১৯৯১ বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়

১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড় (IMD পরিচিতিঃ BOB 01, JTWC পরিচিতিঃ 02B) নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরনকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে একটি। এটি ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল বাংলাদেশে দক্ষিণপূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০কিমি/ঘন্টা বেগে আঘাত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করে এবং এর ফলে প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।[1]

সুপার সাইক্লোনিক ঝড় বিওবি ০১
সুপার ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল)
শ্রেণী ৫ (স্যাফির-সিম্পসন স্কেল)
০৬:২৩ UTC, ২৯শে এপ্রিল, ১৯৯১ স্যাটেলাইট থেকে দৃশ্যমান ঘুর্নিঝড়টি।
গঠন২৪শে এপ্রিল, ১৯৯১
বিলুপ্তি৩০শে এপ্রিল, ১৯৯১
সর্বোচ্চ গতি৩-মিনিট স্থিতি: ২৪০ কিমি/ঘণ্টা (১৫০ mph)
১-মিনিট স্থিতি: ২৬০ কিমি/ঘণ্টা (১৬০ mph)
সর্বনিম্ন চাপ৯১৮ hPa (mbar); ২৭.১১ inHg
হতাহত১,৩৮,৮৬৬ জন
ক্ষয়ক্ষতি$1.7 বিলিয়ন (1991 $)
প্রভাবিত অঞ্চলবাংলাদেশ
১৯৯১-তে উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় ঋতু অংশ

আবহাওয়াতাত্ত্বিক ইতিহাস

ঘূর্নিঝড়টির গতিপথ

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ২২শে এপ্রিল, ১৯৯১ বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি ২৪শে এপ্রিল 02B ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয়। ঘুর্নিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এর শক্তি আরও বাড়তে থাকে। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচন্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ১৬০  মাইল/ঘন্টায় পৌছায় যা একটি ক্যাটাগরী-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। ২৯শে এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তি অঞ্চলে ১৫৫ মাইল/ঘন্টা বেগে আঘাত করে যা ক্যাটাগরী-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমণের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং ৩০শে এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয়।

প্রভাব

ঘূর্নিঝড়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে নিহত কিছু মানুষ
একটি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম, ঝড়ের প্রায় ১ সপ্তাহ পরের ছবি

মৃত্যু

এই ঘূর্নিঝড়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়।[2] এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও উপকূলীয় দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া ইত্যাদী দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু ও বৃদ্ধ। ১৯৭০ এর ভোলা ঘূর্নিঝড়ের পর অনেক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও সচেতনতা ও অজ্ঞাতার কারনে অনেকেই সাইক্লোনের মাত্র ঘন্টাখানেক আগে সেখানে আশ্রয় নেয়। অনেকেই ঝড়ের ভয়াবহতা বেশি হবে না এই আশায় আশ্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত হয় নি। ধারণা করা হয় প্রায় ২০ লক্ষ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বিপদজনক স্থানে অবস্থানের কারনে ঘূর্নিঝড়ে আক্রান্ত হয়।

আর্থিক ক্ষতি

দুকূল প্লাবিত কর্ণফুলী নদী

ধারণা করা হয় এই ঘূর্নিঝড়ের কারনে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের (১৯৯১ মার্কিন ডলার) ক্ষতি হয়। সাগর ও নদীর উপকূল প্লাবিত হয়। কর্নফুলি নদীর তীরে কঙ্ক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলচ্ছাসে ধ্বংস হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্নিঝড়ে আঘাতে স্থানচ্যুত হয় এবং আঘাতের কারনে টুকরো টুকরো অংশে বিভক্ত হয়। বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান ও আকাশ নিখোজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও বিদ্যমান। প্রায় ১০ লক্ষ ঘড়-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে ১ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পরে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "NOAA Backgrounder" (PDF)। NOAA। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-১৭
  2. http://swissre.com/resources/dd6346004d4e9669ac76eecedd316cf3-sigma2_2009_e.pdf%5B%5D

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.