ক্রিস গেইল
ক্রিস্টোফার হেনরি "ক্রিস" গেইল (ইংরেজি: Chris Gayle; জন্ম: ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯) জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ও মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত। প্রায়শঃই তিনি ছক্কা হাঁকিয়ে থাকেন। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্রিস গেইল। তিনি ওরচেস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব, ওয়েস্টার্ন ওয়ারিয়র্স, বরিশাল বার্নার্স এবং কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের পক্ষ নিয়ে খেলেছেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা আইপিএল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলছেন। বিগ ব্যাশ লীগে গেইল সিডনি থান্ডার দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে জামাইকা দলে খেলছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে বরিশাল বার্নার্স দলের অন্যতম ক্রিকেটার। ২০১২ সালে নতুন প্রবর্তিত শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লীগে ইউভা নেক্সটেরও সদস্য মনোনীত হন তিনি।[2]
![]() ২০০৫ সালে আইসিসি বিশ্ব একাদশের পক্ষ হয়ে ডকল্যান্ড স্টেডিয়ামে অংশগ্রহণ | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
---|---|
পূর্ণ নাম | ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল |
জন্ম | কিংস্টন, জামাইকা | ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯
ডাকনাম | গেইল-ফোর্স, গেইল-স্টর্ম, ওয়ার্ল্ড বস, ইউনিভার্স বস, মাস্টার স্টর্ম, স্পার্তান[1] |
উচ্চতা | ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৯৩ মিটার) |
ব্যাটিংয়ের ধরন | বামহাতি |
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি অফ ব্রেক |
ভূমিকা | অল-রাউন্ডার |
আন্তর্জাতিক তথ্য | |
জাতীয় পার্শ্ব | |
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৩২) | ১৬ মার্চ ২০০০ বনাম জিম্বাবুয়ে |
শেষ টেস্ট | ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বনাম বাংলাদেশ |
ওডিআই অভিষেক (ক্যাপ ৯৭) | ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ বনাম ভারত |
শেষ ওডিআই | ২১ মার্চ ২০১৫ বনাম নিউজিল্যান্ড |
ওডিআই শার্ট নং | ৪৫ |
টি২০আই অভিষেক (ক্যাপ ৬) | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ বনাম নিউজিল্যান্ড |
শেষ টি২০আই | ৩ এপ্রিল ২০১৬ বনাম ইংল্যান্ড |
ঘরোয়া দলের তথ্য | |
বছর | দল |
১৯৯৮–বর্তমান | জামাইকা (দল নং ৩৩৩) |
২০০৫ | ওরচেস্টারশায়ার |
২০০৮-২০১০ | কলকাতা নাইট রাইডার্স |
২০০৯-২০১১ | ওয়েস্টার্ন ওয়ারিয়র্স |
২০১১–২০১৭ | রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর |
২০১১-২০১৩ | সিডনি থান্ডার |
২০১২ | বরিশাল বার্নার্স |
২০০৮ | স্টানফোর্ড সুপারস্টার্স |
২০১১ | মাতাবেলেল্যান্ড তুস্কার্স |
২০১৩-বর্তমান | ঢাকা গ্লেডিয়েটর্স |
২০১৪ | হাইভেল্ড লায়ন্স |
২০১৫-বর্তমান | মেলবোর্ন রেনেগেডেস |
২০১৫ | বরিশাল বুলস |
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো, ১৬ মার্চ ২০১৬ |
খেলোয়াড়ী জীবন
১৯ বছর বয়সে জামাইকার পক্ষ হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটান। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষ হয়ে যুবদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেন। এগার মাস পর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেন। এর ছয় মাস পর টেস্ট ম্যাচ খেলেন। ক্রিস গেইল সাধারণতঃ ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন ও বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে ইতোমধ্যেই নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। জুলাই, ২০১১ সালে গেইল (১৭৫) এবং ড্যারেন গঙ্গা (৮৯) কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব, বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৪ রানের জুটি করে নতুন রেকর্ড গড়েন।
চারজন ক্রিকেটারের একজন হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দুইবার ত্রি-শতক হাঁকিয়েছেন গেইল। তন্মধ্যে ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১৭ ও ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৩৩ করেন। ২০১২ সালে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টের প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩য় টেস্ট ম্যাচে ক্রিস গেইল টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫ম দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন। তিনি মাত্র ৭০ বলে সেঞ্চুরিতে পৌঁছেন। কিন্তু ১০২ রান করে আউট হন। এ ইনিংসে বেশ কিছু ছক্কা মারেন। তন্মধ্যে একটি লিলি-মার্শ স্ট্যান্ডের ছাদে চলে যায়। ধারাভাষ্যকার ও সাবেক উইকেট-রক্ষক অস্ট্রেলিয়ার ইয়ান হিলি মন্তব্য করেছিলেন যে প্রায় ১৪০ মিটার দূরে বল চলে গিয়েছিল। ১৬ নভেম্বর, ২০১০ সালে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা এবং বীরেন্দ্র শেওয়াগের পর ৪র্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি দু'টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান।[3]
ক্রিকেট বিশ্বকাপ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১১ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তারিখে ম্যানুকা ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ-পর্বের ৩য় খেলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনেকগুলো রেকর্ড গড়েন। তার অসামান্য ব্যাটিংসহ বোলিং নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৩ রানে বিজয়ী। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ঐ খেলায় বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ও প্রথম অ-ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্বি-শতক হাঁকান।[4] এছাড়াও গেইলের দ্বি-শতকটি একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্রুততম।[5] তার বিধ্বংসী ইনিংসে ১৬ ছক্কার মার ছিল। এরফলে, রোহিত শর্মা ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের সাথে একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডে ভাগ বসান গেইল।[6] মারলন স্যামুয়েলসের সাথে ৩৭২ রানের জুটি গড়ে একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে যে-কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন।[7] এছাড়াও, ব্রায়ান লারা'র পর দ্বিতীয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে ক্রিস গেইল একদিনের আন্তর্জাতিকে ৯,০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।[8]
টুয়েন্টি২০
২০০৭ সালের বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার প্রথম খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৫৭ বলে ১১৭ রান করেন যা একসময় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস হিসেবে রেকর্ডভূক্ত হয়েছিল। এছাড়াও সেঞ্চুরিটি ছিল টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম। এরফলে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩টি পদ্ধতির (টেস্ট, একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং টুয়েন্টি২০) প্রত্যেকটিতেই সেঞ্চুরি করে বিরল রেকর্ড গড়েন।[9] এছাড়াও তিনি টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশী ১৩টি হাফসেঞ্চুরি [10] করেন। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী আসরে প্রথম ফ্রাঞ্চাইজ খেলোয়াড় হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি টি২০ বিশ্বকাপে দুইবার সেঞ্চুরি করেন৷
আইপিএল-এ ১৭৫
২৩ এপ্রিল ২০১৩ সালে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ৩০ বলে সেঞ্চুরি করেন।[11] যেটি বর্তমানে টি-টুয়েন্টি এবং ক্রিকেটের যে-কোন ফরম্যাটের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি। পূর্বতন দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ৩৪ বলে। ম্যাচে তিনি অপরাজিত ১৭৫* (৬৬ বল) রান করেন। এ ইনিংসে তিনি টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশী ১৭টি ছক্কা হাঁকান।[12] এরফলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলোয়াড় ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ম্লান হয়ে যায়।
বিতর্ক
অত্যন্ত ভদ্র, শান্তশিষ্ট চরিত্রের ব্যক্তিত্ব হিসেবে ক্রিস গেইলের সুনাম রয়েছে।[13] কিন্তু ২০০৫ সালে তিনি ও তার সহযোগী কয়েকজন খেলোয়াড় স্পন্সর সংক্রান্ত জটিলতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারা ব্যক্তিগতভাবে ক্যাবল এন্ড ওয়্যারলেস কোম্পানীর সাথে স্পন্সরশীপ চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু কোম্পানীর প্রতিপক্ষ ডিজিসেলকে বোর্ড স্পন্সরশীপে আমন্ত্রণ জানায় ও বোর্ড খেলোয়াড়দেরকে ক্যাবল এন্ড ওয়্যারলেসের সাথে আবদ্ধ চুক্তি বাতিল করার কথা বলে। কিন্তু গেইলসহ অন্যান্যরা তাতে সাড়া না দিলে ক্রিকেট বোর্ড তাদের ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১ম টেস্টের জন্যে নাম ঘোষণা করে।[14]
এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিগ-ব্যাশে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে ১৫ বলে ৪১ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলার পর ফেরেন গেইল। তখন নারী সাংবাদিক মেল ম্যাকলাফলিন তার সামনে এগিয়ে যান। সেখানে সরাসরি সাক্ষাৎকারে নারী সাংবাদিককে গেইল বললে, ‘তোমাকে সাক্ষাৎকার দেবো বলেই আউট হয়ে ফিরেছি। প্রথম দেখাতেই তোমার চোখ দু’টো দারুণ লেগেছে। আশা করছি ম্যাচটি আমরা জিতে যাবো। চলো না, ম্যাচ শেষে কোথাও আমরা একটু ড্রিংস করি। আমার কথা লজ্জা পেও না বেবি।’ পরে এঘটনায় তাকে জরিমানা গুনতে হয়।[15]
তথ্যসূত্র
- "Spartan Ambassador - Chris Gayle"। ২৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- Kaushik, R। "Groin strain makes Gayle doubtful starter for SLPL"। Wisden India। ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১২।
- "West Indies' Chris Gayle hits 333 against Sri Lanka". BBC News Sport (BBC). 16 November 2010. Retrieved 16 November 2010.
- "Gayle becomes first batsman to score double ton in world cup"। SportsMirchi.com।
- Krishnaswamy, Karthik (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "Gayle, Samuels smash Zimbabwe and records"। ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "Most sixes in an innings"। ESPNcricinfo। ESPN Sports Media। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "Highest partnership ever for Chris Gayle and Marlon Samuels"। ESPNcricinfo। ESPN Sports Media। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "Gayle enters 9000 runs: Records / Leading Run Scorers"। ESPNcricinfo। ESPN Sports Media। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- List of highest individual International Twenty20 innings, Cricinfo, retrieved 20 January 2008
- http://stats.espncricinfo.com/ci/content/records/283018.html
- ‘অতিমানবীয়’ গেইল, প্রথম আলো, ২৩ এপ্রিল ২০১৩
- Gayle 175* (66b), RCB win by 130, ক্রিকইনফো, ২৩ এপ্রিল ২০১৩
- "Player Profile: Chris Gayle". CricInfo. Retrieved 18 May 2009.
- West Indies sponsor rejects plans, BBC Sports, retrieved on 20 January 2008
- ‘ডেটিং প্রস্তাব’ বিতর্কে গেইলের জরিমানা
বহিঃসংযোগ
- ক্রিকেটআর্কাইভে ক্রিস গেইল
(সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে ক্রিস গেইল
(ইংরেজি)