জন বি. গুডএনাফ

জন ব্যানিস্টার গুডএনাফ (জন্ম ২৫ জুলাই ১৯২২) হলেন একজন আমেরিকান অধ্যাপক ও কঠিন অবস্থা নিয়ে কাজ করা পদার্থবিদ। বর্তমানে তিনি অস্টিনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এর যান্ত্রিক প্রকৌশল ও ম্যাটারিয়াল সায়েন্স বিভাগের একজন অধ্যাপক। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি বেশ সুপরিচিত, যেটি তাকে ২০১৯ সালে রসায়ন বিজ্ঞানে সবচেয়ে এম. স্ট্যানলি হুইটিংহ্যামআকিরা ইয়োশিনো এর সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেতে সহায়তা করে। উল্লেখ্য, গুডএনাফ ই বর্তমানে বয়োজ্যেষ্ঠ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উন্নয়নে কাজ করায় ২০১৪ সালে চার্লস স্টার্ক ড্রেপার পুরস্কার অর্জন করেন।[2]

জন গুডএনাফ
জন্মজন ব্যানিস্টার গুডএনাফ
(1922-07-25) জুলাই ২৫, ১৯২২
জেনা, জার্মানি
বাসস্থানটেক্সা, ইউএস
জাতীয়তাইউএস
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠান
  • ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি
  • ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড
  • ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এট অস্টিন
প্রাক্তন ছাত্র
  • ইয়েল ইউনিভার্সিটি
  • ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো
পিএইচডি উপদেষ্টাক্লারেন্স জেনার
উল্লেখযোগ্য ছাত্রবৃন্দউইলিয়াম আই. এফ. ডেভিড (postdoc)[1]
পরিচিতির কারণলিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উন্নয়নে অবদান, গুডএনাফ-কানামুরি বিধি
উল্লেখযোগ্য
পুরস্কার
জাপান পুরস্কার (2001)
এনরিকো ফার্মি অ্যাওয়ার্ড (2009)
ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স (2011)
চার্লস স্টার্ক ড্রেপার পুরস্কার (2014)
ওয়েল্ক অ্যাওয়ার্ড (2017)
কপলি পদক (2019)
রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (2019)

শিক্ষা ও প্রারম্ভিক জীবন

জন গুডএনাফ ১৯২২ সালের ২৫ জুলাই জার্মানির জেনাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আরওয়িন রামসডেল গুডএনাফ (১৮৯৩-১৯৬৫) ও মায়ের নাম হেলেন মেরিয়াম গুডএনাফ। তার জন্মের সময় হার্ভার্ড ডাইভিনিটি স্কুলে পিএইচডিতে পড়ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি ইয়েল এর ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার নৃতাত্ত্বিক বিভাগের ওয়ার্ড গুডএনাফের ছোট ভাই জন গুডএনাফ।[3]. জন গুডএনাফ ১৯৪৪ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে থেকে গণিতে বি.এস ডিগ্রি লাভ করেন,যখন তিনি করোটি ও হাড় বিভাগের একজন সদস্য ছিলেন।[4] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীরতে আবহাওয়াবিদ হিসেবে কাজ করার পর[5] তিনি পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি সম্পন্ন করতে ১৯৫২ সালে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে ফিরে আসেন। সেখানেই তিনি ক্লারেন্স জেনার এর তত্ত্বাবধানে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

লিংকন ইউনিভার্সিটিতে প্রাথমিক জীবন

গুডএনাফ তার প্রাথমিক ক্যারিয়ারে এমআইটির লিংকন ল্যাবরেটরিতে গবেষণা বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। সেইসময় তিনি RAM এর উন্নয়নকল্পে দলের একজন সদস্য হিসেবেও কাজ করেন। তার RAM নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ অরবিটাল অর্ডারিংয়ের সহযোগী ধারণা দেয়, যেটি জন-টেলার বিকৃতি নামে পরিচিত এবং অক্সাইড ম্যাটেরিয়াল ও চৌম্বক সাইন নিয়ে কাজ সুপারএক্সচেঞ্জ যা বর্তমানে গুডএনাফ-কানামুরি বিধি বা নিয়ম নামে পরিচিত।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কর্মজীবন

অক্সফোর্ডে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের স্মৃতি রক্ষার্থে টাঙানো নীল রঙের সাইনবোর্ড

১৯৭০ এর দশকের শেষ ও ১৯৮০ এর দশকের শুরুর দিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অজৈব রসায়ন ল্যাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি LixCoO2 শনাক্তকরণ ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন। যেটি ক্যাথোড হিসেবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসসমূহে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদিও সনি তাদের প্রযুক্তির বাণিজ্যিক প্রসারে খুবই দায়িত্ববান, তবুও গুডএনাফকে মূল কাজ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি শনাক্ত ও উন্নয়নে সমাদৃত করেন। ২০০১ সালে রিচার্জেবল ব্যাটারির উন্নয়ন ও আবিষ্কারের জন্য তাকে জাপান পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক

১৯৮৬ সাল হতে তিনি অস্টিনে অবস্থিত টেক্সাস ইউনিভার্সিটির ককরেল স্কুল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশল ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[6] এই সময়ে তিনি কঠিন ও তড়িৎরসায়নের ডিভাইসসমূহে আয়নিক পরিবাহিতা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি ও তার দল সেখানে থাকা অবস্থায় LixFePO4 আবিষ্কার করেন, যেটি কম খরচে মেশিন যন্ত্রপাতি ও হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানে নিরাপদে ব্যবহার করা যাবে। তার দল ফুয়েল সেলের জন ইলেকট্রোড ও ইলেক্রোলাইট শনাক্ত করতেও সক্ষম হন। তিনি বর্তমানে ভার্জিনিয়া এইচ. ককরেল কনটেনিয়্যালে প্রকৌশল বিভাগে দায়িত্বরত আছেন।[7][8]

প্রাপ্ত পুরস্কারসমূহ

  • জাপান পুরস্কার (2001)
  • এনরিকো ফার্মি অ্যাওয়ার্ড (2009)
  • ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স (2011)
  • চার্লস স্টার্ক ড্রেপার পুরস্কার (2014)
  • ওয়েল্ক অ্যাওয়ার্ড (2017)
  • কপলি পদক (2019)
  • রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (2019)

স্বাতন্ত্র্য

অধ্যাপক গুডএনাফ ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস, ফ্রেঞ্চ একাডেমি অব সায়েন্সেস এবং রিয়্যাল একাডেমিয়া ডি সিয়েনসিয়াস এক্সাকটেস (স্পেন) এর সদস্য। তিনি ৫৫০ এর অধিক নিবন্ধ, ৮৫ টি বুক চ্যাপ্টার, রিভিউ এবং পাঁচটি বইয়ের লেখক, যার মধ্যে রয়েছে চৌম্বকত্ব ও রাসায়নিক বন্ধন (১৯৬৩) এবং লেস অক্সাইডস মেটাক্স ডি ট্রানজিশন (১৯৭৩)। গুডএনাফ ২০০৯ সালে এনরিকো ফার্মি অ্যাওয়ার্ড এর ও একজন সহ-অভ্যর্থনাকারী। ২০১০ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির ফরেন মেম্বার বা বিদেশী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।[9][10]

২০১৯ সালে তিনি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উন্নয়নে কাজ করায় রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তিনিই সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী।

উল্লেখযোগ্য কাজসমূহ

নিবন্ধসমূহ

  • জন বি গুডএনাফ (১৯৫৫)। "থিওরি অব দ্য রূল অব কোভালেন্স ইন দ্য পেরোভস্কাইট-টাইপ ম্যানগানাইটস"। Phys. Rev.100: 564–573। doi:10.1103/physrev.100.564বিবকোড:1955PhRv..100..564G
  • কে. মিজুশিমা; পি.সি. জন্স; পি.জে. ওয়াইসম্যান; জে.বি.গুডএনাফ (১৯৮০)। "LixCoO2 (0<x<-1): অ্যা নিউ ক্যাথোড ম্যাটারিয়াল ফর ব্যাটারিস অফ হাই এনার্জি ডেনসিটি"। ম্যাটার রেস. বুল15 (6): 783–799। doi:10.1016/0025-5408(80)90012-4
  • John B. Goodenough (১৯৮৫)। B. Schuman, Jr.; ও অন্যান্য, সম্পাদকগণ। "ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড অ্যাজ ব্যাটারি ক্যাথোড"। Proceedings Symposium on Manganese Dioxide Electrode: Theory and Practice for Electrochemical Applications। Re Electrochem. Soc. Inc, N.J.। 85–4: 77–96।
  • Lightfoot, P.; Pei, S. Y.; Jorgensen, J. D.; Manthiram, A.; Tang, X. X. & J. B. Goodenough. "Excess Oxygen Defects in Layered Cuprates", Argonne National Laboratory, The University of Texas-Austin, Materials Science Laboratory United States Department of Energy, National Science Foundation, (September 1990).
  • Argyriou, D. N.; Mitchell, J. F.; Chmaissem, O.; Short, S.; Jorgensen, J. D. & J. B. Goodenough. "Sign Reversal of the Mn-O Bond Compressibility in La1.2Sr1.8Mn2O7 Below TC: Exchange Striction in the Ferromagnetic State", Argonne National Laboratory, The University of Texas-Austin, Center for Material Science and Engineering United States Department of Energy, National Science Foundation, Welch Foundation, (March 1997).
  • A.K. Padhi; K.S. Nanjundaswamy; J.B. Goodenough (১৯৯৭)। "Phospho-Olivines as Positive Electrode Materials for Rechargeable Lithium Batteries"। J. Electrochem. Soc.144 (4): 1188–1194। doi:10.1149/1.1837571
  • John B. Goodenough (২০০৪)। "Electronic and ionic transport properties and other physical aspects of perovskites"। Rep. Prog. Phys.67 (11): 1915–1973। doi:10.1088/0034-4885/67/11/R01বিবকোড:2004RPPh...67.1915G
  • Goodenough, J. B.; Abruna, H. D. & M. V. Buchanan. "Basic Research Needs for Electrical Energy Storage. Report of the Basic Energy Sciences Workshop on Electrical Energy Storage, April 2-4, 2007", United States Department of Energy, (April 4, 2007).
  • "John B. Goodenough"Faculty। The University of Texas at Austin Mechanical Engineering Department। মে ৩, ২০০৫। সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-২৩

বইসমূহ

  • John B. Goodenough (১৯৬৩)। ম্যাগনেটিজম অ্যান্ড কোভালেন্ট বন্ড। Interscience-Wiley, New York। আইএসবিএন 0-88275-384-3।
  • John B. Goodenough (১৯৭৩)। লেস অক্সাইড ডিস মেটাক্স ডি ট্রানজিশন। Paris: Gauthier-Villars।
  • John B. Goodenough, ed. (২০০১)। স্ট্রাকচার অ্যান্ড বন্ডিং, V. 98

তথ্যসূত্র

  1. Thackeray, M. M.; David, W. I. F.; Bruce, P. G.; Goodenough, J. B. (১৯৮৩)। "Lithium insertion into manganese spinels"। Materials Research Bulletin18 (4): 461–472। doi:10.1016/0025-5408(83)90138-1
  2. Charles Stark Draper Prize News, National Academy of Engineering. Retrieved March 1, 2015.
  3. LeVine, Steve (৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "The man who brought us the lithium-ion battery at the age of 57 has an idea for a new one at 92"Quartz (publication)Atlantic Media Company। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  4. Goodenough, John B. (২০০৮)। Witness to GracePublishAmericaআইএসবিএন 9781462607570।
  5. "His current quest | The University of Chicago Magazine"mag.uchicago.edu (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৮
  6. Henderson, Jim (জুন ৫, ২০০৪)। "UT professor, 81, is mired in patent lawsuit"Houston Chronicle। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৬, ২০১১
  7. LeVine, Steve (৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "The man who brought us the lithium-ion battery at the age of 57 has an idea for a new one at 92"। Quartz। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  8. "Foreign Members"। Royal Society। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২০
  9. "Obama honors recipients of science, innovation and technology medals"। CBS। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৯

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Copley Medallists 2001–present

টেমপ্লেট:FRS 2010

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.