সৈয়দ মুর্তাজা আলী

সৈয়দ মুর্তাজা আলী (জন্ম:১ জুলাই১৯০২ - মৃত্যু: ৯ আগস্ট ১৯৮১) একজন বাংলাদেশী লেখক, গবেষক এবং ঐতিহাসিক। যিনি বাংলাদেশের সিলেটের ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তার গবেষণা ও লেখালেখীর জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভুষিত করা হয়।[1]

সৈয়দ মুর্তাজা আলী
জন্ম১ জুলাই ১৯০২ করিমগঞ্জ, সিলেট, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যুআগস্ট ৯, ১৯৮১(1981-08-09) (বয়স ৭৯) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে
পেশালেখক, গবেষক ও ঐতিহাসিক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
ধরনসিলেট বিভাগ বিষয়েগবেষণা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার
আত্মীয়সৈয়দ মুজতবা আলী

জন্ম ও ব্যক্তিজীবন

মুর্তাজা আলীর জন্ম ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই দেশবিভাগ-পূর্ব সিলেটের অন্তর্গত করিমগঞ্জ শহরে। পৈত্রিক নিবাস অবশ্য হবিগঞ্জ জেলার উত্তরসুর গ্রামে। তিনি মৌলভীবাজারের সাব-রেজিস্ট্রার খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলীর তিন পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয়। তার ছোট ভাই ছিলেন বিখ্যাত রম্য সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী[1]

শিক্ষাজীবন

মৌলভীবাজার ও সিলেট গভর্নমেন্ট স্কুলে শিক্ষালাভ করে সুরমা উপত্যকার মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে ম্যাট্রিক (বর্তমান এসএসসি) পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় সেযুগে (১৯২১ খ্রি.)[1] ১৫ টাকার মাসিক বৃত্তি পান। পরীক্ষায় ম্যাথমেটিক্স, এডিশনাল ম্যাথমেটিক্স ও মেকানিক্স-এ লেটারসহ (৮০% নম্বর) স্টারমার্ক পান। উচ্চ মাধ্যমিকে, মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে, বিজ্ঞান বিভাগে পদার্থবিদ্যা, রসায়নগণিতে লেটারসহ স্টারমার্ক পান (১৯২৩ খ্রি.)[1]। ঐতিহ্যবাহী বেকার হোস্টেলে বাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি (পদার্থবিদ্যায় অনার্স) পরীক্ষায় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে[1] দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় হন। তারপর এমএসসি (হিট) ও ল' বা আইনশাস্ত্রে একবছর লেখাপড়া করেন।

কর্মজীবন

শিক্ষাজীবনের মতো মেধার স্বাক্ষর রাখেন তার কর্মজীবনেও। তৎকালীন আইসিএস পরীক্ষায় বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করলেও তাকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। পরে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে আসাম প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঐ বছরই তিনি মৌলভীবাজার মহকুমার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের সমাপ্তি ঘটে।[1] তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে কাজ করেছেন অনেক জায়গায়। তন্মধ্যে ১৯৪০-১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুনামগঞ্জে সাবডিভিশনাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[1] এসময় তিনি সুনামগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কাজ করেছেন শিলংয়ে শিক্ষা বিভাগের আন্ডার-সেক্রেটারি পদে[1], এছাড়া তেজপুরে এডিশনাল ডেপুটি কমিশান হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে। ভারত স্বাধীন হবার অব্যবহিত পূর্বে রেফারেন্ডামের সময় তিনি সিলেটের এ.ডি.এম ছিলেন। এরপর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে কুষ্টিয়ার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হন। ঐ বছরের শেষাংশে ঢাকায় জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে হোম ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে বগুড়ায় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, পরে কিছুদিন চট্টগ্রামের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট পদেও ছিলেন। তারপর করাচীতে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন ১৯৫১-১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এরপর আবার ঢাকায় বদলি হয়ে প্রথমে জয়েন্ট সেক্রেটারি ও পরে সেক্রেটারি পদে কাজ করেন রেভেন্যু ডিপার্টমেন্টে। তারপর রাজশাহীর ডিভিশনাল কমিশনার হিসেবে ১৯৫৭-১৯৫৯ পর্যন্ত অধিষ্ঠিত থেকে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পরেও তিনি কয়েকটি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার উপদেষ্টা পরিষদে প্রথমে সদস্য ও পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুই মেয়াদে, প্রথমে ১ আগস্ট ১৯৬৯ থেকে আগস্ট ১৯৭১, এবং পরে পুনরায় মার্চ ১৯৭৫ থেকে মার্চ ১৯৭৭ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে, এবং মৃত্যুকালেও চেয়ারম্যান ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের[1]

মৃত্যু

মুর্তাজা আলী ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট[1] রাত ২টার সময় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তারপর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

প্রকাশনা

সৈয়দ মুর্তাজা আলী সাহিত্য, গবেষণা, ইতিহাস এবং স্মৃতিচারণামূলক অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো:

গবেষণা ও ইতিহাস গ্রন্থ

  • পশ্চিম পাকিস্তান (১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ)
  • The History of Jaintia (১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ)
  • History of Chittagong (১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ)
  • Personality Profiles (১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ)
  • হজরত শাহ্‌ জালাল ও সিলেটের ইতিহাস (১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ)
  • ইসলামাবাদ

স্মৃতিচারণামূলক

  • আমাদের কালের কথা (১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ)
  • মুজতবা-কথা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ)

সাহিত্য

  • প্রবন্ধ বিচিত্রা (১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ)

সম্মাননা

প্রবন্ধ গবেষণার জন্য তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।[1] এছাড়াও তার মৃত্যুর পরে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তাকে সাহিত্যে মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে সম্মানিত করেন।[2]

আরো দেখুন

  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার
  • স্বাধীনতা পদক

বাড়তি পঠন

  • সৈয়দ মুর্তাজা আলী (জীবনীগ্রন্থ), আবদুল মান্নান সৈয়দ।

তথ্যসূত্র

  1. সৈয়দ মুর্তাজা আলী, মো: হারুন-অর-রশীদ, বাংলাপিডিয়া 2.0.0 (সিডি সংস্করণ)। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। পরিদর্শনের তারিখ: ১৫ জুলাই ২০১১।
  2. কেবিনেট ডিভিশন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
  • মুখবন্ধ অংশ: হজরত শাহ্‌ জালাল ও সিলেটের ইতিহাস, সৈয়দ মুর্তাজা আলী; প্রথম প্রকাশ ১৯৬৫; উৎস প্রকাশন; উৎস সংস্করণ: জুলাই ২০০৩। পরিদর্শনের তারিখ: জুলাই ৮, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ

  • Ali, Syed Murtaza, (ইংরজি নিবন্ধ) বাংলাপিডিয়া, অনলাইন সংস্করণ।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.