ভূজপুর ইউনিয়ন

ভূজপুর ইউনিয়নের আয়তন ১৩,৩১১ একর (৫৩.৮৭ বর্গ কিলোমিটার)।[1]

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভূজপুর ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ৩৫,১৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮,১২৭ জন এবং মহিলা ১৭,০৬৬ জন।[2]

ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্যাংশে ভূজপুর ইউনিয়নের অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে এ ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। এ ইউনিয়নের উত্তরে নারায়ণহাট ইউনিয়ন, পশ্চিমে বাগানবাজার ইউনিয়ন, দক্ষিণে হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন ও পাইন্দং ইউনিয়ন এবং পূর্বে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার মানিকছড়ি ইউনিয়ন অবস্থিত।

ব্রিটিশ শাসনামলের কাজী হাসমত আলীর সময়ে ভূজপুর ইউনিয়ন গঠিত হয়। ঐ সময়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গ্রাম প্রেসিডেন্ট বলা হত। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান শাসনামলে গ্রাম প্রেসিডেন্ট এর পদকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদবী ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৪ সালে প্রথম গ্রাম প্রেসিডেন্ট হন মৌলানা ফজলুল করিম। তারপর পর্যায়ক্রমে হাফেজ শামসুদ্দিন গ্রাম প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরবর্তী সময়ে জনাব নুরুল আলম আজাদ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জনাব রজি আহমদ (বি,কম) দায়িত্ব পালন করেন।[3]

ভূজপুর ইউনিয়নের নাম নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে, প্রাচীন ভোজ রাজার নাম অনুসারে এ ইউনিয়নের নাম হয় ভূজপুর। ভোজ রাজা ছিলেন বর্তমান পশ্চিম ভূজপুর গ্রাম এবং তৎসংলগ্ন গ্রামের জমিদার। কিন্তু তার কোন উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[4] পশ্চিম ভূজপুর গ্রাম নিবাসী মধ্যযুগীয় আবদুল মজিদ পণ্ডিতের রচিত পুঁথিতেও একই ইতিহাস বিবৃত হয়েছে। এছাড়া একটি জায়গার নাম রোসাইংগাঘোনা। সেখানে পূর্বে রোহিংগারা বসবাস করত। মোট ১১ টি গ্রাম নিয়ে ভূজপুর ইউনিয়ন গঠিত।[3]

ভূজপুর ইউনিয়ন ফটিকছড়ি উপজেলার আওতাধীন ৪নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম উপজেলার ভূজপুর থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৭৯নং নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-২ এর অংশ।

মৌজা-গ্রাম ভিত্তিক ভূজপুর ইউনিয়নের মানচিত্র

ভূজপুর ইউনিয়ন ১১টি মৌজায় বিভক্ত:

• পশ্চিম ভূজপুর
• পূর্ব ভূজপুর
• আমতলী
• সিংহরিয়া
• পশ্চিম কৈয়া পুকিয়া
• জঙ্গল কৈয়া পুকিয়া
• পূর্ব কৈয়া পুকিয়া
• হরিণা
• কোটবাড়িয়া
• আজিমপুর
• পাগলীছড়ি

[5]

ভূজপুর ইউনিয়নে গ্রামের সংখ্যা ১৩টি। গ্রামগুলো হল:

• পূর্ব ভূজপুর
• পশ্চিম ভূজপূর
• মিরেরখীল
• আজিমপুর
• আমতলী
• সিংহরিয়া
• কোটবাড়িয়া
• হরিণা
• পাগলীছড়ি
• রোসাইংগা ঘোনা
• পূর্ব কৈয়া পুকিয়া
• পশ্চিম কৈয়া পুকিয়া
• জঙ্গল কৈয়া পুকিয়া।

ভূজপুর ইউনিয়নের সাক্ষরতার হার ৩৫.৪৬%।[1] এ ইউনিয়নে ১টি স্কুল এন্ড কলেজ, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা ও ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[5]

ভূজপুর ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ

ভূজপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

স্কুল এন্ড কলেজ

• ভূজপুর ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ

[6]

মাধ্যমিক বিদ্যালয়

• ভূজপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
• ভূজপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়

[7]

মাদ্রাসা

• আল জামিয়া আল ইসলামিয়া ভুজপুর; কাজিরহাট এমদাদুল ইসলাম মাদরাসা, (শতবর্ষী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ইসলামি বিদ্যালয়)
• ভূজপুর শরিয়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা

[8]

প্রাথমিক বিদ্যালয়

• আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• কমর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• পশ্চিম কৈয়া পুকিয়া গাছুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• পশ্চিম ভূজপুর এ গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• পশ্চিম ভূজপুর গাছুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• পশ্চিম ভূজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• পূর্ব ভূজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• ভূজপুর শরিয়তুল উলুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• ভূজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• সন্দীপনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• সন্দ্বীপপাড়া রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
• সিংহরিয়া গাছুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় [9]

কাজিরাহাট-গাড়িটানা সড়কে হালদা নদীর উপর সেতু

ভূজপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক গিয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক R151 (৪৮ কিমি দীর্ঘ) পেলাগাজীর দীঘির মোড় হতে কাজিরহাট, নারায়ণহাট এবং হেয়াকোঁ হয়ে বারৈয়ারহাটে গিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের সাথে মিলিত হয়েছে।[10] এছাড়াও ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক এবং ৮.৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কাজিরহাট-গাড়িটানা সড়ক সড়ক-যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে আছে।
একসময় নৌকা যোগে চট্টগ্রাম শহর হতে মালামাল আনা নেয়ার জন্য হালদা নদী নৌ-পথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। চাকতাই থেকে মাল বোঝাই করে নৌকা আসতো কাজিরহাট পর্যন্ত। স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থা সুলভ হওয়ায় এবং হালদার নাব্যতা কমে যাবার দরুণ নৌ-যোগাযোগ কমে এসেছে।
ভূজপুর প্রায় গ্রামীণফোন, একটেল এবং বাংলালিংকের নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার ও সুলভ।

ভূজপুর ইউনিয়নের প্রাকৃতিক পরিবেশ চা উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট চমৎকার। এই ইউনিয়নে তিনটি চা বাগান রয়েছে।[11] যথা:

• আচিয়া চা বাগান
• কৈয়াছড়া চা বাগান
• মোহাম্মদ নগর চা বাগান

এই ইউনিয়নের প্রধান নদী হালদা নদী। এছাড়াও ছোট খাট খাল এবং ঝর্ণার মধ্যে আছে ফটিকছড়ি খাল, হরিণা ছড়া, পাগলী ছড়া আর বাগনালা ছড়া। এই ইউনিয়নের একটি ঝর্ণা ফটিকছড়ি খালের নামানুসারে ফটিকছড়ি উপজেলার নামকরণ হয়েছে।[12]

ভূজপুর ইউনিয়নের প্রধান প্রধান হাট/বাজারগুলো হল কাজিরহাট, মির্জারহাট এবং ফকিরহাট।[13]

• ভূজপুর জমিদার বাড়ি এবং ফাঁসির ঘর, পূর্ব ভূজপুর।[14]
• মং রাজার দীঘি (পশ্চিম ভূজপুর)
• হালদা রাবার ড্যাম
• ফটিকছড়ি নদীর উৎপত্তিস্থল (সীতাকুণ্ড পাহাড়)

[15]

• আবদুল মজিদ পণ্ডিত –– পুঁথি সাহিত্যিক।
• কাজি হাসমত আলী –– সাহিত্যিক।
• চৌধুরী আহমদ ছফা –– শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক।
• নুরুল আলম আযাদ –– বীর মুক্তিযোদ্ধা।
• মাওলানা সুলতান আহমদ –– ইসলামী ব্যক্তিত্ব।
• শাহ সুলতান আহমদ –– শিক্ষানুরাগী।
• সৈয়দ আবদুল ওয়ারেস –– নীতি দর্পণ গ্রন্থের লেখক।

[16]

• বর্তমান চেয়ারম্যান: মোহাম্মদ ইবরাহীম[17]

চেয়ারম্যানগণের তালিকা

[18]

• ভূজপুর থানা
• ফটিকছড়ি উপজেলা
• চট্টগ্রাম জেলা