গণেশ পুরাণ
গণেশপুরাণ (সংস্কৃত:गणेश पुराणम्; gaṇeśa purāṇam) হল সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এটি একটি উপপুরাণ (অপ্রধান পুরাণ)। এই পুরাণের উপজীব্য বিষয় হল হিন্দু দেবতা গণেশের পৌরাণিক উপাখ্যান এবং গণেশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।[1] এছাড়া গণেশ-সংক্রান্ত সৃষ্টিতত্ত্ব, রাজাবলি, রূপক-কাহিনি, যোগ, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে।[2][3]
হিন্দু শাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ |
---|
![]() |
অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ
|
সম্পর্কিত হিন্দু ধর্মগ্রন্থ |
|
|
শাস্ত্র, সূত্র ও অন্যান্য
|
কালরেখা
|
গণেশপুরাণ দুটি বৃহদায়তন ‘খণ্ড’ বা বিভাগে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডটির নাম ‘উপাসনাখণ্ড’। এই খণ্ডে ৯২টি অধ্যায়ে ধর্মতত্ত্ব ও ভক্তিতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডটির নাম ‘ক্রীড়াখণ্ড’। ১৬৫টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে পৌরাণিক উপাখ্যান ও রাজাবলি।[4][5] এই পুরাণের অনেকগুলি পাঠান্তর পাওয়া যায়।[6] মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে (খ্রিস্টীয় ১৩শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে) দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি শাসনকালটি ছিল এক রাজনৈতিক সংঘর্ষের যুগ। এই সময়েই এই পুরাণ রচিত ও পরিমার্জিত হয়।[7][8][9] সকল প্রধান পুরাণের বৈশিষ্ট্য ও উপাখ্যানগুলি এই পুরাণে সন্নিবেশিত হয়েছে। বেইলির মতে, অন্যান্য সকল পুরাণের মতো রচনাকালের পরিবেশ অনুসারে এই পুরাণেও সাংস্কৃতিক বিষয় এবং সাংস্কৃতিক প্রয়োজন ও সভ্যতার প্রতিফলন ঘটেছে।[10]
মুদ্গলপুরাণ, ব্রহ্মপুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ গ্রন্থ তিনটির মতো গণেশপুরাণ গ্রন্থটিও গণেশ-সংক্রান্ত একটি বিশ্বকোষতুল্য গ্রন্থ।[1] উল্লেখ্য, ব্রহ্মপুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ হল মহাপুরাণ এবং গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ হল উপপুরাণ। এই চার পুরাণগ্রন্থের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু পৃথক পৃথক। ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে বলা হয়েছে ‘সগুণ’ (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণ সহিত এবং সাকার)। ব্রহ্মপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে বলা হয়েছে ‘নির্গুণ’ (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণ রহিত এবং নিরাকার)। গণেশপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে একাধারে সগুণ ও নির্গুণ বলা হয়েছে এবং আরও বলা হয়েছে যে, সগুণ গণেশ নির্গুণ গণেশের আদি রূপ। মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে ‘সম্যোগ’ (পরম সত্য ও আত্মার বিমূর্ত সমন্বয়) রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।[9]
গণেশপুরাণ হিন্দুধর্মের গাণ্যপত্য সম্প্রদায়ের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এই সম্প্রদায়ে গণেশকে প্রধান দেবতা রূপে পূজা করা হয়।[11][12]
গুরুত্ব
গণেশপুরাণ ও গণপতি উপনিষদ্ (গণপতি অথর্বশীর্ষ) হিন্দুধর্মের গাণপত্য সম্প্রদায়ের দুটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ।[13] গাণপত্যরা গণেশকে প্রধান দেবতা রূপে পূজা করেন। এই পুরাণে প্রাপ্ত গণেশ-সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যানগুলি তাঁদের সম্প্রদায়ের একটি বিশিষ্ট অংশ।[14] গণেশ হলেন হিন্দুধর্মের সর্বাধিক পূজিত দেবতা। হিন্দুধর্মের প্রত্যেকটি প্রধান সম্প্রদায়ে (শৈব, বৈষ্ণব, শাক্ত ও স্মার্ত) গণেশকে সর্বাগ্রে পূজা করা হয়।[15] গণেশপুরাণ গ্রন্থে প্রাচীন পৌরাণিক উপাখ্যান ও বৈদান্তিক ধারণাগুলিকে গণেশ-ভক্তির কাঠামোর মধ্যে নিবদ্ধ করা হয়েছে।[16]
বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের ইতিহাসের প্রেক্ষিতেও এই গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উভয় ধর্মের পৌরাণিক আখ্যান ও ধর্মতত্ত্বে গণেশের অস্তিত্ব রয়েছে।[17][18]
রচনাকাল
গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে (খ্রিস্টীয় ১৩০০-১৬০০ অব্দ) রচিত পুরাণ।[19][8] স্টিটেনক্রনের মতে, খ্রিস্টীয় ১৫শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে গণেশপুরাণ রচিত হয়। এই সময় মহারাষ্ট্র অঞ্চলে হিন্দু মারাঠা সম্রাটদের সঙ্গে ইসলামি সুলতানি শাসকদের সামরিক সংঘর্ষ চলছিল।[20]
গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থদুটি ঠিক কবে রচিত হয়েছিল এবং দুটি গ্রন্থের মধ্যে কোনো পারস্পরিক সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। উভয় গ্রন্থেই কয়েকটি সময়-ভিত্তিক স্তর দেখা যায়। কিন্তু গবেষকরা এই স্তরগুলি নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হননি। দুই পুরাণের প্রাপ্ত পাঠগুলিতে কোনো কোনো স্তরে পারস্পরিক প্রভাবও লক্ষিত হয়। এমনকি কোনো ক্ষেত্রে একটি পুরাণে অন্য পুরাণের প্রত্যক্ষ সূত্রও উল্লিখিত হয়েছে।
থাপান গণেশপুরাণ গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে মতামতগুলি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এই পুরাণের মূল অংশটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় ১২শ ও ১৩শ শতাব্দীতে রচিত। পরবর্তীকালে প্রক্ষিপ্ত কিছু অংশ এই গ্রন্থে সংযোজিত হয়।[21] থাপার এও বলেছেন যে, অন্যান্য পুরাণগুলির মতো এই পুরাণটিও কালে কালে পরিমার্জিত হয়ে একটি বহুস্তর-বিশিষ্ট গ্রন্থে পরিণত হয়েছে।
লরেন্স ডব্লিউ. প্রেস্টনের মতে, গণেশপুরাণ গ্রন্থের রচনাকাল সম্ভবত ১১০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়। তাঁর মতে, এই মতটিই সর্বাধিক যুক্তিগ্রাহ্য। কারণ, এই পুরাণে সমসাময়িক কালের নাগপুর ও বারাণসী শহরের তীর্থস্থানগুলির বিবরণ রয়েছে।[22][23] আর. সি. হাজরাও বলেছেন যে, গণেশপুরাণ গ্রন্থের রচনাকাল ১১০০-১৪০০ খ্রিস্টাব্দ।[24] ফারকুহারের মতে, এই গ্রন্থের রচনাকাল খ্রিস্টীয় ৯০০-১৩৫০ অব্দ।[25] অন্যদিকে স্টিভেনসন বলেছেন, এই পুরাণ সম্ভবত ১৭শ শতাব্দীর পরে রচিত হয়।[26][5]
বিন্যাস
এই পুণ্যচরিত্র রাজন্যবর্গ একে অপরের নিন্দা করেন না,
একে অপরের স্ত্রীর প্রতিও দৃষ্টিপাত করেন না,
একে অপরের ক্ষতি করেন না,
একে অপরের ধনাকাঙ্ক্ষাও করেন না।
—গণেশপুরাণ, চন্দ্রাঙ্গদের উপাখ্যান
উপাসনা খণ্ড, ৫৪। ২৫ – ৫৪। ২৬[27]
গণেশপুরাণ দুটি ‘খণ্ড’ বা ভাগে বিভক্ত। এগুলি হল: ‘উপাসনাখণ্ড’ ও ‘ক্রীড়াখণ্ড’। উপাসনাখণ্ডে ভক্তিতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। এই খণ্ডে ৯২টি অধ্যায় রয়েছে। অন্যদিকে ক্রীড়াখণ্ডের উপজীব্য বিষয় হল গণেশের লীলা। এই খণ্ডে ১৫৫টি অধ্যায় রয়েছে।[4] ক্রীড়াখণ্ডটিকে পরিশিষ্টে ‘উত্তরখণ্ড’ নামেও অভিহিত করা হয়েছে।[28] উপাসনাখণ্ডের ৪৬তম অধ্যায় একটি স্তোত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি গণেশ সহস্রনাম (গণেশের ১০০০টি নাম ও গুণাবলির প্রশস্তিমূলক তালিকা-সম্বলিত স্তোত্র) নামে পরিচিত স্তোত্রটির সর্বাধিক পরিচিত সংস্করণের প্রধান সূত্র।
গণেশপুরাণ গ্রন্থে অন্যান্য সকল পুরাণে প্রাপ্ত পাঁচটি সাহিত্যিক বিভাগ বর্তমান রয়েছে। এগুলি হল: ‘খণ্ড’, ‘মাহাত্ম্য’, ‘উপাখ্যান’, ‘গীতা’ ও একটি আখ্যানমূলক বিভাগ।[29] হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত পৌরাণিক বন নৈমিষারণ্যে এক ঋষিসমাবেশে ঋষি ব্যাসের কথকতার আদলে এই পুরাণটি রচিত।[29] রচনার ভঙ্গিমাটি শিক্ষামূলক ও পৌরাণিক। এই পুরাণে উপাখ্যানগুলির কল্পনা ও কাঠামো অন্যান্য পুরাণগুলির মতোই।[29] বেইলির মতে, এই পুরাণের চারটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, এতে পুরাণের ‘পঞ্চলক্ষণ’ ধারণাটি লক্ষিত হয় না। দ্বিতীয়ত, এতে ‘ধর্মশাস্ত্রে’র শিক্ষামূলক উপস্থাপনা খুবই কম। তৃতীয়ত, পৌরাণিক উপাখ্যানগুলির কাঠামো এমনভাবে সৃজিত হয়েছে, যাতে দেখা যায় গণেশ প্রাচীন হিন্দু পুরাণের উপাখ্যানগুলিতে হস্তক্ষেপ করছেন। এবং চতুর্থত, পৌরাণিক আখ্যানটি গণেশকে সর্বদাই অন্যান্য সকল হিন্দু দেবতার জীবনস্বরূপ ও আদর্শস্থানীয় রূপে উপস্থাপনা করেছে।[30]
বিষয়বস্তু
উপাসনাখণ্ড: বিমূর্ত ধ্যান ও ভক্তিপূজা
গণেশপুরাণ গ্রন্থের প্রথম ভাগ ‘উপাসনাখণ্ডে’ দুই ধরনের পূজার কথা বলা হয়েছে।[31][32] একটি অত অনুসারে, গণেশ সর্বোচ্চ ঈশ্বর ও ‘পরমাত্মা’ (নির্গুণ ও সর্বোচ্চ সত্ত্বা)। গণেশ ও আত্মা অভিন্ন সত্ত্বা)। এই মতে হিন্দু দর্শনের বেদান্ত শাখায় বর্ণিত পরব্রহ্ম ধারণায় গণেশের ধ্যান ও আধ্যাত্মিক মননের কথা বলা হয়েছে।[33] দ্বিতীয় মতে, গণেশ সগুণ ব্রহ্ম। এই মতে গণেশের মূর্তি পুষ্প ইত্যাদি দিয়ে সুসজ্জিত করে, বিভিন্ন উপচার নিবেদন করে এবং উৎসব পালন করে পূজা করার কথা রয়েছে।[31][34] উপাসনাখণ্ডে এই ধারণাগুলি পর পর সজ্জিত উপাখ্যান ও সৃষ্টিরহস্য-সংক্রান্ত আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। এগুলিতে প্রাচীন পৌরাণিক উপাখ্যানগুলিকে ক্রিয়াশীল অভিজ্ঞতাপ্রসূত সত্যজ্ঞান এবং গণেশকে বৈদান্তিক ব্রহ্ম বা সর্বোচ্চ অপরিবর্তনীয় সত্য রূপে দর্শানো হয়েছে।[35][36]
ক্রীড়াকাণ্ড: গণেশগীতা
ক্রীড়াকাণ্ড অংশের ১৩৮তম থেকে ১৪৮তম অধ্যায়গুলি গণেশগীতা নামে পরিচিত। শুধু এই অংশে গণেশ ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।[37] এই অংশটি রাজা বরেণ্য ও গণেশের গজানন অবতারের কথোপকথনের আকারে রচিত।
গণেশ বললেন, “যাঁরা নিজ আত্মায় সুখ পান এবং নিজ আত্মায় নিমগ্ন, তাঁরা আনন্দ ও অবিনশ্বর সুখ প্রাপ্ত হন। কারণ, ইন্দ্রিয়সুখে কোনো আনন্দই নেই। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুসকল হতে যে সুখ জন্মায়, তা দুঃখের কারণ হয়। তা জন্ম ও সংহারের সঙ্গে যুক্ত। জ্ঞানী ব্যক্তি সেই সুখে আকৃষ্ট হন না। (...)
যিনি আত্মায় নিবদ্ধ, যিনি আত্মায় উজ্জ্বল, যিনি আত্মায় আনন্দিত, যিনি আত্মসুখে মগ্ন, তিনি অবশ্যই অবিনশ্বর ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্ত হন এবং সকল লোকের হিতকর কর্মসাধন করবেন। (...)
শোনো! যাঁরা নিজ আত্মাকে জানেন, তাঁরা সর্বত্র ব্রহ্মদর্শন করে থাকেন। (...)
—গণেশপুরাণ, ক্রীড়াকাণ্ড, ১৪২। ২১ – ১৪২।[38]
যুবরাজ কৃষ্ণনের মতে, গণেশগীতা গ্রন্থের নব্বই শতাংশ শ্লোকই ভগবদ্গীতা থেকে সামান্য পরিমার্জনা সহকারে গৃহীত।[39] উভয় গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়বস্তুও এক। দুই গ্রন্থেই কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ আলোচিত হয়েছে। শুধু গণেশগীতা গ্রন্থে গণেশ কৃষ্ণের পরিবর্তে ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ।[39]
অন্যদিকে গ্রেগ বেইলির মতে, খুব সম্ভবত ভগবদ্গীতা গ্রন্থটি গণেশগীতা গ্রন্থের উৎস হলেও, গণেশগীতা গ্রন্থে মাত্র ৪১২টি শ্লোক রয়েছে। এই গ্রন্থে ভগবদ্গীতা গ্রন্থে উল্লিখিত একটি বড়ো অংশই অনুল্লিখিত রয়ে গিয়েছে। তাই উভয় গ্রন্থ সব দিক থেকে একই ধরনের এবং গণেশগীতা গ্রন্থে শুধুমাত্র গণেশকে কৃষ্ণের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে বললে ভুল হবে।[40] এই গ্রন্থে গণেশ ও রাজা বরেণ্যর কথোপকথনের ভক্তিটি অন্যরকম। ভগবদ্গীতা গ্রন্থে দেখা যায় অর্জুন অনুসন্ধিৎসু হয়ে কৃষ্ণকে দর্শন-সংক্রান্ত প্রশ্ন করছেন। কিন্তু গণেশগীতা গ্রন্থে রাজা বরেণ্য গণেশ সম্বন্ধেই প্রশ্ন করছেন। তাই এই চরিত্রটি অর্জুন চরিত্র থেকে দুর্বলতর। যদিও বেইলি এই কথা স্বীকার করেছেন যে, উভয় গ্রন্থে যে ধর্মতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে, তা বস্তুত এক।[40]
ক্রীড়াকাণ্ড: চার যুগে গণেশ

গণেশপুরাণ গ্রন্থের ক্রীড়াকাণ্ডে গণেশের চার অবতারের উপাখ্যান রয়েছে। এই চার অবতার চার যুগে অবতীর্ণ হয়েছেন।[39][41] এই অংশের ১৫৫টি অধ্যায় চার যুগের ভিত্তিতে বিভক্ত। ১ম থেকে ৭২তম অধ্যায় পর্যন্ত সত্যযুগ, ৭৩তম থেকে ১২৬তম অধ্যায় পর্যন্ত ত্রেতাযুগ এবং ১২৭তম থেকে ১৩৭তম অধ্যায় পর্যন্ত রয়েছে দ্বাপর যুগের বর্ণনা।[42] ১৩৮তম থেকে ১৪৮তম অধ্যায় নিয়ে গণেশগীতা অংশটি রচিত। এরপর ১৪৯তম অধ্যায়ে সংক্ষেপে কলিযুগের (বর্তমান যুগ) বর্ণনা পাওয়া যায়।[42] অবশিষ্ট ১৪৯তম থেকে ১৫৫তম অধ্যায় পর্যন্ত অংশটি আলোচনামূলক। একটি প্রামাণ্য পুরাণগ্রন্থে যে সাহিত্যিক গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তা এই অংশে সন্নিবেশিত হয়েছে।[42]
সত্যযুগে গণেশকে ‘বিনায়ক’ রূপে প্রদর্শিত হয়েছে। বিনায়ক দশভূজ, বৃহদাকার, দানশীল ও সিংহবাহন।[43][44] ত্রেতাযুগের গণেশ ‘ময়ূরেশ্বর’ রূপধারী। ময়ূরেশ্বর ষড়ভূজ, শ্বেতবর্ণ ও ময়ূরবাহন।[42] দ্বাপর যুগে গণেশ ‘গজানন’ রূপ ধারণ করেছেন। গজানন চতুর্ভূজ, রক্তবর্ণ ও মুষিকবাহন।[43] এই যুগে তিনি শিব ও পার্বতীর পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন। কলিযুগে গণেশ ‘ধুম্রকেতু’। ধূম্রকেতু দ্বিভূজ, ধূম্রবর্ণ ও অশ্ববাহন।[42][45] গণেশপুরাণ অনুসারে, কলিযুগে গণেশ বর্বর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন ও দৈত্যদানব হত্যা করেন।[43]
পাণ্ডুলিপি
গ্রেগ এম. বেইলি গণেশপুরাণ গ্রন্থের প্রথমাংশ ‘উপাসনাখণ্ডে’র একটি ইংরেজি অনুবাদ ও ইংরেজতে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, ভারতের গ্রন্থাগারগুলিতে এই গ্রন্থের কয়েকশো পাণ্ডুলিপি রক্ষিত আছে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, ১৭শ থেকে ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত এই পুরাণ খুবই জনপ্রিয় ছিল।[46][47]
মহারাষ্ট্রের মোরগাঁওয়ের (যেখানে অষ্টবিনায়ক মন্দিরের একটি অবস্থিত) শ্রীযোগীন্দ্র মঠের অধ্যক্ষ বালবিনায়ক মহারাজ লালসারে গণেশপুরাণ গ্রন্থের একটি অনুবাদ দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন। উপাসনাখণ্ডটি ১৯৭৯ সালে এবং ক্রীড়াকাণ্ডটি ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।[48] গাণপত্য সম্প্রদায়ের বিবর্তন সম্পর্কে থাপান যে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, তাতে তিনি এই সংস্করণটিই সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।[49]
শ্রীযোগীন্দ্র মঠের প্রকাশনার আগেও গণেশপুরাণ গ্রন্থের নিম্নোক্ত প্রকাশনাগুলির কথা জানা যায়:[49]
১৮শ শতাব্দীতে গণেশপুরাণ তামিল ভাষায় অনূদিত হয়। তামিল সংস্করণে এই পুরাণের নাম বিনায়ক পুরাণ।[50]
তথ্যসূত্র
- Brown 1991, পৃ. 95।
- Bailey 1995, পৃ. 12, 52-53, 71-72, 89-91।
- Brown 1991, পৃ. 88-92।
- Bailey 1995, পৃ. ix, 115।
- Rocher 1986, পৃ. 174।
- Bailey 1995, পৃ. 115-117।
- Bailey 2008, পৃ. xi-xii, 70-78।
- Thapan 1997, পৃ. 30-33।
- Brown 1991, পৃ. 95-97।
- Bailey 1995, পৃ. 4, 116।
- Thapan 1997, পৃ. 304।
- Bailey 1995, পৃ. ix।
- Brown 1991, পৃ. 1-3।
- Bailey 1995, পৃ. ix-x।
- Brown 1991, পৃ. 1-3, 19, 122-124।
- Oliver Leaman (২০০৬)। Encyclopedia of Asian Philosophy। Routledge। পৃষ্ঠা 440–442। আইএসবিএন 978-1-134-69114-2।
- R Stevenson, Analysis of Ganesa Purana with special reference to the history of Buddhism, Journal of the Royal Asiatic Society, Vol 8, pages 319-329
- Brown 1991, পৃ. 101-107।
- Bailey 2008, পৃ. 70-78।
- Bailey 2008, পৃ. xi-xii, 78-85।
- For a review of major differences of opinions between scholars on dating see Thapan, op. cit., pp. 30–33.
- Preston, Lawrence W., p. 103. "Subregional Religious Centers in the History of Maharashtra: The Sites Sacred to Gaṇeśa", in: N. K. Wagle, ed., Images of Maharashtra: A Regional Profile of India.
- Bailey 2008, পৃ. 80-85।
- R. C. Hazra, "The Gaṇeśa Purāṇa", Journal of the Ganganatha Jha Research Institute, Vol. 9, 1951, pp. 79–99. For dating see p. 97.
- Farquhar, J. N., An Outline of the Religious Literature of India, pp. 226 and 270.
- R Stevenson, গুগল বইয়ে Analysis of Ganesa Purana, Journal of the Royal Asiatic Society, Art 16, Vol 8, page 319
- Bailey 1995, পৃ. 287।
- Encyclopaedia of Hinduism edited by Nagendra Kumar Singh , First edition 2000, published by Anmol Publistions Pvt. Ltd., New Delhi আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৪৮৮-১৬৮-৭ (set) P. 883
- Bailey 1995, পৃ. 116।
- Bailey 1995, পৃ. 116-120।
- R Stevenson, গুগল বইয়ে Analysis of Ganesa Purana, Journal of the Royal Asiatic Society, Art 16, Vol 8, page 320
- Bailey 1995, পৃ. 89-91, 103-105।
- Bailey 1995, পৃ. 50-51, 104, 147-150, 255-259, 263-265, 458।
- Bailey 1995, পৃ. 65-66, 104-118।
- R Stevenson, গুগল বইয়ে Analysis of Ganesa Purana, Journal of the Royal Asiatic Society, Art 16, Vol 8, page 321
- Bailey 1995, পৃ. 51-52, 65-68, 392-393।
- Rocher, Ludo. "Gaṇeśa's Rise To Prominence", p. 73 in: Ganesh: Studies of an Asian God, Robert L. Brown, editor. (State University of New York: Albany, 1991) আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৯১৪-০৬৫৭-১
- Bailey 2008, পৃ. 386-387।
- Krishan 1999, পৃ. 79–80
- Bailey 2008, পৃ. 617।
- Brief summaries of events in each incarnation are given in John A. Grimes. Ganapati: Song of the Self. pp. 100–105. (State University of New York Press: Albany, 1995) আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৯১৪-২৪৪০-৭
- Bailey 2008, পৃ. 5।
- Bailey 2008, পৃ. 5 with footnote 2।
- Ganesha Purana I.46.28 in the 1993 Sharma edition. In the version used by Bhāskararāya in his Khadyota commentary on the Ganesha Sahasranama the verse is numbered I.46.33 and the name is given as Kaśyapasuta.
- Yuvraj Krishan, op. cit. p. 84, footnote 13, says that in the Ganesha Purana 2.131.32, Dhūmraketu is said to have four arms but in ibid. 2.1.21 and 2.85.15 he is said to have only two arms. The version given in Grimes mentions only two arms.
- Bailey 1995।
- Bailey 2008।
- Gaṇeśa Purāṇa। Sri Balvinayak maharaj lalsare (head of Śrī Yogīndra Maṭha), related texts such as 'Ganesha Vijaya', 'Ganesha Vwangmaya also published.। ১৯৭৯।
- Thapan 1997, পৃ. 32।
- Thapan 1997, পৃ. 33।
গ্রন্থপঞ্জি
- Bailey, Greg (১৯৯৫)। Ganeśapurāna: Introduction, translation, notes and index। Berlin: Otto Harrassowitz Verlag। আইএসবিএন 3-447-03647-8।
- Bailey, Greg (২০০৮)। Gaṇeśapurāṇa: Krīḍākhaṇḍa। Otto Harrassowitz Verlag। আইএসবিএন 978-3-447-05472-0।
- Brown, Robert L. (১৯৯১)। Ganesh: Studies of an Asian God। Albany: State University of New York। আইএসবিএন 978-0-7914-0657-1।
- Courtright, Paul B. (১৯৮৫)। Gaṇeśa: Lord of Obstacles, Lord of Beginnings। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-505742-3।
- Grimes, John A. (১৯৯৫)। Ganapati: Song of the Self। SUNY Series in Religious Studies। Albany: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-2440-7।
- Krishan, Yuvraj (১৯৯৯)। Gaņeśa: Unravelling An Enigma। Delhi: Motilal Banarsidass Publishers। আইএসবিএন 978-81-208-1413-4।
- Rocher, Ludo (১৯৮৬)। The Puranas। Otto Harrassowitz Verlag। আইএসবিএন 978-3447025225।
- Sharma, Ram Karan (editor) (1993). Ganesha Purana. Nag Publishers. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭০৮১-২৭৯-১.
- Thapan, Anita Raina (১৯৯৭)। Understanding Gaņapati: Insights into the Dynamics of a Cult। New Delhi: Manohar Publishers। আইএসবিএন 978-81-7304-195-2।
আরও পড়ুন
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে গণেশ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- Mani, Vettam. Puranic Encyclopaedia: A Comprehensive Dictionary With Special Reference to the Epic and Puranic Literature. 1st English edition, Motilal Banarsidass, New Delhi, 1975. Reprint editions: Motilal Banarsidass (2006) আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২০৮-০৫৯৭-২.