দ্বিজেন শর্মা

দ্বিজেন শর্মা (জন্ম: ২৯ মে ১৯২৯ - মৃত্যু: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭) বাংলাদেশী প্রকৃতিবিদ, জীববিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক। তিনি ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত নটর ডেম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন।[1] এছাড়া নটর ডেম কলেজের প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠনেও তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল।

দ্বিজেন শর্মা
২০১১ সালে দ্বিজেন শর্মা
জন্ম(১৯২৯-০৫-২৯)২৯ মে ১৯২৯
কাঁঠালতলী, শিমুলিয়া, বড়লেখা, মৌলভীবাজার, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭(2017-09-15) (বয়স ৮৮)
ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশ
কর্মক্ষেত্রপ্রকৃতি সংরক্ষণ, উদ্ভিদবিদ্যা
প্রতিষ্ঠান
প্রাক্তন ছাত্র
পরিচিতির কারণপ্রকৃতি সংরক্ষণ, বিজ্ঞান লেখক
উল্লেখযোগ্য
পুরস্কার

জন্ম ও শৈশব

দ্বিজেন শর্মা ১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেট বিভাগের [তৎকালীন] বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ভিষক চন্দ্রকাণ্ড শর্মা এবং মাতার নাম মগ্নময়ী দেবী। বাবা ভিষক বা গ্রাম্যভাষায় কবিরাজ ছিলেন, আর মা ছিলেন সমাজসেবী। শৈশবে পাথারিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেক, আর সেখান থেকেই হয়তো গাছপালার প্রতি তার অসীম ভালোবাসা জন্মে। "কবিরাজ বাড়ি" বলে বাড়ির বাগানেই অজস্র গাছগাছালি ছিল, তার মাঝে ছিল স্বর্ণচাঁপা, কনকচাঁপা, মধুমালতীসহ নানা রঙবেরঙের ফুল। বসন্ত শেষের বৃষ্টির পর সারা বাড়ি যখন ফুলে ফুলে ভরে উঠতো, দ্বিজেন শর্মা তখন সকালে পূজার ফুল তুলতেন। সেসময়ই মনের অজান্তে দ্বিজেন শর্মাও প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন।

শিক্ষাজীবন

শৈশবেই গ্রামের পাঠশালায় তার হাতেখড়ি হয়। তারপর করিমগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে লেখাপড়া করেছেন। যদিও মায়ের ইচ্ছে ছিল তিনি বড় হয়ে ডাক্তার হবেন, কিন্তু প্রকৃতিপ্রেম তাকে উদ্ভিদবিদ হতে আকৃষ্ট করে। আর তাই কলকাতা সিটি কলেজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (১৯৫৮) ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

১৯৫৮ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন দ্বিজেন শর্মা। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন। তারপর শিক্ষকতা শুরু করেন ঢাকাস্থ নটর ডেম কলেজে। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত প্রকাশনা সংস্থা প্রগতি প্রকাশনের অনুবাদকের চাকরি নিয়ে চলে যান মস্কো। তিনি চল্লিশটিরও বেশি বই অনুবাদ করেছেন। ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে অনুবাদ বন্ধ করার নির্দেশ পাওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সব সম্পর্ক চুকে গিয়েছিল। কিন্তু ১৭ বছরের প্রবাস জীবনকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি তিনি।

বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে পরোক্ষ সংযোগের কারণে কিছুকাল আত্মগোপন, এমনকি কারাবাসেরও অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার, যাকে তিনি দুর্লভ সৌভাগ্য মনে করেন। ১৯৭০'র জলোচ্ছ্বাসে দুর্গত মানুষের সেবাকার্যে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন বাংলাদেশে।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৬০ সালে বরিশালে দেবী চক্রবতীর সাথে বিবাহ হয়। ড: দেবী শর্মা ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজের দর্শনের সাবেক অধ্যাপিকা। এক ছেলে ও এক মেয়ে তাদের সংসারে। ছেলে ডা: সুমিত শর্মা রুশ বাংলাদেশে বিয়ে করে সংসার সাজিয়েছেন মস্কোতে আর একমাত্র মেয়ে শ্রেয়সী শর্মা বাস করেন বাংলাদেশেই।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত। আড্ডা, বিশেষ করে তরুণদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করেন।[2]

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ[3]

ক্রমিকবইয়ের নামপ্রকাশকালপ্রকাশনা সংস্থা
শ্যামলী নিসর্গ১৯৮০, ১৯৯৭, ২০১৫বাংলা একাডেমি
সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণী বিন্যাস১৯৮০বাংলা একাডেমি
ফুলগুলি যেন কথা১৯৮৮, ২০০৪বাংলা একাডেমি
গাছের কথা ফুলের কথা১৯৯৯শিশু একাডেমি
এমি নামের দুরন্ত মেয়েটি১৯৯৫, ১৯৯৯শিশু একাডেমি
নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা২০০০ইউপিএল
সমাজতন্ত্রে বসবাস১৯৯৯ইউপিএল
জীবনের শেষ নেই১৯৮০, ২০০০জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন
বিজ্ঞান ও শিক্ষা: দায়বদ্ধতার নিরিখ২০০৩জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন
১০ডারউইন ও প্রজাতির উত্‍পত্তি১৯৯৭সাহিত্য প্রকাশ
১১বিগল যাত্রীর ভ্রমণ কথা১৯৯১সাহিত্য প্রকাশ
১২গহন কোন বনের ধারে১৯৯৪সাহিত্য প্রকাশ
১৩হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে ডালটন হুকার২০০৪সাহিত্য প্রকাশ
১৪বাংলার বৃক্ষ২০০১সাহিত্য প্রকাশ
১৫সতীর্থ বলয়ে ডারইউন১৯৭৪, ১৯৮৪, ১৯৯৯মুক্তধারা
১৬মম দুঃখের সাধন১৯৯৪সাহানা
১৭আমার একাত্তর ও অন্যান্যফেব্রুয়ারি ২০০৮অনুপম প্রকাশনী

পুরস্কার ও সম্মাননা

পুরস্কারপ্রদানকারী সংস্থাসাল
ড. কুদরত-এ খুদা স্বর্ণপদকচট্টগ্রাম বিজ্ঞান সমিতি১৯৮৬
বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারবাংলা একাডেমী১৯৮৭
এম নুরুল কাদের শিশু-সাহিত্য পুরস্কার-২০০০
প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক-২০১১প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই২০১১
একুশে পদক২০১৫

দ্বিজেন শর্মা তার অবদানের কারণে বিভিন্ন সময় সংবর্ধিত হয়েছেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে। পেয়েছেন বহু পুরস্কার। তার প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ড. কুদরত-এ খুদা স্বর্ণপদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে এম নুরুল কাদের শিশু-সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০১ সালে পাওয়া চ্যানেল আই প্রবর্তিত প্রকৃত সংরক্ষণ পদক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাপিডিয়া'র জীববিদ্যা বিভাগের অনুবাদক এবং সম্পাদক (২০০১- ২০০৩) হিসেবে দায়িত্ব পান, এবং তিনি বাংলা একাডেমীর একজন সম্মানিত ফেলো।[3]


মৃত্যু

তিনি ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[4] তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর৷

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. সুবর্ন স্মারক (ম্যাগাজিন)। ১১ নভেম্বর ১৯৯৯। পৃষ্ঠা ১৩৩।
  2. সাক্ষাৎকার: যা নিয়ে আছি:মর্ত্যে স্বর্গের আলো, সাক্ষাৎকার গ্রহণে: মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, পৃষ্ঠা ২, ১০ ডিসেম্বর ২০১০।
  3. দ্বিজেন শর্মা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে (জীবনী), Gunijon.org।
  4. "দ্বিজেন শর্মা আর নেই"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.