মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী

মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী অথবা ফোর্ট সেন্ট জর্জের প্রেসিডেন্সী অথবা মাদ্রাজ প্রভিন্স ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রশাসনিক উপবিভাগ (প্রেসিডেন্সী) ছিলো। প্রেসিডেন্সীটি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত ছিলো, আজকের তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্র প্রদেশ পুরোপুরি এই প্রেসিডেন্সীর অধীনে ছিলো; এছাড়াও উড়িষ্যা, কেরালা, কর্ণাটকের কিছু অংশ সহ লক্ষদ্বীপ ও ছিলো এই প্রেসিডেন্সীর অধীনে। মাদ্রাজ শহর (এখন চেন্নাই) ছিলো প্রেসিডেন্সীটির শীতকালীন রাজধানী এবং উটি ছিলো গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। সিলন দ্বীপ (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) এই প্রেসিডেন্সীর একটি অংশ ছিলো ১৭৯৩ সাল থেকে ১৭৯৮ পর্যন্ত। এই প্রেসিডেন্সীটির উত্তর-পশ্চিমে ছিলো মহীশুর রাজ্য, দক্ষিণপশ্চিমে ছিলো কোচি রাজ্য এবং উত্তরে ছিলো হায়দ্রাবাদ রাজ্য। এই প্রেসিডেন্সীটির কিছু অংশ আবার মাঝেমধ্যে বোম্বে প্রেসিডেন্সী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো।

মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী
ব্রিটিশ ভারত প্রেসিডেন্সী

 

১৬৫২–১৯৫০

পতাকা

মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর অবস্থান
১৯১৩ সালের একটি মানচিত্রে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী
রাজধানী শীতকালীন: মাদ্রাজ শহর
গ্রীষ্মকালীন: উটি
ঐতিহাসিক যুগ নব্য উপনিবেশবাদ
  প্রতিষ্ঠিত ১৬৫২
  ভাঙ্গা হয়েছে ১৯৫০
ঔপনিবেশিক ভারত
ঔপনিবেশিক ভারত
ডাচ ভারত১৬০৫–১৮২৫
ডেনিশ ভারত১৬২০–১৮৬৯
ফরাসী ভারত১৭৬৯-১৯৫৪
পর্তুগীজ ভারত
(১৫০৫–১৯৬১)
কাসা দা ইন্ডিয়া১৪৩৪–১৮৩৩
পর্তুগীজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি১৬২৮–১৬৩৩
ব্রিটিশ ভারত
(১৬১২–১৯৪৭)
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি১৬১২–১৭৫৭
ভারতে কোম্পানি শাসন১৭৫৭–১৮৫৮
ব্রিটিশ ভারত১৮৫৮–১৯৪৭
বার্মায় কোম্পানি শাসন১৮২৪–১৯৪৮
দেশীয় রাজ্য১৭২১–১৯৪৯
ভারত বিভাগ
১৯৪৭

১৬৩৯ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি মাদ্রাজপাটনাম গ্রামটি কিনে নেয় এবং এক বছর পর ফোর্ট সেন্ট জর্জের এজেন্সী তৈরি করেছিলো, যেটি ছিলো মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর পূর্বসূরী, যদিও ইংরেজদের ১৬০০ শতাব্দীর শুরুর দশকেই মাচিলিপাটনাম এবং আরমাগোনে কারখানা ছিলো। ১৬৫২ সালে এজেন্সী প্রেসিডেন্সীতে রূপ লাভ করে এবং ১৬৫৫ সালে এটি আবার এজেন্সী হয়। ১৬৮৪ সালে পুনরায় প্রেসিডেন্সীর মর্যাদা লাভ করে এটি এবং এলিহু ইয়েল প্রেসিডেন্সীর প্রেসিডেন্ট হন। ১৭৮৫ সালে পিট'স ইন্ডিয়া এ্যাক্ট অনুযায়ী মাদ্রাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ভারতের তিনটি প্রদেশের একটিতে মর্যাদা পায়। তখন থেকে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর প্রধান প্রশাসককে প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে গভর্নর বলা শুরু হয় এবং কোলকাতাতে অবস্থিত গভর্নর-জেনারেলের অধীনে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর গভর্নর কাজ করতেন ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। দাপ্তরিক, বিচারিক এবং অন্যান্য আইনী কাজ সহ সকল নির্বাহী ক্ষমতা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর গভর্নের হাতে ছিলো, গভর্নর একটি কাউন্সিল দ্বারা সহায়তা লাভ করতেন, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর আলাদা সংবিধান ছিলো যেটা ১৮৬১, ১৯০৯, ১৯১৯ এবং ১৯৩৫ সালে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়েছিলো। ১৯৩৯ সালে একটি বিশ্বযুদ্ধ (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) শুরু হয়ে গেলে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীতে ঘন ঘন নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। ১৯০৮ সাল অনুযায়ী এই মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীতে ২২টা জেলা ছিলো, প্রত্যেক জেলা আবার ডিসট্রিক্ট কালেক্টরের প্রশাসনিক অধীনে থাকতো, জেলার আবার উপবিভাগ ছিলো, ছিলো তালুক এবং ফিরকা, গ্রাম ছিলো মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর সবচেয়ে ছোটো প্রশাসনিক এলাকা।

১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার অনুযায়ী মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্সীতে রূপান্তরিত হয় যেটা দ্বৈত শাসন অবলম্বন করে চলছিলো, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর গভর্নর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পরেই অবস্থান করতেন ক্ষমতার দিক দিয়ে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই মাদ্রাজ থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য অনেক আন্দোলন বেরিয়ে আসে। ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ তারিখে এই প্রেসিডেন্সীর নাম মাদ্রাজ প্রদেশ (ইংরেজিতে প্রভিন্স) হয়ে যায় যেটা আগে ছিলো অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে, ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারী স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণীত হলে মাদ্রাজ প্রভিন্সের ইংরেজি নাম মাদ্রাজ স্টেট হয়েছিলো।

উৎপত্তি

ইংরেজদের আগমনের আগে

প্রস্তর যুগ থেকেই ভারতের এই অংশে মানুষের ভালো অবস্থান ছিলো। তামিল পান্ড্য রাজবংশ খ্রিষ্টপূর্ব ২৩০ সাল থেকে ১০২ সাল পর্যন্ত এই এই অঞ্চলের শাসক ছিলো। তামিল পান্ড্য এবং চোল সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে কলাভ্রা নামের একটি জাতি এই অঞ্চলে আধিপত্য গড়ে তোলে। এরপর এই অঞ্চল পল্লব রাজবংশের অধীনে পড়ে এবং এই পল্লবীয়রা এই অঞ্চলের সভ্যতা অনেক উন্নত করতে সাহায্য করেছিলো, তেলেগুভাষী রাজারা তামিলদেরকে তেলেগু ভাষায় দীক্ষিত করতে শুরু করে। ১৩১১ সালে মালিক গফুর নামের এক ব্যক্তি যিনি ছিলেন আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি এই অঞ্চলের মাদুরাই এলাকা নিজের দখলে আনেন, এই সময় সংস্কৃতি এবং সভ্যতা নষ্ট হতে শুরু হতে করে। ১৩৩৬ সালে বিজয়নগর সাম্রাজ্য তামিল এবং তেলেগু ভূখণ্ড নিজেদের অধীনে নিয়ে নেয়। এই সাম্রাজ্যের পতনের পর অনেক মুসলিম শাসক এবং ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে এই অঞ্চল।

তথ্যসূত্র

    Attribution
    • এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Bombay Presidency"ব্রিটিশ বিশ্বকোষ4 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 185–189।[[বিষয়শ্রেণী:উইকিসংকলনের তথ্যসূত্র ছাড়া ১৯১১ সালের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা থেকে উইকিপিডিয়া নিবন্ধসমূহে একটি উদ্ধৃতি একত্রিত করা হয়েছে]]

    গ্রন্থপঞ্জি

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.