চার্লি চ্যাপলিন
চার্লি চ্যাপলিন (ইংরেজি: Charlie Chaplin) নামেই বেশি পরিচিত স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র (ইংরেজি: Sir Charles Spencer Chaplin, Jr.) (১৬ই এপ্রিল, ১৮৮৯ – ২৫শে ডিসেম্বর, ১৯৭৭) ছিলেন একজন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও সুরকার। হলিউড চলচ্চিত্র শিল্পের শুরুর সময় থেকে মধ্যকাল পর্যন্ত তিনি তার অভিনয় ও পরিচালনা দিয়ে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেন। চ্যাপলিনকে বড় পর্দার শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের একজন বলেও বিবেচনা করা হয়। চলচ্চিত্র শিল্প জগতে চ্যাপলিনের প্রভাব অনস্বীকার্য। ভিক্টোরীয় যুগে তার শৈশব থেকে ১৯৭৭ সালে তার মৃত্যুর এক বছর পূর্ব পর্যন্ত তার কর্মজীবনের ব্যাপ্তি প্রায় ৭৫ বছর এবং এই সময়ে তার বর্ণময় ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনে খ্যাতি ও বিতর্ক, দুইই নিম্ন থেকে শীর্ষবিন্দু ছুঁয়ে গেছে। ।
স্যার চার্লস চ্যাপলিন | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন ১৬ এপ্রিল ১৮৮৯ |
মৃত্যু | ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭ ৮৮) (বয়স |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
পেশা |
|
কার্যকাল | ১৮৯৯–১৯৭৬ |
দাম্পত্য সঙ্গী | মিলড্রেড হ্যারিস (বি. ১৯১৮–১৯২১) লিটা গ্রে (বি. ১৯২৪–১৯২৭) পলেট গডার্ড (বি. ১৯৩৬–১৯৪২) উনা ওনিল (বি. ১৯৪৩) |
সন্তান | ১১ সন্তান |
আত্মীয় | দেখুন চ্যাপলিন পরিবার |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
কৌতুকাভিনয় কর্মজীবন | |
মাধ্যম | চলচ্চিত্র, অভিনেতা, অনুকরণ |
ধরন | স্ল্যাপস্টিক, মূকাভিনয়, দৃশ্যমান হাস্যরস |
প্রভাবিত করেছেন | মিল্টন ব্রেল রোয়ান অ্যাটকিনসন জনি ডেপ |
ওয়েবসাইট | charliechaplin |
স্বাক্ষর | |
![]() |
| ||
---|---|---|
|
||
চ্যাপলিন লন্ডনে প্রচণ্ড দারিদ্র ও কষ্টের মধ্য দিয়ে শৈশব অতিবাহিত করেন। তার পিতার অনুপস্থিতি ও তার মায়ের অর্থাভাবের জন্য তাকে তার নয় বছর বয়সের পূর্বেই দুইবার একটি কর্মশালায় কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল। যখন তার বয়স ১৪ তখন তার মাকে পাগলাগারদে পাঠানো হয়। চ্যাপলিন তার শৈশব থেকেই শিশুশিল্পী হিসেবে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রঙ্গশালায় সফর করেন এবং পরে একজন মঞ্চাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি স্বনামধন্য ফ্রেড কার্নো কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন, যারা তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিয়ে যায়। চ্যাপলিন সেখানে হলিউড চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে যুক্ত হন এবং ১৯১৪ সালে কিস্টোন স্টুডিওজের হয়ে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন। অচিরেই তিনি তার নিজের সৃষ্ট ভবঘুরে দ্য ট্রাম্প চরিত্রের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন এবং তার অনেক ভক্তকূল গড়ে ওঠে।[1] ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগালে "শার্লট" নামে পরিচিত চ্যাপলিনের ট্রাম্প ভবঘুরে হলেও ব্রিটিশ ভদ্রজনোচিত আদব-কায়দায় সুসংস্কৃত এবং সম্মানবোধে অটুট। শার্লটের পরনে চাপা কোট, সাইজে বড় প্যান্ট, বড় জুতো, মাথায় বাউলার হ্যাট, হাতে ছড়ি আর অদ্বিতীয়তম টুথব্রাশ গোঁফ। চ্যাপলিন শুরুর দিক থেকেই তার চলচ্চিত্রগুলো পরিচালনা করতেন এবং পরবর্তীতে এসানে, মিউচুয়াল ও ফার্স্ট ন্যাশনাল করপোরেশনের হয়েও চলচ্চিত্র পরিচালনা চালিয়ে যান। ১৯১৮ সালের মধ্যে তিনি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করেন।[2]
১৯১৯ সালে তিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স গঠন করেন, যার ফলে তিনি তার চলচ্চিত্রের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন। তার নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হল দ্য কিড (১৯২১), পরবর্তীতে তিনি আ ওম্যান অব প্যারিস (১৯২৩), দ্য গোল্ড রাশ (১৯২৫) এবং দ্য সার্কাস (১৯২৮) চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং এসব চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৩০ এর দশকে তিনি সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এবং নির্বাক সিটি লাইট্স (১৯৩১) ও মডার্ন টাইমস (১৯৩৬) নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। চ্যাপলিন তার পরবর্তী চলচ্চিত্র দ্য গ্রেট ডিক্টেটর (১৯৪০) এ অতিমাত্রায় রাজনৈতিক হয়ে ওঠেন এবং আডলফ হিটলারকে ব্যঙ্গ করেন। ১৯৪০ এর দশকে চ্যাপলিনকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় এবং তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। তিনি সমাজতান্ত্রিকদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযোগ ওঠে, পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে পিতৃত্বের মামলা চলাকালে তিনি কম বয়সী অপর এক মহিলাকে বিয়ে করায় তাকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের তদন্ত শুরু হলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যান এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। তিনি তার পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলোতে তার ট্রাম্প সত্তা বিসর্জন দেন এবং মঁসিয়ে ভের্দু (১৯৪৭), লাইমলাইট (১৯৫২), আ কিং ইন নিউ ইয়র্ক (১৯৫৭) এবং আ কাউন্টেস ফ্রম হংকং (১৯৬৭) চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের অন্যতম মৌলিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব চ্যাপলিন নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয় করতেন, এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা, পরিচালনা, প্রযোজনা এমনকি সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন। তিনি তার সকল চলচ্চিত্র ত্রুটিমুক্ত রাখার চেষ্টা করতেন এবং তার আর্থিক স্বাধীনতার কারণে তিনি একটি চলচ্চিত্রের গল্পের বিকাশ ও চলচ্চিত্র নির্মাণে অধিক সময় ব্যয় করতে পারতেন। তার চলচ্চিত্রগুলোতে বৈরিতার সাথে দ্য ট্রাম্পের সংগ্রামের করুণ রসের সাথে স্ল্যাপস্টিক হাস্যরস বিদ্যমান ছিল। কয়েকটি চলচ্চিত্রে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তু ছিল এবং কয়েকটিতে আত্মজীবনীমূলক উপাদান ছিল। চ্যাপলিন তার কাজের পুনঃস্বীকৃতি পেলে "এই শতাব্দীর চলচ্চিত্রকে শিল্প রূপে দাঁড় করানোর পিছনে তাঁর অপরিমেয় প্রভাবের জন্য" তাকে ১৯৭২ সালে একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করা হয়। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাকে ফ্রান্স সরকার ১৯৭১ সালে লেজিওঁ দনরের কমান্ডার ও রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৭৫ সালে নাইটহুডে ভূষিত করেন। মৃত্যুর পরও চ্যাপলিন তার নির্মিত দ্য গোল্ড রাশ, সিটি লাইট্স, মডার্ন টাইমস ও দ্য গ্রেট ডিক্টেটর চলচ্চিত্র দিয়ে অমর হয়ে আছেন। এই চলচ্চিত্রগুলোকে প্রায়ই মার্কিন চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা তালিকায় স্থান করে নিতে দেখা যায়।
জীবনী
১৮৮৯-১৯১৩: প্রারম্ভিক জীবন
শৈশব
চার্লস স্পেন্সার চ্যাপলিন ১৮৮৯ সালের ১৬ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন।[3] তার পিতা চার্লস চ্যাপলিন সিনিয়র এবং মাতা হান্নাহ চ্যাপলিন (জন্মনাম: হান্নাহ হ্যারিয়েট পেডলিংহাম হিল)। চার্লি চ্যাপলিনের জন্ম সম্পর্কিত বৈধ কোনো প্রমাণপত্র পাওয়া যায়নি, তাই তার জন্ম নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সংবাদ মাধ্যম তার জন্মস্থান সম্পর্কে নানা সময়ে নানা রকম তথ্য দিয়েছে। কিন্তু চ্যাপলিনের মতে, তিনি দক্ষিণ লন্ডনের ওয়ালওর্থের ইস্ট স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেছেন।[4][lower-alpha 1] তার পিতামাতা তার জন্মের চার বছর পূর্বে বিয়ে করেন এবং এতে করে চ্যাপলিন সিনিয়র হান্নাহর অবৈধ সন্তান সিডনি জন হিলের বৈধ তত্ত্ববধায়ক হন।[6][lower-alpha 2] তার জন্মের সময় তার মা-বাবা দুজনেই মঞ্চের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। হান্নাহ ছিলেন একজন মুচির কন্যা।[8] তার মঞ্চ নাম ছিল লিলি হার্লি। তার মঞ্চজীবন স্বল্পকাল স্থায়ী ও অসফল ছিল।[9] অন্যদিকে চ্যাপলিনের পিতা চার্লস সিনিয়র ছিলেন একজন কসাইয়ের পুত্র।[10] তিনি গীতিমঞ্চের জনপ্রিয় গায়ক ছিলেন।[11] যদিও চ্যাপলিনের পিতা-মাতার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি, তারা ১৮৯১ সালের দিকে আলাদা হয়ে যান।[12] পরের বছর হান্নাহ তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন। তার তৃতীয় সন্তান জর্জ হুইলার ড্রাইডেনের পিতা ছিলেন গীতিমঞ্চের বিনোদনদাতা লিও ড্রাইডেন। শিশু জর্জকে ছয় মাস বয়সে তার পিতা নিয়ে যায় এবং পরবর্তী ৩০ বছরের মধ্যে চ্যাপলিনের সাথে তার কোন সাক্ষাৎ হয়নি।[13]

চ্যাপলিনের শৈশব প্রচণ্ড দারিদ্র্য আর কষ্টে জর্জরিত ছিল।[14] তার শৈশব কাটে তার মা হান্নাহ এবং ভাই সিডনির সাথে কেনিংটন জেলায়।[15] চ্যাপলিন সিনিয়র তাদের কোন আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতেন না এবং হান্নাহরও মাঝে মাঝে সেবিকা ও পোশাক নির্মাণকার্য ছাড়া উপার্জনের কোন পথ ছিল না। অত্যধিক দারিদ্রের কারণে চ্যাপলিনকে তার সাত বছর বয়সে ল্যামবেথ কর্মশালায় কাজের জন্য পাঠানো হয়।[lower-alpha 3] সাউথওয়ার্ক কাউন্সিল তাকে দারিদ্রের কারণে সেন্ট্রাল লন্ডন ডিস্ট্রিক্ট স্কুলে পাঠায়। চ্যাপলিন এই পরিস্থিতিকে "অবহেলিত জীবনকাল" বলে উল্লেখ করেন।[17] ১৮ মাস পরে কিছু দিনের জন্য তিনি তার মায়ের সাথে থাকেন এবং ১৮৯৮ সালের জুলাইয়ে হান্নাহ তাকে পুনরায় কর্মশালায় প্রেরণ করেন। চার্লি ও সিডনিকে এরপর দরিদ্র শিশুদের জন্য নির্মিত নরউড স্কুল নামক আরেকটি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করা হয়।[18]
১৮৯৮ সালে সেপ্টেম্বরে হান্নাহকে কেন হিল মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিফিলিস ও অপুষ্টিজনিত কারণে তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।[19] তিনি দুই মাস সেখানে ছিলেন। এসময়ে চ্যাপলিন ও সিডনিকে তাদের পিতার কাছে পাঠানো হয়। তারা দুজন তাদের পিতাকে তেমন চিনতেন না।[20] চার্লস সিনিয়র তখন প্রচণ্ড মাত্রায় মদ্যপ ছিলেন এবং সেখানে তাদের জীবন খুবই কষ্টে কাটে। ফলে তাদের ন্যাশনাল সোসাইটি অব ক্রুয়েলটি টু চিলড্রেনে নিয়ে যাওয়া হয়।[21] চ্যাপলিনের পিতা দুই বছর পর ৩৮ বছর বয়সে যকৃতের প্রদাহে মারা যান।[22]
হান্নাহ স্বল্পকালের জন্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান, কিন্তু ১৯০৩ সালে মে মাসে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।[21] সেসময়ে ১৪ বছর বয়সী চ্যাপলিন তার মাকে আবার কেন হিলে নিয়ে যান।[23] চ্যাপলিন কয়েকদিন একা ছিলেন এবং খাদ্যের অন্বেষণে এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করতেন ও বিভিন্ন স্থান রাত কাটাতেন। সেসময়ে দুই বছর পূর্বে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সিডনি ফিরে আসেন।[24] আট মাস পরে হান্নাহ মানসিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান,[25] কিন্তু ১৯০৫ সালের মার্চে পুনরায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এইবার তা স্থায়ীভাবে রয়ে যায়। চ্যাপলিন পরবর্তীতে লিখেন, "মায়ের করুণ ভাগ্যকে বরণ করে নেওয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না।" ১৯২৮ সালের তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেবা-শুশ্রূষার অধীনেই ছিলেন।[26]
কিশোর অভিনেতা

স্কুলে তিনি খারাপ ফলাফল করছিলেন এবং তার মাতাও মানসিক অসুস্থতার কাছে হার মানতে শুরু করলে, চ্যাপলিন মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। পরবর্তীতে তাকে হান্নাহর কাছ থেকে এক রাতে আল্ডেরশটে নিয়ে যাওয়া হলে, তিনি তার পাঁচ বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন।[lower-alpha 4] এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল, কিন্তু যখন তার নয় বছর বয়স, তখন তার মায়ের উৎসাহে তিনি অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি পরবর্তীতে লিখেন, "আমার মধ্যে কিছু প্রতিভা রয়েছে এই বলে [মা] আমাকে অনুপ্রাণিত করেন।"[28] তার পিতার পরিচিতির কারণে,[29] তিনি এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাড্সের ক্লগ নৃত্যদলের সদস্য হন। এই দলের সাথে তিনি ১৮৯৯ ও ১৯০০ সালে বিভিন্ন ইংরেজ গীতিমঞ্চে সফরে যান।[lower-alpha 5] চ্যাপলিন কঠোর পরিশ্রম করেন এবং নৃত্যনাট্যটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু চ্যাপলিন তার নিজের নৃত্যে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং তিনি হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছাপোষণ করেন।[31]
চ্যাপলিন যখন জনপ্রিয় এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডসের সদস্য হিসেবে সফর করছিলেন, তার মাতা তখনও তার স্কুলে পড়ার বিষয় নিশ্চিত করেন।[32] ১৩ বছর বয়সে তিনি স্কুল ত্যাগ করেন।[33] তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করে নিজের ভরণপোষণ করতেন এবং অভিনেতা হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও মনে পুষে রাখেন।[34] ১৪ বছর বয়সে তার মা আবার অসুস্থ হলে, তিনি লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডের একটি মঞ্চদলে নাম তালিকাভুক্ত করেন। মঞ্চদলের প্রধান তার প্রতিভার আঁচ পান এবং হ্যারি আর্থার সেন্ট্সবারির জিম, আ রোম্যান্স অব ককেইন-এ সংবাদপত্র বিতরণকারী চরিত্রে তাকে প্রথম কাজ করার সুযোগ দেন।[35] নাটকটি ১৯০৩ সালের জুলাইয়ে মঞ্চস্থ হয়, কিন্তু তা সফলতা অর্জন করতে না পারায় দুই সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন পর্যালোচক চ্যাপলিনের হাস্যরসাত্মক অভিনয়ের প্রশংসা করেন।[36]
সেন্ট্সবারি পরবর্তীতে তাকে চার্লস ফ্রোহম্যানের শার্লক হোমস নাটকে একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ দেন।[37] এতে তিনি সংবাদপত্র বিতরণকারী বিলি চরিত্রে অভিনয় করেন এবং দেশব্যাপী তিনটি সফরে যান। তার অভিনয় এতটাই প্রশংসিত হয় যে তাকে উইলিয়াম জিলেটের সাথে মূল শার্লক হোমস নাটকে কাজ করতে ডেকে পাঠানো হয়।[lower-alpha 6] চ্যাপলিন বিষয়টি স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, "এটি আমার কাছে স্বর্গ থেকে আসা সংবাদের মত লেগেছিল।" ১৬ বছর বয়সে চ্যাপলিন ওয়েস্ট এন্ডের মঞ্চস্থ করা এই নাটকে অভিনয় করেন। ১৯০৫ সালে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে ডিউক অব ইয়র্ক থিয়েটারে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।[39] ১৯০৬ সালের শুরুর দিকে শার্লক হোমস নাটকে প্রায় আড়াই বছর অভিনয়ের পর তিনি তার সফর শেষ করেন।[40]
মঞ্চ কৌতুকাভিনয় ও ভডেভিল
সফর শেষ হওয়ার পর চ্যাপলিন দ্রুতই একটি নতুন কোম্পানিতে কাজ পান এবং সেই কোম্পানির হয়ে তার ভাইয়ের সাথে একটি সফরে যান। তার ভাইও রিপেয়ার্স নামক এক ধরনের স্কেচ কৌতুকাভিনয়কে কর্ম হিসেবে বেছে নেন।[41] ১৯০৬ সালের মে মাসে চ্যাপলিন শিশুতোষ কেসির সার্কাসে যোগ দেন।[42] সেখানে তিনি জনপ্রিয় বার্লেস্ক অভিনয়ে দক্ষতা অর্জন করেন এবং অচিরেই তারকা খ্যাতি লাভ করেন। ১৯০৭ সালের জুলাইয়ে এই নাটকের কাজ সমাপ্তিকালে ১৮ বছর বয়সী চ্যাপলিন পরিপূর্ণ কৌতুকাভিনেতা হয়ে ওঠেন।[43] পরবর্তীতে তাকে অন্য কাজ পেতে সংগ্রাম করতে হয়, এবং তার একক অভিনয়ের একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।[44]

ইতোমধ্যে, সিডনি চ্যাপলিন ১৯০৬ সালে স্বনামধন্য ফ্রেড কার্নো কোম্পানিতে যোগ দেন, এবং ১৯০৮ সালের মধ্যে তিনি তাদের প্রধান অভিনেতা হয়ে ওঠেন।[45] ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তার ছোট ভাইয়ের জন্য দুই সপ্তাহের একটি খণ্ডকালীন অভিনয়ের ব্যবস্থা করেন। কার্নো প্রথমে এই বিষয়ে সতর্ক ছিলেন এবং চার্লিকে "বিবর্ণ, দুর্বল, অপ্রসন্ন যুবক" মনে করেন, এবং মঞ্চে ভালো কোন কাজ করতে পারবে না ও "খুব বেশি লাজুক" মনে হয়।[46] যাই হোক, কিশোর চ্যাপলিন লন্ডন কলিসিয়ামে তার প্রথম রাতের অভিনয় দিয়ে মঞ্চে তার প্রভাব সৃষ্টি করেন এবং অচিরেই এই কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।[47] চ্যাপলিন প্রথমে কয়েকটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের পর ১৯০৯ সালের দিকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন।[48] ১৯১০ সালের এপ্রিলে তাকে জিমি দ্য ফেয়ারলেস নামক একটি নতুন স্কেচের প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। এটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে এবং চ্যাপলিন গণমাধ্যমের দৃষ্টি কাড়েন।[49]
কার্নো তার এই নতুন তারকাকে তার কোম্পানির একটি বিভাগে যোগ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করেন। এই বিভাগে স্ট্যান লরেলও ছিলেন এবং তাদের উত্তর আমেরিকার ভডেভিল সার্কিটে সফরের জন্য নির্বাচন করা হয়।[50] তরুণ কৌতুকাভিনেতা চার্লি এই স্কেচের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং সমালোচকদের মুগ্ধ করেন। একজন সমালোচক তাকে "অন্যতম সেরা পান্তুমিম শিল্পী" বলে অভিহিত করেন।[51] তার সবচেয়ে সফল ভূমিকা ছিল "ইনাব্রিয়েট সোয়েল" নামে এক মদ্যপের চরিত্র। এই কাজ তাকে বহুল পরিচিতি পাইয়ে দেয়।[52] এই সফর ২১ মাস স্থায়ী ছিল। দলটি ১৯১২ সালের জুনে ইংল্যান্ডে ফিরে আসে।[53] চ্যাপলিন এই ফিরে আসাকে "হতাশাব্যঞ্জক পরিচিত স্থানে অবসন্ন হওয়ার অশান্ত অনুভূতি" বলে বর্ণনা করেন এবং পরে অক্টোবর মাসে আরেকটি সফর শুরু হলে নতুনভাবে উদ্যম ফিরে পান।[54]
১৯১৪-১৭: চলচ্চিত্রে আগমন
কিস্টোন স্টুডিওজ
চ্যাপলিন তার দ্বিতীয় মার্কিন সফরে গেলে তাকে নিউ ইয়র্ক মোশন পিকচার কোম্পানিতে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিস্টোন স্টুডিওজের একজন প্রতিনিধি তার অভিনয় দেখে তাকে ফ্রেড মেসের স্থলাভিষিক্ত করার কথা ভাবেন। মেস ছিলেন তখন কিস্টোনের অন্যতম একজন তারকা, যিনি এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে চাইছেন।[55] চ্যাপলিন মনে করতেন কিস্টোনের হাস্যরসগুলো "অপরিণত, বিষণ্ণ এবং কর্কশ", কিন্তু চলচ্চিত্রে কাজ করার বিষয়টি পছন্দ করেন এবং যুক্তি দেখান, "তদুপরি, এর মানে নতুন জীবন।"[56] তিনি ১৯১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানিটির সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রতি সপ্তাহের জন্য ১৫০ মার্কিন ডলারের চুক্তি করেন।[57]


চ্যাপলিন ১৯১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে লস অ্যাঞ্জেলেসে কিস্টোন স্টুডিওজে আসেন।[58] তার প্রধান ছিলেন ম্যাক সেনেট, যিনি তাকে প্রথম দেখে অবাক হয়েছিলেন যে ২৪ বছর বয়সী একজনকে এত কমবয়সী দেখায় কীভাবে।[59] পরের বছর জানুয়ারির শেষের দিকের পূর্বে চ্যাপলিনকে কোন চলচ্চিত্রের ভূমিকা দেওয়া হয়নি। এই সময়ে চ্যাপলিন চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল রপ্ত করেন।[60] এক-রিলওয়ালা মেকিং আ লিভিং দিয়ে তার চলচ্চিত্র অভিনয়ে অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রটি ১৯১৪ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। চ্যাপলিন চলচ্চিত্রটি একদমই পছন্দ করেননি, কিন্তু একটি পর্যালোচনায় "কৌতুকাভিনেতা" হিসেবে তার প্রশংসা করা হয়।[61] তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এমন এক পোশাক নির্বাচন করেন, যার জন্য তিনি পরবর্তী জনপ্রিয়তা ও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। তিনি তার আত্মজীবনীতে এই বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন:
"আমি সবকিছুতেই অসঙ্গতি চেয়েছিলাম: ব্যাগি প্যান্ট, আঁটসাঁট কোট, ছোট মাথার টুপি এবং বড় জুতা... আমি একটি ছোট গোঁফও ব্যবহার করি, যার ফলে আমাকে বয়স্ক দেখাবে কিন্তু আমার অভিব্যক্তিও লুক্কায়িত থাকবে না। আমার এই চরিত্র সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু যখন আমি পোশাক পরিধান করি, সেই পোশাক ও মেকআপ আমাকে সেই ব্যক্তিত্বকে অনুভব করতে সাহায্য করে। আমি তাকে চিনতে শুরু করি এবং যে সময়ে আমি ক্যামেরার সামনে দাড়াই, ততক্ষণে সেই চরিত্রের জন্ম হয়।"[62][lower-alpha 7]
চলচ্চিত্রটি ছিল মেবল্স স্ট্রেঞ্জ প্রেডিকামেন্ট, কিন্তু "দ্য ট্রাম্প" চরিত্রটির প্রথম পর্দায় আত্মপ্রকাশ করে কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস ম্যাবেল্স স্ট্রেঞ্জ প্রেডিকামেন্ট চলচ্চিত্রের পরে চিত্রায়িত হলেও দুই দিন পূর্বে মুক্তি পায়।[64] চ্যাপলিন এই চরিত্রটিকে তার পর্দা ব্যক্তিত্ব হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী চলচ্চিত্রে এই চরিত্র নিয়ে গল্প রচনার প্রস্তাব দেন। কিন্ত তার পরিচালকেরা তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।[65] তার একাদশ চলচ্চিত্র মেবল অ্যাট দ্য হুইল চিত্রায়নের সময় তিনি পরিচালক মেবল নরম্যান্ডের সাথে ঝগড়া করেন এবং তার চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতে চান। প্রদর্শকদের কাছ থেকে চ্যাপলিনের আরও চলচ্চিত্রের ফরমায়েশ পেয়ে সেনেট তাকে রেখে দেন। সিনেট চ্যাপলিনকে পরবর্তী চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি দেন কিন্তু চ্যাপলিন এই মর্মে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে চলচ্চিত্রটি অসফল হলে তিনি সেনেটকে ১,৫০০ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিবেন।[66]
কট ইন দ্য রেইন চলচ্চিত্র ১৯১৪ সালে ৪ঠা মে মুক্তি পায়। এটি ছিল চ্যাপলিনের পরিচালনায় অভিষেক এবং এটি ব্যাপক সফলতা লাভ করে।[67] এরপর থেকে তিনি কিস্টোনের যেকয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সেগুলো পরিচালনাও করেন।[68] তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন,[69] এবং তিনি এই সময়টাকে তার কর্মজীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর সময় বলে উল্লেখ করেন।[70] চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রে কিস্টোনের পূর্ববর্তী চলচ্চিত্রের চেয়ে হাস্যরসের কমতি দেখা যায়,[64] কিন্তু তিনি বিশাল ভক্তকূল সৃষ্টি করতে সমর্থ হন।[71] ১৯১৪ সালের নভেম্বরে তিনি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র টিলিস পাঙ্কচার্ড রোম্যান্স-এ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি পরিচালনা করেন ম্যাক সেনেট এবং এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মারি ড্রেসলার। ছবিটি ব্যবসা সফল হয় এবং চ্যাপলিনের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়।[72] যখন বছর শেষে চ্যাপলিনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসে, তিনি প্রতি সপ্তাহে ১,০০০ মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক চান, কিন্তু তা অনেক বেশি বলে সেনেট তাকে ফিরিয়ে দেন।[73]
এসানে স্টুডিওজ
শিকাগোর এসানে ফিল্ম ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি চ্যাপলিনকে চুক্তিতে ১০,০০০ মার্কিন ডলার বোনাসসহ প্রতি সপ্তাহে ১,২৫০ মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দেয়। তিনি ১৯১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে এই স্টুডিওতে যোগদান করেন।[74] এখানে তিনি নিয়মিত অভিনেতা লিও হোয়াইট, বাড জেমিসন, প্যাডি ম্যাকগুইয়ার ও বিলি আর্মস্ট্রংদের সাথে স্টক কোম্পানি গঠন করেন। তিনি কিছু দিন পরেই প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে এডনা পারভায়েন্সকে নিয়োগ দেন। পারভায়েন্সের সাথে চ্যাপলিন নিউ ইয়র্কের একটি ক্যাফেতে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে তার সৌন্দর্যের জন্য তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। আট বছরে তিনি চ্যাপলিনের সাথে ৩৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন;[75] এই জুটির মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে ওঠে, যার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯১৭ সালে।[76]

চ্যাপলিন তার চলচ্চিত্রে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন এবং প্রতিটি চলচ্চিত্রে আরও বেশি সময় ও যত্ন প্রদান করেন।[77] এসানের হয়ে চ্যাপলিনের নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র হিজ নিউ জব। চলচ্চিত্রের শিরোনাম দিয়ে চ্যাপলিনের নতুন চাকরির বিষয়টিও বুঝানো হয়। এক মাসের ব্যবধানের তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র আ নাইট আউট এবং তৃতীয় চলচ্চিত্র দ্য চ্যাম্পিয়ন মুক্তি পায়।[78] চ্যাপলিনের এসানে স্টুডিওজের ১৪টি চলচ্চিত্রের শেষ ৭টি চলচ্চিত্র এরূপ ধীর গতিতেই নির্মিত হয়।[79] চ্যাপলিন তার পর্দা ব্যক্তিত্বও পরিবর্তন করতে শুরু করেন, যা কিস্টোনকে এর "নীচ, অমার্জিত, বর্বর" প্রকৃতির সমালোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করে।[80] ধীরে ধীরে চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো আরও ভদ্র ও প্রণয়ধর্মী হয়ে ওঠে;[81] দ্য ট্রাম্প (এপ্রিল ১৯১৫) চলচ্চিত্রটিকে তার এই নতুনত্বের সন্ধিক্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়।[82]
১৯১৫ সালে চ্যাপলিন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনন্য ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। তাকে কার্টুন ও কমিক স্ট্রিপে দেখা যায়, এবং তাকে নিয়ে কয়েকটি গানও রচিত হয়।[83] জুলাই মাসে মোশন পিকচার ম্যাগাজিন-এর এক সাংবাদিক লিখেন আমেরিকা জুড়ে "চ্যাপলিনিটিস" ছড়িয়ে পড়েছে।[84] তার খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে, তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের প্রথম আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে ওঠেন।[85] ১৯১৫ সালে এসানে স্টুডিওজের সাথে তার চুক্তি শেষ হয়ে গেলে,[86][lower-alpha 8] চ্যাপলিন তার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে পরবর্তী স্টুডিওর কাছে চুক্তিকালীন ১৫০,০০০ মার্কিন ডলার বোনাসের অনুরোধ করেন। তিনি ইউনিভার্সাল, ফক্স, ও ভিটাগ্রাফ স্টুডিওজ থেকে প্রস্তাব পান, কিন্তু মিউচুয়াল ফিল্ম কর্পোরেশনের প্রতি সপ্তাহে ১০,০০০ মার্কিন ডলারের প্রস্তাবই তার কাছে সেরা মনে হয়।[88]
মিউচুয়াল ফিল্ম

মিউচুয়াল ফিল্মের সাথে চ্যাপলিনের বাৎসরিক ৬৭০,০০০ মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়।[89] রবিনসন বলেন চ্যাপলিন তার ২৬ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহীতা হয়ে ওঠেন।[90] তার এই এত পারিশ্রমিক জনগণকে অবাক করে দেয় এবং তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।[91] মিউচুয়ালের প্রধান জন আর. ফ্রেউলার এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা জনাব চ্যাপলিনকে এত বেশি পারিশ্রমিক দিতে রাজি হয়েছি কারণ দর্শক চ্যাপলিনকে চায় এবং তাঁর পিছনে খরচ করবে।।"[92]
মিউচুয়াল চ্যাপলিনকে তার কাজের জন্য তাদের ১৯১৬ সালের মার্চ মাসে উদ্বোধন করা লস অ্যাঞ্জেলেসের স্টুডিও দিয়ে দেয়।[93] চ্যাপলিন তার স্টক কোম্পানিতে আরও দুজন সদস্য যোগ করেন। তারা হলেন আলবার্ট অস্টিন এবং এরিক ক্যাম্পবেল।[94] চ্যাপলিন দুই রিলের দ্য ফ্লোরওয়াকার, দ্য ফায়ারম্যান, দ্য ভ্যাগাবন্ড, ওয়ান এ.এম., এবং দ্য কাউন্ট চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।[95] দ্য পনশপ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি হেনরি বার্গম্যানকে নিয়ে আসেন। বার্গম্যান পরে চ্যাপলিনের সাথে ৩০ বছর অভিনয় করেন।[96] বিহাইন্ড দ্য স্ক্রিন ও দ্য রিংক ছিল ১৯১৬ সালে নির্মিত চ্যাপলিনের শেষ দুটি চলচ্চিত্র। মিউচুয়ালের চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত হয় যে চ্যাপলিন প্রতি চার সপ্তাহে একটি দুই রিলের চলচ্চিত্র মুক্তি দিবে। পরের বছরে চ্যাপলিন আরও বেশি সময় চান।[97] তিনি ১৯১৭ সালের প্রথম দশ মাসে মিউচুয়াল থেকে মাত্র চারটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন। চলচ্চিত্রগুলো হল ইজি স্ট্রিট, দ্য কিউর, দি ইমিগ্র্যান্ট, এবং দি অ্যাডভেঞ্চারার।[98] চ্যাপলিন বিশেষজ্ঞদের মতে অত্যন্ত যত্নসহকারে নির্মিত এই চলচ্চিত্রসমূহ তার সুন্দর কাজের মধ্যে অন্যতম।[99][100] পরবর্তীতে চ্যাপলিন বলেন মিউচুয়ালের সাথে তার কর্মজীবনের দিনগুলো ছিল তার সবচেয়ে সুখী সময়।[101] যাই হোক, চ্যাপলিন আরও অনুভব করেন যে চুক্তির সময়কালে এই চলচ্চিত্রসমূহ খুবই সূত্রধর্মী হয়ে গেছে এবং তিনি কাজের পরিবেশ নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট ছিলেন।[102]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান না করার জন্য চ্যাপলিনকে নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।[103] তিনি আত্মরক্ষার জন্য বলেন যে যদি তাকে ডাকা হয়, তবে তিনি ব্রিটেনের হয়ে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত, এবং তিনি মার্কিন ড্রাফটে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু কোন দেশ থেকেই তাকে ডাকা হয় নি।[lower-alpha 9] এই সমালোচনা স্বত্তেও চ্যাপলিন সৈন্যদলে জনপ্রিয় ছিলেন,[105] এবং তার জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে। হারপার্স উয়িকলি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে চার্লি চ্যাপলিন নামটি "প্রায় সকল দেশের ভাষার একটি অংশ" হয়ে ওঠেছিল, এবং দ্য ট্রাম্প মূর্তিটি "বৈশ্বিকভাবে পরিচিত" হয়ে ওঠেছিল।[106] ১৯১৭ সালে পেশাদারী চ্যাপলিনের অনুকরণকারীর সংখ্যা এত পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যে তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন,[107] এবং প্রতিবেদনে প্রকাশ হয় যে বিভিন্ন পার্টিতে অংশগ্রহণ করা দশজনের মধ্যে নয়জনই দ্য ট্রাম্পের মত পোশাক পরিধান করত।[108] একই বছর, বোস্টন সোসাইটির মনস্তাত্বিক গবেষণায় দেখা যায় চ্যাপলিন "মার্কিন ঘোর"-এ পরিণত হয়েছে।[108] অভিনেত্রী মিনি ম্যাডের্ন ফিস্কে লিখেন যে "সংস্কৃতিমনা ও শিল্পমনা ব্যক্তিদের একটি দল এই তরুণ ইংরেজ ভাঁড় চার্লি চ্যাপলিনকে অসাধারণ অভিনয়শিল্পী এবং কমিক প্রতিভা মনে করতে শুরু করে।"[106]
১৯১৮-১৯২২: ফার্স্ট ন্যাশনাল

চ্যাপলিনের কাজের পরিমাণ কমতে থাকলেও মিউচুয়াল ধৈর্য ধারণ করে এবং আপসেই তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তার চলচ্চিত্রের মান কমে যাচ্ছে এই পূর্ব কথিত বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চ্যাপলিন এমন পরিবেশক খুঁজছিলেন যেখান থেকে তিনি তার কাজের স্বাধীনতা লাভ করবেন। তার একান্ত সচিব সিডনি চ্যাপলিন গণমাধ্যমকে জানান, "চার্লিকে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে তাঁর নিজের মত যত সময় এবং অর্থ প্রয়োজন তা দিতে হবে... আমদের বিবেচ্য বিষয় মান, পরিমাণ নয়।"[109] ১৯১৭ সালের জুনে ফার্স্ট ন্যাশনাল এক্জিবিটর্স সার্কিটের সাথে চ্যাপলিনের আটটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়।[110] চ্যাপলিন তার নিজের স্টুডিও নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সানসেট বলেভার্ডে অবস্থিত পাঁচ একর জমিতে তিনি উন্নত নির্মাণ ব্যবস্থা সম্পন্ন স্টুডিও নির্মাণ করেন।[111] ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়, এবং চ্যাপলিনকে তার চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়।[112]
তার নতুন চুক্তির প্রথম চলচ্চিত্র, আ ডগ্স লাইফ, ১৯১৮ সালের এপ্রিলে মুক্তি পায়। চ্যাপলিন এতে গল্পের কাঠামোর পরিবর্তন করেন এবং দ্য ট্রাম্পকে "ঢিলা আলখাল্লা-পরিহিত শ্বেতমুখ ভাঁড়" হিসেবে উপস্থাপন করেন।[113] লুইস দেলুচ এই চলচ্চিত্রটিকে "চলচ্চিত্রে প্রথম শিল্পের পূর্ণ রূপ" বলে অভিহিত করেন।[114] চ্যাপলিন পরে তৃতীয় লিবার্টি বন্ড প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এবং একমাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন।[115] তিনি দ্য বন্ড নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রচারণামূলক চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন, এবং এ থেকে সংগৃহীত অর্থ সরকারের তহবিলে দান করেন।[116] চ্যাপলিনের পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল যুদ্ধভিত্তিক সোল্ডার আর্ম্স। তার সহযোগীরা তাকে যুদ্ধ নিয়ে হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু তিনি পরে বলেন, "বিপজ্জনক কিনা জানি না, তবে কাজটি আমার কাছে রোমাঞ্চকর ছিল।"[117] ৪৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি নির্মাণ করতে তিনি চার মাস সময় নেন। ছবিটি ১৯১৮ সালের অক্টোবরে মুক্তি পায় এবং ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়।[118]
ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স ও মিলড্রেড হ্যারিস
সোল্ডার আর্মস মুক্তির পর চ্যাপলিন ফার্স্ট ন্যাশনালের কাছে আরও অর্থ প্রদানের অনুরোধ করেন, কিন্তু ফার্স্ট ন্যাশনাল তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। চলচ্চিত্রের মানের ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহ দেখে চ্যাপলিন হতাশ হন এবং কোম্পানিটির ফেমাস প্লেয়ার্স-লেস্কির সাথে যুক্ত হওয়ার গুজব শুনে তিনি কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস, ম্যারি পিকফোর্ড ও ডি ডব্লিউ গ্রিফিথের সাথে মিলে একটি নতুন পরিবেশনা কোম্পানি চালু করেন। নতুন কোম্পানি - ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে চালু হয়।[119] চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এই প্রতিষ্ঠান বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে, এর চারজন অংশীদারই ছিলেন সৃজনশীল শিল্পী এবং নিজেরাই তাদের চলচ্চিত্রের জন্য অর্থায়ন করতেন এবং নিজেদের চলচ্চিত্রের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন।[120] চ্যাপলিন নতুন কোম্পানির হয়ে কাজ শুরু করতে উৎসুক ছিলেন এবং ফার্স্ট ন্যাশনালকে তাদের চুক্তির টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দেন। ফার্স্ট ন্যাশনাল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তাকে তার বাকি ছয়টি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তাড়া দেয়।[121]
ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স প্রতিষ্ঠার পূর্বে চ্যাপলিন প্রথম বিয়ে করেন। স্যামুয়েল গোল্ডউইনের এক পার্টিতে ১৭ বছর বয়সী অভিনেত্রী মিলড্রেড হ্যারিসের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। কিছুদিন পর হ্যারিস চ্যাপলিনকে জানায় যে তার গর্ভে চ্যাপলিনের সন্তান। ফলে কোন প্রকার বিতর্কে না জড়াতে চেয়ে চ্যাপলিন ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরে লস অ্যাঞ্জেলেসে হ্যারিসকে বিয়ে করেন।[122] পরে জানতে পারেন আসলে হ্যারিসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর মিথ্যা ছিল।[123] চ্যাপলিন এই বিয়েতে সুখী ছিলেন না, এবং মনে করতে শুরু করেন যে এই বিয়ে তার সৃষ্টিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এর ফলে সানিসাইড চলচ্চিত্র নির্মাণে তাকে খুবই বেগ পেতে হয়।[124] হ্যারিস ততদিনে তার ঔরসজাত সন্তান গর্ভে ধারণ করেন এবং ১৯১৯ সালে ৭ই জুলাই একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন। তার পুত্র নরম্যান স্পেন্সার চ্যাপলিন মাত্র তিন দিনের মধ্যে মারা যায়।[125] ১৯২০ সালের এপ্রিলে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং চ্যাপলিন তার আত্মজীবনীতে এই প্রসঙ্গে লিখেন যে তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মিল ছিল না।[126]
দ্য কিড

সন্তান হারানো তার কাজের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তিনি একটি চলচ্চিত্রের পরিকল্পনা করেন যেখানে দ্য ট্রাম্প একটি বাচ্চার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিবে।[127] নতুন চলচ্চিত্রের জন্য তিনি হাস্যরসাত্মক কিছুর করার চেয়ে বেশি কিছু ভাবেন। লোভিশ এক বিষয়টিকে "একটি পরিবর্তিত পৃথিবীতে তার পদাঙ্ক রেখা যাওয়া" বলে অভিহিত করেন।[128] দ্য কিড চলচ্চিত্রে চিত্রায়ন শুরু হয় ১৯১৯ সালের আগস্ট মাসে। চার বছর বয়সী জ্যাকি কুগ্যান ছিলেন তার সহ অভিনেতা।[129] চ্যাপলিন ধারণা করেছিলেন যে এই চলচ্চিত্রটি একটি বড় কাজে মোড় নিবে এবং ফার্স্ট ন্যাশনালকে সন্তুষ্ট করা যাবে। তাই তিনি এই চলচ্চিত্রের নির্মাণ বন্ধ করে দ্রুত আ ডেজ প্লেজার চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন শুরু করেন।[130] আ ডেজ প্লেজার ছবিটি ১৯১৯ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পায়।[131] দ্য কিড নির্মাণে সময় লাগে নয় মাস এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯২০ সালের মে মাসে। ৬৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের দ্য কিড ছিল সে সময় পর্যন্ত চ্যাপলিনের দীর্ঘতম চলচ্চিত্র।[132] দারিদ্র ও পিতামাতা ও সন্তানের আলাদা হয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটি চ্যাপলিনের নিজের শৈশব থেকে অনুপ্রাণিত বলে ধারণা করা হয়।[112] এটি হাস্যরসাত্মক ও নাট্য সম্বলিত চলচ্চিত্র ধারার প্রথমদিকের অন্যতম চলচ্চিত্র।[133] ছবিটি ১৯২১ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পায় এবং ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। ১৯২৪ সালের মধ্যে চলচ্চিত্রটি পঞ্চাশের বেশি দেশে প্রদর্শিত হয়।[134]
চ্যাপলিন তার পরবর্তী চলচ্চিত্রের জন্য পাঁচ মাস সময় নেন। ১৯২১ সালের সেপ্টেম্বরের দুই রিল ওয়ালা দি আইডল ক্লাস মুক্তি পায়।[120] ছবিটি মুক্তির পর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর তিনি প্রথম ইংল্যান্ডে যেতে চান।[135] তিনি পরবর্তীতে ফার্স্ট ন্যাশনালের সাথে চুক্তির বাকি কাজ শেষ করেন। পে ডে ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পায়। ফার্স্ট ন্যাশনালের অধীনে তার শেষ চলচ্চিত্র দ্য পিলগ্রিম (১৯২৩) স্টুডিওটির সাথে পরিবেশকদের অসম্মতির জন্য মুক্তি পেতে দেরী হয় এবং প্রায় এক বছর পরে মুক্তি পায়।[136]
১৯২৩-৩৮: নির্বাক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
আ ওম্যান অব প্যারিস ও দ্য গোল্ড রাশ
ফার্স্ট ন্যাশনালের সাথে চ্যাপলিনের চুক্তি শেষ হলে তিনি স্বাধীন প্রযোজক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করার সুযোগ লাভ করেন। ১৯২২ সালের নভেম্বর মাসে তিনি আ ওম্যান অব প্যারিস চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন শুরু করেন। এটি হল দুর্ভাগ্যজনক প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যকার প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র।[137] চ্যাপলিন চেয়েছিলেন এই চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে এডনা পারভায়েন্সকে তারকা খ্যাতি এনে দিতে,[138] এবং তিনি নামেমাত্র ও অনুল্লেখিত একটি ছোট অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন।[139] তিনি এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাস্তবধর্মী অনুভূতি প্রদানের ইচ্ছাপোষণ করেন এবং অভিনয়শিল্পীদের সংযত অভিনয় করার নির্দেশ প্রদান করেন। বাস্তব জীবনে তিনি এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলেন, "নারী-পুরুষেরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করা উপায় না খুঁজে তা লুকিয়ে রাখে।"[140] আ ওম্যান অব প্যারিস চলচ্চিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং চলচ্চিত্রে তার চাতুর্যময় কৌশলের কারণে তা প্রশংসিত হয়, কারণ এই কৌশল তখন অভিনব ছিল।[141] জনগণ চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রে চ্যাপলিনের অনুপস্থিতির কারণে এই ছবি দেখায় তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে নি, ফলে এটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।[142] চ্যাপলিন এই ব্যর্থতায় কষ্ট পান, কারণ তিনি প্রযোজক হিসেবে নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন এবং এর চূড়ান্ত রূপেও খুশি ছিলেন, কিন্তু আ ওম্যান অব প্যারিস তেমন ব্যবসা করতে না পারায় ছবিটি প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে নেন।[143]

চ্যাপলিন পুনরায় হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র নির্মাণে ফিরে আসেন। তিনি তার গল্প ও নির্মাণের মানদণ্ড বৃদ্ধি করেন এবং বলেন, "পরবর্তী চলচ্চিত্র হবে মহাকাব্যিক! সেরা!"[144] ১৮৯৮ সালের ক্লোন্ডিক গোল্ড রাশ চিত্র এবং পরে ১৮৪৬-৪৭ সালের ডোনার পার্টির গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নির্মাণ করেন দ্য গোল্ড রাশ। জেফ্রি ম্যাকন্যাব এই চলচ্চিত্রের ব্যাপারে বলেন, "ভয়ানক একটি বিষয়বস্তু থেকে নির্মিত মহাকাব্যিক হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র।"[145] দ্য গোল্ড রাশ চলচ্চিত্রে দ্য ট্রাম্প একজন নিঃসঙ্গ অনুসন্ধানী, যে প্রতিকূলতা বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায়। শিকাগোর একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা জিতে হলিউডে আসা নতুন অভিনেত্রী জর্জিয়া হেলকে নিয়ে চ্যাপলিন এই চলচ্চিত্রের নির্মাণ শুরু করেন ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।[146] বিভিন্ন লোকেশনে চিত্রায়ন, ট্রাকি পর্বতে ৬০০ জন অতিরিক্ত ব্যক্তি, দামী সেট ও বিশেষ ইফেক্টস সহকারে[147] এই চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় হয় প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার।[148] চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে সময় লাগে ১৫ মাস এবং শেষ দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল ১৯২৫ সালের মে মাসে।[149]
চ্যাপলিন মনে করেন দ্য গোল্ড রাশ সেই সময়ে তার নির্মিত সেরা চলচ্চিত্র।[150] ছবিটি ১৯২৫ সালের আগস্ট মাসে মুক্তি পায় এবং ৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের তালিকায় প্রবেশ করে।[151] এই চলচ্চিত্রে চ্যাপলিন অভিনীত কয়েকটি বিখ্যাত দৃশ্য রয়েছে, যেমন দ্য ট্রাম্প তার জুতা খাচ্ছে এবং জর্জিয়ার সাথে তার নৃত্য।[152] ম্যাকন্যাব এই চলচ্চিত্রকে "আবশ্যকীয় চ্যাপলিনের চলচ্চিত্র" বলে উল্লেখ করেন।[153] এই চলচ্চিত্র মুক্তিকালে চ্যাপলিন বলেন, "আমি এই চলচ্চিত্র দিয়ে স্মরণীয় হতে চাই।"[154]
লিটা গ্রে ও দ্য সার্কাস

দ্য গোল্ড রাশ চলচ্চিত্র নির্মাণকালে চ্যাপলিন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। চ্যাপলিন যখন লিটা গ্রের সাথে পরিচিত হন তখন লিটা ছিলেন কিশোরী। তাকে মূলত এই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল, কিন্তু তার হঠাৎ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাওয়ায় তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। লিটার বয়স ছিল ১৬ এবং চ্যাপলিনের ৩৫, ক্যালিফোর্নিয়া আইনের অধীনে চ্যাপলিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দাখিল হতে পারত।[155] ১৯২৪ সালের ২৫শে নভেম্বর মেক্সিকোতে তিনি বিয়ের আয়োজন করেন।[156] তাদের প্রথম সন্তান চার্লস চ্যাপলিন জুনিয়র ১৯২৫ সালের ৫ই মে জন্মগ্রহণ করে এবং এরপর ১৯২৬ সালের ৩০শে মার্চ সিডনি আর্ল চ্যাপলিন জন্মগ্রহণ করেন।[157]
তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না এবং চ্যাপলিন দীর্ঘ সময় স্টুডিওতে কাটাতেন যেন তার স্ত্রীর সাথে দেখা না হয়।[158] ১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে গ্রে তার সন্তানদের নিয়ে চ্যাপলিনের কাছ থেকে চলে যান।[159] গ্রের অভিযোগ ছিল চ্যাপলিন তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে ও তার "বিকৃত যৌন ইচ্ছা" রয়েছে। ফলে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয় এবং এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।[160][lower-alpha 10] এই ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি দল তার চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করে দিতে চাইলে তিনি অস্থির সময় পার করেন।[162] আরও কোন কুৎসা থেকে বাঁচতে, চ্যাপলিনের আইনজীবী ৬০০,০০০ মার্কিন ডলার নগদ অর্থের বিনিময়ে এই মামলার মীমাংসা করতে সম্মত হন, যা ছিল সেই সময়ে মার্কিন আদালতে সর্বোচ্চ আর্থিক দণ্ড।[163] তার ভক্তকূল যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল এবং তারা অতি দ্রুতই এই ঘটনা ভুলে যান, কিন্তু চ্যাপলিন এতে মারাত্মকভাবে আহত হন।[164]
বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দাখিলের পূর্বে চ্যাপলিন দ্য সার্কাস চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন।[165] সার্কাসে দড়ির উপর দিয়ে হাঁটাকে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয়, যেখানে বানরের তাড়া খেয়ে দ্য ট্রাম্প সার্কাসে প্রবেশ করে এবং তারকা বনে যায়।[166] বিবাহ বিচ্ছেদ জনিত জটিলতার কারণে দশ মাসের জন্য চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন বাতিল হয়েছিল,[167] এবং নির্মাণ কালে স্টুডিওতে আগুন লাগাসহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছিল।[168] অবশেষে ১৯২৭ সালের অক্টোবরে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং ১৯২৮ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পেলে চলচ্চিত্রটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে।[169] ১ম একাডেমি পুরস্কারে "দ্য সার্কাস চলচ্চিত্রে অভিনয়, এর লেখনী, পরিচালনা, ও প্রযোজনায় ভিন্নতা ও প্রতিভার" স্বাক্ষর স্বরূপ চ্যাপলিনকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।[170] এত সাফল্যের পরেও চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সাথে জড়িত সমস্যা ও চাপের কারণে চ্যাপলিন তার আত্মজীবনী থেকে দ্য সার্কাস চলচ্চিত্রটিকে বাদ দেন এবং পরবর্তীতে এই চলচ্চিত্রে নতুনভাবে সুরারোপ করার সময়ও ঝামেলা পোহান।[171]
সিটি লাইট্স
সার্কাস মুক্তির সময়কালে হলিউড সবাক চলচ্চিত্রের সাথে পরিচিতি লাভ করে। চ্যাপলিন এই নতুন মাধ্যমের ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন না এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা ঘাটতির কারণে তিনি মনে করতেন সবাক চলচ্চিত্রে নির্বাক চলচ্চিত্রের শৈল্পিক গুণের ঘাটতি থাকবে।[172] পাশাপাশি তিনি তাকে সফলতা এনে দেওয়া সূত্রও পরিবর্তন করতে চাননি,[173] এবং দ্য ট্রাম্প চরিত্রে কণ্ঠদান করলে তার বৈশ্বিক আবেদন কমে যাবে এই ভয় পান।[174] তিনি তাই হলিউডের নতুন উন্মাদনা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নতুন নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করে। চ্যাপলিন তার এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে উদ্ধিগ্ন ছিলেন এবং এই চলচ্চিত্র নির্মাণের পুরো সময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে কাটান।[174]

১৯২৮ সালে শেষের দিকে যখন চিত্রায়ন শুরু করেন, তার পূর্বে চ্যাপলিন প্রায় এক বছর গল্প নিয়ে কাজ করেন।[175] সিটি লাইট্স ছবিটি ট্রাম্পের এক অন্ধ ফুলওয়ালী যুবতীর প্রেমে পড়া এবং তার চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে আনতে তার চেষ্টার গল্প। এতে ফুলওয়ালী চরিত্রে অভিনয় করেন ভার্জিনিয়া চেরিল। এই নির্মাণ কাজে বেশ বাধা-বিপত্তি আসে এবং শেষ হতে সময় লাগে ২১ মাস।[176] চ্যাপলিন পরে এই প্রসঙ্গে বলেন তিনি পরিপূর্ণতা আনার জন্য নিজে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন এবং এমনকি তিনি স্নায়ুরোগে ভোগার মত অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন।[177] সবাক প্রযুক্তির একটি সুবিধা তিনি গ্রহণ করেন এবং তা হল চলচ্চিত্রের সুর। তিনি নিজেই এই চলচ্চিত্রের সুরারোপ করেন।[177][178]
চ্যাপলিন ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে সিটি লাইট্স চলচ্চিত্রের সম্পাদনা শেষ করেন।[179] এই সময়ে নির্বাক চলচ্চিত্র বিপর্যয়ের দিকে যেতে শুরু করে। জনসম্মুখে এই চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী তেমন সফলতা এনে না দিলেও তা গণমাধ্যমের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া লাভ করে। একজন সাংবাদিক লিখেন, "চার্লি চ্যাপলিন ছাড়া বিশ্বে অন্য কেউ এমন কাজ করতে পারবে না। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার সবাক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ধারাকে অবজ্ঞা করে এই ধরনের অদ্ভুত কিছু, যা "দর্শকের আবেদন" নামে পরিচিত, করার যথেষ্ট গুণাবলী রয়েছে।"[180] ১৯৩১ সালে সর্বসাধারণের জন্য মুক্তি দেওয়ার পর সিটি লাইট্স জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করে বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়।[181] ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এই চলচ্চিত্রটিকে চ্যাপলিনের সুন্দরতম কাজ বলে উল্লেখ করেন এবং সমালোচক জেমস অ্যাগি শেষ দৃশ্যের প্রশংসা করে বলেন, এটি "চলচ্চিত্রের জন্য নির্মিত অভিনয়ের সেরা দৃশ্য এবং সুন্দরতম মুহূর্ত।"[182][183] সিটি লাইট্স চ্যাপলিনের ব্যক্তিগত প্রিয় চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে এবং তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই পছন্দ বজায় থাকে।[184]
ভ্রমণ, পলেট গডার্ড ও মডার্ন টাইমস
সিটি লাইট্স সফলতা অর্জন করলেও চ্যাপলিন সংলাপহীন আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। সংলাপ তার চলচ্চিত্রে তেমন কাজে দেবে না, তিনি তার এই সিদ্ধান্তে অটল রইলেন, কিন্তু আবার তিনি সেকেলে রয়ে যাওয়ার ভয়েও ভীত ছিলেন।[185] এই অনিশ্চয়তা স্বত্ত্বেও তিনি ১৯৩১ সালের শুরুর দিকে ছুটি কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৬ মাস বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন।[186][lower-alpha 11] তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেন যে লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেরার পর তিনি দ্বিধান্বিত ছিলেন এবং তার কোন পরিকল্পনা ছিল না, এবং অশান্ত ও একাকীত্বের কারণে বিচার-বুদ্ধিহীন হয়ে পড়েন। তিনি কিছু সময় অবসর গ্রহণের কথাও ভাবেন এবং চীনে চলে যান।[189]

চ্যাপলিনে একাকীত্ব কাটে যখন ১৯৩২ সালের জুলাইয়ে ২১ বছর বয়সী পলেট গডার্ডের সাথে তার সাক্ষাৎ হয় এবং তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান।[191] চ্যাপলিন নতুন কোন চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না এবং তার ভ্রমণের উপর একটি ধারাবাহিক রচনা করতে থাকেন, যা ওম্যান্স হোম কম্প্যানিয়নে প্রকাশিত হয়।[192] এই ভ্রমণে কয়েকজন প্রখ্যাত চিন্তাবিদদের সাথে সাক্ষাতের ফলে তার উদ্দীপনামূলক অভিজ্ঞতার সঞ্চার হয় এবং তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[193] আমেরিকায় শ্রমিকদের অবস্থা তাকে পীড়া দিত, এবং তিনি ভাবতেন পুঁজিবাদ ও কর্মক্ষেত্রে মেশিনারির ব্যবহার বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দিবে। এই বিষয়গুলো তাকে নতুন একটি চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট নির্মাণে প্রেরণা যোগায়।[194]
চ্যাপলিন মডার্ন টাইমস চলচ্চিত্রটিকে "শ্রমশিল্প জীবনের নির্দিষ্ট কিছু অংশের ব্যঙ্গ" বলে ঘোষণা দেন।[195] এটি মহামন্দা সময়কালের পটভূমিতে চিত্রায়িত হয়, যেখানে দ্য ট্রাম্প ও গডার্ড এই মন্দা কবলিতদের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি নির্মাণে সময় লাগে সাড়ে দশ মাস।[196] চ্যাপলিন সংলাপের ব্যবহারের কথা ভাবেন কিন্তু রিহার্সালের সময় এই ভাবনা পরিবর্তন করেন। কিন্তু পূর্বের চলচ্চিত্রের মত এতেও কোন সংলাপ ছাড়া সুরারোপ করেন।[197] দ্য ট্রাম্প চরিত্রে চ্যাপলিনের একটি অস্পষ্ট শব্দযুক্ত গানে শুধু কিছু শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।[198] সঙ্গীত গ্রহণের পর ১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়।[199] তার ১৫ বছরের কর্মজীবনে এই চলচ্চিত্রে তিনি রাজনৈতিক ও সমাজ বাস্তবতা তুলে ধরেন।[200] এই বিষয়গুলো গণমাধ্যমে আলোচিত হয়, যদিও চ্যাপলিন এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাননি।[201] এই ছবিটি পূর্বের ছবিটি থেকে কম আয় করে এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে। অনেক দর্শক ছবিতে রাজনীতি নিয়ে আসা পছন্দ করেননি।[202] ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট মডার্ন টাইমসকে চ্যাপলিনের "অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র" বলে উল্লেখ করে,[182] এবং ডেভিড রবিনসন বলেন এতে চলচ্চিত্র নির্মাতা "দৃশ্য কৌতুকাভিনয়ের স্রষ্টা হিসেবে তাঁর অতুলনীয় দক্ষতা" প্রদর্শন করেছেন।[203]
মডার্ন টাইমস মুক্তির পর চ্যাপলিন গডার্ডকে নিয়ে দূর প্রাচ্যে ভ্রমণে যান।[204] তারা তাদের সম্পর্কের বিষয়ে মুখ খোলতে নারাজ ছিলেন এবং তারা বিবাহিত ছিলেন কিনা সেটাও জানা যায়নি।[205] পরবর্তীতে চ্যাপলিন জানান তারা এই ভ্রমণকালে ক্যান্টনে বিয়ে করেন।[206] ১৯৩৮ সালে তাদের কাজের ব্যস্ততার কারণে একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন, যদিও গডার্ড চ্যাপলিনের পরবর্তী চলচ্চিত্র দ্য গ্রেট ডিক্টেটর-এর প্রধান নারী ভূমিকায় অভিনয় করেন। গডার্ড ১৯৪২ সালে মেক্সিকোতে চ্যাপলিনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন এবং কারণ হিসেবে তিনি অসামঞ্জস্যতা ও এক বছরের অধিক সময় ধরে দূরত্বের কথা উল্লেখ করেন।[207]
১৯৩৯-১৯৫২: বিতর্ক ও জনপ্রিয়তা হ্রাস
দ্য গ্রেট ডিক্টেটর

১৯৪০ এর দশকে চ্যাপলিন তার কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্কের মুখোমুখি হন। এই বিতর্ক তার ভাগ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। প্রথমত তিনি তার রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশের সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য বিতর্কিত হন। তিনি ১৯৩০ এর দশকে বিশ্ব রাজনীতিতে সেনাশাসিত জাতীয়তাবোধে বিরক্ত ছিলেন,[208] এবং ভাবেন এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।[209] তার ও আডলফ হিটলারের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ছিল। বিশ্বব্যাপী সকলে এই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল। এমনকি এই দুজন মাত্র চারদিনের ব্যবধানে জন্মগ্রহণ করেন, দুজনেই দারিদ্রতার কষাঘাতে বেড়ে ওঠেন ও সারাবিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেন, এবং দুজনের একই ধরনের টুথব্রাশ গোঁফ ছিল। এই শারীরিক সদৃশ্য চ্যাপলিনকে তার পরবর্তী চলচ্চিত্রের গল্প রচনায় সাহায্য করে। তার এই চলচ্চিত্র দ্য গ্রেট ডিক্টেটর-এ তিনি সরাসরি হিটলারকে ব্যঙ্গ করেন এবং ফ্যাসিবাদকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন।[210]
এই চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি রচনা করতে চ্যাপলিনের দুই বছর সময় লাগে,[211] এবং তিনি ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ছয় দিন পর এই চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন শুরু করেন।[212] তিনি অবশেষে তার চলচ্চিত্রে সংলাপের ব্যবহার না করে পারলেন না, কারণ তার আর কোন উপায় ছিল না, পাশাপাশি তিনি বুঝতে পারেন যে রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দিতে এটি অপেক্ষাকৃত ভাল পদ্ধতি।[213] হিটলারকে নিয়ে হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র নির্মাণ খুবই বিতর্কিত হয়, কিন্তু চ্যাপলিন তার আর্থিক স্বাধীনতার কারণে এই ঝুঁকি গ্রহণ করেন।[214] পরবর্তীতে তিনি লিখেন যে, "আমি এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, যাতে হিটলারকে হেয় করে দেখা হয়।"[215][lower-alpha 12] চ্যাপলিন দ্য ট্রাম্পকে একই পোশাকে রেখে একজন ইহুদি নাপিত রূপে উপস্থাপন করেন। দ্বৈত চরিত্রের অপর একটি চরিত্রে তিনি "অ্যাডিনয়েড হিঙ্কেল" ভূমিকায় অভিনয় করেন, যাকে হিটলারের ব্যঙ্গরূপ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।[216]
দ্য গ্রেট ডিক্টেটর নির্মাণে সময় লাগে এক বছর এবং এটি ১৯৪০ সালের অক্টোবরে মুক্তি পায়।[217] চলচ্চিত্রটি ব্যাপক প্রচারণা লাভ করে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন সমালোচক এটিকে "বছরের সবচেয়ে প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র" বলে উল্লেখ করেন এবং এটি এই যুগের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে।[218] ছবিটির শেষ দৃশ্য দর্শক প্রিয়তা লাভ করেনি এবং বিতর্কের জন্ম দেয়।[219] চ্যাপলিন পাঁচ মিনিটের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে ছবিটি শেষ করেন যেখানে তিনি তার নাপিত চরিত্র ত্যাগ করেন এবং সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে যুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমর্থন জানান।[220] চার্লস জে. মাল্যান্ড তার রাজনৈতিক মতাদর্শের এই প্রকাশ্য প্রচারকে তার জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণ বলে উল্লেখ করেন এবং লিখেন, "এরপর থেকে কোন চলচ্চিত্র ভক্ত তাঁর তারকা খ্যাতি থেকে রাজনৈতিক আদর্শকে পৃথক করতে পারবে না।"[221][lower-alpha 13] দ্য গ্রেট ডিক্টেটর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্য এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতাসহ পাঁচটি বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।[223]
আইনি ঝামেলা ও উনা ওনিল
১৯৪০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে চ্যাপলিন বেশ কিছু আইনি ঝামেলা জড়িয়ে পড়েন এবং এতে তার অনেক সময় ব্যয় হয় ও তার ভাবমূর্তির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।[224] এই ঝামেলার সূত্রপাত হয় উঠতি অভিনেত্রী জোন ব্যারির সাথে তার সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। তিনি ১৯৪১ সালের জুন থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত ব্যারির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িত ছিলেন।[225] তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার পর ব্যারি তার নিজের আচরণের জন্য দুইবার গ্রেফতার হন। পরের বছর তিনি দাবী করেন যে তিনি চ্যাপলিনের ঔরসজাত সন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন। চ্যাপলিন এই দাবীকে মিথ্যা বলার পর ব্যারি তার বিরুদ্ধে পিতৃত্বের মামলা করেন।[226]
তৎকালীন এফবিআই পরিচালক জে. এডগার হুভার দীর্ঘ দিন ধরে চ্যাপলিনের রাজনৈতিক চিন্তাধারা বিষয়ে সন্দেহ করে আসছিলেন। তিনি এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর সুযোগ নেন। চ্যাপলিনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার মিশ্র প্রচেষ্টা হিসেবে,[227] ব্যারির মামলার সাথে এফবিআই তার নামে চারটি অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগ চারটির মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ছিল যৌনকর্মের জন্য নারীদের রাষ্ট্রের সীমার বাইরে পাচার করা বিষয়ক "মান আইন" ভঙ্গকরণ।[lower-alpha 14] ইতিহাসবেত্তা অটো ফ্রিডরিখ একে "প্রাচীন বিধান"-এর "অলীক অভিযোগ" বলে অভিহিত করেন।[230] যদি তখন চ্যাপলিনকে দোষী সাব্যস্ত করা হত, তার ২৩ বছরের জেল হত।[231] তিনটি অভিযোগ পর্যাপ্ত প্রমাণাদির অভাবে আদালত পর্যন্ত যায়নি, কিন্তু ১৯৪৪ সালের মার্চে মান আইনের বিচার শুরু হয়। চ্যাপলিন দুই সপ্তাহ পরে আদালত থেকে খালাস পান।[228] সংবাদের শিরোনাম হিসেবে প্রায়ই এই মামলার খবর আসত। নিউজউয়িক এই খবরটিকে "১৯২১ সালের ফ্যাটি আর্বাকল হত্যা মামলার বিচারের পর সবচেয়ে বড় জনসংযোগ কেলেঙ্কারি" বলে উল্লেখ করে।[232]
১৯৪৪ সালের অক্টোবরে ব্যারির সন্তান ক্যারল অ্যান জন্মগ্রহণ করে এবং ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিতৃত্বের মামলা আদালতে দাখিল হয়। আদালতের বিচারকার্যে আইনজীবী তাকে "নৈতিকভাবে অসচ্চরিত্র" বলে উল্লেখ করে।[233] আদালতে দুটি দুরুহ বিচারকার্যের পর চ্যাপলিনকে এই সন্তানের পিতা বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। রক্ত পরীক্ষার প্রমাণাদির মাধ্যমে তার পিতৃত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হত না।[lower-alpha 15] বিচারক তাকে ক্যারল অ্যান ২১ বছর হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের অর্থ পরিশোধের আদেশ দেন। পিতৃত্বের মামলা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকে এফবিআই আরও প্রভাবিত করে। প্রখ্যাত কলামিস্ট হেডা হপারকে এই তথ্য দেওয়া হয় এবং তিনি চ্যাপলিনের তীব্র সমালোচনা করেন।[235]

চ্যাপলিনকে নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকে যখন শোনা যায় পিতৃত্বের মামলা দায়ের করার দুই সপ্তাহ পরে তিনি মার্কিন নাট্যকার ইউজিন ওনিলের ১৮ বছর বয়সী কন্যা উনা ওনিলকে বিয়ে করেন।[236] চ্যাপলিনের বয়স ছিল তখন ৫৪। সাত মাস পূর্বে চলচ্চিত্র প্রতিনিধি মিনা ওয়ালেস ওনিলকে চ্যাপলিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।[lower-alpha 16] চ্যাপলিন তার আত্মজীবনীতে লিখেন, "ওনিলের সাথে আমার সাক্ষাৎ ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত", এবং দাবী করেন তিনি "উপযুক্ত ভালবাসা" খুঁজে পান।[239] চ্যাপলিনের পুত্র চার্লস চ্যাপলিন জুনিয়র বলেন, উনা তার পিতাকে পূজা করত।[240] চ্যাপলিনের মৃত্যু পর্যন্ত তারা বিবাহিত ছিলেন এবং ১৮ বছরে তাদের আট সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাদের সন্তানেরা হলেন জেরাল্ডিন লেই চ্যাপলিন (জ. জুলাই ১৯৪৪), মাইকেল জন চ্যাপলিন (জ. মার্চ ১৯৪৬), জোসেফিন হান্নাহ চ্যাপলিন (জ. মার্চ ১৯৪৯), ভিক্টোরিয়া চ্যাপলিন (জ. মে ১৯৫১), ইউজিন অ্যান্থনি চ্যাপলিন (জ. আগস্ট ১৯৫৩), জেন সেসিল চ্যাপলিন (জ. মে ১৯৫৭), অ্যানেট এমিলি চ্যাপলিন (জ. ডিসেম্বর ১৯৫৯), এবং ক্রিস্টোফার জেমস চ্যাপলিন (জ. ১৯৬২)।[241]
মঁসিয়ে ভের্দু ও কমিউনিস্ট অভিযোগ

চ্যাপলিন দাবী করেন যে ব্যারির অভিযোগের বিচারকার্য তার "সৃষ্টিশীলতাকে পঙ্গু" করে দিয়েছিল। তিনি এই বিচারকার্যের কিছু দিন পরে তার নতুন চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন।[242] ১৯৪৬ সালের এপ্রিলে তিনি নতুন চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করেন, যা ১৯৪২ সাল থেকে শুরু করেছিলেন।[243] তার নির্মিত নতুন চলচ্চিত্র, মঁসিয়ে ভের্দু, ছিল একটি ব্ল্যাক কমেডি চলচ্চিত্র, যেখানে একজন ফরাসি ব্যাংক কেরানি ভের্দু তার চাকরি হারিয়ে তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য বিত্তশালী বিধবা মহিলাদের বিয়ে করে তাদের খুন করতে শুরু করে। চ্যাপলিনের এই চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা ছিল অরসন ওয়েলস, যিনি তাকে কেন্দ্র করে ফরাসি সিরিয়াল কিলার অঁরি দেসির লঁদ্রুকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। চ্যাপলিন সিদ্ধান্ত নেন যে এই বিষয়টি নিয়ে একটি "অসাধারণ হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র" নির্মাণ করা যাবে,[244] এবং এই ধারণার জন্য তিনি ওয়েলসকে ৫,০০০ মার্কিন ডলার প্রদান করেন।[245]
চ্যাপলিন মঁসিয়ে ভের্দু ছবিতে পুঁজিবাদের সমালোচনা করে আবার তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ফুটিয়ে তুলেন এবং যুক্তি প্রদর্শন করেন যে যুদ্ধ ও যুদ্ধাস্ত্রের মাধ্যমে গণহত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।[246] তার এই মতাদর্শের কারণে ছবিটি ১৯৪৭ সালের এপ্রিলে মুক্তি পাওয়ার পর বিতর্কের সৃষ্টি হয়।[247] ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে চ্যাপলিনকে অবজ্ঞা করা হয় এবং তাকে নিষিদ্ধ করার জন্য বলা হয়।[248] মঁসিয়ে ভের্দু চ্যাপলিনের একমাত্র চলচ্চিত্র, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমালোচনামূলক ও ব্যবসায়িক, কোন দিক থেকেই সফল হয়নি।[249] কিন্তু এটি দেশের বাইরে সফল হয়,[250] এবং চ্যাপলিনের চিত্রনাট্য ২০তম একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।[251] তিনি এই ছবিটি নিয়ে গর্বিত ছিলেন, এবং তার আত্মজীবনীতে লিখেন, "মঁসিয়ে ভের্দু ছিল আমার এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে চতুর ও বুদ্ধিদীপ্ত চলচ্চিত্র।"[252]
মঁসিয়ে ভের্দুর নেতিবাচক সমালোচনা চ্যাপলিনের ভাবমূর্তিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।[253] জোন ব্যারির সাথে কেলেঙ্কারির পাশাপাশি এই নেতিবাচকতার ফলে তার বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট মতাদর্শ প্রচারণার অভিযোগ ওঠে।[254] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে সহায়তার জন্য সেকেন্ড ফ্রন্ট খোলার লক্ষ্যে প্রচারণা চালান এবং বিভিন্ন সোভিয়েত-মার্কিন মৈত্রী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেন।[255] তিনি কয়েকজন সন্দেহভাজন কমিউনিস্টদের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে সোভিয়েত কূটনীতিকদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন।[256] ১৯৪০ এর দশকে আমেরিকার রাজনৈতিক অবস্থায় চ্যাপলিনের এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে লার্চার "মারাত্মক অগ্রগামী ও অনৈতিক" বলে অভিহিত করেন।[257] এফবিআই পূর্বেও তাকে দেশ ছাড়া করতে চেয়েছিল,[258] এবং ১৯৪৭ সালের শুরুর দিকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।[259][lower-alpha 17]
চ্যাপলিন তার কমিউনিস্ট মতাদর্শের কথা অস্বীকার করেন এবং নিজেকে "শান্তিপ্রিয়" বলে দাবী করেন।[261] কিন্তু কমিউনিস্ট মতাদর্শকে দমন করার ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপকে জনগণের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন, যা অগ্রহণযোগ্য।[262] এই বিষয় ছেড়ে দিতে অনিচ্ছুক চ্যাপলিন কমিউনিস্ট দলের সদস্যদের বিচারকার্য ও হাউজ আন-আমেরিকান আক্টিভিটি কমিটির কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন।[263] গণমাধ্যমে তার এই কর্মকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর উপক্রম হয়, এবং তার মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে ব্যর্থতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।[264] তাকে নির্বাসিত করার প্রস্তাবও আসতে থাকে; এর অন্যতম ও ব্যাপকভাবে প্রকাশিত উদাহরণ হল - হাউজ আন-আমেরিকান অ্যাক্টিভিটি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রতিনিধি জন ই. র্যা নকিন ১৯৪৭ সালের জুনে কংগ্রেসে উত্থাপন করেন: "হলিউডে তার [চ্যাপলিন] অবস্থান আমেরিকার নৈতিক কাঠামোর জন্য ক্ষতিকর। [যদি থাকে নির্বাসিত করা হয়] ... তার ঘৃণ্য চিত্র মার্কিন যুবকদের সামনে উপস্থাপন করা যাবে। তাকে নির্বাসিত করা উচিত এবং তার থেকে মুক্তি পাওয়া উচিত।"[265]
লাইমলাইট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ

যদিও মঁসিয়ে ভের্দু ব্যর্থ হওয়ার পরও চ্যাপলিন তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান,[lower-alpha 18] তবু তার পরবর্তী চলচ্চিত্রে রাজনৈতিক বিষয়বস্তু ছিল না। তার পরবর্তী চলচ্চিত্র লাইমলাইট ছিল একজন সাবেক ভডেভিল কৌতুকাভিনেতা ও একজন যুবতী বেলেরিনা নৃত্যশিল্পীকে ঘিরে। এতে তার শৈশব ও তার পিতামাতার জীবন তুলে ধরা হয়েছে এবং এটি শুধু তার নিজের জীবনীকেন্দ্রিকই নয়, এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার ধীরে ধীরে কমে আসা জনপ্রিয়তাকেও তুলে ধরা হয়েছে।[267] এতে তার বৈমাত্রেয় ভাই হুইলার ড্রাইডেনসহ তার পাঁচ বড় সন্তান অভিনয় করেন।[268]
চলচ্চিত্রটির চিত্রায়ন শুরু হয় ১৯৫১ সালের নভেম্বর মাসে। এর পূর্বে তিনি এই ছবির গল্প নিয়ে তিন বছর চিন্তা-ভাবনা করেন।[269][lower-alpha 19] তিনি এতে তার পূর্ববর্তী চলচ্চিত্রগুলোর চেয়ে আরও বেশি গম্ভীর চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছিলেন এবং তার সহশিল্পী ক্লেয়ার ব্লুমের সাথে তার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বারবার "হতাশা" শব্দটি ব্যবহার করেন।[271] এই ছবিতে বাস্টার কিটন একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন, যাকে চ্যাপলিন একটি পান্তোমিমে দৃশ্যের জন্য তার মঞ্চ সহযোগী হিসেবে নির্বাচন করেন। এটিই একমাত্র চলচ্চিত্র যেখানে এই দুই কৌতুকাভিনেতা একসাথে কাজ করেছেন।[272]
চ্যাপলিন চলচ্চিত্র নির্মাণের শুরুর সময় থেকে সিদ্ধান্ত নেন যে এই ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে লন্ডনে।[273] তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস ত্যাগ করেন এবং পূর্বাভাস দেন যে তিনি নাও ফিরতে পারেন।[274] তিনি আরএমএস কুইন এলিজাবেথে করে তার পরিবারসহ ১৯৫২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক থেকে যাত্রা করেন।[275] পরের দিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস পি. ম্যাকগ্রেনারি চ্যাপলিনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের অনুমতি বাতিল করেন এবং বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় প্রবেশ করতে হলে তাকে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ও নৈতিক আচরণ সম্পর্কিত সাক্ষাৎকার প্রদান করতে হবে।[275] যদিও ম্যাকগ্রেনারি সংবাদ মাধ্যমে বলেন যে "চ্যাপলিনের বিরুদ্ধে তার মামলাটি খুবই সাজানো", কিন্তু মালান্ড পরে উল্লেখ করেন যে ১৯৮০ সালে প্রকাশিত এফবিআইয়ের নথির ভিত্তিতে চ্যাপলিনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের বিপক্ষে মার্কিন সরকারের কোন বাস্তব প্রমাণ ছিল না। তিনি যদি আবেদন করতেন তবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার লাভ করতে পারতেন।[276] যাই হোক, চ্যাপলিন এই সংবাদ বিষয়ক একটি ক্যাবলগ্রাম পান, কিন্তু তিনি নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবেন না:
আমি এই অসুখী দেশটিতে পুনঃপ্রবেশ করি বা না করি তা আমার উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। আমি তাদের বলতে চাই যে আমি যত দ্রুত এই ঘৃণ্য-অবরুদ্ধ পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসতে পারব, তত মঙ্গল, আমি যুক্তরাষ্ট্রের অপমান ও নীতির জাঁকজমকে বিরক্ত...[277]
যুক্তরাষ্ট্রে তার সম্পত্তি রয়ে গেলেও, চ্যাপলিন সংবাদ মাধ্যমকে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধের বিষয়ে কোন নেতিবাচক কথা বলা থেকে বিরত ছিলেন।[278] এই কেলেঙ্কারি সংবাদ মাধ্যমের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করে,[279] কিন্তু চ্যাপলিন ও তার চলচ্চিত্র ইউরোপে সমাদৃত হয়।[275] আমেরিকায় তার বিরুদ্ধে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি বাড়তে থাকে। যদিও লাইমলাইট চলচ্চিত্রটি কিছু ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে, কিন্তু বেশির ভাগ স্থানে এটি বর্জন করা হয়।[280] এই বিষয়টি তুলে ধরে মালান্ড লিখেন যে চ্যাপলিন জনপ্রিয়তা চূড়া থেকে নিচে চলে আসে, যা ছিল "নজিরবিহীন" এক ঘটনা, এবং "সম্ভবত এটি যুক্তরাষ্ট্রের তারকাদের ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা।"[281]
১৯৫৩-৭৭: ইউরোপীয় বছরগুলো
সুইজারল্যান্ডে আগমন ও আ কিং ইন নিউ ইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের অনুমতি বাতিল হলে চ্যাপলিন আর সেখানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেননি, বরং তিনি তার স্ত্রীকে এই বিষয়গুলো মীমাংসা করার জন্য পাঠান।[lower-alpha 20] চ্যাপলিন দম্পতি সুইজারল্যান্ডে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের পরিবার মানোইর দে বান নামে ১৪ হেক্টর জমির উপর নির্মিত একটি বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য চলে যান।[283] বাড়িটি কর্সিয়ের-সুর-ভেভির লেক জেনেভায় অবস্থিত।[284][lower-alpha 21] চ্যাপলিন মার্চে তার বেভার্লি হিল্সের বাড়ি ও স্টুডিও বিক্রি করে দিতে চান এবং এপ্রিলে তার যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের অনুমতি বাতিল বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। পরের বছর তার স্ত্রী ওনিল তার নিজের মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।[286] চ্যাপলিন ১৯৫৫ সালে ইউনাইটেড আর্টিস্ট্সের তার বাকি স্টক বিক্রি করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার শেষ পেশাদারী সম্পর্ক ছিন্ন করেন। ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স ১৯৪০ এর দশকের শুরু থেকে আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।[287]

চ্যাপলিন ১৯৫০ এর দশক জুড়ে বিতর্কিত ছিলেন, বিশেষ করে কমিউনিস্টদের ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার গ্রহণ এবং চৌ এনলাই ও নিকিতা খ্রুশ্চেভের সাথে সাক্ষাতের জন্য।[288] তিনি ১৯৫৪ সালে তার প্রথম ইউরোপীয় চলচ্চিত্র আ কিং ইন নিউ ইয়র্ক নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেন।[289] এতে তিনি নিজেই একজন নির্বাসিত রাজা চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চান এবং তার চরিত্রটি কমিউনিজমের অভিযোগের সম্মুখীন হয়। চ্যাপলিন চিত্রনাট্যে তার নিজের অভিজ্ঞতা যুক্ত করেন। তার পুত্র মাইকেল এক তরুণ চরিত্রে অভিনয় করেন, এফবিআই যার পিতামাতার পিছনে লেগে আছে।[290] এই রাজনৈতিক ব্যঙ্গধর্মী চলচ্চিত্রটি হাউজ অব আন-আমেরিকান কাউন্সিলকে ব্যঙ্গ করে এবং ভোক্তাবাদ, প্লাস্টিক সার্জারি, ও বড় পর্দার চলচ্চিত্রসহ ১৯৫০ এর দশকের সংস্কৃতিকে সরাসরি আঘাত করে।[291] নাট্যকার জন অসবর্ন এক পর্যালোচনায় এই চলচ্চিত্রটিকে চ্যাপলিনের "সবচেয়ে তিক্ত" ও "সবচেয়ে ব্যক্তিগত" চলচ্চিত্র বলে অভিহিত করেন।[292]
চ্যাপলিন অ্যাটিকা নামে একটি নতুন প্রযোজনা কোম্পানি চালু করেন এবং চিত্রায়নের জন্য শেপার্টন স্টুডিও ব্যবহার করতেন।[289] ইংল্যান্ডে চিত্রায়ন খুবই কষ্টকর অভিজ্ঞতা ছিল, কারণ তিনি তার নিজের হলিউড স্টুডিও ও পরিচিত কলাকুশলীদের নিয়ে কাজ করে অভ্যস্ত ছিলেন এবং ইংল্যান্ডে নির্মাণে অসীম সময় পেতেন না। রবিনসনের মতে, এই বিষয়গুলো তার চলচ্চিত্রের মানে প্রভাব ফেলে।[293] আ কিং ইন নিউ ইয়র্ক ১৯৫৭ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পায় এবং মিশ্র সমালোচনা লাভ করে।[294] চ্যাপলিন ছবিটির প্যারিসে উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে মার্কিন সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করেন এবং ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ছবির আয় কমে যায়, যদিও ইউরোপে ছবিটি মধ্যম মানের ব্যবসা করে।[295] আ কিং ইন নিউ ইয়র্ক ১৯৭৩ সালের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শন করা হয়নি।[296][297]
শেষ কর্ম ও পুনঃপ্রশংসা অর্জন

চ্যাপলিন তার কর্মজীবনের শেষ দুই দশক পূর্বের চলচ্চিত্রগুলো পুনঃমুক্তির জন্য পুনঃসম্পাদনা ও সুরারোপে মনোযোগী হন এবং সেগুলোর মালিকানা ও পরিবেশনা স্বত্বও গ্রহণ করেন।[298] ১৯৫৯ সালে তার ৭০তম জন্মদিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চ্যাপলিন বলেন যে এখনো "এই প্রগতিশীল যুগেও লিটল ম্যানের জন্য জায়গা রয়েছে।"[299] এই পুনঃমুক্তির প্রথমটি ছিল দ্য চ্যাপলিন রিভিউ (১৯৫৯), যাতে আ ডগ্স লাইফ, সোল্ডার আর্ম্স ও দ্য পিলগ্রিম ছবির নতুন সংস্করণ যোগ করা হয়।[299]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং চ্যাপলিনের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ সত্ত্বেও সকলে আবার তার চলচ্চিত্রে আকৃষ্ট হতে শুরু করে।[298] ১৯৬২ সালের জুলাইয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয় "বিগত দিনের ভুলে যাওয়া লিটল ট্রাম্প যদি স্টিমার বা উড়োজাহাজে করে মার্কিন বন্দরে ধীর কদমে আসেন, তবে রিপাবলিকানরা ঝুঁকিতে পড়বে বলে আমরা মনে করি না"।[300] একই মাসে, অক্সফোর্ড ও ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপলিনকে সম্মানসূচক ডক্টরস অব লেটার্স ডিগ্রি প্রদান করে।[301] ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কের প্লাজা থিয়েটার বছর ব্যাপী চ্যাপলিনের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করে, যেখানে মঁসিয়ে ভের্দু ও লাইমলাইট ছবি দুটি প্রদর্শিত হয় এবং মার্কিন সমালোচকদের থেকে ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে।[302] ১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বরে চ্যাপলিন তার স্মৃতিকথা, মাই অটোবায়োগ্রাফি, প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৫৭ সাল থেকে এই বই লেখার কাজ শুরু করেন।[303] ৫০০ পৃষ্ঠার বইটি তার প্রারম্ভিক জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনকে কেন্দ্র করে রচিত। তার চলচ্চিত্র জীবনের তথ্যের ঘাটতি থাকার সমালোচনা সত্ত্বেও এটি বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ বিক্রিত বই হয়ে ওঠে।[304]
তার আত্মকথা প্রকাশের কিছুদিন পর চ্যাপলিন আ কাউন্টেস ফ্রম হংকং ছবির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি এই প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রটি মূলত ১৯৩০ এর দশকে পলেট গডার্ডকে নিয়ে নির্মাণের জন্য রচনা করেছিলেন।[305] সমুদ্রে একটি জাহাজের উপর চিত্রায়িত ছবিটিতে মার্লোন ব্র্যান্ডো একজন মার্কিন দূত চরিত্রে এবং সোফিয়া লরেন ব্র্যান্ডোর কেবিনে পাওয়া এক নারী চরিত্রে অভিনয় করেন।[305] ছবিটি চ্যাপলিনের পূর্ববর্তী ছবিগুলো থেকে অনেক বিষয়ে ভিন্ন ছিল। এই ছবিতে তিনি প্রথম টেকনিকালার এবং বড় পর্দা ব্যবহার করেন। তিনি ছবিটি পরিচালনায় মনোযোগী ছিলেন এবং জাহাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন।[306] তিনি ইউনিভার্সাল পিকচার্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং তার সহযোগী জেরোম এপস্টেইনকে প্রযোজক হিসেবে নিয়োগ দেন।[307] চ্যাপলিনকে পরিচালক হিসেবে ৬০০,০০০ মার্কিন ডলার এবং আয়ের ভাগ প্রদান করা হয়। ১৯৬৭ সালের জানুয়ারি মাসে আ কাউন্টেস ফ্রম হংকং ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।[308] ছবিটি নেতিবাচক সমালোচনা লাভ করে এবং বক্স-অফিসে ব্যর্থ হয়।[309][310] চ্যাপলিন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার খুবই মনঃক্ষুণ্ণ হন এবং এর ফলে এটিই ছিল তার শেষ চলচ্চিত্র।[309]
চ্যাপলিন ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে কয়েকবার ছোটখাট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যার ফলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি শুরু হয়।[311] তার অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি একটি নতুন চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি রচনা শুরু করেন। নতুন চলচ্চিত্রের নামকরণ করা হয়েছিল দ্য ফ্রিক, যা মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনীয় পাখাওয়ালা এক যুবতীর গল্প। তিনি তার কন্যা ভিক্টোরিয়া চ্যাপলিনকে দিয়ে মূল ভূমিকায় অভিনয় করানোর সিদ্ধান্ত নেন।[311] কিন্তু তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কাজটি শুরু করতে পারেন নি।[312] ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে চ্যাপলিন তার পুরনো চলচ্চিত্রগুলো পুনঃমুক্তির দিকে মনোযোগী হন, যার মধ্যে ছিল দ্য কিড ও দ্য সার্কাস।[313] ১৯৭১ সালে তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে লেজিওঁ দনরের কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত হন।[314] পরের বছর তিনি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বিশেষ গোল্ডেন লায়ন পুরস্কারে সম্মানিত হন।[315]
১৯৭২ সালে একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস চ্যাপলিনকে সম্মানসূচক পুরস্কারে ভূষিত করে। রবিনসন এই বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র "সংশোধন করতে চেয়েছিল" বলে উল্লেখ করেন। চ্যাপলিন প্রথমে এই পুরস্কার গ্রহণের ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন, কিন্তু পরে প্রায় ২০ বছর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।[314] তার এই প্রত্যাবর্তন সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ৪৪তম একাডেমি পুরস্কার আয়োজনে তাকে ১২ মিনিট দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো হয়, যা একাডেমি পুরস্কারের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম সময় সম্মাননা প্রদর্শন।[316][317] চ্যাপলিন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন এবং "এই শতাব্দীর চলচ্চিত্র নির্মাণকে শৈল্পিক রূপে নিয়ে আসার পিছনে অপরিমেয় প্রভাবের জন্য" এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।[318]
যদিও চ্যাপলিন তখনো চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন, কিন্তু ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়েন।[319] তিনি আরও কয়েকটি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং এর ফলে তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য হন।[320][321] তার শেষ কাজ ছিল চিত্রসম্বলিত আত্মজীবনী সংকলন মাই লাইফ ইন পিকচার্স (১৯৭৪) এবং ১৯৭৬ সালে পুনঃমুক্তির জন্য আ ওম্যান অব প্যারিস ছবিতে সুরারোপ।[322] চ্যাপলিনকে তার জীবনীনির্ভর প্রামাণ্যচিত্র দ্য জেন্টলম্যান ট্রাম্প (১৯৭৫) এ দেখা যায়। এটি পরিচালনা করেন রিচার্ড প্যাটারসন।[323] ১৯৭৫ সালে নববর্ষ সম্মাননার অংশ হিসেবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ চ্যাপলিনকে ব্রিটিশ সম্মানসূচক নাইটহুডে ভূষিত করেন।[322][lower-alpha 22][325] তিনি খুবই দুর্বল ছিলেন, এবং হাটু গেড়ে সম্মান প্রদর্শন করতে পারেননি এবং হুইলচেয়ারে বসেই এই সম্মাননা গ্রহণ করেন।[326]
মৃত্যু

১৯৭৭ সালের অক্টোবরে চ্যাপলিনের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে এবং তার নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।[327] তিনি ১৯৭৭ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ভোরে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।[321] মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ২৭শে ডিসেম্বর তার ইচ্ছা অনুযায়ী তার শেষকৃত্য ছিল ছোট ও ব্যক্তিগত অ্যাঞ্জেলিক আয়োজন।[328][lower-alpha 23] চ্যাপলিনকে কর্সিয়ের-সুর-ভেভি সমাধিতে সমাধিস্ত করা হয়।[327] চলচ্চিত্র পরিবার থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে পরিচালক রনে ক্লেয়া লিখেন, "তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের একটি স্তম্ভ, সকল দেশের এবং সকল সময়ের... তাঁর অন্যতম সুন্দর উপহার হল আমাদের জন্য রেখে যাওয়া তাঁর চলচ্চিত্রসমূহ।"[330] অভিনেতা বব হোপ বলেন, "আমরা সৌভাগ্যবান তাঁর সময়ে বর্তমান ছিলাম।"[331]
১৯৭৮ সালের ১লা মার্চ দুজন বেকার অভিবাসী চ্যাপলিনের সমাধি খুঁড়ে কফিন চুরি করে। তারা হলেন পোল্যান্ডের রোমান ওয়ার্ডাস ও বুলগেরিয়ার গাঞ্চো গানেভ। কফিনটি জব্দ করে চ্যাপলিনের স্ত্রী উনা চ্যাপলিনের কাছে মুক্তিপণ দাবী করা হয়। মে মাসে এক পুলিশি তদন্তে এই অপরাধীরা ধরা পড়ে এবং সুইজারল্যান্ডের নভিলে গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাঠে পুঁতা অবস্থায় পাওয়া যায়। কফিনটি পুনরায় কর্সিয়ের সমাধিতে সমাধিস্ত করা হয় এবং চারপাশে কংক্রিটের বেড়া দেওয়া হয়।[332][333]
চলচ্চিত্র নির্মাণ
প্রভাব
চ্যাপলিন মনে করতেন তার মা তাকে প্রথম অভিনয়ে প্রভাবিত করেছিলেন। তিনি যখন শিশু ছিলেন তার মা জানালার পাশে বসে তাকে পথচারীদের অনুকরণ করে দেখাতেন। চ্যাপলিন তার আত্মজীবনীতে লিখেন, "তাকে দেখে আমি হাত ও মুখ দিয়ে আবেগ প্রকাশ করতে শিখেছি, পাশাপাশি কীভাবে মানুষকে পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়ন করা যায় তাও শিখেছি।"[334] চ্যাপলিন তার প্রথম জীবনে গীতিমঞ্চে বিভিন্ন কৌতুকাভিনেতাদের কাজ করতে দেখেছেন। তিনি ড্রুরি লেনে ক্রিসমাস পান্তোমিমেতেও যান এবং সেখানে তিনি ড্যান লেনোর মতো অভিনেতাদের কাছ থেকে সঙ শিল্পের পাঠ লাভ করেন।[335] চ্যাপলিনের একজন অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার পিছনে ফ্রেড কার্নো কোম্পানিতে কাজ করার বছরগুলোর বিস্তর প্রভাব ছিল। সিমন লুভিশ লিখেছেন যে কোম্পানিটি তার "প্রশিক্ষণ স্থল" ছিল,[336] এবং এখানেই চ্যাপলিন তার হাস্যরসের গতির পরিবর্তন করতে শিখেছিলেন।[337] তিনি স্ল্যাপস্টিক হাস্যরসের সাথে করুণ রস মিশ্রণের ধারণা কার্নোর কাছ থেকে শিখেছেন।[lower-alpha 24] কার্নো বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরতেন, যা চ্যাপলিনের ঠাট্টা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।[337] চলচ্চিত্র শিল্প থেকে, চ্যাপলিন ফরাসি কৌতুকাভিনেতা মাক্স লেঁদেরের কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হন। তিনি লেঁদেরের চলচ্চিত্রগুলোর প্রশংসা করতেন।[338] দ্য ট্রাম্প চরিত্রের পোশাক এবং ব্যক্তিত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি সম্ভবত মার্কিন ভডেভিলের দৃশ্যাবলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়, যেখানে এই ধরনের চরিত্র অহরহ দেখা যেত।[339]
পদ্ধতি

চ্যাপলিন তার চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে কখনো কিছু বলতেন না। তিনি দাবী করতেন এটি জাদুকরের তার নিজের জাদুর কৌশল বলে দেওয়ার মত বিষয়।[340] তার জীবদ্দশায় তার কাজের ধাপ সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।[341] কিন্তু চলচ্চিত্র ইতিহাসবেত্তাদের গবেষণা থেকে, বিশেষ করে, কেভিন ব্রাউনলো ও ডেভিড গিলের গবেষণা থেকে নির্মিত আননোন চ্যাপলিন (১৯৮৩) এ তার অদ্বিতীয় কাজের পদ্ধতি প্রকাশিত হয়।[342]
চ্যাপলিন তার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র দ্য গ্রেট ডিক্টেটর নির্মাণের পূর্বে কখনো একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রনাট্য বা পাণ্ডুলিপি থেকে চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন করেন নি।[343] তার প্রাথমিক চলচ্চিত্রগুলো অস্পষ্ট ভিত্তি দিয়ে শুরু হয় - উদাহরণস্বরূপ "চার্লি একটি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রবেশ করে" বা "চার্লি একটি দোকানে কাজ করে"।[344] তারপর তিনি তার নিজস্ব সেট তৈরি করেন এবং তার স্টক কোম্পানির সাথে কাজ করার জন্য ঠাট্টার এবং ব্যবসায়ের ধরনে পরিবর্তন নিয়ে আসেন, এবং প্রায়শই চলচ্চিত্রের বাইরের ধারণা নিয়ে কাজ করতেন।[342] ধারণাগুলো গ্রহণ ও বাতিল করা হলে, একটি বর্ণনাধর্মী কাঠামো পাওয়া যেত, ফলে চ্যাপলিন ইতোমধ্যেই ধারণকৃত দৃশ্যগুলো পুনরায় নতুনভাবে ধারণ করতেন, অন্যথায় তা মূল বা পরিবর্তিত গল্পের সাথে অসামঞ্জস্য হতে পারে।[345] আ ওম্যান অব প্যারিস চলচ্চিত্রের পর থেকে চ্যাপলিন পূর্বে প্রস্তুতকৃত গল্পের উপর ভিত্তি করে চিত্রায়ন শুরু করেন,[346] কিন্তু রবিনসন লিখেছেন যে মডার্ন টাইমস চলচ্চিত্রের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি চলচ্চিত্রটি "চূড়ান্ত রূপ ধারণের পূর্বে অনেক পরিব্যক্তি এবং পুনর্বিন্যাস করা হয়"।[347]
এই পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণের ফলে সেই সময়ের অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতার তুলনায় চ্যাপলিনের ছবি নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগত।[348] যখন তার নতুন কোন চলচ্চিত্রের ধারণা মাথায় না আসত, তখন তিনি প্রায়ই শুটিং থেকে বিরতি নিতেন।[349]বেশ কয়েক দিন বিরতি নিয়ে তিনি পুনরায় স্টুডিওতে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করতেন। এই বিলম্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই চ্যাপলিন কাজগুলো হত ত্রুটিহীন ও পরিপূর্ণ।[350]তার বন্ধু আইভর মন্টেগুয়ের মতে, চলচ্চিত্র নির্মাতার ক্ষেত্রে "পরিপূর্ণতা ছাড়া কোন কিছুই সঠিক নয়"।[351] যেহেতু তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করতেন, ফলে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতেন এবং তার যতবার খুশি ততবার চিত্রগ্রহণ করতে পারতেন।[352] এই সংখ্যাটি প্রায়ই অত্যধিক ছিল, উদাহরণস্বরূপ, দ্য কিড চলচ্চিত্রের জন্য ৫৩ বার।[353] ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দি ইমিগ্র্যান্ট-এর জন্য তিনি ৪০,০০০ ফুট ফিল্মে চিত্রগ্রহণ করেন, যা দিয়ে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যেত।[354]
—চ্যাপলিনের জীবনীকার ডেভিড রবিনসন
চ্যাপলিন তার কর্ম পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, "পাগলামির দৃষ্টিকোণ থেকে নিছক অধ্যবসায়"।[355][356] রবিনসন লিখেন চ্যাপলিন তার শেষ জীবনে এসেও "অন্য কিছু ও অন্যদের তুলনায় অগ্রবর্তী ভূমিকায়" কাজ করে যান।[357] কাহিনী উন্নয়ন ও নিরবচ্ছিন্ন পরিপূর্ণতার সমন্বয়ের মাধ্যমে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন। এই প্রচেষ্টার পথে তার অনেক সময় ও হাজার হাজার ফুট ফিল্ম নষ্ট হয়েছে এবং অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে, এবং হতাশ হয়ে তিনি তার অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের বিদ্রুপ করতেন।[358]
চ্যাপলিন তার চলচ্চিত্রের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতেন,[340] যাতে তিনি নিজেই অন্য অভিনয়শিল্পীদের চরিত্রগুলো করে দেখাতে পারতেন, তার চরিত্র অন্য কেউ অনুকরণ করতে পারতো না।[359] তিনি নিজেই তার চলচ্চিত্রগুলো সম্পাদনা করতেন।[360] তার পূর্ণ স্বাধীনতার ফলে চলচ্চিত্র ইতিহাসবেত্তা অ্যান্ড্রু স্যারিস তাকে "প্রথম সাহিত্যিক চলচ্চিত্র নির্মাতা" বলে অভিহিত করেন।[361] চ্যাপলিন তার দীর্ঘ সময়ের চিত্রগ্রাহক রোল্যান্ড টথেরোহ, তার ভাই সিডনি চ্যাপলিন ও বিভিন্ন সহকারী পরিচালক, যেমন হ্যারি ক্রোকার ও চার্লস রেইসনারদের থেকে সাহায্য পেয়েছেন।[362]
সুরারোপ

চ্যাপলিন শৈশব থেকেই সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ পোষণ করে এসেছেন এবং একাকীই পিয়ানো, বেহালা ও সেলো বাজানো শিখেন।[363] তিনি চলচ্চিত্রের সাথে সঙ্গীতের যোগসূত্রতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন,[364] এবং আ ওম্যান অব প্যারিস চলচ্চিত্রের পর বাকি সকল চলচ্চিত্রেই তিনি সঙ্গীত ব্যবহার করেন।[365] শব্দ প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে চ্যাপলিন সামঞ্জস্য ঐকতান বাদকদল সম্বলিত চলচ্চিত্রের সুর রচনা করতেন এবং নিজেই এতে সুরারোপ করতেন। এই নতুন সুরারোপের ধারণা প্রথম দেখা যায় সিটি লাইট্স (১৯৩১) চলচ্চিত্রে। তিনি পরবর্তীতে তার সকল চলচ্চিত্রের সুর রচনা করতেন এবং ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিক থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার সকল নির্বাক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য সুরারোপ করেন।[366]
যেহেতু চ্যাপলিন সঙ্গীত বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি, তিনি কোন লিখিত সুর পড়তে পারতেন না এবং এ জন্য তার পেশাদার সুরকারদের সাহায্য নিতে হত। তিনি মূলত ডেভিড রাকসিন, রেমন্ড রাশ, ও এরিক জেমসদের কাছ থেকে সুর সৃষ্টির সাহায্য নিতেন। রেকর্ডিং প্রক্রিয়া দেখার জন্য কোন সঙ্গীত পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হত, যেমন সিটি লাইট্স ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন আলফ্রেড নিউম্যান।[367] যদিও কয়েকজন সমালোচক চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের কৃতিত্ব যেসব সুরকার তার সাথে কাজ করেন তাদের দেওয়া উচিত বলে মনে করেন, মডার্ন টাইমস ছবিতে চ্যাপলিনের সাথে কাজ করা রাকসিন সুরারোপ প্রক্তিয়ায় চ্যাপলিনের সৃজনশীলতা ও সক্রিয় ভূমিকার বিষয়ে জোর দেন।[368] এই প্রক্রিয়ায় মাসখানেক সময় লেগে যেত এবং চ্যাপলিন সুরকারদের তিনি ঠিক কি ধরনের সুর চাচ্ছেন তা গেয়ে বা পিয়ানোতে বাজিয়ে বর্ণনা করতেন।[368] পরে সুরকারগণ ও চ্যাপলিন একত্রিত হয়ে এই সুরগুলোর আরও উন্নয়ন করতেন।[368] চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ জেফ্রি ভ্যান্সের মতে, "যদিও তিনি ভিন্নধর্মী ও জটিল বাদ্যযন্ত্রে সুর তোলার জন্য তাঁর সহযোগীদের উপর নির্ভর করতেন, সঙ্গীতের আধিপত্য তাঁর ছিল এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সুরে একটি ছোট নোট গ্রহণ করা হত না।"[369]
চ্যাপলিনের সুরকৃত তিনটি জনপ্রিয় গান রেকর্ডিং করা হয়। মডার্ন টাইমস (১৯৩৬) ছবির জন্য সুরকৃত "স্মাইল" গানটিতে ১৯৫৪ সালে জন টার্নার ও জেওফ্রি পারসন্সের গীত যুক্ত করে ন্যাট কিং কোল কণ্ঠ দিলে তা হিট খ্যাতি লাভ করে। লাইমলাইট চলচ্চিত্রে চ্যাপলিন "টেরিস থিম" সুর করেন, যা জিমি ইয়ং "ইটার্নালি" (১৯৫২) শিরোনামে জনপ্রিয় করে তুলেন। আ কাউন্টেস ফ্রম হংকং (১৯৬৭) ছবির পেটুলা ক্লার্কের গাওয়া "দিস ইজ মাই সং" গানটি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় সঙ্গীত তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করে। চ্যাপলিন তার একমাত্র প্রতিযোগিতামূলক অস্কার লাভ করেন তার সুরারোপের জন্য, ১৯৭৩ সালে লাইমলাইট ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃমুক্তি দেওয়া হলে এই ছবির থিম গানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ মৌলিক সুর বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।[369][lower-alpha 25]
উত্তরাধিকার

১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্র সমালোচক অ্যান্ড্রু স্যারিস চ্যাপলিনকে "যুক্তি তর্কের উর্ধ্বে চলচ্চিত্রে এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী, নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে অসাধারণ অভিনেতা এবং সম্ভবত এখনো চলচ্চিত্রের "সবচেয়ে সার্বজনীন মূর্তি" বলে অভিহিত করেন।[371] ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাকে "বিশ্ব সংস্কৃতির অত্যুচ্চ ব্যক্তিত্ব" বলে বর্ণনা করে।[372] টাইম সাময়িকী তাকে "কোটি মানুষের মুখে হাসি আনার" জন্য এবং একটি শিল্পকে শিল্পকলায় রূপ দেওয়ার জন্য "২০শ শতাব্দীর ১০০ শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি" তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।[373]
দ্য ট্রাম্প প্রতিমূর্তিটি সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে।[374] সিমন লোভিশের মতে, যারা চ্যাপলিনের একটি চলচ্চিত্রও কখনো দেখেনি, তাদের কাছে, এবং যে স্থানে কখনো চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়নি, সে স্থানেও এই চরিত্রটি সহজে চেনা যায়।[375] সমালোচক লিওনার্ড মালটিন দ্য ট্রাম্পের "অদ্বিতীয়" ও "অমোচনযোগ্য" প্রকৃতি সম্পর্কে লিখেন এবং বলেন, আর কোন কৌতুকাভিনেতা তার মত "বিশ্বজোড়া প্রভাব" রাখতে পারেননি।[376] এই চরিত্রের প্রশংসা করতে গিয়ে রিচার্ড স্কিকেল বলেন, দ্য ট্রাম্প চরিত্র সম্বলিত চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রগুলোতে চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে "বাকপটু ও সমৃদ্ধ হাস্যরসাত্মক অভিব্যক্তি" ছিল।[377] এই চরিত্রের সাথে যুক্ত স্মরণিকাসমূহ এখনো চড়া মূল্যে নিলামে বিক্রি হয়। ২০০৬ সালে দ্য ট্রাম্পের পোশাকের অংশ একটি বাউলার হ্যাট ও একটি বাঁশের বেত লস অ্যাঞ্জেলেসে এক নিলামে ১৪০,০০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়।[378]
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে চ্যাপলিনকে চলচ্চিত্রের অগ্রদূত এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হয়।[379] তাকে প্রায়ই এই মাধ্যমের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করা হয়।[380] চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ মার্ক কোজিন্স লিখেন, চ্যাপলিন শুধু চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তিই পরিবর্তন করেননি, তিনি সামাজিকতা ও ব্যাকরণও পরিবর্তন করেছেন এবং তিনি দাবী করেন ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ যেমন চলচ্চিত্রে নাট্য ধারা বিকাশে অবদান রেখেছেন, চ্যাপলিনও তেমনি হাস্যরসাত্মক ধারা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।[381] তিনিই প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রকে জনপ্রিয় করে তুলেন এবং করুণ রস ও চাতুর্যময়তা যোগ করেন।[382][383] যদিও তার কাজগুলো বেশিরভাগই স্ল্যাপস্টিক শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, আর্ন্স্ট লুবিট্চ পরিচালিত দ্য ম্যারিজ সার্কেল (১৯২৪) ছবিটিতে চ্যাপলিনের আ ওম্যান অব প্যারিস (১৯২৩) এর প্রভাব ছিল এবং এর মাধ্যমেই উন্নত ধরনের হাস্যরসের বিকাশ ঘটে।[384] ডেভিড রবিনসনের মতে, চ্যাপলিনের উদ্ভাবন অচিরেই চলচ্চিত্র শিল্পের নিয়মিত চর্চার অংশ হিসেবে গৃহীত হয়।[385] চ্যাপলিনের পরবর্তী সময়ের অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা মনে করেন তাদের চলচ্চিত্র নির্মাণে চ্যাপলিনের প্রভাব রয়েছে। ফেদেরিকো ফেল্লিনি মনে করেন চ্যাপলিন "অনেকটা আদমের মত, আমরা সবাই যার উত্তরসূরি।"[331] জাক তাতি বলেন, "তিনি না থাকলে হয়ত আমি কখনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করতাম না", এবং তার মঁসিয়ে হুলো চরিত্রটি দ্য ট্রাম্পের আদলে সৃষ্ট।[331] রনে ক্লেয়া বলেন, "তিনি সকল চলচ্চিত্র নির্মাতাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।"[330] মাইকেল পাওয়েল,[386] বিলি ওয়াইল্ডার,[387] ভিত্তোরিও দে সিকা,[388] এবং রিচার্ড অ্যাটেনব্রোও[389] চ্যাপলিনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। রুশ চলচ্চিত্র নির্মাতা আন্দ্রেই তার্কভ্স্কি চ্যাপলিনের প্রশংসা করে বলেন, "চলচ্চিত্র ইতিহাসে তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিঃসন্দেহে কোন ছায়া ব্যতীত কাজ করে গেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া চলচ্চিত্রগুলো কখনো পুরনো হবে না।"[390]
চ্যাপলিন তার পরবর্তী সময়ের কৌতুকাভিনেতাদের প্রভাবিত করেছেন। মার্সেল মার্সো বলেন তিনি চ্যাপলিনকে দেখেই মুকাভিনেতা হতে অনুপ্রাণিত হন।[383] রাজ কাপুর পর্দার জন্য চ্যাপলিনের দ্য ট্রাম্প সত্তা গ্রহণ করেন।[387] মার্ক কোসিন্স চ্যাপলিনের কৌতুকের ধরনের সাথে ফরাসি মঁসিয়ে হুলো ও ইতালীয় তোতোর চরিত্রের মিল খুঁজে পান।[387] অন্যান্য ক্ষেত্রে চ্যাপলিনের অভিনয় থেকে অনুপ্রাণিত চরিত্র হল, কার্টুন চরিত্র ফেলিক্স দ্য ক্যাট[391] ও মিকি মাউস।[392] এছাড়া তিনি দাদা শিল্প আন্দোলনের অনুপ্রেরণা।[393] ইউনাইটেড আর্টিস্ট্সের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তিনি চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। জেরাল্ড মাস্ট লিখেন, যদিও ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স কখনোই মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার বা প্যারামাউন্ট পিকচার্সের মত বড় কোম্পানি হতে পারে নি, তবু পরিচালকগণ তাদের চলচ্চিত্র প্রযোজনা করবেন এটি একটি কালোত্তীর্ণ চিন্তাধারা ছিল।[394]
একবিংশ শতাব্দীতেও চ্যাপলিনের কয়েকটি চলচ্চিত্র সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র ও ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের আখ্যা লাভ করে। ২০১২ সালে সাইট অ্যান্ড সাউন্ড সাময়িকীর ভোটে, যেখানে চলচ্চিত্র সমালোচক ও নির্মাতারা তাদের পছন্দের "সেরা দশ" চলচ্চিত্রের জন্য ভোট দিয়ে থাকেন, সেখানে সিটি লাইট্স সমালোচকদের ভোটে সেরা ৫০, মডার্ন টাইমস সেরা ১০০ এবং দ্য গ্রেট ডিক্টেটর ও দ্য গোল্ড রাশ সেরা ২৫০ এ স্থান করে নেয়।[395] পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত সেরা ১০০ চলচ্চিত্রের তালিকায় মডার্ন টাইমস ২২তম, সিটি লাইট্স ৩০তম এবং দ্য গোল্ড রাশ ৯১তম স্থান অধিকার করে।[396] চ্যাপলিনের সব কয়টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ভোট পায়।[397] ২০০৭ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা সর্বকালের সেরা মার্কিন চলচ্চিত্র তালিকায় সিটি লাইট্স চলচ্চিত্রটি ১১তম স্থান লাভ করে এবং দ্য গোল্ড রাশ ও মডার্ন টাইমস সেরা ১০০ তালিকায় স্থান লাভ করে।[398] চ্যাপলিনকে নিয়ে নিয়মিত বই প্রকাশিত হয় এবং গণমাধ্যম বিষয়ক পণ্ডিত ও চলচ্চিত্র সংরক্ষণবিদদের জন্য চ্যাপলিন একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।[399] চ্যাপলিনের অনেক চলচ্চিত্র পরবর্তীতে ডিভিডি ও ব্লু-রে তে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো অনলাইন সংরক্ষণাগারে পাওয়া যায়।[400]
স্মারক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
সুইজারল্যান্ডের কর্সিয়ের-সুর-ভেভিতে চ্যাপলিনের বাড়ি মানোইর দে বানকে "চ্যাপলিন্স ওয়ার্ল্ড" নামে একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৫ বছরের উন্নয়ন কার্যের পর জাদুঘরটি ২০১৬ সালের ১৭ই এপ্রিল চালু হয়। রয়টার্স একে "চার্লি চ্যাপলিনের জীবনী ও কাজ প্রদর্শন করা ক্রিয়াশীল জাদুঘর" বলে বর্ণনা করে।[401] চ্যাপলিনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই জাদুঘরে অনুষ্ঠিত এক আয়োজনে রেকর্ড সংখ্যক ৬৬২ জন দ্য ট্রাম্প চরিত্রের পোশাক পরে এই জাদুঘরে উপস্থিত হন।[402] লন্ডনের মিউজিয়াম অব দ্য মুভিং ইমেজ চ্যাপলিনের একটি স্থায়ী প্রদর্শনী রেখেছে এবং ১৯৮৮ সালে তার জীবন ও কর্মজীবনকে উৎসর্গ করে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। লন্ডন চলচ্চিত্র জাদুঘর ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত "চার্লি চ্যাপলিন - দ্য গ্রেট লন্ডনার" নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে।[403]
লন্ডনের লেস্টার স্কয়ারে ১৯৮১ সালে উন্মোচিত দ্য ট্রাম্প চরিত্রে চ্যাপলিনের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। এই প্রতিমূর্তির ভাস্কর হলেন জন ডাবলডে।[404] মধ্য লন্ডনের এই লেস্টার শহরে চ্যাপলিনের নামানুসারে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় "চার্লি চ্যাপলিন ওয়াক"। এখানে বিএফআই আইম্যাক্স অবস্থিত।[405] লন্ডন, হ্যাম্পশায়ার ও ইয়র্কশায়ারে তার নামে নয়টি স্মারক নীল প্লাক রয়েছে।[406] সুইস শহর ভেভিতে তাকে সম্মান জানাতে ১৯৮০ সালে তার নামে একটি পার্কের নামকরণ করে এবং ১৯৮২ সালে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করে।[404] ২০১১ সালে ভেভিতে দুটি ১৪ তলা ভবনে চ্যাপলিনের চিত্র খচিত দুটি ম্যুরাল উন্মোচন করা হয়।[407] আইরিশ শহর ওয়াটারভিলও চ্যাপলিনকে সম্মান জানিয়েছে, যেখানে তিনি ১৯৬০ এর দশকে তার পরিবার নিয়ে কয়েকটি গ্রীষ্ম কাটিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়;[408] এবং ২০১১ সাল থেকে এই শহরে বার্ষিক চার্লি চ্যাপলিন হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করে আসছে। এই উৎসব চালু করার উদ্দেশ্য ছিল চ্যাপলিনের রেখে যাওয়া কাজ এবং নতুন কৌতুক প্রতিভাসমূহ প্রদর্শন করা।[409]
চ্যাপলিনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে তার নামানুসারে ১৯৮১ সালে সোভিয়েত জ্যোতির্বিদ লুদমিলা কারাচ্কিনা আবিষ্কৃত একটি ছোট গ্রহের নামকরণ করা হয় ৩৬২৩ চ্যাপলিন।[410] ১৯৮০ এর দশকে আইবিএম তাদের পার্সোনাল কম্পিউটারের প্রচারণায় দ্য ট্রাম্প মূর্তিটি ব্যবহার করে।[411] ১৯৮৯ সালে সারা বিশ্বে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে চ্যাপলিনের ১০০তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়,[lower-alpha 26] এবং ২০১১ সালের ১৫ই এপ্রিল তার ১২২তম জন্মবার্ষিকীর আগের দিন গুগল তাদের বৈশ্বিক ও বিভিন্ন দেশের হোমপেজে একটি বিশেষ গুগল ডুডল ভিডিও তৈরি করে তার জন্মদিন উদ্যাপন করে।[414] বিশ্বের ছয়টি মহাদেশের অনেক দেশ চ্যাপলিনের চিত্র সম্বলিত পোস্টাল স্ট্যাম্প প্রকাশের মাধ্যমে তাকে সম্মাননা প্রদর্শন করেছে।
চ্যাপলিনের সন্তানেরা প্যারিসে অবস্থিত চ্যাপলিন কার্যালয় থেকে তার সকল উত্তরাধিকারের দেখাশুনা করে। চ্যাপলিনের কাজের "নাম, ভাবমূর্তি ও নৈতিক অধিকার রক্ষার্থে" অ্যাসোসিয়েশন চ্যাপলিন নামে এই কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চ্যাপলিনের কয়েকজন সন্তান। রয় এক্সপোর্ট এসএএস ১৯১৮ সালের পর চ্যাপলিনের নির্মিত চলচ্চিত্রের স্বত্ব অর্জন করে এবং বাবলস ইনকর্পোরেটেড এসএ চ্যাপলিনের ছবি ও নামের স্বত্ব অর্জন করে।[415] তাদের কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার সুইজারল্যান্ডের মনত্রুতে অবস্থিত এবং এতে ৮৩,৬৩০টি ছবি, ১১৮টি গল্প, ৯৭৬টি পাণ্ডুলিপি, ৭,৭৫৬টি চিঠি ও লক্ষাধিক অন্যান্য নথির স্ক্যানকৃত সংস্করণ রয়েছে। এই বিষয়বস্তুগুলো সিনেতেকা দি বোলোগ্নাতে অবস্থিত চ্যাপলিন রিসার্চ সেন্টারে গবেষণার জন্য পাওয়া যায়।[416] সুইজারল্যান্ডের লাউসানেলে অবস্থিত দে লেলিসি জাদুঘরে চ্যাপলিনের জীবন ও কর্মের উপর ১০,০০০ এর বেশি চিত্র সংরক্ষিত রয়েছে।[417] ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটও চার্লস চ্যাপলিন রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ২০০৫ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে প্রথম আন্তর্জাতিক চার্লস চ্যাপলিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।[418]

চরিত্রায়ন
চ্যাপলিনের জীবনী অবলম্বনে রিচার্ড অ্যাটেনব্রো ১৯৯২ সালে নির্মাণ করেন জীবনীনির্ভর চ্যাপলিন। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র।[419] ১৯৮০ সালের টেলিভিশন চলচ্চিত্র দ্য স্কারলেট ওহারা ওয়ার এ ক্লাইভ রেভিলকে[420] এবং নাট্যধর্মী দ্য ক্যাট্স মিউ (২০০১) চলচ্চিত্রে এডি ইজার্ডকে চ্যাপলিনের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়।[421] চ্যাপলিনের শৈশব নিয়ে নির্মিত টেলিভিশন ধারাবাহিক ইয়ং চার্লি চ্যাপলিন ১৯৮৯ সালে পিবিএস চ্যানেলে প্রচারিত হয় এবং অনন্য শিশুতোষ অনুষ্ঠান বিভাগে এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।[422]
চ্যাপলিনের জীবনী অবলম্বনে কয়েকটি নাটকও মঞ্চস্থ হয়। ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে লিটল ট্রাম্প ও চ্যাপলিন নামে দুটি গীতিনাট্য মঞ্চস্থ হয়। ২০০৬ সালে থমাস মিহান ও ক্রিস্টোফার কার্টিসের নির্দেশনায় লাইমলাইট: দ্য স্টোরি অব চার্লি চ্যাপলিন নামে আরেকটি গীতিনাট্য মঞ্চস্থ হয়। এটি ২০১০ সালে প্রথমবারের মত সান দিয়েগোর লা জোলা প্লেহাউজে মঞ্চস্থ হয়।[423] দুই বছর পর এই নাটকটি চ্যাপলিন - আ মিউজিক্যাল শিরোনামে ব্রডওয়ে থিয়েটারে মঞ্চস্থ করার উপযোগী করা হয়।[424] লা জোলা ও ব্রডওয়ে দুই থিয়েটারে চ্যাপলিনের চরিত্রে অভিনয় করেন রবার্ট ম্যাকক্লুর। ২০১৩ সালে ফিনল্যান্ডে চ্যাপলিনকে নির্মিত দুটি নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়, একটি স্ভেন্স্কা তিতার্নে চ্যাপলিন[425] এবং অপরটি তেম্পের ওয়ার্কার থিয়েটারে কুলকুরি (দ্য ট্রাম্প)।[426]
চ্যাপলিন কয়েকটি সাহিত্যিক কল্পকাহিনীরও চরিত্র। তিনি রবার্ট কুভারের ছোটগল্প চার্লি ইন দ্য হাউজ অব রু (১৯৮০) এবং গ্লেন ডেভিড গোল্ডের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময়কালের পটভূমিতে রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস সানিসাইড (২০০৯) এর কেন্দ্রীয় চরিত্র।[427] অ্যালান মুর তার জেরুজালেম (২০১৬) উপন্যাসের একটি পরিচ্ছেদে ১৯০৯ সালে চ্যাপলিনের জীবনের একটি দিনকে নাট্য রূপ দান করেন।[428]
পুরস্কার ও সম্মাননা

চ্যাপলিন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন এবং এর বেশিরভাগই তার জীবনের শেষের দিকে। ১৯৭৫ সালের নববর্ষ সম্মাননায় তিনি কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।[429] তিনি ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লেটার্স ডিগ্রি লাভ করেন।[301] ১৯৬৫ সালে তিনি এবং ইংমার বারিমান যৌথভাবে ইর্যাজমাস পদক লাভ করেন,[430] এবং ১৯৭১ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে লেজিওঁ দনরের কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত করেন।[431]
১৯৭২ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব থেকে চ্যাপলিন বিশেষ গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার লাভ করেন,[432] এবং লিংকন সেন্টার ফিল্ম সোসাইটি থেকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। লিংকন সোসাইটি প্রদত্ত পুরস্কারটি পরবর্তীতে চ্যাপলিন পুরস্কার হিসেবে প্রতি বছর চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রদান করা হচ্ছে।[433] ১৯৭২ সালে হলিউড ওয়াক অব ফেমে চ্যাপলিনের নামাঙ্কিত তারকা খচিত হয়, ১৯৫৮ সালে তার নামে এই তারকা খচিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তখন তা বাদ দেওয়া হয়েছিল।[434]
চ্যাপলিন তিনবার একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। প্রথমটি ১৯২৯ সালে "দ্য সার্কাস চলচ্চিত্রে অভিনয়, এর লেখনী, পরিচালনা এবং প্রযোজনায় ভিন্নতা এবং প্রভিতার" স্বাক্ষর স্বরূপ একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার,[170] ১৯৭২ সালে "চলচ্চিত্র নির্মাণকে এই শতাব্দীর শৈল্পিক রূপে তাঁর অপরিমেয় অবদান ও প্রভাবের জন্য" তিনি তার দ্বিতীয় সম্মানসূচক পুরস্কার,[318] এবং ১৯৭৩ সালে লাইমলাইট চলচ্চিত্রের জন্য রে রাশ ও ল্যারি রাসেলের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ সুরের পুরস্কার[369] এছাড়া তিনি দ্য গ্রেট ডিক্টেটর চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্য এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজকের পুরস্কার এবং মঁসিয়ে ভের্দু চলচ্চিত্রের জন্য অপর একটি শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্য পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[435] ১৯৭৬ সালে ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) থেকে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।[436]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস চ্যাপলিনের ছয়টি চলচ্চিত্রকে জাতীয় চলচ্চিত্র রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণের জন্য নির্বাচিত করেছে। চলচ্চিত্রগুলো হল দি ইমিগ্র্যান্ট (১৯১৭), দ্য কিড (১৯২১), দ্য গোল্ড রাশ (১৯২৫), সিটি লাইট্স (১৯৩১), মডার্ন টাইমস (১৯৩৬), এবং দ্য গ্রেট ডিক্টেটর (১৯৪০)।[437]
চলচ্চিত্রের তালিকা
আরও দেখুন
পাদটীকা
- ১৯৫২ সালে এমআইফাইভের তদন্তেও চ্যাপলিনের জন্ম সম্পর্কিত কোন নথি পাওয়া যায় নি।[5]
- হান্নাহ চ্যাপলিনের যখন ১৯ বছর বয়স, তখন সিডনি জন্মগ্রহণ করেন। সিডনি কার ঔরসজাত সন্তান তা জানা যায় নি, তবে হান্নাহ দাবী করেন হকস সিডনির পিতা।[7]
- ১৮৯৬ সালে হান্নাহ অসুস্থ হয়ে পড়ে, এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাউথওয়ার্ক কাউন্সিল নিয়ম করে দেয় যে "তাদের পিতা অনুপস্থিতি ও চরম দারিদ্র এবং মায়ের অসুস্থতার" কারণে শিশু দুটিকে কর্মশালায় পাঠানো জরুরি।[16]
- চ্যাপলিনের মত অনুসারে, হান্নাহ তার মঞ্চে অভিনয়কে অবজ্ঞা করেছিলেন, কিন্তু থিয়েটারের পরিচালক তাকে নির্বাচন করেন। তিনি স্পষ্টভাবে মনে করেন যে দর্শকদের তিনি খুবই বিনোদন প্রদান করেছিলেন, এবং হাসি ও উচ্চ প্রশংসা লাভ করেন।[27]
- এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস দল ১৯০৮ সাল পর্যন্ত সফর করে; চ্যাপলিন ঠিক কখন এই দল ত্যাগ করেন তা জানা যায় নি, কিন্তু এ. জে. ম্যারিয়টের গবেষণায় পাওয়া যায় যে তিনি ১৯০০ সালে ডিসেম্বর মাসে এই দল ত্যাগ করেন।[30]
- উইলিয়াম জিলেট আর্থার কোনান ডয়েলের সাথে যৌথভাবে শার্লক হোমস নাটকটির চিত্রনাট্য রচনা করেন, এবং ১৮৯৯ সালে নিউ ইয়র্কে উদ্বোধনের পর থেকে জিলেট এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। তিনি ১৯০৫ সালে ক্ল্যারিস নামে একটি নতুন নাটক লন্ডনে আসেন। এই নাটকটির দর্শক গ্রহণ না করায়, জিলেট দ্য পেইনফুল প্রেডিকামেন্ট অব শার্লক হোমস নামে একটি পরবর্তী-অংশ যোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। চ্যাপলিন মূলত এই স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটকটিতে অভিনয় করতেই লন্ডন আসেন। তিন রাত চলার পর জিলেট ক্ল্যারিস নাটক বন্ধ করে এর পরবর্তীতে পুনরায় শার্লক হোমস চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। জিলেট দ্য পেইনফুল প্রেডিকামেন্ট নাটকে চ্যাপলিনের অভিনয়ে এত মুগ্ধ হন যে তিনি তাঁকে পূর্ণ নাটকে বিলি চরিত্রের জন্য রেখে দেন।[38]
- রবিনসন উল্লেখ করেন, "এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়: এই চরিত্রটি পুরোপুরি বিকাশ লাভ করতে এক বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় লাগে এবং এরপর – চরিত্রটির কিছু নির্দিষ্ট সামর্থ্য ছিল – এটি তার বাকি কর্মজীবনে বিকাশ লাভ করে।"[63]
- এসানে ছাড়ার পরও চ্যাপলিন কোম্পানিটির সাথে ১৯২২ সাল পর্যন্ত আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে ছিলেন। এই ঝামেলার সূত্রপাত হয় যখন এসানে তাদের সাথে চ্যাপলিনের শেষ চলচ্চিত্র বার্লেস্ক অন কার্মেন এর সময় দীর্ঘায়িত করতে থাকে এবং তাঁর অনুমতি ছাড়াই লিও হোয়াইটকে দিয়ে কয়েকটি নতুন দৃশ্য যোগ করে দুই-রিল ওয়ালা চলচ্চিত্র থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপ দিতে চায়। চ্যাপলিন ছবিটির পরিবেশনা রুখতে আদেশ জারি করার জন্য আবেদন করেন, কিন্তু মামলাটি আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এসানে চ্যাপলিনের বিরুদ্ধে তাঁর চুক্তি ভঙ্গের জন্য মামলা করে এবং দেখায় যে তিনি তাঁর চুক্তি অনুসারে সম্মত হওয়া চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন নি এবং তারা তাঁর বিরুদ্ধে ৫০০,০০০ মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবী করে। এছাড়া তারা চ্যাপলিনের বিভিন্ন অব্যবহৃত দৃশ্য ও হোয়াইটের চিত্রায়ন করা নতুন দৃশ্য নিয়ে ট্রিপল ট্রাবল (১৯১৮) নামে আরেকটি চলচ্চিত্র সম্পাদনা করে।[87]
- ব্রিটিশ এম্বাসি এই মর্মে বিবৃতি দেয় যে: "[Chaplin] is of as much use to Great Britain now making big money and subscribing to war loans as he would be in the trenches."[104]
- লিটা গ্রে পরবর্তীতে তার স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেন যে তার অনেক অভিযোগ তার আইনজীবী "চতুরভাবে, অত্যন্ত খারাপভাবে বৃদ্ধি করে বা বিকৃত করে।"[161]
- চ্যাপলিন ১৯৩১ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন এবং ১৯৩২ সালের ১০ জুন ফিরে আসেন।[187] তিনি পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণে এক মাস সময় নেন, সেখানে তিনি ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে বেশ কিছুর সময় কাটান এবং পরে জাপান ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।[188]
- চ্যাপলিন পরে বলেন যে তিনি নাৎসি দলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতেন তবে তিনি এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেন না। তিনি বলেন "আমি যদি জার্মান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের প্রকৃত বিভীষিকার ব্যাপারে পূর্বে জানতাম, তবে আমি দ্য গ্রেট ডিক্টেটর নির্মাণ করতাম না। আমার নাৎসিদের পাশবিক ও উন্মাদ নরহত্যা নিয়ে কৌতুক করা ঠিক হয় নি।"[211]
- তদুপরি, উইনস্টন চার্চিল ও ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট উভয়ই চলচ্চিত্রটি পছন্দ করেন। তারা মুক্তির পূর্বে একটি ব্যক্তিগত প্রদর্শনীতে ছবিটি দেখেছিলেন। রুজভেল্ট পরে ১৯৪১ সালের জানুয়ারিতে তার পুনরায় ক্ষমতায় আসার শপথ গ্রহণের দিনে চ্যাপলিনকে বেতারে ছবির শেষ দৃশ্যের বক্তৃতাটি পাঠ করার আমন্ত্রণ জানান, বক্তৃতাটি দিয়ে অনুষ্ঠান আরও "হিট" হয়ে ওঠে।[222] যুদ্ধের বছরগুলোতে চ্যাপলিনকে প্রায়ই অন্যান্য দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাটি পাঠ করে শুনানোর জন্য আমন্ত্রণ করা হয়।[222]
- বিবাদীর আইনজীবীর মতে, চ্যাপলিন ও ব্যারি এই আইন ভঙ্গ করেন যখন তিনি ব্যারিকে ১৯৪২ সালে অক্টোবরে নিউ ইয়র্ক ভ্রমণের জন্য অর্থ প্রদান করেন, এবং তিনি নিজেও সেই শহরে গিয়ে তার সাথে দেখা করেন। চ্যাপলিন ও ব্যারি দুজনেই স্বীকার করেন যে তারা সেখানে স্বল্পসময়ের জন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং ব্যারি বলেন যে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়েছিল।[228] চ্যাপলিন দাবী করেন তিনি শেষ বারের মত ব্যারি সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ হয়েছিলেন ১৯৪২ সালে মে মাসে।[229]
- ক্যারল অ্যানের রক্তের গ্রুপ ছিল "বি", ব্যারির "এ" এবং চ্যাপলিনের "ও"। ক্যালিফোর্নিয়ায় এই সময় রক্তের গ্রুপ নির্ণয় আইনি বিচারের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।[234]
- চ্যাপলিন ও ওনিলের দেখা হয়েছিল ১৯৪২ সালের ৩০ অক্টোবর এবং তারা ১৯৪৩ সালের ১৬ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার কার্পিনটেরিয়ায় বিয়ে করেন।[237] ইউজিন ওনীল এই বিয়ের জন্য তার কন্যাকে ত্যাজ্য করেন।[238]
- চ্যাপলিন ১৯৪০ এর দশকের পূর্বেও এফবিআইয়ের নজরে আসেন, ১৯২২ সালে তিনি প্রথম এফবিআইয়ে নজরে এসেছিলেন। ১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জে. এডগার হুভার প্রথম চ্যাপলিনের নামে নিরাপত্তা কার্ডের নির্দেশ দেন, কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেস তার নির্দেশে মান্য করতে সময় নেয় এবং পরের বসন্তে তদন্তের কাজ শুরু করে।[259] এফবিআই এমআইফাইভ-এর কাছ থেকেও সাহায্যের অনুরোধ করে এবং সাহায্য লাভ করে, বিশেষ করে চ্যাপলিন ইংল্যান্ড নাকি ফ্রান্স বা পূর্ব ইউরোপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার প্রকৃত নাম ইসরায়েল থর্নস্টেইন, এই মিথ্যা খবর প্রসঙ্গে। এমআইফাইভ চ্যাপলিনের কমিউনিস্ট দলের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোন প্রমাণাদি পায় নি।[260]
- ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাপলিন পাবলো পিকাসোকে প্যারিসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এম্বাসির সামনে হান্স এইজলারের নির্বাসনের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান এবং ডিসেম্বরে তিনি নিজেই নির্বাসন প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য এক পিটিশনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে চ্যাপলিন হেনরি ওয়ালসের একটি অসফল প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনকে সমর্থন জানান, এবং ১৯৪৯ সালে তিনি দুটি শান্তি সম্মেলনকে সমর্থন দেন ও পিকস্কিল ঘটনার প্রতিবাদে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেন।[266]
- লাইমলাইট মূলত উপন্যাস হিসেবে লেখা হয়েছিল, যা চ্যাপলিন কখনো ছাপানোর কথা ভাবেন নি।[270]
- যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার পূর্বে, চ্যাপলিন নিশ্চিত করেন যে তার সম্পত্তিতে উনার অধিকার রয়েছে।[282]
- রবিনসন ধারণা করেন যে তিনি সুইজারল্যান্ডে থাকতে পছন্দ করেন কারণ, এটি "আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থান ছিল।"[285]
- এই সম্মাননা পূর্বেই ১৯৩১ ও ১৯৫৬ সালে প্রদান করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বৈদেশিক দপ্তরের রিপোর্টে চ্যাপলিনের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও ব্যক্তি জীবন বিবেচনায় এনে এতে ভেটো প্রদান করা হয়েছিল। তারা ভেবেছিল এর ফলে ব্রিটিশ সম্মাননা পদ্ধতির সুনাম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হতে পারে।[324]
- চ্যাপলিন অ্যাঞ্জেলিক শেষকৃত্য চান নি, তিনি অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন। তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি লিখেন, "আমি অন্ধবিশ্বাসী ধার্মিক নই... অজানার প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে, সেই সব বিষয়ে যার কারণ আমরা বুঝতে পারি না; আমি বিশ্বাস করি যে... অজানার রাজ্যে ভালোর অসীম ক্ষমতা রয়েছে।"[329]
- ফ্রেড কার্নো কোম্পানিতে চ্যাপলিনের সহকর্মী স্ট্যান লরেল স্মরণ করেন যে কার্নোর স্কেচগুলোতে নিয়মিত "হাস্যকর গীতিমঞ্চ অভিনয়ের মাঝে কিছু আবেগী দৃশ্য" ঢুকানো হত।[337]
- যদিও লাইমলাইট চলচ্চিত্রটি ১৯৫২ সালে মুক্তি পেয়েছিল, ছবিটি বর্জনের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসে এক সপ্তাহের বেশি চলে নি, এবং এর ফলে ছবিটি ১৯৭২ সালে পুনঃমুক্তির পূর্বে অস্কারের মনোনয়নের মানদণ্ড পূরণ করে নি।[370]
- তাঁর জন্মদিন, ১৬ই এপ্রিলে, লন্ডনের ডমিনিয়ন থিয়েটারে সিটি লাইট্স চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী হয়, ১৯৩১ সালে এই থিয়েটারেই চলচ্চিত্রটির ব্রিটিশ প্রিমিয়ার হয়েছিল।[412] এবং নিউ ইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট "চ্যাপলিন: অ্যা সেন্টেনিয়াল সেলিব্রেশন" নামে তাঁকে উৎসর্গকৃত একটি চিত্র প্রদর্শনী করে।[413]
তথ্যসূত্র
- ব্লাঙ্ক, ডেভিড (২০০২)। The 1910s। American popular culture through history (ইংরেজি ভাষায়) (চিত্রাঙ্কিত সংস্করণ)। ওয়েস্টপোর্ট, সিটি: গ্রিনউড পাবলিশিং গ্রুপ। পৃষ্ঠা ২২৬। আইএসবিএন 978-0-313-31251-9।
- "ইতিহাসের সাক্ষী: চার্লি চ্যাপলিন"। বিবিসি বাংলা। বিবিসি। ১৪ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৭।
- লিন, কেনেথ (১৯৯৭)। Charlie Chaplin and His Times (ইংরেজি ভাষায়) (চিত্রাঙ্কিত সংস্করণ)। সিমন অ্যান্ড শুস্টার। পৃষ্ঠা ৩৯। আইএসবিএন 978-0-684-80851-2।
- রবিনসন, পৃ. ১০।
- হোয়াইটহেড, টম (১৬ এপ্রিল ২০১৮)। "MI5 Files: Was Chaplin Really a Frenchman and Called Thornstein?"। দ্য টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৭।
- রবিনসন, পৃ. ৩–৪, ১৯।
- রবিনসন, পৃ. 3।
- রবিনসন, পৃ. ৩।
- রবিনসন, পৃ. ৫–৭।
- ওয়াইজম্যান (২০০৯), পৃ. ১০।
- রবিনসন, পৃ. ৯–১০, ১২।
- রবিনসন, পৃ. ১৩।
- রবিনসন, পৃ. ১৫।
- রবিনসন, পৃ. xv।
- রবিনসন, পৃ. ১৬।
- রবিনসন, পৃ. ১৯।
- চ্যাপলিন, পৃ. ২৯।
- রবিনসন, পৃ. ২৪–২৬।
- ওয়াইজম্যান (২০০৯), পৃ. ৪৯–৫০।
- চ্যাপলিন, পৃ. ১৫, ৩৩।
- রবিনসন, পৃ. ২৭।
- রবিনসন, পৃ. ৩৬।
- রবিনসন, পৃ. ৪০।
- ওয়াইজম্যান (২০০৯), p. ৬; চ্যাপলিন, pp. ৭১–৭৪; রবিনসন, p. ৩৫.
- রবিনসন, পৃ. ৪১।
- চ্যাপলিন, p. ৮৮; রবিনসন, pp. ৫৫–৫৬.
- রবিনসন, p. ১৭; চ্যাপলিন, p. ১৮.
- চ্যাপলিন, পৃ. ৪১।
- ম্যারিয়ট, পৃ. ৪।
- ম্যারিয়ট, পৃ. ২১৩।
- চ্যাপলিন, পৃ. ৪৪।
- লোভিশ, পৃ. ১৯।
- রবিনসন, পৃ. ৩৯।
- চ্যাপলিন, পৃ. ৭৬।
- রবিনসন, পৃ. ৪৪–৪৬।
- ম্যারিয়ট, pp. ৪২–৪৪; রবিনসন, pp. ৪৬–৪৭; লোভিশ, p. ২৬.
- রবিনসন, পৃ. ৪৫, ৪৯–৫১, ৫৩, ৫৮।
- রবিনসন, পৃ. ৫৯–৬০।
- ম্যারিয়ট, পৃ. ২১৭।
- রবিনসন, পৃ. ৬৩।
- রবিনসন, পৃ. ৬৩–৬৪।
- ম্যারিয়ট, পৃ. ৭১।
- রবিনসন, pp. ৬৪–৬৮; চ্যাপলিন, p. ৯৪.
- রবিনসন, p. ৬৮; ম্যারিয়ট, pp. ৮১–৮৪.
- রবিনসন, p. ৭১; কামিন, p. ১২; ম্যারিয়ট, p. ৮৫.
- রবিনসন, পৃ. ৭৬।
- রবিনসন, পৃ. ৭৬–৭৭।
- ম্যারিয়ট, পৃ. ১০৩, ১০৯।
- ম্যারিয়ট, pp. ১২৬–১২৮; রবিনসন, pp. ৮৪–৮৫.
- রবিনসন, পৃ. ৮৮।
- রবিনসন, পৃ. ৯১–৯২।
- রবিনসন, p. ৮২; ব্রাউনলো, p. ৯৮.
- রবিনসন, পৃ. ৯৫।
- চ্যাপলিন, pp. ১৩৩–১৩৪; রবিনসন, p. ৯৬.
- রবিনসন, পৃ. ১০২।
- চ্যাপলিন, পৃ. ১৩৮–১৩৯।
- রবিনসন, p. ১৩০; চ্যাপলিন, p. ১৩৯.
- রবিনসন, পৃ. ১০৭।
- চ্যাপলিন, পৃ. ১৪১।
- রবিনসন, পৃ. ১০৮।
- রবিনসন, পৃ. ১১০।
- চ্যাপলিন, পৃ. ১৪৫।
- রবিনসন, পৃ. ১১৪।
- রবিনসন, পৃ. ১১৩।
- রবিনসন, পৃ. ১২০।
- রবিনসন, পৃ. ১২১।
- রবিনসন, পৃ. ১২৩।
- মালান্ড (১৯৮৯), পৃ. ৫।
- কামিন, পৃ. xi।
- চ্যাপলিন, পৃ. ১৫৩।
- রবিনসন, p. ১২৫; মালান্ড (১৯৮৯), pp. ৮–৯.
- রবিনসন, পৃ. ১২৭–১২৮।
- রবিনসন, পৃ. ১৩১।
- রবিনসন, পৃ. ১৩৫।
- রবিনসন, পৃ. ১৩৮–১৩৯।
- রবিনসন, পৃ. ১৪১, ২১৯।
- নেইবর, p. ২৩; চ্যাপলিন, p. ১৬৫; রবিনসন, pp. ১৪০, ১৪৩.
- রবিনসন, পৃ. ১৪৩।
- মালান্ড (১৯৮৯), পৃ. ২০।
- মালান্ড (১৯৮৯), পৃ. ৬, ১৪–১৮।
- মালান্ড (১৯৮৯), পৃ. 21–24।
- রবিনসন, p. ১৪২; নেইবর, pp. ২৩–২৪.
- রবিনসন, pp. ১৫২–১৫৩; কামিন, p. xi; মালান্ড (১৯৮৯), p. ১০.
- মালান্ড (১৯৮৯), পৃ. ৮।
- লোভিশ, p. ৭৪; স্ক্লার, p. ৭২.
- রবিনসন, পৃ. ১৪৯।
- রবিনসন, পৃ. ১৪৯–১৫২।
- রবিনসন, পৃ. ১৫৬।
- "C. Chaplin, Millionaire-Elect"। ফটোপ্লে (ইংরেজি ভাষায়)। শিকাগো, ইলিনয়: ফটোপ্লে পাবলিশং কোং। IX (6): ৫৮। মে ১৯১৬। ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৮।
- রবিনসন, পৃ. ১৬০।
- লার্চার, পৃ. ২৯।
- রবিনসন, পৃ. ১৫৯।
- রবিনসন, পৃ. ১৬৪।
- রবিনসন, পৃ. ১৬৫–১৬৬।
- রবিনসন, পৃ. ১৬৯–১৭৩।
- রবিনসন, পৃ. ১৭৫।
- রবিনসন, পৃ. ১৭৯–১৮০।
- রবিনসন, পৃ. ১৯১।
- ""The Happiest Days of My Life": Mutual"। Charlie Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ২২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭।
- ব্রাউনলো, p. ৪৫; রবিনসন, p. ১৯১; লোভিশ, p. ১০৪; ভ্যান্স (২০০৩), p. ২০৩.
- চ্যাপলিন, পৃ. ১৮৮।
- ব্রাউনলো, কেভিন; গিল, ডেভিড (১৯৮৩)। Unknown Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। টেমস সাইলেন্স।
- রবিনসন, পৃ. ১৮৫।
- রবিনসন, পৃ. ১৮৬।
- রবিনসন, পৃ. ১৮৭।
- রবিনসন, পৃ. ২১০।
- রবিনসন, পৃ. ২১৫–২১৬।
- রবিনসন, পৃ. ২১৩।
- রবিনসন, পৃ. ২২১।
- শিকেল, পৃ. ৮।
- চ্যাপলিন, p. ২০৩; রবিনসন, pp. ২২৫–২২৬.
- "Independence Won: First National"। Charlie Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ২৪ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
- চ্যাপলিন, পৃ. ২০৮।
- রবিনসন, পৃ. ২২৯।
- রবিনসন, পৃ. ২৩৭, ২৪১।
- রবিনসন, পৃ. ২৪৪।
- চ্যাপলিন, পৃ. ২১৮।
- রবিনসন, পৃ. ২৪১–২৪৫।
- চ্যাপলিন, pp. ২১৯–২২০; বালিও, p. ১২; রবিনসন, p. ২৬৭.
- রবিনসন, পৃ. ২৬৯।
- চ্যাপলিন, পৃ. ২২৩।
- রবিনসন, পৃ. ২৪৬।
- রবিনসন, পৃ. ২৪৮।
- রবিনসন, pp. ২৪৬–২৪৯; লোভিশ, p. ১৪১.
- রবিনসন, পৃ. ২৫১।
- চ্যাপলিন, p. ২৩৫; রবিনসন, p. ২৫৯.
- রবিনসন, p. ২৫২; লোভিশ, p. ১৪৮.
- লোভিশ, পৃ. ১৪৬।
- রবিনসন, পৃ. ২৫৩।
- চ্যাপলিন, পৃ. ২৫৩–২৫৫।
- "MOVIE REVIEW: THE SCREEN"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ডিসেম্বর ৮, ১৯১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭।
- রবিনসন, পৃ. ২৬১।
- চ্যাপলিন, পৃ. ২৩৩–২৩৪।
- রবিনসন, পৃ. ২৬৫।
- রবিনসন, পৃ. ২৮২।
- রবিনসন, পৃ. ২৯৫–৩০০।
- রবিনসন, পৃ. ৩১০।
- রবিনসন, পৃ. ৩০২।
- রবিনসন, পৃ. ৩১১–৩১২।
- রবিনসন, পৃ. ৩১৯–৩২১।
- রবিনসন, পৃ. ৩১৮–৩২১।
- লোভিশ, পৃ. ১৯৩।
- রবিনসন, পৃ. ৩০২, ৩২২।
- লোভিশ, পৃ. ১৯৫।
- কেম্প, p. ৬৪; চ্যাপলিন, p. ২৯৯.
- রবিনসন, পৃ. ৩৩৭।
- রবিনসন, পৃ. ৩৪০–২৪৫।
- রবিনসন, পৃ. ৩৫৮।
- রবিনসন, পৃ. ৩৫৪।
- রবিনসন, পৃ. ৩৫৭।
- রবিনসন, p. ৩৫৮; কেম্প, p. ৬৩.
- কেম্প, pp. ৬৩–৬৪; রবিনসন, pp. ৩৩৯, ৩৫৩; লোভিশ, p. ২০০; শিকেল, p. ১৯.
- কেম্প, পৃ. ৬৪।
- ভ্যান্স (২০০৩), পৃ. ১৫৪।
- রবিনসন, পৃ. ৩৪৬।
- চ্যাপলিন ও ভ্যান্স, p. ৫৩; ভ্যান্স (২০০৩), p. ১৭০.
- রবিনসন, পৃ. ৩৫৫, ৩৬৮।
- রবিনসন, পৃ. ৩৫০, ৩৬৮।
- রবিনসন, পৃ. ৩৭১।
- লোভিশ, p. ২২০; রবিনসন, pp. ৩৭২–৩৭৪.
- মালান্ড (১৯৮৯), পৃ. ৯৬।
- রবিনসন, pp. ৩৭২–৩৭৪; লোভিশ, pp. ২২০–২২১.
- রবিনসন, পৃ. ৩৭৮।
- মালান্ড (১৯৮৯), pp. ৯৯–১০৫; রবিনসন, p. ৩৮৩.
- রবিনসন, পৃ. ৩৬০।
- রবিনসন, পৃ. ৩৬১।
- রবিনসন, পৃ. ৩৭১, ৩৮১।
- লোভিশ, পৃ. ২১৫।
- রবিনসন, পৃ. ৩৮২।
- ফাইফার, লি। "The Circus - Film by Chaplin [1928]"। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
- ব্রাউনলো, p. ৭৩; লোভিশ, p. ২২৪.
- রবিনসন, p. ৩৮৯; চ্যাপলিন, p. ৩২১.
- রবিনসন, p. ৪৬৫; চ্যাপলিন, p. ৩২২; মালান্ড (২০০৭), p. ২৯.
- রবিনসন, p. ৩৮৯; মালান্ড (২০০৭), p. ২৯.
- রবিনসন, p. ৩৯৮; মালান্ড (২০০৭), pp. ৩৩–৩৪, ৪১.
- রবিনসন, পৃ. ৪০৯, ১৯৩০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রটির চিত্রায়ন সমাপ্ত হয়।
- চ্যাপলিন, পৃ. ৩২৪।
- "Chaplin as a composer" (ইংরেজি ভাষায়)। CharlieChaplin.com। ৫ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- রবিনসন, পৃ. ৪১০।
- রবিনসন, পৃ. ৪১৩।
- মালান্ড (২০০৭), pp. ১০৮–১১০; চ্যাপলিন, p. ৩২৮; রবিনসন, p. ৪১৫.
- "United Artists and the Great Features"। Charlie Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- মালান্ড (২০০৭), পৃ. ১০–১১।
- ভ্যান্স, পৃ. ২০৮
- Chaplin, পৃ. 360।
- Louvish, p. 243; Robinson, p. 420.
- Robinson, পৃ. 664–666।
- Robinson, পৃ. 429–441।
- Chaplin, পৃ. 372, 375।
- Larcher, পৃ. 64।
- Robinson, p. 453; Maland (1989), p. 147.
- Robinson, পৃ. 451।
- Louvish, পৃ. 256।
- Larcher, p. 63; Robinson, pp. 457–458.
- Louvish, পৃ. 257।
- Robinson, পৃ. 465।
- Robinson, পৃ. 466।
- Robinson, পৃ. 468।
- Robinson, পৃ. 469–472, 474।
- Maland (1989), পৃ. 150।
- Maland (1989), পৃ. 144–147।
- Maland (1989), p. 157; Robinson, p. 473.
- Schneider, পৃ. 125।
- Robinson, পৃ. 479।
- Robinson, পৃ. 469।
- Robinson, পৃ. 483।
- Robinson, পৃ. 509–510।
- Robinson, p. 485; Maland (1989), p. 159.
- Chaplin, পৃ. 386।
- Schickel, p. 28; Maland (1989), pp. 165, 170; Louvish, p. 271; Robinson, p. 490; Larcher, p. 67; Kemp, p. 158.
- Chaplin, পৃ. 388।
- Robinson, পৃ. 496।
- Maland (1989), পৃ. 165।
- Maland (1989), পৃ. 164।
- Chaplin, পৃ. 387।
- Maland (1989), পৃ. 172–173।
- Robinson, পৃ. 505, 507।
- Maland (1989), পৃ. 169, 178–179।
- Maland (1989), p. 176; Schickel, pp. 30–31.
- Maland, p. 181; Louvish, p. 282; Robinson, p. 504.
- Maland (1989), পৃ. 178–179।
- Gehring, পৃ. 133।
- Pfeiffer, Lee। "The Great Dictator"। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৭।
- Maland (1989), পৃ. 197–198।
- Maland (1989), পৃ. 200।
- Maland (1989), পৃ. 198–201।
- Nowell-Smith, পৃ. 85।
- Maland (1989), পৃ. 204–205।
- Robinson, পৃ. 523–524।
- Friedrich, পৃ. 190, 393।
- Maland (1989), পৃ. 215।
- Maland (1989), পৃ. 214–215।
- Louvish, পৃ. xiii।
- Maland (1989), পৃ. 205–206।
- Frost, pp. 74–88; Maland (1989), pp. 207–213; Sbardellati and Shaw, p. 508; Friedrich, p. 393.
- Louvish, পৃ. 135।
- Chaplin, pp. 423–444; Robinson, p. 670.
- Sheaffer, পৃ. 623, 658।
- Chaplin, পৃ. 423, 477।
- Robinson, পৃ. 519।
- Robinson, পৃ. 671–675।
- Chaplin, পৃ. 426।
- রবিনসন, পৃ. ৫২০।
- Chaplin, পৃ. 412।
- রবিনসন, পৃ. ৫১৯–৫২০।
- Louvish, p. 304; Sbardellati and Shaw, p. 501.
- লোভিশ, pp. ২৯৬–২৯৭; রবিনসন, pp. ৫৩৮–৫৪৩; লার্চার, p. ৭৭.
- Louvish, pp. 296–297; Sbardellati and Shaw, p. 503.
- Maland (1989), পৃ. 235–245, 250।
- Maland (1989), পৃ. 250।
- Louvish, পৃ. 297।
- Chaplin, পৃ. 444।
- Maland (1989), পৃ. 251।
- রবিনসন, pp. ৫৩৮–৫৩৯; ফ্রিডরিশ, p. ২৮৭.
- Maland (1989), পৃ. 253।
- Maland (1989), পৃ. 221–226, 253–254।
- Larcher, p. 75; Sbardellati and Shaw, p. 506; Louvish, p. xiii.
- Sbardellati, পৃ. 152।
- Maland (1989), পৃ. 265–266।
- নর্টন-টেলর, রিচার্ড (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "MI5 Spied on Charlie Chaplin after the FBI Asked for Help to Banish Him from US"। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। London। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
- Louvish, pp. xiv, 310; Chaplin, p. 458; Maland (1989), p. 238.
- Robinson, পৃ. 544।
- Maland (1989), পৃ. 255–256।
- লার্চার, p. ৮০; স্বার্দেলাত্তি ও শ, p. ৫১০; লোভিশ, p. xiii; রবিনসন, p. ৫৪৫.
- Robinson, পৃ. 545।
- Maland (1989), পৃ. 256–257।
- Maland (1989), pp. 288–290; Robinson, pp. 551–552; Louvish, p. 312.
- Maland (1989), পৃ. 293।
- Louvish, পৃ. 317।
- রবিনসন, পৃ. ৫৪৯–৫৭০।
- রবিনসন, পৃ. ৫৬২।
- রবিনসন, পৃ. ৫৬৭–৫৬৮।
- Louvish, পৃ. 326।
- রবিনসন, পৃ. ৫৭০।
- Maland (1989), পৃ. 280।
- Maland (1989), pp. 280–287; Sbardellati and Shaw, pp. 520–521.
- Chaplin, পৃ. 455।
- Robinson, পৃ. 573।
- Louvish, পৃ. 330।
- Maland (1989), পৃ. 295–298, 307–311।
- Maland (1989), পৃ. 189।
- Robinson, পৃ. 580।
- বেচেল, ডেল (২০০২)। "Film Legend Found Peace on Lake Geneva"। সুইস ইনফো (ইংরেজি ভাষায়)। ভেভি। ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৮।
- Robinson, পৃ. 580–581।
- Robinson, পৃ. 581।
- Robinson, পৃ. 584, 674।
- Lynn, pp. 466–467; Robinson, p. 584; Balio, pp. 17–21.
- Maland (1989), p. 318; Robinson, p. 584.
- Robinson, পৃ. 585।
- Louvish, পৃ. xiv–xv।
- Louvish, p. 341; Maland (1989), pp. 320–321; Robinson, pp. 588–589; Larcher, pp. 89–90.
- Robinson, পৃ. 587–589।
- Epstein, p. 137; Robinson, p. 587.
- Lynn, p. 506; Louvish, p. 342; Maland (1989), p. 322.
- Robinson, পৃ. 591।
- Louvish, পৃ. 347।
- Vance (2003), পৃ. 329।
- Maland (1989), পৃ. 326।
- Robinson, পৃ. 594–595।
- Lynn, পৃ. 507–508।
- Robinson, পৃ. 598–599।
- Lynn, p. 509; Maland (1989), p. 330.
- Robinson, পৃ. 602–605।
- Robinson, pp. 605–607; Lynn, pp. 510–512.
- Robinson, পৃ. 608–609।
- Robinson, পৃ. 612।
- Robinson, পৃ. 607।
- Vance (2003), পৃ. 330।
- Epstein, পৃ. 192–196।
- Lynn, p. 518; Maland (1989), p. 335.
- Robinson, পৃ. 619।
- Epstein, পৃ. 203।
- Robinson, পৃ. 620–621।
- Robinson, পৃ. 621।
- Robinson, পৃ. 625।
- "Charlie Chaplin Prepares for Return to United States after Two Decades" (ইংরেজি ভাষায়)। A&E Television Networks। ১৮ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- Maland (1989), পৃ. 347।
- Robinson, পৃ. 623–625।
- Robinson, পৃ. 627–628।
- Robinson, পৃ. 626।
- Thomas, David (২৬ ডিসেম্বর ২০০২)। "When Chaplin Played Father"। দ্য টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- Robinson, পৃ. 626–628।
- Lynn, পৃ. 534–536।
- Reynolds, Paul (২১ জুলাই ২০০২)। "Chaplin Knighthood Blocked" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- "To be Ordinary Knights Commanders ..."। দ্যা লন্ডন গেজেট (১ম সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়) (46444)। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৪।
- "Little Tramp Becomes Sir Charles"। নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ মার্চ ১৯৭৫। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- Robinson, পৃ. 629।
- Vance (2003), পৃ. 359।
- Chaplin, পৃ. 287।
- Robinson, পৃ. 631।
- Robinson, পৃ. 632।
- "Yasser Arafat: 10 Other People Who Have Been Exhumed" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। ২৭ নভেম্বর ২০১২। ২৭ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৭।
- Robinson, পৃ. 629–631।
- Robinson, পৃ. 18।
- Robinson, pp. 71–72; Chaplin, pp. 47–48; Weissman (2009), pp. 82–83, 88.
- Louvish, পৃ. 38।
- Robinson, পৃ. 86–87।
- Lynn, pp. 99–100; Brownlow, p. 22; Louvish, p. 122.
- Louvish, পৃ. 48–49।
- Robinson, পৃ. 606।
- Brownlow, পৃ. 7।
- Louvish, p. 103; Robinson, p. 168.
- Robinson, পৃ. 173, 197, 310, 489।
- Robinson, পৃ. 169।
- Louvish, p. 168; Robinson, pp. 166–170, pp. 489–490; Brownlow, p. 187.
- Louvish, পৃ. 182।
- Robinson, পৃ. 460।
- Louvish, পৃ. 228।
- Robinson, pp. 234–235; Cousins, p. 71.
- Robinson, pp. 172, 177, 235, 311, 381, 399; Brownlow, pp. 59, 75, 82, 92, 147.
- Brownlow, পৃ. 82।
- Robinson, pp. 235, 311, 223; Brownlow, p. 82.
- Robinson, p. 746; Maland (1989), p. 359.
- Robinson, p. 201; Brownlow, p. 192.
- Louvish, পৃ. 225।
- Brownlow, p. 157; Robinson, pp. 121, 469.
- Robinson, পৃ. 600।
- Robinson, pp. 371, 362, 469, 613; Brownlow, pp. 56, 136; Schickel, p. 8.
- Bloom, p. 101; Brownlow, pp. 59, 98, 138, 154; Robinson, p. 614.
- Robinson, পৃ. 140, 235, 236।
- Maland (1989), পৃ. 353।
- "Chaplin's Writing and Directing Collaborators" (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৮।
- Robinson, p. 411; Louvish, pp. 17–18.
- Robinson, পৃ. 382।
- Robinson, পৃ. 411।
- Vance (2000), পৃ. xiii।
- Slowik, পৃ. 133।
- Raksin and Berg, পৃ. 47–50।
- Vance, Jeffrey (4 August 2003). "Chaplin the Composer: An Excerpt from Chaplin: Genius of the Cinema". Variety Special Advertising Supplement, pp. 20–21.
- Weston, Jay (১০ এপ্রিল ২০১২)। "Charlie Chaplin's Limelight at the Academy After 60 Years" (ইংরেজি ভাষায়)। হাফিংটন পোস্ট। ১৩ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৮।
- Sarris, পৃ. 139।
- "Charlie Chaplin"। Charlie Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ২২ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- Quittner, Joshua (৮ জুন ১৯৯৮)। "TIME 100: Charlie Chaplin" (ইংরেজি ভাষায়)। টাইম। ২৩ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- Hansmeyer, পৃ. 3।
- Louvish, পৃ. xvii।
- "Chaplin – First, Last, And Always" (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্ডিওয়্যার। ২৫ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- Schickel, পৃ. 41।
- "Record Price for Chaplin Hat Set" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। ২৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- Cousins, p. 72; Kemp, pp. 8, 22; Gunning, p. 41; Sarris, p. 139; Hansmeyer, p. 3.
- Schickel, pp. 3–4; Cousins, p. 36; Robinson, pp. 209–211; Kamin, p. xiv.
- Cousins, পৃ. 70।
- Schickel, পৃ. 7, 13।
- Presented by Paul Merton, directed by Tom Cholmondeley (১ জুন ২০০৬)। "Charlie Chaplin"। Silent Clowns। British Broadcasting Corporation। BBC Four।
- Thompson, pp. 398–399; Robinson, p. 321; Louvish, p. 185.
- Robinson, পৃ. 321।
- Brownlow, পৃ. 77।
- Mark Cousins (১০ সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Episode 2"। The Story of Film: An Odyssey। event occurs at 27:51–28:35। Channel 4। More4।
- Cardullo, পৃ. 16, 212।
- "Attenborough Introduction"। Charlie Chaplin। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- Lasica, Tom (মার্চ ১৯৯৩)। "Tarkovsky's Choice"। সাইট অ্যান্ড সাউন্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। 3 (3)। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- Canemaker, পৃ. 38, 78।
- Jackson, পৃ. 439–444।
- Simmons, পৃ. 8–11।
- Mast, পৃ. 100।
- "The Greatest Films Poll: Critics Top 250 Films"। Sight & Sound (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- "Directors' Top 100 Films" (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- "The Greatest Films Poll: All Films"। Sight & Sound (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- "AFI's 100 Years ... 100 Movies – 10th Anniversary Edition" (ইংরেজি ভাষায়)। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ১৮ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- Louvish, p. xvi; Maland, pp. xi, 359, 370.
- "DVDs, United States" (ইংরেজি ভাষায়)। Charlie Chaplin। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। "DVDs, United Kingdom" (ইংরেজি ভাষায়)। Charlie Chaplin। ১৩ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- Poullain-Majchrzak, Ania (১৮ এপ্রিল ২০১৬)। "Chaplin's World museum opens its doors in Switzerland" (ইংরেজি ভাষায়)। রয়টার্স। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Charlie Chaplins gather in their hundreds to set world record – video" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য গার্ডিয়ান। ১৭ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "London Film Museum: About Us" (ইংরেজি ভাষায়)। London Film Museum। ২৮ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- Robinson, পৃ. 677।
- "Welcome to IMAX United Kingdom" (ইংরেজি ভাষায়)। IMAX। ৪ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- "Charlie Chaplin"। Blue Plaque Places (ইংরেজি ভাষায়)। ১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- "Vevey: Les Tours "Chaplin" Ont Été Inaugurées" (ফরাসি ভাষায়)। RTS.ch। ৮ অক্টোবর ২০১১। ২৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- "Charlie Chaplin" (ইংরেজি ভাষায়)। VisitWaterville.ie। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- "The Story" (ইংরেজি ভাষায়)। Charlie Chaplin Comedy Film Festival। ২৪ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- Schmadel, পৃ. 305।
- Maland (1989), পৃ. 362–370।
- Kamin, Dan (১৭ এপ্রিল ১৯৮৯)। "Charlie Chaplin's 100th Birthday Gala a Royal Bash in London"। দ্য পিট্সবার্গ পোস্ট-গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৮।
- "The Museum of Modern Art Honors Charles Chaplin's Contributions to Cinema" (PDF) (ইংরেজি ভাষায়)। The Museum of Modern Art Press Release। মার্চ ১৯৮৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Google Doodles a Video Honouring Charlie Chaplin" (ইংরেজি ভাষায়)। সিএনএন-নিউজ১৮। ১৫ এপ্রিল ২০১১। ৯ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Association Chaplin" (ইংরেজি ভাষায়)। Association Chaplin। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।; "Interview with Kate Guyonvarch" (ইংরেজি ভাষায়)। Lisa K. Stein। ২৭ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Chaplin Archive" (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ১০ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।;"Charlie Chaplin Archive" (ইংরেজি ভাষায়)। Cineteca Bologna। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Chaplin at the Musée de l'Elysée" (ইংরেজি ভাষায়)। Musée de l'Elysée। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "The BFI Charles Chaplin Conference July 2005"। Charlie Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Robert Downey, Jr. profile, Finding Your Roots" (ইংরেজি ভাষায়)। পিবিএস। ২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "The Scarlett O'Hara War – Cast"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "The Cat's Meow – Cast"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Young Charlie Chaplin Wonderworks" (ইংরেজি ভাষায়)। এমি পুরস্কার। ৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Limelight – The Story of Charlie Chaplin" (ইংরেজি ভাষায়)। লা জোলা প্লেহাউজ। ২১ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Chaplin – A Musical" (ইংরেজি ভাষায়)। ব্যারিমোর থিয়েটার। ১৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Ohjelmisto: Chaplin" (ফিনীয় ভাষায়)। সভেঙ্কা তিয়াত্রার্ন। ১৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Kulkuri" (ফিনীয় ভাষায়)। Tampereen Työväen Teatteri। ৫ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- নেস, প্যাট্রিক (২৭ জুন ২০০৯)। "Looking for the Little Tramp"। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Jerusalem by Alan Moore review — Midlands metaphysics" (ইংরেজি ভাষায়)। ফিনান্সিয়াল টাইমস। ১৭ জানুয়ারি ২০১২। ১৩ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Comic Genius Chaplin is Knighted" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। ৪ মার্চ ১৯৭৫। ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৭।
- Robinson, পৃ. 610।
- "Tribute to Charlie Chaplin" (ইংরেজি ভাষায়)। কান চলচ্চিত্র উৎসব। ২৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৭।
- রবিনসন, পৃ. ৬২৫–৬২৬।
- ই. সেগাল, মার্টিন (৩০ মার্চ ২০১৩)। "40 Years Ago–The Birth of the Chaplin Award" (ইংরেজি ভাষায়)। লিংকন সেন্টার ফিল্ম সোসাইটি। ২ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৭।
- উইলিয়ামস, পৃ. ৩১১।
- "The 13th Academy Awards: Nominees and Winners"। অস্কার। ৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৭।
- হ্যাস্টিংস, ক্রিস (১৮ এপ্রিল ২০০৯)। "Dawn French and Jennifer Saunders to be honoured by Bafta"। সানডে টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন। ১০ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৭।
- "National Film Registry" (ইংরেজি ভাষায়)। লাইব্রেরি অব কংগ্রেস। ২৮ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৭।
উৎস
- উইলিয়ামস, গ্রেগরি পল (২০০৬)। The Story of Hollywood: An Illustrated History (ইংরেজি ভাষায়)। Los Angeles, CA: B L Press। আইএসবিএন 978-0-9776299-0-9।
- এপস্টেইন, জেরি (১৯৮৮)। Remembering Charlie (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: ব্লুমসবারি। আইএসবিএন 0-7475-0266-8।
- ওয়াইজম্যান, স্টিভেন এম. (১৯৯৯)। "Charlie Chaplin's Film Heroines"। ফিল্ম হিস্ট্রি (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৮ (৪): ৪৩৯–৪৪৫।
- ওয়াইজম্যান, স্টিভেন এম. (২০০৯)। চ্যাপলিন: আ লাইফ (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: জেআর বুকস। আইএসবিএন 978-1-906779-50-4।
- কাজিন্স, মার্ক (২০০৪)। The Story of Film: An Odyssey (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: প্যাভিলিয়ন বুকস। আইএসবিএন 978-1-86205-574-2।
- কামিন, ড্যান (২০১১) [২০০৮]। The Comedy of Charlie Chaplin: Artistry in Motion (ইংরেজি ভাষায়)। ল্যানহাম, এমডি: স্কেয়ারক্রো প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8108-7780-1।
- কারডুলো, বার্ট (২০০৯)। Vittorio De Sica: Actor, Director, Auteur (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যামব্রিজ: ক্যামব্রিজ স্কলার্স পাবলিশিং। আইএসবিএন 1-4438-1531-4।
- কেনমেকার, জন (১৯৯৬)। Felix: The Twisted Tale of the World's Most Famous Cat (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যামব্রিজ, এ্মএ: দা কাপো প্রেস। আইএসবিএন 0-306-80731-9।
- কেম্প, ফিলিপ (সম্পাদক.) (২০১১)। Cinema: The Whole Story (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: টেমস অ্যান্ড হাডসন। আইএসবিএন 978-0-500-28947-1।
- কুরিয়ামা, কনস্ট্যান্স বি. (১৯৯২)। "Chaplin's Impure Comedy: The Art of Survival"। ফিল্ম কোয়ার্টারলি (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৪৫ (৩): 26–38। doi:10.2307/1213221। জেস্টোর 1213221।
- গানিং, টম (১৯৯০)। "Chaplin and American Culture: The Evolution of a Star Image by Charles J. Maland"। ফিল্ম কোয়ার্টারলি (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৪৩ (৩): ৪১–৪৩। doi:10.2307/1212638। জেস্টোর 1212638।
- গেহরিং, ভেস ডি. (২০১৪)। Chaplin's War Trilogy: An Evolving Lens in Three Dark Comedies, 1918–1947 (ইংরেজি ভাষায়)। জেফারসন, এনসি: ম্যাকফারল্যান্ড। আইএসবিএন 978-0-7864-7465-3।
- চ্যাপলিন, চার্লি (২০০৩) [১৯৬৪]। মাই অটোবায়োগ্রাফি (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: পেঙ্গুইন ক্লাসিকস। আইএসবিএন 0-14-101147-5।
- চ্যাপলিন, লিটা গ্রে; ভ্যান্স, জেফ্রি (১৯৯৮)। Wife of the Life of the Party (ইংরেজি ভাষায়)। Lanham, MD: স্কেয়ারক্রো প্রেস। আইএসবিএন 0-8108-3432-4।
- জ্যাকসন, ক্যাথি মারলক (২০০৩)। "Mickey and the Tramp: Walt Disney's Debt to Charlie Chaplin"। দ্য জার্নাল অব আমেরিকান কালচার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ (১): ৪৩৯–৪৪৪। doi:10.1111/1542-734X.00104।
- ডেল, এলান এস. (২০০০)। Comedy is a Man in Trouble: Slapstick in American Movies (ইংরেজি ভাষায়)। মিনিয়াপোলিস, এমএন: মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 0-8166-3658-3।
- থম্পসন, ক্রিস্টিন (২০০১)। "Lubitsch, Acting and the Silent Romantic Comedy"। ফিল্ম হিস্ট্রি (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ১৩ (৪): ৩৯০–৪৩৮। doi:10.2979/FIL.2001.13.4.390।
- নেইবর, জেমস এল. (২০০০)। "Chaplin at Essanay: Artist in Transition"। ফিল্ম কোয়ার্টারলি (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৫৪ (১): ২৩–২৫। doi:10.2307/1213798। জেস্টোর 1213798।
- নোওয়েল-স্মিথ, জেওফ্রি (সম্পাদক) (১৯৯৭)। Oxford History of World Cinema (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-874242-5।
- ফ্রিডরিশ, অটো (১৯৮৬)। City of Nets: A Portrait of Hollywood in the 1940's (ইংরেজি ভাষায়)। বার্কলি, সিএ: ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-520-20949-7।
- ফ্রস্ট, জেনিফার (২০০৭)। "'Good Riddance to Bad Company': Hedda Hopper, Hollywood Gossip, and the Campaign against Charlie Chaplin, 1940–1952"। অস্ট্রেলেশিয়ান জার্নাল অব আমেরিকান স্টাডিজ (ইংরেজি ভাষায়)। অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড আমেরিকান স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন। ২৬ (২): ৭৪–৮৮।
- বালিও, টিনো (১৯৭৯)। "Charles Chaplin, Entrepreneur: A United Artist"। Journal of the University Film Association (ইংরেজি ভাষায়)। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৩১ (১): ১১–২১।
- ব্লুম, ক্লেয়ার (১৯৮২)। Limelight and After (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: ওয়াইডেনফেল্ড অ্যান্ড নিকোলসন। আইএসবিএন 0-297-78051-4।
- ব্রাউনলো, কেভিন (২০১০) [২০০৫]। The Search for Charlie Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: ইউকেএ প্রেস। আইএসবিএন 978-1-905796-24-3।
- ভ্যান্স, জেফ্রি (১৯৯৬)। "The Circus: A Chaplin Masterpiece"। ফিল্ম হিস্ট্রি (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৮ (২): ১৮৬–২০৮। জেস্টোর 3815334।
- ভ্যান্স, জেফ্রি (২০০০)। Introduction। Making Music with Charlie Chaplin। by জেমস, এরিক (ইংরেজি ভাষায়)। ল্যানহাম, এমডি: স্কেয়ারক্রো প্রেস। আইএসবিএন 0-8108-3741-2।
- ভ্যান্স, জেফ্রি (২০০৩)। Chaplin: Genius of the Cinema (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: হ্যারি এন. আব্রামস। আইএসবিএন 0-8109-4532-0।
- মালান্ড, চার্লস জে. (১৯৮৯)। Chaplin and American Culture (ইংরেজি ভাষায়)। প্রিন্সটন, নিউ জার্সি: প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 0-691-02860-5।
- মালান্ড, চার্লস জে. (২০০৭)। City Lights (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। আইএসবিএন 978-1-84457-175-8।
- ম্যাকক্যাফ্রি, ডোনাল্ড ডব্লিউ. (সম্পাদক) (১৯৭১)। Focus on Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। এঙ্গেলউড ক্লিফস, নিউ জার্সি: প্রেনটিস হল। আইএসবিএন 0-13-128207-7।
- ম্যারিয়ট, এ. জে. (২০০৫)। Chaplin: Stage by Stage (ইংরেজি ভাষায়)। হিচিন, হার্টস: ম্যারিয়ট পাবলিশিং। আইএসবিএন 978-0-9521308-1-9।
- ম্যাস্ট, জেরাল্ড (১৯৮৫) [১৯৮১]। A Short History of the Movies: Third Edition (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 0-19-281462-1।
- রবিনসন, ডেভিড (১৯৮৬) [১৯৮৫]। চ্যাপলিন: হিজ লাইফ অ্যান্ড আর্ট (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: পালাডিন। আইএসবিএন 0-586-08544-0।
- রাকসিন, ডেভিড; বার্গ, চার্লস এম. (১৯৭৯)। "Music Composed by Charles Chaplin: Auteur or Collaborateur?"। ইউনিভার্সিটি ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশন সাময়িকী (ইংরেজি ভাষায়)। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৩১ (১): ৪৭–৫০।
- লার্চার, জেরোম (২০১১)। Masters of Cinema: Charlie Chaplin (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: সাহিয়ের দ্যু সিনেমা। আইএসবিএন 978-2-86642-606-4।
- লিন, কেনেথ এস. (১৯৯৭)। Charlie Chaplin and His Times (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: সিমন অ্যান্ড শুস্টার। আইএসবিএন 0-684-80851-X।
- লোভিশ, সিমন (২০১০) [২০০৯]। Chaplin: The Tramp's Odyssey (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: ফ্যাবার অ্যান্ড ফ্যাবার। আইএসবিএন 978-0-571-23769-2।
- শিকেল, রিচার্ড (সম্পাদক) (২০০৬)। The Essential Chaplin – Perspectives on the Life and Art of the Great Comedian (ইংরেজি ভাষায়)। শিকাগো, ইলিনয়: ইভান আর. ডি। আইএসবিএন 1-56663-682-5।
- শিফার, লুই (১৯৭৩)। O'Neill: Son and Artist (ইংরেজি ভাষায়)। বোস্টন অ্যান্ড টরন্টো: লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্পানি। আইএসবিএন 0-316-78336-6।
- স্বারদেল্লাতি, জন (২০১২)। J. Edgar Hoover Goes to the Movies: The FBI and the Origins of Hollywood's Cold War (ইংরেজি ভাষায়)। ইথাকা, নিউ ইয়র্ক: কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8014-5008-2।
- স্বারদেল্লাতি, জন; শ, টনি (২০০৩)। "Booting a Tramp: Charlie Chaplin, the FBI, and the Construction of the Subversive Image in Red Scare America" (PDF)। প্যাসিফিক হিস্ট্রিক্যাল রিভিউ (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৭২ (৪): ৪৯৫–৫৩০। doi:10.1525/phr.2003.72.4.495।
- সিমন্স, শেরউইন (২০০১)। "Chaplin Smiles on the Wall: Berlin Dada and Wish-Images of Popular Culture"। নিউ জার্মান ক্রিটিক (ইংরেজি ভাষায়)। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস (৮৪): ৩–৩৪। doi:10.2307/827796। জেস্টোর 827796।
- স্ক্লার, রবার্ট (২০০১)। Film: An International History of the Medium (ইংরেজি ভাষায়) (২য় সংস্করণ)। আপার স্যাডল রিভার, নিউ জার্সি: প্রেনটিস হল। আইএসবিএন 978-0-13-034049-8।
- স্নাইডার, স্টিভেন জে. (সম্পাদক) (২০০৯)। 1001 Movies You Must See Before You Die (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন: কুইনটেসেন্স। আইএসবিএন 978-1-84403-680-6।
- স্মাডেল, লুৎজ ডি. (২০০৩)। Dictionary of Minor Planet Names (ইংরেজি ভাষায়) (৫ম সংস্করণ)। নিউ ইয়রক সিটি: স্প্রিঞ্জার ভেরলাগ। পৃষ্ঠা ৩০৫। আইএসবিএন 978-3-540-00238-3।
- স্যারিস, অ্যান্ড্রু (১৯৯৮)। You Ain't Heard Nothin' Yet: The American Talking Film – History and Memory, 1927–1949 (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক সিটি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-503883-5।
- স্লোউইক, মাইকেল (২০১৪)। After the Silents: Hollywood Film Music in the Early Era, 1926-1934 (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0231165839।
- হান্সমেয়ার, ক্রিস্টিয়ান (১৯৯৯)। Charlie Chaplin's Techniques for the Creation of Comic Effect in his Films (ইংরেজি ভাষায়)। পোর্টসমাউথ: পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। আইএসবিএন 978-3-638-78719-2।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে চার্লি চ্যাপলিন সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
![]() |
উইকিউক্তিতে নিচের বিষয় সম্পর্কে সংগৃহীত উক্তি আছে:: চার্লি চ্যাপলিন |
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
- চ্যাপলিন ওয়েবসাইট (ইংরেজি)
- চার্লি চ্যাপলিনের সংরক্ষণাগার (ইংরেজি)
- জীবনী
- চার্লি চ্যাপলিনের জীবনী (ইংরেজি)
- চার্লি চ্যাপলিনের স্বর্ণময় নীরবতা (ইংরেজি)
- চ্যাপলিন আ লাইফ: ৪০টি চিত্র-প্রবন্ধ (ইংরেজি)
- ইন্টারনেট সংরক্ষণাগারে চার্লি চ্যাপলিন নির্মিত বা সম্পর্কিত চলচ্চিত্র (মূল সংস্করণের স্ক্যানকৃত রঙিন চিত্রাঙ্কনসমৃদ্ধ বই) (ইংরেজি)
- চলচ্চিত্রের তালিকা
- অন্যান্য
- দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে মৃত লোকদের বিবরণ, ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭৭, Chaplin's Little Tramp, an Everyman Trying to Gild Cage of Life, Enthralled World (ইংরেজি)
- টাইম ১০০: চার্লি চ্যাপলিন (ইংরেজি)
- এডনা পারভায়েন্স.কমে চার্লি চ্যাপলিন (ইংরেজি)
- গারেনউইং.ইউকে-এ চ্যাপলিন (ইংরেজি)
- সেরা ১০ চার্লি চাপলিনের চলচ্চিত্র (ইংরেজি)