বড়লেখা উপজেলা
বড়লেখা উপজেলা বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে বড়লেখাকে একটি থানা হিসেবে ঘোষণা করা হয়, পরবর্তিতে তা উপজেলা হিসেবে পরিগণিত হয়।[2]
বড়লেখা | |
---|---|
উপজেলা | |
বড়লেখা | |
ডাকনাম: বড়লেখা | |
বড়লেখা বড়লেখা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪২′৩০″ উত্তর ৯২°১২′০″ পূর্ব | |
দেশ | |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | মৌলভীবাজার জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৪৪৮.৮৭ কিমি২ (১৭৩.৩১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৬৭,৭৪৩ |
• জনঘনত্ব | ৬০০/কিমি২ (১৫০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | % |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩২৫০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৬০ ৫৮ ১৪ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
উপজেলার আয়তন ৫০১.৬৫ বর্গ কিলোমিটার, এবং ভারতের সাথে এর আন্তর্জাতিক সীমানা ২০ কিলোমিটার। বড়লেখা, সিলেট বিভাগের অন্তর্গত মৌলভীবাজার জ়েলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজ়েলা। এই উপজেলা, সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উপজেলার উত্তরে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার; দক্ষিণে কুলাউড়া; পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য।[2]
প্রশাসনিক এলাকা
উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন, ১৫৪ মৌজা এবং ৩২০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। তন্মধ্যে উপজেলা সদর চারটি মৌজা নিয়ে গঠিত এবং উপজেলা সদরের আয়তন ২.৬২ বর্গ কিলোমিটার। বড়লেখা উপজেলা ১২টি ইউনিয়নে বিভক্ত। নিচে ইউনিয়নওয়ারি উপাত্ত দেয়া হলো[3] (জনসংখ্যার উপাত্ত ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী):
- বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ১৪ বর্গমাইল; অন্তর্গত গ্রাম: ২২টি; জনসংখ্যা: ১৫,২৭০ জন (পুরুষ ৭,৬২৩ জন ও নারী ৭,৬৪৭ জন)।
- দাসের বাজার ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ১১ বর্গমাইল; অন্তর্গত গ্রাম: ৩১টি; জনসংখ্যা: ১৫,০০৩ জন (পুরুষ ৭,৪৪১ জন ও নারী ৭,৫৬২ জন)।
- নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ১০ বর্গমাইল; অন্তর্গত গ্রাম: ১৪টি; জনসংখ্যা: ১৫,৬৪৫ জন (পুরুষ ৮,০৩৮ জন ও নারী ৭,৬০৭ জন)।
- উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ৬৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ৩২টি; জনসংখ্যা: ১৫,৬১৪ জন (পুরুষ ৭,৭৬০ জন ও নারী ৭,৮৫৪ জন)।
- দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ৪৪ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ৩২টি; জনসংখ্যা: ১৮,৮৮১ জন (পুরুষ ৯,৭৫৩ জন ও নারী ৯,১২৮ জন)।
- বড়লেখা ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ২৭ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ৩৮টি; জনসংখ্যা: ২৮,৫৯৫ জন (পুরুষ ১৪,৩৭৪ জন ও নারী ১৪,২২১ জন)।
- তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ৪৭.২৫৭ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ২৬টি; জনসংখ্যা: ১৪,৮১৮ জন (পুরুষ ৭,২৫৬ জন ও নারী ৭,৫৬২ জন)।
- দক্ষিণভাগ (উত্তর) কাটাল তলী ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ১৬ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ১৭টি; জনসংখ্যা: ১০,৭২৩ জন (পুরুষ ৫,২৩১ জন ও নারী ৫,৪৯২ জন)।
- সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ৪৪ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ২৫টি; জনসংখ্যা: ১৬,২৩০ জন (পুরুষ ৭,৮৩৯ জন ও নারী ৮,৩৯১ জন)।
- দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ৫৭ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ২৮টি; জনসংখ্যা: ২৩,২০৪ জন (পুরুষ ১১,৫০০ জন ও নারী ১১,৭০৪ জন)।
- পশ্চিম জুরী ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ৪৪.৮০ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ২১টি; জনসংখ্যা: ১৪,৪৪৪ জন (পুরুষ ৭,৪৩৭ জন ও নারী ৭,০০৭ জন)।
- পূর্ব জুরী ইউনিয়ন পরিষদ: আয়তন: ২৭ বর্গকিলোমিটার; অন্তর্গত গ্রাম: ১৮টি; জনসংখ্যা: ১৮,০৩৪ জন (পুরুষ ৯,১১১ জন ও নারী ৮,৯২৩ জন)।
ইতিহাস
ইংরেজ আমল
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গভর্নর লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন বঙ্গদেশকে দুভাগে ভাগ করে পূর্ববঙ্গকে আসামের সাথে রেখে দিলেন। এরপর স্বদেশী আন্দোলন হয়েছে, সপ্তম এডওয়ার্ড মারা গেলেন, পঞ্চম জর্জ সম্রাট হলেন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম জর্জ দিল্লী এলে দিল্লীর দরবারে বঙ্গবিভাজন রোহিত হলো। কিন্তু তৎকালীন শ্রীহট্ট রইলো আসামের সঙ্গে। শ্রীহট্টে তখন ছিল ৪ মহকুমা: সদর শ্রীহট্ট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, করিমগঞ্জ। সদর মহকুমার আয়তন বেশি হওয়ায় পরবর্তিতে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে এটিকে ভেঙে দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমার সৃষ্টি করা হয়। করিমগঞ্জে ছিল পাঁচটি থানা: করিমগঞ্জ, জলঢুপ, পাথারকান্দি, রাতাবাড়ি ও বদরপুর। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মে তারিখে সরকারি নোটিফিকেশন নম্বর ৫৪৩৩-এর মধ্য দিয়ে জলঢুপ থানাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আর তখনই উদ্ভব হয় বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা থানার।[3]
জনসংখ্যার উপাত্ত
১১ মার্চ ১৯৯১ | ২২ জানুয়ারি ২০০১ | ১৫ মার্চ ২০১১ |
---|---|---|
২,০০,৬৭৪ জন[2][4] | ২,৩৩,৭২০ জন[4] | ২,৫৭,৬২০ জন[4] |
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত ৩০ বছরের আনুপাতিক জনপরিসংখ্যান |
উপজেলার সর্বমোট জনসংখ্যা ২,০০,৬৭৪ জন (২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তা হয় ২,৫৭,৬২০ জন)। তন্মধ্যে ২০০১-এ পুরুষ রয়েছেন ৪৯.৮৬% ও নারী রয়েছেন ৫০.১৪%। এই জনসংখ্যার সিংহভাগ মুসলমান (প্রায় ৭৫.৪৭%), বাকিরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী: হিন্দু ২৩.৩১%, খ্রিস্টান ০.৮০%, অন্যান্য ০.৪২%। এই জনসংখ্যার সিংহভাগই কৃষিজীবি।[2]
উপজাতি
মণিপুরি
মণিপুরি বা মৈতেই সম্প্রদায় মঙ্গোলীয় মহাজাতি গোষ্ঠীয় তিব্বত-ব্রহ্ম শাখার অন্তর্গত কুকিচিন পরিবারভুক্ত একটি জাতি। মনিপুরিরা নিজেদের মধ্যে পরিচয় আদান-প্রদানে নিজেদেরকে মৈতেই বলে পরিচয় দেয়। মনিপুরি সম্প্রদায়ে তিনটি গোত্র রয়েছে: মৈতেই, বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতেই পাঙ্গাল। এদের মধ্যে বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতেই হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী ও গৌড়িয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত। মৈতেই পাঙ্গালরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। তিন গোত্রে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মণিপুরিদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যা মণিপুরি ভাষা বলেই খ্যাত এবং এই ভাষা প্রায় ৩৪০০ বছরের পুরোন। মণিপুরি ভাষায় লেখার জন্য রয়েছে নিজস্ব বর্ণলিপি। ভাষাতাত্ত্বিকদের অভিমত এই বর্ণলিপির উদ্ভব হয়েছে ব্রাহ্মী লিপি থেকে। এই লিপির প্রতিটা বর্ণের নামকরণ করা হয়েছে মানবদেহের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নামানুসারে: যেমন, বাংলা 'ক' বর্ণের মণিপুরি প্রতিবর্ণ 'কোক' (অর্থ মাথা), বাংলা ম বর্ণের মণিপুরি প্রতিবর্ণ 'মীং' (চোখ) ইত্যাদি।[3]
খাসিয়া
বড়লেখা উপজেলার মাধব পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আরেকটি আদিবাসী সম্প্রদায় হলো খাসিয়া। খাসিয়ারাও মঙ্গোলীয় মহাজাতি গোষ্ঠীর। খাসিয়ারা "পুঞ্জি"ভিত্তিক বাসস্থান গড়ে তোলে। সাধারণত ১০-১৫টি বা ততোধিক পরিবার মিলে একেকটি পুঞ্জি বা গ্রাম গঠিত হয়। প্রত্যেক খাসিয়া পুঞ্জি একেকজন নির্বাহী প্রধান কর্তৃক পরিচালিত হয়, খাসিয়া সম্প্রদায়ে এরকম নির্বাহীকে মন্ত্রী বলা হয়।[3]
ভাষা
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলাই এ অঞ্চলের ভাষা হলেও মূলত বড়লেখা উপজেলার ভাষা হলো সিলেটি ভাষা বা সিলেটি উপভাষা। তবে কেউ কেউ সিলেটি ভাষার মধ্যেও এতদ অঞ্চলের ভাষাকে বড়লেখী ভাষা বলে স্বতন্ত্র পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশের সাধারণ ভাষার মতোও এই ভাষায় ধর্মীয় প্রভাব লক্ষ্যণীয়, যেমন: মুসলমানরা 'পানি' বললেও হিন্দুরা বলেন 'জল', মুসলমানরা 'নাস্তা' বললেও হিন্দুরা বলেন 'জলখাবার', মুসলমানরা 'গোসল'-কে 'নাওয়া' বললেও হিন্দুরা বলেন 'নিহান' ইত্যাদি।[3] যদিও আধুনিক প্রজন্মে এর অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
নিচে বাংলা ভাষার সাথে সিলেটি ও অন্যান্য উপজাতীয় ভাষার পারস্পরিক তুলনা উদ্ধৃত হলো[3]:
বাংলা ভাষা | সিলেটি ভাষা/বড়লেখী ভাষা | মণিপুরী ভাষা | খাসিয়া ভাষা | সাঁওতালদের ভাষা |
---|---|---|---|---|
আমার বাড়ি বড়লেখা থানায় | আমার বাড়ি বড়্লেখা থানাত্ | ঐগী ইুযুম বড়লেখা থানাদনি | কা দুনং জঙ্গা বড়লেখা | ইয়াঁ ওরা বড়লেখা থানারে |
আমি বাংলাদেশের নাগরিক | আমি বাংলাদেশোর নাগরিক | ঐহাক বাংলাদেশগী লৈপাকমী অমণি | ঙাসং আপ বাংলাদেশ | ইনদো বাংলাদিশ মরেন হড় |
বাংলা আমার জন্মভূমি | বাংলা অইলো গিয়া আমার যন্মভূমি | ঐহাক্কী পোকচফম বাংলাদেশনি | বাংলা ঙামি ঙাহাপ বাংলা | ইয়াঁ বাংলাদিশমরে জন্ম |
এদেশকে আমি খুব ভালোবাসি | ই দেশরে আমি খুব ভালা 'পাই | লৈপাক অসিবু ঐহাক্ন য়াম্ন ন্মুংশীজৈ | ঙা ইচ ইয়াকা বংলাদেশ | ইনদো নয়া দিশমকে খুবই বেশাকানা |
শিক্ষা
বড়লেখা উপজেলার অধীনে রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরী শিক্ষাকেন্দ্র। বড়লেখায় অবস্থিত 'নারী শিক্ষা একাডেমী' এতদ অঞ্চলের নারী শিক্ষার অন্যতম পথিকৃৎ। এছাড়া বড়লেখা ডিগ্রী কলেজ এতদ অঞ্চলের ডিগ্রী শিক্ষার্থীদের অন্যতম বিদ্যাপিঠ।
বড়লেখা উপজেলার শিক্ষালয়ের উপাত্ত[3](উপাত্তসমূহ ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী):
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১০৮টি
- বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৪৮টি
- উচ্চ বিদ্যালয়: ১৭টি
- নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ৩টি
- কলেজ: ৩টি
- মাদ্রাসা (সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত): ১৪টি
শিল্প
কুটির শিল্প
মৃৎশিল্প
হাওড় সংলগ্ন অঞ্চলের বন্যার পলিবিধৌত এঁটেল মাটি এতদ অঞ্চলের মৃৎশিল্পকে করেছে গতিশীল। তাছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অধিকাংশ সময় নিজেদের আচার-অনুষ্ঠানে মাটির বাসন আঁকড়ে রাখেন বলে মৃৎশিল্প এ অঞ্চলে মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।
তাঁত শিল্প
মণিপুরী তাঁত এতদ অঞ্চলের তাঁত শিল্পের মূল যোগানদাতা।[2]
আগর-আতর শিল্প
উপজেলার প্রায় সর্বত্র আগর গাছ থেকে সুগন্ধী আতর উৎপাদনের প্লান্ট থাকলেও ব্রিটিশ আমল থেকেই মূলত এই শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা ও লালন করে আসছে উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এ অঞ্চলের আগর-আতর শিল্প মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয় এবং দেশ তা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। সরকারি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাই এতদ অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন কর্মশালা এবং আগর বৃক্ষায়ন (আগর বাগান) কর্মসূচীও।
পাটি শিল্প
বাঁশ-বেত শিল্প
শীতল পাটি শিল্প সিলেট অঞ্চলের অন্যান্য স্থানের মতো এই উপজেলায়ও অন্যতম একটি কুটির শিল্প।[2] কেউ কেউ একে পেশা হিসেবেও নিয়ে থাকেন এবং উৎপাদিত পাটি বিভিন্ন হাট-বাজারে ও শহরে বিক্রীর জন্য প্রেরণ করে থাকেন। বিশেষ করে বড়লেখা তালিমপুর ইউনিয়নের গলগজা ও হরিণবদি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক এ পেশার সাথে বেশি জড়িত।
ক্ষুদ্রশিল্প
লৌহশিল্প
চা শিল্প
উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের ঢালু জমিতে চা বাগান রয়েছে, যা বাংলাদেশের চা শিল্পে অবদান রাখছে। উপজেলায় চা বাগান রয়েছে ১৮টি (২০০৮), যার সম্মিলিত আয়তন ৬৪.৩৯ বর্গ কিলোমিটার। প্রায় প্রত্যেক বাগানেই চা উৎপাদন কারখানা রয়েছে।
খনিজ সম্পদ
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে কাঁঠালতলীর বিওসি তেল কূপ ড্রিলিং-এর সময় অতিরিক্ত চাপের কারণে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেশি মাত্রায় তেল বেরিয়ে আসতে থাকে। ফলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিমেন্ট প্লাগ দিয়ে কূপটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এছাড়া কুলাউড়া সংলগ্ন জুরির হারাগাছা পাহাড়ে ইউরেনিয়াম খনির সন্ধান পাওয়া যায়, এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে একদল বিশেষজ্ঞ এই মজুত সম্বন্ধে নিশ্চিত করেন।[2]
অর্থনীতি
এই অঞ্চলের মানুষ মূলত কৃষিজীবি। এছাড়া রয়েছেন ব্যবসায়ী ও সীমিত পর্যায়ে চাকুরিজীবি। তবে স্থানীয়রা অধিকাংশই স্বাধীন পেশাজীবি। এই উপজেলার প্রধান রপ্তানীদ্রবের মধ্যে রয়েছে চা, আগর-আতর, আগরবাতি ইত্যাদি।[2] এছাড়া হাওরাঞ্চলের লোকজন মৌসুমে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও মাছ বিক্রী করে থাকেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স হচ্ছে এতদ অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত। তাছাড়া পূর্বাঞ্চলের মানুষের প্রধান অর্থনীতির উৎস হচ্ছে পাহাড় থেকে পাথর সংরক্ষণও বিক্রয়, পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে মাছ ধরে, নদী থেকে বালু সংগ্রহ ও বিক্রয় করে, মধ্য নিম্নাঞ্চলের মানুষও বাজার সংলগ্ন জনগোষ্ঠি কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।
দর্শনীয় স্থান
বড়লেখা উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও মাধব মন্দির
- হাকালুকি হাওর;
- খাজা মসজিদ - দাসের বাজার ইউনিয়ন;[2]
- শাহবাজপুর চা-বাগান;
- পরিকুণ্ড জলপ্রপাত;
- রামাকুন্ড জলপ্রপাত;
- রজনীকুন্ড জলপ্রপাত।
কৃতি ব্যক্তিত্ব
- হেলাল উদ্দীন চৌধুরী বিচারপতি
- সিকন্দর আলী, বিচারপতি
- বদরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি
- ড. মোহাম্মদ আতাউল করিম, শিক্ষক ও বিজ্ঞানী
- নাইয়ার সুলতানা
- কালী প্রসন্ন দাস, শিক্ষক, লেখক ও গবেষক
- দ্বিজেন শর্মা, শিক্ষক, লেখক ও প্রকৃতিবিদ
- সিরাজুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ
- এবাদুর রহমান চৌধুরী, রাজনীতিবিদ
- শাহাব উদ্দিন, রাজনীতিবিদ
- হাসিবুল হোসেন শান্ত, ক্রিকেট খেলোয়াড়
- জুম্মন লুসাই, হকি খেলোয়াড়
- শাহাব উদ্দীন রাজনীতিবিদ
- আসাদুল হাবিব ইমরুজ
গণমাধ্যমে উপস্থাপন
বড়লেখা উপজেলা এককভাবে বিভিন্ন সময়, আর নানা শিল্পকেন্দ্রীক উপস্থাপনায় অসংখ্যবার বড়লেখা উপজেলা গণমাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ টেলিভিশনে, এ. মাসুদ চৌধুরী পিটুর পরিচালনায় প্রচারিত হয় মাধবকুণ্ডের কলধ্বনি নামক ৩০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র।[3] এছাড়া দেশের দর্শনীয় স্থান ও জলপ্রপাতের আলোচনায় বারংবার উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত উঠে আসে।
বিবিধ
আরও দেখুন
- মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত;
- হাকালুকি হাওর;
- আগর-আতর শিল্প;
- মৌলভীবাজার জেলা;
- সিলেট বিভাগ;
- বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ।
তথ্যসূত্র
- "এক নজরে বড়লেখা"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫।
- বড়লেখা উপজেলা, মাহফুজুর রহমান,গ্রাম সালদিগা ,বাংলাপিডিয়া, সিডি সংস্করণ 2.0.1; প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৮। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
- শ্রীপ্রমথ রঞ্জন চক্রবর্তী (২০০০)। "ইতিহাস ও ঐতিহ্য: ইতিহাসের আলোকে বড়লেখা"। কালী প্রসন্ন দাস, মোস্তফা সেলিম। বড়লেখা: অতীত ও বর্তমান (প্রিন্ট) (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০০ খ্রিস্টাব্দ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড। পৃষ্ঠা ৪৮৪। আইএসবিএন 984-31-0841-8।
- Bangladesh ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে (Statistics of Population), GeoHive.com। পরিদর্শনের তারিখ: ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
বহিঃসংযোগ
- বাংলাপিডিয়ায় বড়লেখা উপজেলা
- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত ২০০১ সালের আদমশুমারী প্রতিবেদন
- বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে বড়লেখার তুলনামূলক অবস্থা, GeoHive.com
- বাংলাপিডিয়ার ইংরেজি নিবন্ধ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি