বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তু বলতে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তুদের বুঝানো হয়ে থাকে।[1][2] ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬,৫৫,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।[3][4][5] বিগত তিন দশক ধরে মায়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে ৩,০০,০০০ এর অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থান করছে।[6] এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া, ভারতের হায়দ্রাবাদের রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ফলে মায়ানমারের মতো তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।[7]
.jpg)
ইতিহাস
রোহিঙ্গা মায়ানমারের একটি মুসলিম সংখ্যালঘু জাতি, যাদেরকে অনেক মায়ানমারি বৌদ্ধরা বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসাবে হিসেবে গণ্য করে।[8] রোহিঙ্গারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মায়ানমারে বসবাস করে আসছে এবং বাংলাদেশ সরকার মায়ানমার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেবার জন্য বলছে।[9] মায়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং তাদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাচারিত সংখ্যালঘু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[10][11] রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং চরমপন্থী বৌদ্ধদের হাতে নির্যাতিত।[12] মায়ানমার রোহিঙ্গাদের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।[13] ১৯৭০ সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হয়ে বাস করতে শুরু করে, ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী আনুমানিক ৩,০০,০০০- ৫,০০,০০০-এর মতো শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে। অধিকাংশ শরণার্থী টেকনাফ-কক্সবাজার হাইওয়ে বরাবর অবস্থিত নাফ নদীর সমান্তরালে বাস করে, যা বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত।[14] বেশিরভাগ শরণার্থীরা কক্সবাজার বা এর কাছাকাছি অবস্থিত, পর্যটনশিল্পের উপর নির্ভরশীল একটি উপকূলবর্তী এলাকায় বাস করে।[15]
বাংলাদেশ মনে করে শরণার্থীদের দ্বারা এলাকাটির পর্যটন প্রত্যাশা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শরণার্থীদের অপরাধ এবং কক্সবাজারে ২০১২ রামু সহিংসতার জন্যও দোষারূপ করা হয়।[16] বাংলাদেশ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের এদেশে অনাগমনমুখী নীতি তৈরির অনুসরণ করছে।[17] অধিকাংশ শরণার্থী অনিবন্ধিত রয়ে গেছে, শুধুমাত্র ৩২ হাজার শরণার্থী নিজেদের ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবন্ধন করেছে। আনুমানিক ২,০০,০০০-এর অধিক শরণার্থী অনিবন্ধিত অবস্থায় বাংলাদেশে বসবাস করছে।[18] অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট, ডিসেম্বর ২০১৬-এর একটি প্রতিবেদনে বলেছে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ধর্ষণ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, এবং রোহিঙ্গাদের বাসভবন দখলে তত্ত্বাবধান করছে।[19] পার্বত্য চট্টগ্রামে শরণার্থীরা আদিবাসী জনগোষ্ঠী সরিয়ে দিচ্ছে।[20] এছাড়াও তাদের ইয়াবা আমদানি করার জন্য নিন্দা করা হচ্ছে।[21][22][23]
স্থানান্তর
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বঙ্গোপসাগরের একটি দূরবর্তী দ্বীপ টেঙ্গার চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা প্রস্তাব করে। পরিকল্পনাটি মানবাধিকার কর্মী এবং ইউএনএইচসিআর-এর সমালোচনায় কার্যকর হয়নি।
অক্টোবর এবং নভেম্বর ২০১৬- এর মধ্যে, প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী মায়ানমার থেকে আসে। বাংলাদেশ সরকার স্থানান্তরের পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।[24] টেঙ্গার চর জোয়ারের সময় নিমজ্জিত হয়ে যায়। মেঘনা নদীতে পলল জমে এটি ২০০০ সালে গঠিত হয়। বেশীর ভাগ মানচিত্রে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না,[2] এবং এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে হাতিয়া দ্বীপে অবস্থিত যা নিকটবর্তী বসবাসকারী এলাকা।[25] বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্বাস্তুদের জন্য দ্বীপটিকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে কাজ করছে।[26]
প্রত্যাবাসন
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। সে সময় রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় কাউকেই রাখাইনে পাঠানো যায়নি। মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি প্রত্যাবাসনের জন্য ১ হাজার ৩৩ পরিবারের ৩ হাজার ৫৪০ জনের নামের তালিকা পাঠায়। বর্তমানে প্রত্যাবাসনের চেস্টা চললেও রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তারা ৫ দফা দাবি সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করছে। দফাগুলো হচ্ছে:
- রোহিঙ্গারা আরাকানের (রাখাইন) স্থায়ী বাসিন্দা। সে কারণে রোহিঙ্গাদের ‘স্থানীয়’ স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
- আরাকানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও পরিচয়পত্র দিতে হবে।
- রোহিঙ্গাদের নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নিতে হবে। কেড়ে নেওয়া জমিজমা যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে।
- আরাকানে রোহিঙ্গাদের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষার জন্য রোহিঙ্গা পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
- মিয়ানমারের স্থানীয় আদালতের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অপরাধীদের বিচার করতে হবে।[27]
আরো পড়ুন
- মাইমুল আহসান খান (১৯৯৮)। মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা শরণার্থী: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত। বিশ্বসাহিত্য ভবন।
তথ্যসূত্র
- "Rohingya exodus to Bangladesh nears 300,000"। Muslim Global। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- "Rohingya refugees in Bangladesh face relocation to island"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০১-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- WAM (২০১৭-১২-২৭)। "UAE Press: We must resolve to aid all refugees"। Emirates 24|7 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৮।
- "Rohingya crisis: Myanmar Court extends detention of two journalists"। www.aninews.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৮।
- "Bangladesh: Humanitarian Situation report No.16 (Rohingya influx) 24 December 2017"। ReliefWeb (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৮।
- Bearak, Max (২৫ অক্টোবর ২০১৭)। "s Bangladesh is now home to almost 1 million Rohingya refugees"। Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৭।
- "Rohingyas from Hydarabad"। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Bangladesh wants to move Muslim refugees to an island to stop them 'mingling' with citizens"। The Independent (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০১-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Bangladesh PM asks Myanmar to take back Rohingya refugees"। Channel NewsAsia (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Rohingya Refugees in Bangladesh to Be Relocated to Remote, Inhospitable Island - The Boston Globe"। BostonGlobe.com। ২০১৭-০৩-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Shining a light on Rohingya refugees - Global Journalist"। Global Journalist (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- Kullab, Samya (২০১৭-০২-২৩)। "The Trouble With Thengar Char"। Foreign Affairs। আইএসএসএন 0015-7120। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Myanmar army: Charges of abuse of Rohingya unsubstantiated"। Herald-Whig (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "A fight to survive for Rohingya refugees in Bangladesh"। aljazeera.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Bangladesh resurrects plan to move Rohingya refugees to flooded island"। Reuters। ২০১৭-০১-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- Diplomat, Sumit Ganguly and Brandon Miliate , The। "Refugees and Neighbors: Rohingya in Bangladesh"। The Diplomat (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Exile island"। The Economist। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- France-Presse, Agence (২০১৫-০৫-২৭)। "Bangladesh plans to move Rohingya refugees to island in the south"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- Hussain, Maaz। "Rohingya Refugees in Bangladesh Vow Never to Return to Myanmar"। VOA (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Rights group accuses Bangladesh of ethnic cleansing, pushing Buddhists out with Rohingya refugees from Myanmar"। hindustantimes.com/ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Bangladesh to ban cold pill chemical to fight meth surge | Dhaka Tribune"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Myanmar Rohingya refugees sucked into booming Bangladesh drug trade"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Myanmar nationals among 8 held with yaba pills worth Tk24cr | Dhaka Tribune"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- Sattar, Maher (২০১৭-০১-৩১)। "Rohingya Refugees in Bangladesh to Be Relocated to Remote Island"। The New York Times। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "Bangladesh: Reject Rohingya Refugee Relocation Plan"। Human Rights Watch (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- Rahman, Shaikh Azizur; agencies (২০১৭-০২-০২)। "Plan to move Rohingya to remote island prompts fears of human catastrophe"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২০।
- "প্রস্তুতি থাকলেও রোহিঙ্গারা কেউ ফিরতে চান না"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২২।