১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ

১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়।

১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ
৭৪-এর দুর্ভিক্ষ
দেশ বাংলাদেশ
অবস্থান
কাল মার্চ ১৯৭৪-ডিসেম্বর ১৯৭৪
মোট মৃত্যু সরকারি হিসেবে ২৭,০০০
বেসরকারি হিসেবে ১.৫ মিলিয়ন
নেপথ্যে যুদ্ধ
রিলিফ দেয়া হয় নাই
জনমিতি উপর প্রভাব বাংলাদেশের জনসংখ্যা হ্রাস
পূর্বসূরী পঞ্চাশের মন্বন্তর
উত্তরসূরি

পটভূমি

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের অর্থনিতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল[1] এবং সেই দশকের শুরুতে সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। তবে এই দুর্ভিক্ষের মুল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেই সময়ে হয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যাকে।[2]

চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভিক্ষের প্রকোপ ৭৪ এর মার্চ মাস থেকে দেখা দেয়। এই মাসের রংপুর অঞ্চলে প্রথম মন্দা দেখা দেয় এবং এই অঞ্চল ছিল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ তিন অঞ্চলের একটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় এটি ঘটে। সে সময় বাংলাদেশের মত একটি নতুন রাষ্ট্র তাদের ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো ও বাজার নিয়ে এটি সামাল দেয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। নব্য নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাগণ ব্যাপক দুর্নিতিপ্রবণ ছিলেন। যদিও এপ্রিল মাসে সরকারের লোকেরা বলতে থাকেন যে, এই দুর্যোগ বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল এবং দুর্ভিক্ষ আরও ব্যাপকতা লাভ করছিল। এপ্রিল থেকে জুলাই এই সময়টাতে সেসময় বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং ব্রহ্মপুত্র নদীতে বিধ্বংসী বন্যা দেখা দেয়; যা মে, জুলাইয়ের দিকে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এর ফলে ধানক্ষেত ধ্বংস হয়ে যায় এবং চালের দাম অসম্ভবভাবে বেড়ে যায়। অপরদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করে। অক্টোবর মাসে চালের দাম একদম শিখরে পৌছায় এবং নভেম্বর মাসে বিদেশি সাহায্য ও রবি শস্য বাজারে আসার ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

মৃত্যু সংখ্যা

মোট মৃতের সংখ্যা, যদিও পরিসংখ্যান আলাদা, এক পণ্ডিতের অনুমান ১৫ লাখ গ্রহণযোগ্য সংখ্যা। এই সংখ্যা দুর্ভিক্ষ পরবর্তী সংখ্যা। অনাহার একমাত্র কারন নয়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত্যুর কারন ছিল রোগ, কলেরা, ম্যালেরিয়া এবং ডাইরিয়া। দুর্ভিক্ষের কারনে আনাহারে দুর্বলতা, রোগ-সংবেদী কারনে দুর্ভিক্ষ পরবর্তী মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪,৫০,০০০। দরিদ্র, শ্রমিক এবং অ-ভূমি মালিকরা বিশেষত ভয়াবহতার শিকার।

অনেক লেখক সন্মত হয়েছেন যে, "সব ধরনের মজুরি শ্রমিকরা সর্বোচ্চ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছেন"। করুণ মৃত্যুর হার "ভূমিহীনদের মৃত্যু সংখ্যা ভুমিমালিকদের (তিন বা বেশি একর) চেয়ে তিন গুন বেশি ছিল"।p. 18

কারণসমূহ

অধিকাংশ দুর্ভিক্ষের মত, বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল বহুবিধ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বন্যা, সরকারি খাদ্যশস্যের স্টকগুলির অপব্যবহার, আন্তজেলা খাদ্যশস্য সরবরাহে আইনী বাধা, প্রতিবেশী দেশগুলিতে খাদ্যশস্য চোরাচালানএবং তথাকথিত বিতরণ ব্যর্থতার। দুর্ভিক্ষ সমস্ত এলাকায় এবং জনসংখ্যা মধ্যে ঘটেনি বরং নির্দিষ্ট এলাকায়; বিশেষত বন্যা খতিগ্রস্থ এলাকায়।

তথ্যসুত্র

  1. "BANGLADESH: Mujib's Road from Prison to Power"। Time Magazine USA। ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২।
  2. "দুর্ভিক্ষ" (Bengoli ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৩
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.