বানিয়াচং উপজেলা

বানিয়াচং (সিলেটি: ꠛꠣꠘꠤꠀꠌꠋ) উপজেলা বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।

বানিয়াচং ꠛꠣꠘꠤꠀꠌꠋ
উপজেলা
বানিয়াচং ꠛꠣꠘꠤꠀꠌꠋ
বানিয়াচং ꠛꠣꠘꠤꠀꠌꠋ
বাংলাদেশে বানিয়াচং উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩২′২৪″ উত্তর ৯১°২০′১২″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাহবিগঞ্জ জেলা
আয়তন
  মোট৪৮২.৪৬ কিমি (১৮৬.২৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৩,৩৪,৬০৫
  জনঘনত্ব৬৯০/কিমি (১৮০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৩৮%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩৩৫০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৩৬ ১১
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান ও আয়তন

উপজেলার আয়তন ৪৮২.৪৬ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে রয়েছে শাল্লা উপজেলা এবং দিরাই উপজেলা, দক্ষিণে হবিগঞ্জ সদর উপজেলালাখাই উপজেলা, পূর্বে নবীগঞ্জ উপজেলাহবিগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে রয়েছে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা, মিটামইন উপজেলা এবং অষ্টগ্রাম উপজেলা

ইতিহাস

বানিয়াচঙ্গ গ্রাম ব্রিটিশ আমলে সিলেট জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠিত হলে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বানিয়াচঙ্গ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ নিয়া ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ আগস্ট ২৮৬৭ জি. জে. বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক (East Pakistan District Gazettier, Sylhet, 1970) বানিয়াচঙ্গ থানা গঠন করা হয়। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ তারিখে বানিয়াচঙ্গ থানাকে দেশের অন্যান্য থানার মতো প্রথমে মান-উন্নীত থানা এবং পরে উপজেলায় পরিণত করা হয়। তদানীন্তন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও নৌবাহিনীর তদানীন্তন প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম. এ. খান হেলিকপ্টার যোগে বানিয়াচঙ্গ এসে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বানিয়াচঙ্গ থানার মান-উন্নয়নের সরকারি ঘোষণা প্রকাশ করেন এবং সরকারী আদেশটি বানিয়াচঙ্গের প্রথম টি.এন.ও. বাবু বিকাশ চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন।

ব্রিটিশ আমলে বানিয়াচঙ্গে থানা গঠিত হলে থানার সদর দপ্তর বানিয়াচঙ্গ গ্রামের পূর্বদিকে অবস্থিত নন্দীপাড়ার পূর্ব প্রান্তে স্থাপন করা হয়। তখন এবং পাকিস্তান আমলে (জেনারেল আইয়ুব খানের শাসন পূর্ববর্তী সময়ে) থানার প্রাঙ্গন সকল সরকারি অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল ছিল। সেখানে বিভিন্ন দিবস উদযাপন করা হতো। ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচী এবং ঐ দিবস উপলক্ষে রাতের জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থানা প্রাঙ্গনেই অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বানিয়াচঙ্গ থানাকে ’ভিলেজ এইড’ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভিলেজ এইড প্রোগ্রামের সদর দপ্তর বড়বাজার সংলগ্ন ৩ নং কাঁচারী বাড়ীতে স্থাপন করা হয়। এ প্রোগ্রামের আয়ু বছর তিনেকেরও কম ছিল। তবে প্রোগ্রাম চলাকালীন ৩ নং কাঁচারী বাড়ী তথা প্রোগ্রামের সদর দপ্তর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ভিলেজ এইড প্রোগ্রাম পরিত্যক্ত হলে থানায় সার্কেল অফিসারের পদ সৃষ্টি করা হয়। বানিয়াচঙ্গে সার্কেল অফিসারের দপ্তর প্রাথমিক ভাবে ডাক বাংলায় স্থাপন করা হয়। পরে কুমিল্লা সমবায় মডেলের বাস্তবায়নের কর্মসূচী হিসাবে থানা সদর গুলোতে থানা ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স বা টি.টি.ডি.সি. স্থাপন করার সময় সার্কেল অফিসারে দপ্তর দত্তপাড়ায় স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে থানার পরিবর্তে টি.টি.ডি.সি. সকল সরকারি কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। পরে এই টি.টি.ডি.সি. উপজেলা সদরে পরিণত হয়।

নামকরণ

বানিয়াচং এর নামকরণ সম্পর্কে বহু মতভেদ রয়েছে। তবে অনেকের মতে বানিয়াচং এর পুটিয়াবিল নামে একটি প্রকান্ড বিল ছিল। এই বিলে নানা জাতীয় পাখি বসবাস করত। বানিয়া নামে এক শিকারী এই বিলে একটি চাঙ নির্মাণ করে পাখি শিকার করত। কালক্রমে এই বিলটি প্রাকৃতিক কারণে ভরাট হয়ে গেলে বহু উচ্চ বৃক্ষলতাদিপূর্ণ ভূমিতে পরিবর্তিত হয়। এ ‘বানিয়া’ ও ‘চাঙ’ শব্দ থেকে বানিয়াচং নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বানিয়াচং

বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে হবিগঞ্জের নেতৃবৃন্দ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে এডভোকেট মোস্তফা আলী এমএনএ, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী এমএনএ, লেঃ কর্ণেল (অব.) এম.এ. রব এমএনএ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপিএ, মৌলানা আসাদ আলী এমপিএ, ডা. আবুল হাসিম এমপিএ, শ্রী গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন এমপিএ, আব্দুল আজিজ চৌধুরী এমপিএ, এডভোকেট আফছর আহমদ, এডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই, এডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত, এডভোকেট মো. জনাব আলী, শ্রী কৃপেন্দ্র বর্মণ, মো. ইয়াকুত চৌধুরী প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। এই পরিষদের সমন্বয়ক হিসাবে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

ভৌগোলিক উপাত্ত

ভূপ্রকৃতি

মৃত্তিকা

নদ-নদী

সাংষ্কৃতিক বৈশিষ্ট্য

ভাষা

এই উপজেলার সাধারণ ভাষা বাংলা। তবে এই উপজেলায় বাংলা ভাষার দুটি কথ্য রূপ রয়েছে। একটি হল চওড়া ভাষা। যারা সাধারণত হাওড় এলাকায় বসবাস করেন এটি তাদের ভাষা। এটিকে সাধারণ ভাষা বলা যায়; যেমন- কেমন আছেন।

আরেকটি হল মাওড়া ভাষা। যারা উপজেলার পাশাপাশি অবস্থান করে তাদের ভাষা। যেমন- খিতা খবর, ভালানি।

উৎসব

এই উপজেলা একটি কৃষি নির্ভর উপজেলা হওয়ায় এদের উৎসবও হয় কৃষি নির্ভর; যেমন - নবান্ন, পহেলা বৈশাখ, রথ মেলা ইত্যাদি।

খেলাধুলা

বানিয়াচং উপজেলা এশিয়া মহাদেশের সবচয়ে বড় গ্রাম হওয়ায় এই উপজেলায় গ্রামীণ খেলার প্রচলন বেশি রয়েছে; যেমন- সাতছাড়া, লাটিম, হা-ডু-ডু, ফুটবল, ইসিং বিসিং, মারবেল, ছোয়াছোয়ি, ক্রিকেট, লাঠি খেলা, রাখাল খেলা ইত্যাদি। বানিয়াচং এর প্রাচীন স্পোর্টিং ক্লাবদের মধ্যে এ পর্যন্ত যেসকল স্পোর্টিং ক্লাবের নাম উল্লেখযোগ্য সেগুলি হল: আমবাগান স্পোর্টিং ক্লাব (১৯২৯), নওজোয়ান স্পোর্টিং ক্লাব (১৯৩৪), জুয়েল স্পোর্টিং ক্লাব, গ্রীনগার্ডস স্পোর্টিং ক্লাব, ইলাভেন সোলজার্স (১৯৮৮), সূর্যসেনা ক্রীড়া চক্র (১৯৭৬), প্রগতি ক্রীড়া চক্র (১৯৭৪) প্রভৃতি। এছাড়াও অনেক ক্রীড়া সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এককালে বানিয়াচং ছিল বৃহত্তর সিলেট তথা আসাম ও বঙ্গদেশের খেলাধুলার এক উল্লেখযোগ্য পীঠস্থান। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বি রায় চৌধুরী (ভূপেন্দ্র চৌধুরী, ১৯১৩-১৯৯২), এসকে চৌধুরী (১৯১৫-১৯৭৮) এই গ্রামের সন্তান। উল্লেখ্য বি রায় চৌধুরী ছিলেন ঢাকা একাদশের সেরা খেলোয়াড়, মোহনবাগান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও উপমহাদেশের সেরা লেফট আউট। আগরতলা স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, আসাম প্রদেশ স্পোর্টস এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, গৌহাটি মহারানা স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

প্রশাসনিক এলাকা

থানা প্রতিষ্ঠার তারিখ ১৫ জানুয়ারি ১৯৭০ খ্রিঃ। উপজেলা ঘোষণার তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮২ খ্রিঃ। বানিয়াচং উপজেলায় মোট ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে।

  1. বানিয়াচং উত্তর পূর্ব ইউনিয়ন
  2. বানিয়াচং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়ন
  3. বানিয়াচং দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়ন
  4. বানিয়াচং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়ন
  5. দৌলতপুর ইউনিয়ন
  6. কাগাপাশা ইউনিয়ন
  7. বড়ইউড়ি ইউনিয়ন
  8. খাগাউড়া ইউনিয়ন
  9. পুকড়া ইউনিয়ন
  10. সুবিদপুর ইউনিয়ন
  11. মক্রমপুর ইউনিয়ন
  12. সুজাতপুর ইউনিয়ন
  13. মন্দরী ইউনিয়ন
  14. মুরাদপুর ইউনিয়ন এবং
  15. পৈলারকান্দি ইউনিয়ন।

জনসংখ্যার উপাত্ত

বানিয়াচং উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৩৪,৬০৫ জন, এর মধ্যে পুরুষ ১,৬৮,০১৯ জন এবং মহিলা ১,৬৬,৫৮৬ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৬৯৪ জন।

শিক্ষা

বানিয়াচং'এ ১টি সরকারি কলেজ, ১টি সরকারি বালক ও ১টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।

অর্থনীতি

বানিয়াচং উপজেলা হাওর এলাকা হওয়ায় এখানে ৯০% জমিতে এক ফসল জন্মে। তাই এই উপজেলার ৯০% লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। বাকিদের অধিকাংশই প্রবাসী।

কৃতী ব্যক্তিত্ব

দর্শনীয় স্থান

  1. মহারত্ন জমিদার বাড়ি,
  2. কমলারানীর সাগর দীঘি
  3. রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ,
  4. বিথঙ্গল আখড়া,
  5. দাড়া-গুটি
  6. লক্ষী বাওর জলাবন
  7. বানিয়াচং রাজবাড়ি

সংসদ সদস্য

নামআসনের নামরাজনৈতিক দলের নাম
মোঃ আব্দুল মজিদ খান২৪০নং হবিগঞ্জ-২আওয়ামী লীগ

উপজেলা পরিষদ

নামপদবীরাজনৈতিক দলের নাম
শেখ বশির আহমেদউপজেলা চেয়ারম্যানবিএনপি
তানিয়া খনমমহিলা ভাইস চেয়ারম্যানবিএনপি
ইকবাল বাহার খানভাইস চেয়ারম্যানজামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে বানিয়াচং"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.