সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭

সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালের ১০ মে মিরাট শহরে শুরু হওয়া ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সিপাহিদের একটি বিদ্রোহ। ক্রমশ এই বিদ্রোহ গোটা উত্তরমধ্য ভারতে (অধুনা উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তর মধ্যপ্রদেশদিল্লি অঞ্চল ) ছড়িয়ে পড়েছিল।[2] এই সব অঞ্চলে বিদ্রোহীদের দমন করতে কোম্পানিকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।[3] ১৮৫৮ সালের ২০ জুন গোয়ালিয়রে বিদ্রোহীদের পরাজয়ের পরই একমাত্র বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হয়।[2] সিপাহি বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, মহাবিদ্রোহ, ভারতীয় বিদ্রোহ, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ১৮৫৮ সালের গণ-অভ্যুত্থান নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই বিদ্রোহ দমন করা হয় নির্মমভাবে। বহু নিরপরাধ নরনারী, শিশু বৃদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়।

মহাবিদ্রোহ ১৮৫৭
মূল যুদ্ধ: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন

১৯১২ সালের একটি মানচিত্রে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহী অঞ্চলগুলো চিহ্নত করা হয়েছে। প্রধান স্থানসমূহ হল, মিরাট, দিল্লী, কানপুর, লক্ষ্নৌ, ঝাসি এবং গোয়ালিয়র
তারিখমে ১০, ১৮৫৭
অবস্থানভারত (১৮৫৭)
ফলাফল বিদ্রোহ দমন,
ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান, মুঘল সাম্রাজ্যের পতন
ভারতে ব্রিটিশ সরকারের শাসঙ্কান শুরু
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
Indian Empire created out of former-East India Company territory, some land returned to native rulers, other land confiscated by the Crown.
যুধ্যমান পক্ষ

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি rebel sepoys
Seven Indian princely states

  • মুঘল সাম্রাজ্য
  • Gwalior factions
  • Forces of Rani লক্ষ্মী বাঈ, the deposed Maratha ruler of the independent state of Jhansi
  • Forces of Nana Sahib Peshwa, the adopted son of Maratha Peshwa Baji Rao II
  • Followers of Birjis Qadra, the son of the deposed Nawab of Oudh
  • Some Indian civilians, notably retainers of talukdars (feudal landowners) of Oudh and Muslim ghazis (religious fighters)

 ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি loyalist sepoys
Native irregulars
East India Company British regulars British and European civilian volunteers raised in the Bengal Presidency
21 princely states


Kingdom of Nepal
সেনাধিপতি
বাহাদুর শাহ জাফর
Nana Sahib
Mirza Mughal
Bakht Khan
লক্ষ্মী বাঈ
Tantya Tope
Begum Hazrat Mahal
Commander-in-Chief, India:
George Anson (to May 1857)
Sir Patrick Grant
Sir Colin Campbell from (August 1857)
Jang Bahadur[1]

কোম্পানি-শাসিত অন্যান্য অঞ্চলগুলি (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বোম্বে প্রেসিডেন্সিমাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি) শান্তই ছিল।[2] পাঞ্জাবের শিখ রাজ্যগুলি ব্রিটিশদের সৈন্য সরবরাহ করে সমর্থন জোগায়।[2] বড় দেশীয় রাজ্যগুলির (হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, ত্রিবাঙ্কুরকাশ্মীর) পাশাপাশি রাজপুতানার মতো ছোট রাজ্যগুলিও বিদ্রোহ থেকে দূরে থাকে।[4] অযোধ্যার মতো কোনো কোনো অঞ্চলে বিদ্রোহীরা ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চূড়ান্ত দেশপ্রেমের নিদর্শন স্থাপন করে।[5] ঝাঁসির রানি লক্ষ্মী বাঈ, তুলসীপুরের রানি ঈশ্বরী কুমারী দেবী প্রমুখেরা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে লোকনায়কে পরিণত হন।[2] অন্যান্য প্রধান নেতৃবর্গের মধ্যে ছিলেন নানা সাহেব, তাঁতিয়া তোপী, কুনওয়ার সিং ইত্যাদি সামন্ত রাজা ও সৈনিকেরা। যদিও অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন তারা কোনো উচ্চ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হননি।[6] সিপাহি বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালে ভারতে কোম্পানি-শাসনের অবসান ঘটে, ব্রিটিশরা সেনাবাহিনী, অর্থব্যবস্থা ও ভারতীয় প্রশাসন পুনর্গঠনে বাধ্য হয়।[7] ভারত প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটেনের রানির শাসনের অধীনে আসে।[4]

ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রসারণ

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে শুধুমাত্র তাদের বাণিজ্যকুঠি-সংলগ্ন অঞ্চলগুলির প্রশাসন পরিচালনা করত। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর পূর্ব ভারতে কোম্পানির শাসনের ভিত্তি দৃঢ় হয়। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে (বিহারে) জয়লাভের পর পরাজিত মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি (রাজস্ব আদায়ের অধিকার) প্রদান করতে বাধ্য হন। ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৬৬-১৭৯৯) ও ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের (১৭৭২-১৮১৮) পর নর্মদা নদীর দক্ষিণে দাক্ষিণাত্যের সুবিশাল অঞ্চল ইংরেজদের অধীনে আসে। কোম্পানির এলাকা বোম্বাই ও মাদ্রাজকে কেন্দ্র করে বর্ধিত হয়।

কোম্পানির এলাকা প্রসারণ করতে গিয়ে কোম্পানিকে কম বাধার মুখে পড়তে হয়নি। ১৮০৬ সালে বাহিনীতে নতুন উর্দি চালুকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলমান সিপাহিরা বিদ্রোহী হয়। এই ঘটনা ভেলোর বিদ্রোহ নামে পরিচিত।[8]

সিপাহী বিদ্রোহের একটি চিত্রকল্প
সিপাহী বিদ্রোহের পর লখ্‌নৌ এর সেকুন্দ্রা বাগ,১৮৫৮ সালে ফেলিস বিয়াতো নামক ইতালীয়র তোলা ছবি

উনিশ শতকের প্রথম ভাগে গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি যে রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করেন, তার ফলে পরবর্তী দুই দশক ধরে ইংরেজরা ভারতে একের পর এক এলাকা দখল করতে থাকে।[9] কোম্পানির প্রতি ভারতীয় শাসকবর্গের অধীনতামূলক মিত্রতা বা প্রত্যক্ষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই রাজ্যবিস্তার চলে। অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে সম্মত রাজ্যগুলি দেশীয় রাজ্য নামে পরিচিত হয়। এই সব রাজ্যের শাসক ছিলেন হিন্দু মহারাজা বা মুসলমান নবাবেরা। ১৮৪৯ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের পর পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকাশ্মীর অধিকৃত হয়। যদিও কাশ্মীর কিছুদিনের মধ্যেই জম্মুর ডোগরা রাজবংশের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এটিও হয়ে যায় দেশীয় রাজ্য। ১৮০১ সালের পর থেকে ব্রিটিশ ভারত ও নেপালের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ১৮১৪-১৬ সাল নাগাদ ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং গোর্খারা ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ১৮৫৪ সালে বেরার এবং দুই বছর পর অযোধ্যা অধিকৃত হয়। এইভাবে কোম্পানিই কার্যত ভারতের সরকারে পরিণত হয়।

  1. The Gurkhas by W. Brook Northey, John Morris. আইএসবিএন ৮১-২০৬-১৫৭৭-৮. Page 58
  2. Bandyopadhyay 2004, পৃ. 169–172 Bose ও Jalal 2003, পৃ. 88–103 Quote: "The 1857 rebellion was by and large confined to northern Indian Gangetic Plain and central India.", Brown 1994, পৃ. 85–87, and Metcalf ও Metcalf 2006, পৃ. 100–106
  3. Bayly 1990, পৃ. 170 Quote: "What distinguished the events of 1857 was their scale and the fact that for a short time they posed a military threat to British dominance in the Ganges Plain."
  4. Spear 1990, পৃ. 147–148
  5. Bandyopadhyay 2004, পৃ. 177, Bayly 2000, পৃ. 357
  6. Brown 1994, পৃ. 94
  7. Bayly 1990, পৃ. 194–197
  8. http://www.hindu.com/mag/2006/08/06/stories/2006080600360400.htm TheHindu August-2006
  9. Ludden 2002, পৃ. 133
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.