বাংলার শাসকগণ

নিচে প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত বৃহত্তর বাংলা বা বঙ্গ অঞ্চলের শাসকগণের একটি তালিকা দেয়া হল। ঐতিহাসিক দলিলপত্র থেকে স্পষ্ট যে বাংলা মূলত অঙ্গদের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে এর অধিকাংশ এলাকা মগধ সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। মগধ সাম্রাজ্যের পতনের পর বাংলা কিছুকাল নৈরাজ্যে পতিত হয়, অতঃপর হর্ষবর্ধনের ঘোরশত্রু শশাঙ্ক এখানে রাজত্ব করেন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর অঞ্চলটিতে আবারও নৈরাজ্য বিরাজ করে এবং প্রায় এক শতক ধরে স্থানীয় গোত্রে গোত্রে ও রাজায় রাজায় লড়াই চলতে থাকে। রাজা গোপাল ও পালরাজবংশের পত্তনের মধ্য দিয়ে এই নৈরাজ্যের অবসান ঘটে এবং বাংলা এক ঐতিহাসিক স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। পালদের পতনের পর সেন রাজবংশের উত্থান ঘটে। সেন রাজবংশীয় চতুর্থ রাজা ছিলেন লক্ষন সেন। তার জীবনের শেষ দিকে দিল্লী সালতানাতের দুর্দান্ত সেনাপতি ইকতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী লক্ষনাবতী রাজ্যের রাজধানী গৌড়ে সতরজন মুসলিম সিপাহী নিয়ে অভিজান পরিচালনা করেন। সেনাপতি ইকতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ সিপাহীদের পেছনে রেখে নিজেই একাকী রাজপ্রাসাদে হামলা করেন। হামলার আকস্মিকতায় রাজকীয় শান্ত্রীরা হকচকিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় বৃদ্ধ রাজা লক্ষন সেন স্ত্রী তন্দ্রাদেবীকে নিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজে বসেছিলেন। হামলার আওয়াজে তিনি পরিস্তিতি বুঝতে পেরে মুখের খাবার ফেলে রেখে রাজপ্রাসাদের পেছনের দরজা দিয়ে নিজ স্ত্রীকে নিয়ে পলায়ন করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিক্রমপুরে রাজত্ব করেন। ইকতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী লক্ষনাবতী রাজ্য বিজয় করেন এবং বাংলায় মুসলিম শাষনের সূচনা করেন। সতরশত শতকে মোঘল সুলতানদের শাষন সমাপ্তির মধ্য দিয়ে ভারতে গৌরবময় মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে এবং একই সাথে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন শাষক নবাব সিরাজদ্দৌলা'র সাথে ইংরেজদের যুদ্ধে পলাশি প্রান্তরে মীরজাফরের বিশ্বাস ঘাতকতার মধ্য দিয়ে অতঃপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাকে পদানত করতে সক্ষম হয় এবং দেশটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৯০৫ সালে বৃটিশ রাজ পুনরায় বাংলাকে বিভাজন করে পূর্ববন্গ ও আসাম প্রদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ সৃস্টি করলে তা বঙ্গভঙ্গ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। কিন্তু হিন্দু নেতাদের সহিংস আন্দোলনের চাপে পুর্ববন্গে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতিতে বৃটিশ রানী ভিক্টোরিয়া বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দেন।পরবর্তীতে মুসলিম লীগ ও ভারতীয় কংগ্রেস এর যৌথ প্রচন্ড আন্দোলনে বৃটিষ রাজ ভারতকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়। তবে হিন্দু মুসলিম দুই জাতি তথা দ্বিজাতী তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাস্ট্র সৃস্টি করা হয়। এই বিভাজনে পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে মুসলিম জনাধিক্যের বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানে পরিনত করা হয় এবং বাংলার হিন্দু জনাধিক্য অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়। পাকিস্তানের পান্জাবী প্রশাষন পরবর্তী চল্লিশ বছর পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ভাবে বন্চনার শিকার করে রাখলে বাঙালী অবিসংবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালীরা স্বাধিকার আন্দোলন শুরু করলে পাকিস্তানের সামরিক শাষক ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালিয়ে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা অন্দোলনে পর্যবসিত হয়। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তান পাকিস্তান থেকে বিযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। সতরশত শতকে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার যে স্বাধিনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ১৯৭১ তার পুনঃ উদয় হয়। সেই বাংলাদেশ এখন স্বগর্বে অর্থনৈতিক ভাবে সম্মুখে অগ্রসরমান।

প্রাচীন রাজবংশ

বাংলার শাসকবর্গের তালিকা[1]
শাসন কাল শাসক দেশের সীমা
৪০০ খ্রি.পূ.ঔগ্রসৈন্য
(নন্দনবংশের রাজা উগ্রসেনের পুত্র)
(গঙ্গা ও প্রাচ্য)
৪০০ খ্রি.পূ.মহারাজা চন্দ্রবর্মনপুস্করন (বাঁকুড়া থেকে ফরিদপুর-পশ্চিম ও দক্ষিণ বঙ্গ)
৪০০ খ্রি.পূ.গুপ্ত বংশের রাজাগুপ্ত অধিকারে বাংলা মোটামুটি দুইটি ভুক্তিতে বিভক্ত ছিল।
পুন্ড্রবর্ধনভুক্তি ও বর্ধমানভুক্তি (বর্তমানের উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গ)
৫০৭-৫০৮ খ্রিষ্টাব্দমহারাজাধিরাজ বৈন্যগুপ্তপূর্ববঙ্গ
৫৪০-৫৮০গোপচন্দ্রবঙ্গ
৫৮০-৬০০সমাচার দেববঙ্গ
৬০৬-৬২৫শ্রীমহাসামন্ত শশাঙ্ক[2]গৌড়, দক্ষিণে গঞ্জাম ও উত্তরে কান্যকুব্জ পর্যন্ত
৬২৫জয়নাগকর্ণসুবর্ণ
৬৩৮-৬৪২অজানা[3]
৬২৫-৭০৫খড়গ রাজবংশ[4]
খড়েগাদ্যম
জাত খড়গ
দেবখড়গ
রাজারাজভট
বঙ্গ, সমতট


তথ্যসূত্র

  1. বাংলা ও বাঙালির কথা, আবুল মোমেন, সাহিত্য প্রকাশ পৃষ্ঠা-১১৮
  2. শশাঙ্কের নাম ছাড়াও শাসনের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া গেছে
  3. ৬৩৮ সালে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর অস্থিরাবস্থার সৃষ্টি হয়। চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং সমতট, পুন্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ ও তাম্রলিপিকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন তবে শাসকদের কথা কিছু লিখেননি। অনেকে তাই ধারণা করেন এগুলো হর্ষবর্ধন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত
  4. খড়গ বাংশের রাজারা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ছিলেন
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.