বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ
বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ বা সংক্ষেপে বি.বা.দী.বাগ কলকাতা শহরের লালদীঘি সংলগ্ন একটি বিখ্যাত এলাকা যা পূর্বে ডালহৌসি স্কোয়ার আখ্যায়িত হতো। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য প্রশাসনিক কেন্দ্র ও কলকাতার মুখ্য বাণিজ্যিক স্থাপনাসমূহ এই এলাকায় অবস্থিত। এ এলাকাটি কলকাতার প্রাচীনতম অঞ্চলগুলির একটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় মহাকরণ, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কলকাতা কার্যালয় ও কলকাতার কেন্দ্রীয় ডাকঘর জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও)-সহ বহু দর্শনীয় স্থানের দৌলতে এটি কলকাতার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণকেন্দ্রও বটে। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ওয়াচ বিবাদীবাগকে পৃথিবীর একশোটি বিপন্নতম ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করার [1] পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা পৌরসংস্থা এই অঞ্চলের সৌন্দর্যায়ণ ও পুরনো ঐতিহ্যভবনগুলির রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ | |
---|---|
কলকাতার অঞ্চল | |
![]() মহাকরণের সামনে বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের প্রতিমূর্তি, এই তিন বিপ্লবীর নামে সমগ্র অঞ্চলটি উৎসর্গিত | |
ডাকনাম: ডালহৌসি স্কোয়ার, বিবাদীবাগ | |
দেশ | ![]() |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
শহর | কলকাতা |
মেট্রো স্টেশন | সেন্ট্রাল মহাকরণ (প্রস্তাবিত পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো স্টেশন) |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় সময় (ইউটিসি+৫.৩০) |
PIN | ৭০০০০১ |
এলাকা কোড | +৯১ ৩৩ |
ইতিহাস ও নামকরণ
এল. দে গ্রাঁদপ্রে
আ ভয়েজ ইন দি ইন্ডিয়ান ওশেন অ্যান্ড টু বেঙ্গল (১৮০৩)
বিবাদী বাগ হুগলি নদীর নিকটে মধ্য কলকাতার পশ্চিমাংশে অবস্থিত। লালদিঘি নামক একটি প্রাচীন দীর্ঘিকাকে কেন্দ্র করে এই স্কোয়ার বা বাগটি গড়ে ওঠে। কলকাতা মহানগরীর পত্তনপূর্ব যুগের ডিহি কলিকাতা গ্রামের কেন্দ্রে অবস্থিত এই অঞ্চলটি ইংরেজ আমলে হোয়াইট টাউন বা কলকাতার শ্বেতাঙ্গ পল্লির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির নামে মধ্য কলকাতার লালদিঘি সংলগ্ন প্রশাসনিক কেন্দ্রটি ডালহৌসি স্কোয়ার নামে অভিহিত হয়। [3] ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর দীনেশ গুপ্ত, বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত নামে তিন অসমসাহসী বাঙ্গালী বিপ্লবী ইউরোপীয় পোষাকে সজ্জিত হয়ে রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রবেশ করে কর্নেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। তারপর রাইটার্সের ঐতিহাসিক অলিন্দে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে এই তিন বিপ্লবীর সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ অফিসার টোয়াইনাম, প্রেন্টিস ও নেলসন আহত হন। গ্রেফতারি এড়াতে বাদল বসু ঘটনাস্থলেই পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু বিনয় বসু ও দীনেশ গুপ্ত নিজেদের উপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে হাসপাতালে ডাক্তারি ছাত্র বিনয় সকলের অলক্ষ্যে ক্ষতস্থানে আঙুল দিয়ে সেপটিক করে আত্মহত্যা করেন। দীনেশ অবশ্য সুস্থ হয়ে ওঠেন ও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। তার ফাঁসি হয়। স্বাধীনতা পর কুখ্যাত লর্ড ডালহৌসির নামাঙ্কিত এই অঞ্চলটি তাই এই মহান বিপ্লবীত্রয়ের সম্মানার্থে উৎসর্গিত হয়। স্কোয়ারের নতুন নাম হয় বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ বা সংক্ষেপে বিবাদীবাগ। রাইটার্স বিল্ডিঙের দ্বিতলে এই বৈপ্লবিক আক্রমনেত স্মৃতিতে একটি ফলক রয়েছে।

গুরুত্ব
সরকারের কেন্দ্র, একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অঞ্চল ও প্রধান প্রধান ব্যাংকগুলির প্রধান কার্যালয় এই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় আজও একে ‘কলকাতার হৃদয়’ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কলকাতাবাসীদের কাছে এই অঞ্চলটি অবশ্য পরিচিত ‘অফিসপাড়া’ নামে। মহাকরণ, রিজার্ভ ব্যাংক ও জিপিও ছাড়াও ছাড়াও রয়্যাল এক্সচেঞ্জ (রবার্ট ক্লাইভের বাসভবন, বর্তমানে বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যালয়) টেলিফোন ভবন ও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও ব্যাংকের অধিষ্ঠান এই অঞ্চলে। সেন্ট জনস চার্চ এই অঞ্চলের প্রধান ধর্মীয় স্থাপত্য; এই গির্জাপ্রাঙ্গনে কলকাতা শহরে ইংরেজ বসতি স্থাপনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জব চার্নকের সমাধি অবস্থিত। বিবাদী বাগের পশ্চিম প্রান্তে গঙ্গা নদী তীরবর্তী চক্ররেলের স্টেশনটির নামও 'বিবাদী বাগ'।

দিবাভাগে অফিস-কর্মচারী ও দোকানদারদের কলরবে সবসময় মুখরিত থাকে এই অঞ্চল, তেমনি ছুটির দিন ও রাতে বিরাজ করে এক গভীর নৈঃশব্দ। এর কারণ, এই অঞ্চলে লোকবসতি খুব একটা নেই।
চিত্রকক্ষ
- রয়াল ইন্সিওরেন্স বিল্ডিং
- মহাকরণের সম্মুখে বিবাদীবাগ উত্তরে বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের প্রতিমূর্তি, এই তিন বিপ্লবীর নামে সমগ্র অঞ্চলটি উৎসর্গিত
- লালদিঘির পাড়ে বিবাদীবাগ পশ্চিমে জেনারেল পোস্ট অফিস কার্যালয় ও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কলকাতা কার্যালয়
- বিবাদীবাগ দক্ষিণ, সম্মুখস্থ ফুটপাথটিতে পুরনো বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের অনেকগুলি দোকান আছে
- রাস্তায় যানজট, দূরে দেখা যাচ্ছে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ, বিবাদীবাগ পূর্বের চিত্র
- জেনারেল পোস্ট অফিসের ঐতিহ্যশালী গম্বুজ, সম্মুখে লালদিঘির তীরস্থ উদ্যান
- ১৭৮৮ সালের মহাকরণ
- ১৯১০ সালের ডালহৌসি স্কোয়ার - লালদিঘি, জেনারেল পোস্ট অফিস ও রাইটার্স বিল্ডিং-এর চিত্র
- ব্রিটিশ যুগের রাইটার্স বিল্ডিং, সম্মুখে ঘোড়ায় টানা ট্রাম ও গোরুর গাড়ি
তথ্যসূত্র
- Site page ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ মার্চ ২০০৬ তারিখে.
- Quoted by Bhattacharya, Sabyasachi, Traders and Trades in Old Calcutta, in Calcutta, the Living City, Vol I, pp. 156-160, edited by Sukanta Chaudhuri, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৬-১.
- Cotton, H.E.A., Calcutta Old and New, 1909/1980, p 268-9, General Printers and Publishers Pvt. Ltd.