১২১৪৫৮; পুরুষ ৬৩২৫৪, মহিলা ৫৮২০৪। মুসলিম ১০৯১২৩, হিন্দু ১২০৬৬, বৌদ্ধ ৯২, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ১৬০। এ উপজেলায় খাসিয়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
শিক্ষা
সাক্ষরতার হার ৪২%
অর্থনীতি
এখানে রয়েছে শ্রীপুর পাথর কোয়ারি, লালাখাল চা বাগান, তামাবিল বন্দর।
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- মাওলানা আব্দুল্লাহ (শেখ সাহেব) হরিপুরি।।
- জনাব ইমরান আহমদ,বর্তমান মন্ত্রী, প্রবাসীও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ।
- জনাব মরহুম মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ।
- মরহুম এ কে এম ইয়াকুব আলী চেয়ারম্যান।
- আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান।
- আলহাজ্ব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান) ও সভাপতি জৈন্তা ১৭পরগনা
- এম এ মতিন সাবেক চেয়ারম্যান ৫নং ফতেপুর(হরিপুর)
- জনাব মোহিবুল হোসাইন সচিব ( উমনপুর চিকনা গুল
- মরহুম মুখলিসুর রহমান দৌলা (সাবেক চেয়ারম্যান 1নংনিজপাট ইউনিয়ন পরিষদ)
- কামাল আহমদ(বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জৈন্তাপুর উপজেলা শাখা)
- মরহুম সাংবাদিক রশিদ হেলালি। (জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজ, জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী কারিগরি কলেজ ও তৈয়ব আলী কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট,ব্রিগেডিয়ার মজুমদার বিদ্যানিকেতন, আমিনা হেলালী টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, জহুরা উম্মে হেলালী টেকনিক্যাল কলেজ ও কানাইঘাটে হারিস চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।)
বিবিধ

আরও দেখুন
- জৈন্তানিউজ ২৪ ডটকম;
- সিলেট জেলা;
- সিলেট বিভাগ;
- বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ।
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে জৈন্তাপুর উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই, ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)